লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গণিতের অলিগলি পর্ব-১০২
রহস্যময় ৭৩
ধাপ-০১ : গোপনে একটি কাগজের টুকরায় ৭৩ সংখ্যাটি লিখুন।
ধাপ-০২ : কাগজটি ভাঁজ করে বন্ধুর কাছে না খুলে রাখতে দিন।
ধাপ-০৩ : এবার বন্ধুটিকে বলুন চার অঙ্কের একটি সংখ্যা বেছে নিতে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন তিনি বেছে নিলেন ১২৩৪ সংখ্যাটি।
ধাপ-০৪ : সংখ্যাটি পাশাপাশি দু’বার বসিয়ে ক্যালকুলেটরে ঢুকাতে বলুন।
তাহলে আপনার বন্ধু ক্যালকুলেটরে আট অঙ্কের সংখ্যা ১২৩৪১২৩৪ লিখবেন।
ধাপ-০৫ : এবার নির্ভয়ে ঘোষণা দিন, এ সংখ্যাটি ১৭৩ দিয়ে বিভাজ্য।
বন্ধুকে বলুন, এই আট অঙ্কের সংখ্যাটিকে ক্যালকুলেটরের সাহায্যে ১৭৩ দিয়ে ভাগ করতে।
বন্ধু নিশ্চয় আপনাকে বলবেন, হ্যাঁ সংখ্যাটি ১৭৩ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য।
ধাপ-০৬ : এবার বন্ধুকে বলুন পাওয়া ভাগফলকে প্রথমে নেয়া চার অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে।
ধাপ-০৭ : তা না দেখেই বলে দিন এই ভাগফল ৭৩। আর বন্ধুর হাতে দেয়া ভাঁজ করা কাগজে এই ৭৩ সংখ্যাটিই লেখা আছে।
ধাপ-০৮ : এবার বন্ধুকে বলুন ভাঁজ করা কাগজটি খুলে দেখতে, আপনি ঠিক বলেছেন কি না। বন্ধুটি জানালেন, আপনি সঠিকই বলেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে আপনার পক্ষে তা বলে দেয়া সম্ভব হলো? এখানে কাজ করে সংখ্যা গণিতের খেলা। আসলে যেকোনো চার অঙ্কের সংখ্যা পাশাপাশি দুইবার লিখে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, তা সব সময় প্রথমে নেয়া চার অঙ্কের মূল সংখ্যাটির ১০০০১ গুণ হয়।
এখানে ১২৩৪ ক্ম ১০০০১ = ১২৩৪১২৩৪। আবার যেহেতু ১০০০১ = ৩৭ ক্ম ১৭৩। অতএব সহজেই ধরে নেয়া যায়, আট অঙ্কের সংখ্যাটি ৭৩, ১৩৭ এবং প্রথমে নেয়া চার অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। এই জ্ঞানটুকু মাথায় রেখেই সাজানো হয়েছে গণিতের এই খেলাটি। মনে রাখবেন, গণিতের খেলা মানেই গণিত জ্ঞানের কৌশলী প্রয়োগ। এতে নেই কোনো বিতর্ক।
বলে দিন মনের সংখ্যা
ধাপ-০১ : কাউকে বলুন ১ থেকে ৯ পর্যন্ত যেকোনো একটি সংখ্যা বেছে নিতে।
ধাপ-০২ : তাকে বলুন একটি ক্যালকুলেটর নিয়ে বেছে নেয়া সংখ্যাটিকে প্রথমে ৯ দিয়ে এবং এরপর ১২৩৪৫৬৭৯ (লক্ষ রাখুন, এ সংখ্যাটিতে ৮ অঙ্কটি নেই) দিয়ে গুণ করতে।
ধাপ-০৩ : সর্বশেষ পাওয়া গুণফল কত হলো তা আপনাকে দেখাতে বলুন। তাকে বলুন এই সংখ্যাটি দেখে আপনি বলে দিতে পারবেন প্রথম ধাপে তিনি কোন সংখ্যাটি বেছে নিয়েছিলেন।
কী করে বলবেন?
সর্বশেষ গুণফল ৫৫৫,৫৫৫,৫৫৫ হলে প্রথম ধাপে বেছে নেয়া সংখ্যাটি হবে ৫।
সর্বশেষ গুণফল ৩৩৩,৩৩৩,৩৩৩ হলে প্রথম ধাপে বেছে নেয়া সংখ্যাটি হবে ৩।
সর্বশেষ গুণফল ৪৪৪,৪৪৪,৪৪৪ হলে প্রথম ধাপে বেছে নেয়া সংখ্যাটি হবে ৪।
সর্বশেষ গুণফল ৯৯৯,৯৯৯,৯৯৯ হলে প্রথম ধাপে বেছে নেয়া সংখ্যাটি হবে ৯।
অতএব প্রথম ধাপে বেছে নেয়া সংখ্যা ১, ২, ৬, ৭ কিংবা ৮ হলে সর্বশেষ গুণফল কত হবে তা সহজেই বোঝা যায়।
এমনটি হওয়ার কারণ কী?
এমনটি হওয়ার কারণ, ৯ ক্ম ১২৩৪৫৬৯ = ১১১,১১১,১১১।
গুডলাক না ব্যাডলাক
ধাপ-০১ : তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা (ধরি ১২৩) নিতে বলুন।
ধাপ-০২ : সংখ্যাটি পাশাপাশি দুইবার ক্যালকুলেটরে লিখতে বলুন, লেখা হলো ১২৩১২৩।
ধাপ-০৩ : তাকে বলুন পাওয়া সংখ্যাটি (এখানে ১২৩১২৩) অবশ্যই ১১ দিয়ে বিভাজ্য।
ধাপ-০৪ : এবার বলুন সংখ্যাটিকে অর্থাৎ ১২৩১২৩-কে ১১ দিয়ে ভাগ করতে।
ধাপ-০৫ : পাওয়া ভাগফলটিকে এবার ১৩ দিয়ে ভাগ করতে বলুন।
ধাপ-০৬ : এই ভাগফলকে মূল সংখ্যা (১২৩) দিয়ে ভাগ করতে বলুন।
ধাপ-০৭ : সবশেষে পাওয়া ভাগফল হবে লাকি নাম্বার সেভেন ৭।
এ খেলায় সবশেষ ফলটিকে লাকি সেভেন না করে আনলাকি থার্টিনও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পাঁচ নম্বর ধাপে ১৩ দিয়ে ভাগ না করে ভাগ করতে হবে ৭ দিয়ে। তবে সবশেষে ভাগফল দাঁড়াবে আনলাকি ১৩।
এ খেলার রহস্যটা কোথায়?
তিন অঙ্কের কোনো সংখ্যাকে পাশাপাশি দুইবার লিখে তৈরি সংখ্যাটি সব সময় তিন অঙ্কের মূল সংখ্যার ১০০০১ গুণ হয়। এখানে ১২৩ ক্ম ১০০০১ = ১২৩১২৩। আর ১০০০১ = ৭ ক্ম ১১ ক্ম ১৩। অতএব ছয় অঙ্কের সংখ্যা ১২৩১২৩ অবশ্যই ৭, ১১ ও ১৩ দিয়ে বিভাজ্য।
রহস্যময় হিসাব
ধাপ-০১ : তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিন (১৮৫)।
ধাপ-০২ : সংখ্যাটি পাশাপাশি দুইবার লিখে একটি সংখ্যা তৈরি করুন (১৮৫১৮৫)।
ধাপ-০৩ : সংখ্যাটিকে ৭ দিয়ে ভাগ করুন ( ১৮৫১৮৬ গু ৭ = ২৬৪৫৫)।
ধাপ-০৪ : এই ভাগফলকে ১১ দিয়ে ভাগ করুন (২৬৪৫৫ গু ১১ = ২৪০৫)।
ধাপ-০৫ : এই ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করুন (২৪০৫ গু ১৩ = ১৮৫)।
আরেকটি উদাহরণ
ধাপ-০১ : তিন অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যা নিন (২৩৪)।
ধাপ-০২ : সংখ্যাটি দুইবার লিখে একটি সংখ্যা তৈরি করুন (২৩৪২৩৪)।
ধাপ-০৩ : সংখ্যাটিকে ৭ দিয়ে ভাগ করুন (২৩৪২৩৪ গু ৭ = ৩৩৪৬২)।
ধাপ-০৪ : এই ভাগফলকে ১১ দিয়ে ভাগ করুন (৩৩৪৬২ গু ১১ = ৩০৪২)।
ধাপ-০৫ : এই ভাগফলকে ১৩ দিয়ে ভাগ করুন (৩০৪২ গু ১৩ = ২৩৪)।
উপরের উদাহরণ দু’টি থেকে এটি স্পষ্ট, আমরা যদি যেকোনো তিন অঙ্কের সংখ্যা নিয়ে সংখ্যাটিকে পাশাপাশি দুইবার লিখে একটি সংখ্যা তৈরি করি এবং সংখ্যাটিকে ধারাবাহিকভাবে ৭, ১১ ও ১৩ দিয়ে ভাগ দিই, তবে সব সময় প্রথমে নেয়া মূল সংখ্যাটি পাব।
আরেকটি মজার হিসাব
ধাপ-০১ : এমন একটি মৌলিক সংখ্যা নিই, যা ৩-এর চেয়ে বড় (ধরি ১৯)।
স্মরণ করিয়ে দিই মৌলিক সংখ্যাটি হচ্ছে সেই সংখ্যা, যা ১ ও সেই সংখ্যা ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়।
ধাপ-০২ : নেয়া সংখ্যাটির বর্গ করুন (১৯ ক্ম ১৯ = ৩৬১)।
ধাপ-০৩ : এই বর্গফলে ১৪ যোগ করুন (৩৬১ + ১৪ = ৩৭৫)।
ধাপ-০৪ : এই যোগফলকে ১২ দিয়ে ভাগ করুন।
(৩৭৫-কে ১২ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ৩২, ভাগশেষ ৩)
লক্ষণীয়, উপরের ধাপগুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে শুরুতেই আমরা ৩-এর চেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা ১৯ না নিয়ে ২৩ বা অন্য কোনো মৌলিক সংখ্যা নিতাম, তাহলেও চতুর্থ ধাপ শেষে ভাগশেষ সব সময় ৩ পেতাম। আর এখানেই এই হিসাবের মজা। সহজেই অনুমেয়, আমরা তৃতীয় ধাপে ১৪ যোগ না করে যদি ১৫ যোগ করতাম, তবে সবশেষে অবশিষ্ট থাকত ৪। আর ১৭ যোগ করলে অবশিষ্ট থাকত ৬।