• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ব্রাজিলের জন্য একটি ফর্মূলার অনুসন্ধান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টারনেট গভর্নেন্স
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ব্রাজিলের জন্য একটি ফর্মূলার অনুসন্ধান

২০১৩ সালের গ্রীষ্মকালে যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ তথা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার নজরদারি সম্পর্কে এডওয়ার্ড স্লোডেনের ফাঁস করা তথ্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ভিতকে কাঁপিয়ে দেয়। ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ এনএসএ’র নজরদারিকে সবচেয়ে কঠিন ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সংস্থার মধ্যে একটা উদ্বেগের জন্ম দেয় যে, এনএসএ’র কার্যকলাপের ফলে পাশ্চাত্য বিশ্বে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সংস্থারগুলো সম্পর্কে সবার মাঝে আস্থাহীনতা দেখা দেবে এবং বিশজুড়ে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স নিয়ে আস্থা ও সহযোগিতা কমে যাবে। এ ঘটনার পর দেখা গেছে, ইন্টারনেট সংক্রান্ত বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয়রা যেমন- আইসিএএনএন, ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স (আইইটিএফ), ইন্টারনেট সোসাইটি, পাঁচটি আঞ্চলিক ইন্টারনেট ঠিকানা রেজিস্ট্রি এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়াম (ডব্লিউ৩সি) সম্মিলিতভাবে একটি বিবৃতি দেয়। এ বিবিৃতিতে এনএসএ’র কার্যকলাপকে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আইসিএএনএন এবং আইএএন-এর কার্যক্রমের বৈশ্বিকভাবে সম্প্রসারণের জন্য আহবান জানানো হয়।

এই সঙ্কটের একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট রুসেফ এবং আইসিএএনএন-এর সভাপতি ফাদি চেহাদে’র মধ্যে মৈত্রীবন্ধন। ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের জন্য নতুন উদ্যোগ নিয়ে একত্রে কাজ করছেন রুসেফ এবং চেহাদে। চেহাদের সাথে সাক্ষাতের পর গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট রুসেফ টুইটারের মাধ্যমে ঘোষণা দেন, ‘২০১৪ সালের এপ্রিলে ব্রাজিল এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে যেখানে বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদেরা অংশ নেবেন।’ এরপর নভেম্বরে এই সম্মেলনের তারিখ ও শিরোনাম সুনির্দিষ্ট করা হয়। সম্মেলনের স্লোগান দেওয়া হয় ‘ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈশ্বিক বহুমুখী অংশীদারিত্ব সম্মেলন’ এবং স্থানীয় নাম নেটমুনডাইল। এ সম্মেলন আগামী ২৩-২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে।

ব্রাজিল সরকারের এক সংবাদ বিবৃতি মতে, ‘এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য বহুমুখী অংশীদারি ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের জন্য সার্বিক নীতিমালা এবং সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করা। এই কাঠামোর মধ্যে থাকছে বর্তমান সংস্থাগুলোর বিকাশ ও বিশ্বায়নের জন্য রোডম্যাপ এবং সেই সাথে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কিত নিত্য নতুন বিষয়গুলোকে চালাতে পারে এমন কৌশল তৈরি করা।’

এটি একটি খুবই উচ্চাকাঙক্ষা এজেন্ডা। ব্রাজিল সম্মেলনের কাঠামো এবং এর ফলাফলের ওপর ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেযোগ্য পরিবর্তন আনবে। একদিকে যেমন রয়েছে পশ্চিমা দেশের বহুমুখী অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট, বিভিন্ন রাষ্ট্রের দাবি এবং একই সাথে রয়েছে জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালনের দাবি।

আসন্ন ব্রাজিল সম্মেলন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সকে ঘিরে রাজনৈতিক মিত্রতা পরিবর্তনের এক ধরনের প্রতিফলন। বিগত দশ বছর ধরে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স নিয়ে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হচ্ছে, তাতে তিনটি মূল দল বা তিন ধরনের মিত্রতা বিদ্যমান।

এদের মধ্যে একদল আছে যারা বৈশ্বিক ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে জাতীয় সার্বভৌম পন্থা প্রয়োগের সমর্থক। এ দলের মধ্যে অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে। যেমন- চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা গ্রুপ ৭৭ (জি৭৭)-এর প্রায় সমান। ১০০টিরও বেশি দেশ গ্রুপের সদস্য। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন থেকে জি৭৭-এর জন্ম। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভুত্ব মোটেও সমর্থন করে না। তবে এসব দেশ বহুমুখী অংশীদারীত্বে বা প্রাইভেট সেক্টরের নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠানকেও পুরোপুরি সমর্থন করে না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এরা যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার হিসেবে দেখে। এরা আমত্মঃসরকারি প্রতিষ্ঠান-জাতিসংঘ এবং আইটিইউ তথা ইন্টান্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নকে ‘গ্লোবাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন গভর্ন্যান্স’ সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন করতে দেখতে আগ্রহী। এসব দেশের মধ্যে কিছু দেশ আবার স্বৈরাচারী, যারা ইন্টারনেট স্বাধীনতাকে ভয় পায়। এসব দেশের টেলিকমিউনিকেশন ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুব একটা শিথীল নয় বরং এরা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে তাদের আমত্মর্জাতিক যোগাযোগ নীতিমালা সরকারি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রণীত হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব মন্ত্রণালয়ের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলোর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আবার এসব মন্ত্রণালয়ের সাথে আইটিইউ’র দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে এবং এসব দেশের টেলিযেগাযোগ সংস্থাগুলো একচেটিয়া ব্যবসায় করে এবং রাষ্ট্রের আরোপিত আইন-কানুন থেকেও অর্থনীতিতে লাভবান হয়। এছাড়াও এসব দেশের সরকারের ইন্টারনেট এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার মত দক্ষ জনবলের অভাব। এরা ঐতিহ্যবাহী আন্তঃসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যোগাযোগ নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কাজ করতে সুবিধা বোধ করে। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত ওয়াল্ড কনফরেন্স অন ইন্টান্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন (ডব্লিউসিআইটি) এসব দেশগুলো পুনঃসংশোধিত ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশনস (আইটিআর)-এর পক্ষে ভোট দেয়। এই ঘটনাকে এদের ঐক্যের পরীক্ষা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
অন্য দু’টি দল- নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাত মিলিতভাবে বহুমুখী অংশীদারী মডেলকে (মাল্টিস্টেকহোল্ডার মডেল) সমর্থন করে। বহুমুখী অংশিদারী মডেল মূলত ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে (বেসরকারি খাত শাসিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে) সমর্থন করে থাকে। এই বেসরকারি খাতের মধ্যে ইন্টারনেট প্রযুক্তি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন- আইসিএএনএন, রিজিওন্যাল ইন্টানেট রেজিস্ট্রিজ, আইটিএফ, ডব্লিউ৩সি, দ্য ইন্টারনেট সোসাইটি-এ দলের মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও এ দলে আছে বহুজাতিক ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যেমন-এটিঅ্যান্ডটি, ভেরিজন, গুগল, ফেসবুক এবং মাইক্রোসফট। ইউরোপের দেশগুলো, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ দলের অন্তর্ভূক্ত। এ দলের অমত্মর্ভূক্ত রাষ্ট্রগুলো ডব্লিউসিআইটি২০১২ আইটিআর ট্রিটির বিপক্ষে ভোট দেয়।

নাগরিক সমাজ সংগঠন সাধারণভাবে দ্বিতীয় দলের সাথেই মিত্রতা পোষণ করে। এসব নাগরিক সমাজ সংগঠন আইসিএএনএন এবং আইজিএফে অংশ নেয় এবং ইন্টারনেট স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং ভোক্তা অধিকারের পক্ষে কথা বলে। উল্লেখ্য, সার্বভৌম পন্থা সমর্থনকারী দেশগুলোর নাগরিক সমাজ এবং প্রযুক্তি সম্প্রদায় তাদের সরকারের এ দৃষ্টিকোণ সমর্থন করে না। এরা অনেক সময় তাদের সরকারকে উদারনৈতিক এবং গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বহুমুখী অংশীদারি পন্থা অনুসরণ করার জন্য চাপ দিয়ে থাকে। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশিরভাগ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স বিষয়ে সবসময় চিরাচরিত সার্বভৌম পন্থাকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারতের নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাতের চাপে শেষ পর্যমত্ম ডব্লিউসিআইটি ২০১২ আইটিআর চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেয়।

২০০৩ সালের ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন ’ (ডব্লিউএসআইএস) থেকেই বিভিন্ন দেশের সরকারি, বেসরকারি দল নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে নিয়েছে। কিন্তু স্নোডেনের এনএসএ ঘটনা প্রকাশিত করার পরে এই রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। উপরোল্লিখিত মন্টেভিডিও স্টেটমেন্ট ইন্টারনেটের সাথে সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নজরদারি থেকে দূরে সরিয়ে এনেছে। মন্টেভিডিও স্টেটমেন্ট প্রকাশিত হবার একদিন পরে আইসিএএনএনের প্রেসিডেন্ট ফাদি চেহাদে ব্রাজিলের রাজধানীতে অপ্রত্যাশিতভাবে সফর করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট যে বক্তৃতা দেন তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি ব্রাজিলে যান। এ বক্তৃতায় ডিলমা রুসেফ এনএসএ-এর নজরদারির নিন্দা জানান। প্রাথমিক অবস্থায় ব্রাজিলের যোগাযোগ মন্ত্রী, একজন আইটিইউ সমর্থক, চেহাদেকে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করার সুযোগ দিতে চাননি; কিন্তু চেহাদে শেষ পর্যমত্ম তাঁর সাথে দেখা করতে সক্ষম হন। আইসিএএনএন-এর প্রেসিডেন্টের সাথে মিলিতভাবে সামিটের আহবান জানিয়ে এবং এই সামিট বহুমুখী অংশীদার বিষয়ে জোর দেবে এই সিদ্ধামেত্মর সাথে সহমত পোষণ করে প্রেসিডেট রুসেফ সার্বভৌম পন্থা সমর্থনকারীদের দল থেকে দূরে সরে এসেছেন এবং ধীরে ধীরে বহুমুখী অংশীদার পন্থা সমর্থনকারীদের দিকে ঝুঁকছেন। ওই একই বিচারে আইসিএএনএন আর ইন্টারনেট সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশের সরকার, যারা বহুমুখী অংশীদার পন্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করেনা, তাদের সাথে আপোষ-মীমাংসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ পুরো ঘটনাটি আবার সার্বভৌম পন্থা অনুসরণকারীদের মধ্যে বহুমুখী অংশীদার মডেলের প্রতি এক ধরণের সমর্থনের নিদর্শন; সরকার বহুমুখী অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমতার ভিত্তিতে অংশ নেবে। এর মাধ্যম ফাদি চেহাদে বহুজাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের (এরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থক) স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। মন্টেভিডিও বিবৃতির পরবর্তী পর্যায়ে আইসিএএনএন-এ উপস্থিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আইসিএএনএন-এর প্রেসিডেন্টের কাজের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তাদের সাথে পরামর্শ না করে তাদের নির্দেশ না নিয়ে তিনি এ কাজটি করেছেন। অন্যদিকে আইসিএএনএন-এর নাগরিক সমাজকর্মী যারা আইসিএএনএন-এর বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে থাকেন, তারা চেহাদের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এ বিচারে স্নোডেনের ঘটনার পরে নতুন করে মিত্রতা তৈরি হয়েছে তাঁর প্রভাব আইসিএএনএন-এর পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মোদ্দা কথা এই, সার্বভৌম পন্থা সমর্থক এবং বহুমুখী অংশীদার পন্থা সমর্থক এই দুই দলের মধ্যে মিত্রতা পরিবর্তনের ফলে একটা ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে এবং আইসিএএনএন এবং ব্রাজিল সরকারের সমর্থিত ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সামিট নতুন করে দলগঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই নতুন করে যে দল গঠিত হবে, এর একটি সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে।
আসন্ন ব্রাজিল কনফারেন্স ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ভবিষ্যৎ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি সাহসী এবং নতুন পদক্ষেপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যিও বটে। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ করছে, ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা সমষ্টিগত গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আমরা যতবার করে আসছি, প্রতিবারই আমাদের এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বৈধতা, দৃঢ় অনুসরণ এবং বৈশ্বিক ক্ষেত্রে এর আওতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বৈশ্বিক ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠার মূল অন্তরায়। উদাহারণ টেনে বলা যায়, ২০০৫ সালে যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে আইজিএফ আয়োজিত হয়েছে ব্রাজিল মিটিংয়ের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যগুলোও সেগুলো থেকে বেশি ভিন্ন নয়। তিউনিস এজেন্ডাতে ‘উন্নত সহযোগিতা’র যে আহবান জানানো হয়েছিল ব্রাজিল কনফারেন্স একদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তার প্রতিধ্বনি। ডব্লিউএসআইএসের আপোষ-মীমাংসাকারীরা ‘বর্ধিত সহযোগিতা’ কথাটি প্রাইভেট সেক্টরভিত্তিক নীতি নির্ধারণী সংস্থা এবং সার্বভৌম ক্ষমতা সমর্থনকারীদের মধ্যে বিরাজমান মতভেদের ব্যাপারটি তুলে ধরতে ব্যবহার করেন।
আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, আগে যেসব উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রগুলো উপস্থিত ছিল এখনো এরা আছে। আমেরিকার ব্যাপক ইন্টারনেট নজরদারির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিল তাদের ২০১৪ সালের কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ও প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম কাঠামোর জন্যে ‘বৈশ্বিক নীতি’ প্রস্ত্তত করতে চায়। কিন্তু ২০০৩ সালে ডব্লিউএসআইএস প্রক্রিয়া শুরুর সময়ে আমেরিকার ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের বিরুদ্ধে যে দল গড়ে উঠেছিল ব্রাজিল তার নেতৃত্বে ছিল। যখন ডব্লিউএসআইএস আইজিএফের সৃষ্টি করল ব্রাজিল তখন আইজিএফকে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের জন্য বৈশ্বিক নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে এরা framework convention পন্থা অনুসরণ করে, যা কিছু উচ্চ পর্যায়ের নীতিকে আইনগত বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে নেয়া এক ধরনের আন্তঃসরকারি হস্তক্ষেপ। ২০০৭-এ ব্রাজিল রিও-তে আইজিএফ আয়োজনের পদক্ষেপ নেয় এবং তাদের নিজস্ব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের সম্পর্কিত রাজনৈতিক চিমত্মাধারাকে সামনে এগিয়ে দেবার জন্য প্রোগ্রামের কয়েকটি অংশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তা স্বত্বেও ২০০৭-এর আইজিএফ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে কোন নতুন ও সুনির্দিষ্ট উন্নতি হয়নি।

ব্রাজিলের আসন্ন সম্মেলনের ফল ভালো বা খারাপ যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে এই কনফারেন্স আমাদেরকে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের বর্তমান অবস্থা কী এবং এটি কোথায় আছে- সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে সাহায্য করবে। একটা ব্যাপার খুবই স্পষ্ট, তা হচ্ছে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান করা প্রয়োজন এবং ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স এখনো যেহেতু পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি, তাই এই কনফারেন্সে যেকোন কিছু ঘটতে পারে। কিন্তু এর পরও ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ওপরে যেসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আছে এবং ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কিত যেসব প্রতিষ্ঠিত আইন-কানুন এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াগুলো আছে, সেগুলো অনেক বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে এসেছে। তাই এটা এখনো বলা সম্ভব নয় যে, আসলেই কোন বড় পরিবর্তন আসবে কি না এই সম্মেলন থেকে।

ফিডব্যাক : anu@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস