লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাজেট ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত
বাজেট যত সুষ্ঠু হবে, দেশের অর্থনীতি সে মাত্রায়ই এগিয়ে যাবে। আর একটি সুষ্ঠু বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা। সার্বিকভাবে এ কাজটি খুব একটা সহজ কাজ নয়। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনেরাই শুধু সাফল্যের সাথে করতে পারেন। এ ধরনের পর্যালোচনা শেষে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার মতো মেধা ও মননের অধিকারী বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব আমাদের নেই, তেমনটি বলা ঠিক নয়। বরং বলা উচিত, তাদের জন্য স্বাধীনভাবে সে কাজটি করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ দেশে খুবই অভাব। কারণ, বাজেট পরিকল্পনায় বাস্তবতা অনুধাবনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টিই আমাদের দেশের নেতানেত্রীদের মাথায় সবচেয়ে বেশি কাজ করে। ফলে বাজেট প্রণয়নে রাজনৈতিক প্রভাব এখানে প্রবল। এর ফলে অর্থনীতিবিদদের বাস্তব চিমত্মাধারা বাজেট প্রণয়নে এসে এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে বাজেট প্রণয়নের বিষয়টি সুষ্ঠুতা হারিয়ে ফেলে। অনেক অবাস্তব রাজনৈতিক প্রকল্প এসে ভিড় জমায় আমাদের জাতীয় বাজেটে। তা ছাড়া সার্বিক বাজেট বাসত্মবায়ন সফল হতে পারে না।
সে যা-ই হোক, বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের জাতীয় জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি খাত একটি অগ্রাধিকার খাত। বিশেষ করে যখন আমরা দেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজেট বরাদ্দে এর প্রতিফলন থাকা চাই। দুর্ভাগ্য, এ পর্যন্ত আমাদের এ বাজেটে সে চাওয়াটি কখনই পাওয়া হয়ে উঠতে পারছে না। জাতীয় আইসিটি নীতিতে যে বাজেট বরাদ্দের অঙ্গীকার রয়েছে, বাজেট বরাদ্দ বাস্তবে এর ধারেকাছেও যেতে পারে না। আবার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নানা উপখাতে যেসব বরাদ্দ দেয়া হয়, সে বরাদ্দও যথাযথভাবে ব্যয় হয় না। আবার অতি প্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প বছরের পর বছর ধরে অবাসত্মবায়িত থেকে যায় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের অভাবে। আছে অযৌক্তিক ও অপরিকল্পিত করারোপ। উপেক্ষিত থাকে এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশও। ফলে আমরা আজ পর্যমত্ম এমন বাজেট পাইনি, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজটিকে নির্বিঘ্ন করতে পারি।
এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কয়েকটি অ্যাপেক্স বডি বা শীর্ষ সংগঠন রয়েছে। বিসিএস, বেসিস, আইএসপিএবি, অ্যামটব এগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে এসব সংগঠন বাজেটে অমত্মর্ভুক্ত করার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ রেখেছে। বিসিএস আসন্ন বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছে। বিসিএস চায় এই বাজেট প্রযুক্তি ও সেবাপণ্যের গবেষণা, উন্নয়ন ও বিপণন এবং দেশের সব স্কুলে কমপিউটার ল্যাব তৈরির ব্যবস্থা যেনো এ বাজেটে থাকে। তা ছাড়া ভ্যাট ও কর সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে বিসিএসের পক্ষ থেকে। আইএসপিএবি ইন্টারনেটের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সিম কর প্রত্যাহারের সুপারিশ এসেছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব থেকে। বিসিএস, বেসিস, আইএসপিএবি দীর্ঘদিন ধরেই ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট কমানোর দাবি করে আসছে। এভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সংগঠন সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু সুপারিশের কথা জানিয়েছে।
আমরা মনে করি, আসন্ন বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ সুপারিশ সুবিবেচনার দাবি রাখে। তা ছাড়া আমরা এও আশা করি, অতীতের মতো এবারের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাজেট অযৌক্তিক কোনো উপেক্ষের শিকার হবে না। বরং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতবান্ধব একটি স্মরণীয় বাজেট।