লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আইসিটি প্রতিকূল বাজেট এবং ই-ভোটিং প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রয়োজন সঠিক জাতীয় নীতিমালা। সরকার এরই মধ্যে প্রণয়ন করেছে ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯’। এই আইসিটি নীতিমালাসহ সরকার প্রণয়ন করেছে একটি রূপকল্প। এই রূপকল্প এরই মধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে ‘ভিশন ২০২১’ বা ‘রূপকল্প ২০২১’ নামে। আমাদের আইসিটি নীতিমালায় আছে ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্ত্ত ও ৩০৬টি করণীয়। উল্লিখিত রূপকল্পে যে আরাধ্য কাজের কথা বলা আছে, তা হচ্ছে- ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা বাড়ানো, সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বে সুলভে জনসেবা জোগানো নিশ্চিত করা, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৩০ বছরের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।’ পাশাপাশি আমাদের আইসিটি নীতিমালায় ১০টি উদ্দেশ্য হচ্ছে- সামাজিক সমতা, উৎপাদনশীলতা, অখন্ডতা, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, তথ্যজগতে সার্বজনীন প্রবেশাধিকার, পরিবেশ জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আইসিটিতে সহায়তা দেয়া।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই আইসিটি নীতিমালা ও রূপকল্প এবং সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন বাজেটে আইসিটি খাতে যথাযথ বরাদ্দ রাখা। এমনটিই প্রত্যাশা ছিল দেশের আইসিটি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি, মহল ও তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমী সাধারণ মানুষের। সে প্রত্যাশা থেকে দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের তিন শীর্ষ সংগঠন বিসিএস, বেসিস ও আইএসপিএবি যৌথভাবে প্রাক-বাজেট প্রস্তাবনাও রেখেছিল যৌথ সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে। কিন্তু এরই মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট সংসদে পাস হয়েছে। উল্লিখিত এ তিন শীর্ষ সংগঠনের যৌথভাবে প্রস্তাবিত আয়কর বিষয়ে চার প্রস্তাব, ভ্যাট বিষয়ে পাঁচ প্রস্তাব এবং আমদানি বিষয়ে দুই প্রস্তাব কার্যত এ বাজেটে উপেক্ষিত হয়েছে।
বাজেট-উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে এই তিন সংগঠন অভিযোগ করেছে- বাজেটে আইসিটি নীতিমালার প্রতিফলন নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশব্যাপী ইন্টারনেট বিস্তারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ইন্টারনেট সংযোগের অন্যতম মাধ্যম ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর শুল্ক চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ বাধার মুখে পড়বে। সবিশেষ উল্লেখ প্রয়োজন, জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় আইসিটি শিল্পোন্নয়ন তহবিল গঠনের লক্ষ্যে ৭০০ কোটি টাকার ১০ শতাংশ ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে এ সংক্রান্ত বরাদ্দের কোনো উল্লেখ নেই। একই সাথে আইসিটি নীতিমালার ১৫৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইসিটি শিল্পোন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু বাজেটে এর জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। এ ধরনের বাজেট আইসিটি খাতের বিকাশ, বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। বর্তমান সরকার কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক করলেও এর উন্নয়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এ ছাড়া ঢাকাতে ৩টি এবং ঢাকার বাইরে কয়েকটি আইটি পার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এক্ষেত্রেও কোনো বরাদ্দ নেই। অন্যান্য শিল্প খাতের সাথে সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতের কর অব্যাহতি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অথচ আইসিটি নীতিমালায় এ সুবিধা ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ছিল। এমনি আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় আনলে বলা যায় এবারের বাজেট ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সহায়ক নয়।
বর্তমানে দেশে একটি বড় ধরনের বিতর্ক চলছে ই-ভোটিং নিয়ে। সরকারি দলসহ নির্বাচন কমিশন ও কিছু রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ই-ভোটিং চালুর কথা বলছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করে বলছে, সরকার ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই ই-ভোটিং চালু করতে চায়। ই-ভোটিংয়ের কিছু ভালো দিক আছে, আছে কিছু মন্দ দিকও। তবে মন্দ দিকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এর নিরাপত্তা বিষয়টি। বিভিন্ন দেশে যথাযথ নিরাপত্তার অভাবে ই-ভোটিংয়ে ভোট চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন এর নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার মাধ্যমে ই-ভোটিং সম্পর্কে সব মহলকে আস্থায় আনাই হচ্ছে প্রযুক্তিবিদদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই বিষয়টি তুলে ধরেই আমাদের এ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন।
কজ ওয়েব