• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিতের অলিগলি, পর্ব-৫৯
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
গণিতের অলিগলি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিতের অলিগলি, পর্ব-৫৯



নার্সিসিস্টিক নাম্বার

Narcissistic নাম্বারকে armstrong number কিংবা plus perfect number নামেও ডাকা হয়। নার্সিসিস্টিক নাম্বারের সংজ্ঞা দেয়ার আগে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক। নিচের সংখ্যাগুলো লক্ষ করুন :

১৫৩ = ১৩ + ৫৩ + ৩৩
৩৭০ = ৩৩ + ৭৩ + ০৩
৩৭১ = ৩৩ + ৭৩ + ১৩
৪০৭ = ৪৩ + ০৩ + ৭৩
৯৪৭৪ = ৯৪ + ৪৪ + ৭৪ + ৪৪

এখানে প্রথম সংখ্যা ১৫৩-কে প্রকাশ করা হয়েছে এর প্রতিটি অঙ্ক ১, ৫ ও ৩-এর প্রত্যেকটির ত্রিঘাত বা কিউবের সমষ্টি আকারে। একইভাবে পরবর্তী তিনটি সংখ্যা ৩৭০, ৩৭১ ও ৪০৭-কে প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিটি সংখ্যার নিজ নিজ অঙ্কগুলোর কিউবের সমষ্টির আকারে। পঞ্চম ও সর্বশেষ ৯৪৭৪-এ রয়েছে চারটি অঙ্ক ৯, ৪, ৭, ৪। এই অঙ্কসমূহের প্রত্যেকটি চতুর্থ ঘাতের সমষ্টির আকারে প্রকাশ করে আমরা পেয়েছি ৯৪৭৪ = ৯৪+ ৪৪+৭৪+৪৪

লক্ষ করি, উপরে যে সংখ্যায় যতগুলো অঙ্ক রয়েছে, সে সংখ্যার প্রতিটি অঙ্কে তত ঘাত বা পাওয়ার বসিয়ে এগুলোর সমষ্টি করলে নেয়া মূল সংখ্যাটি পাওয়া যায়। প্রথম চারটি সংখ্যায় তিনটি অঙ্ক রয়েছে এবং ডান পাশে প্রতিটি অঙ্কের পাওয়ার বা ঘাত ৩ রয়েছে। পঞ্চম সংখ্যাটির অঙ্কসংখ্যা ৪টি। অতএব ডান পাশে এর প্রতিটি অঙ্কের ঘাত রয়েছে ৪।

এভাবে কোনো সংখ্যায় যদি n-সংখ্যক অঙ্ক থাকে এবং যদি সংখ্যাটিকে এর অঙ্কগুলোর n-তম ঘাতে উন্নীত করে এগুলোর সমষ্টি আকারে প্রকাশ করা যায়, তবে এই সংখ্যাটিকে আমরা বলবো নার্সিসিস্টিক নাম্বার।

সবচেয়ে বড় নার্সিসিস্টিক নাম্বার হচ্ছে :

১১৫১৩২২১৯০১৮৭৬৩৯৯২৫৬৫০৯৫৫৯৭৯৭৩৯৭১৫২২৪০১। এ সংখ্যাটিতে আছে ৩৯টি অঙ্ক। এর প্রতিটি অঙ্কে ৩৯তম ঘাত বসিয়ে সবগুলো যোগ করলে আমরা পাবো এ সংখ্যাটি। অর্থাৎ উল্লিখিত এ সংখ্যাটি = ১৩৯ + ১৩ ৯ + ৫ ৩৯ + ১৩৯ + ৩৩৯ + ২৩৯ + ২৩৯ + ১৩৯ + ৯৩৯ + ০৩৯ + ১৩৯ + ৮৩৯ + ৭৩৯ + ৬৩৯ + ৩৩৯ + ৯৩৯ + ৯৩৯ + ২৩৯ + ৫৩৯ + ৬৩৯ + ৫৩৯ + ০৩৯ + ৯৩৯ + ৫৩৯ + ৫৩৯ + ৯৩৯ + ৭৩৯ + ৯৩৯ + ৭৩৯ + ৩৩৯ + ৯৩৯ + ৭৩৯ + ১৩৯ + ৫৩৯ + ২৩৯ + ২৩৯ + ৪৩৯ + ০৩৯ + ১৩৯।

এভাবে আমরা n-সংখ্যক অঙ্কের কোনো সংখ্যা নিয়ে যদি দেখাতে পারি এর প্রতিটি অঙ্কের n-th power অর্থাৎ n-তম ঘাতের সমষ্টি ওই সংখ্যাটির সমান, তবে সে সংখ্যাটিকে আমরা বলবো নার্সিসিস্টিক নাম্বার।

উপরে সবশেষে ৩৯ অঙ্কের যে সংখ্যাটি উল্লেখ করা হয়েছে, বলা হয়েছে এটিই সবচেয়ে বড় নার্সিসিস্টিক নাম। কারণ, যখন কোনো সংখ্যার অঙ্কসংখ্যা যত বাড়ে, তখন n-সংখ্যক অঙ্কের সংখ্যার অঙ্কগুলোর n-তম ঘাতের সমষ্টি আকারে প্রকাশ করতে বেশি থেকে বেশি ৯-এর প্রয়োজন হয়। যেমন ১০৭-১ হচ্ছে এমন একটি সংখ্যা, যার অঙ্কসংখ্যা ৭০টি এবং এই ৭০টি অঙ্কের প্রতিটিই ৯। আর এগুলোর ৭০তম ঘাতের সমষ্টি = ৭০ X ৯৭০, যার মান প্রায় ৪.৩৮৬০৫১ X ১০৬৮, যার অঙ্ক সংখ্যা মাত্র ৬৯টি। অতএব ৭০ অঙ্কবিশিষ্ট কোনো সংখ্যা এবং অঙ্কগুলোর ৭০তম খাতের সমষ্টির সমান হওয়ার কোনো উপায় নেই।

এখন এটি সুস্পষ্ট, ১ হচ্ছে একটি এক অঙ্কের সংখ্যা এবং ১ = ১১। এমনটি সত্য প্রতিটি ১ অঙ্কের সংখ্যার জন্য। যেমন : ০ = ০১, ১ = ১১, ২ = ২১, ৩ = ৩১, ৪ = ৪১, ৫ = ৫১, ৬ = ৬১, ৭ = ৭১, ৮ = ৮১, ৯ = ৯১। তাহলে আমরা বলতে পারি প্রথম ১০টি নার্সিসিস্টিক নাম্বার হচ্ছে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। এখন দেখা যাক ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ সংখ্যাগুলো নার্সিসিস্টিক সংখ্যা কি না। আমরা দেখতে পাই :

১০ # ১২ + ০২
১১ # ১২ + ১২
১২ # ১২ + ২২
১৩ # ১২ + ৩২
১৪ # ১২ + ৪২

অতএব ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নার্সিসিস্টিক নাম্বার নয়। এভাবে দেখা গেছে দুই অঙ্কবিশিষ্ট কোনো সংখ্যাই নার্সিসিস্টিই সংখ্যা নয়। উল্লিখিত প্রথম ১০টি নার্সিসিস্টিক সংখ্যার পর পরবর্তী নার্সিসিস্টিক নাম্বারগুলো হচ্ছে তিন অঙ্কবিশিষ্ট এবং এগুলো হচ্ছে :

১৫৩ = ১৩ + ৫৩ + ৩৩
৩৭০ = ৩৩ + ৭৩ + ০৩
৩৭১ = ৩৩ + ৭৩ + ১৩
৪০৭ = ৪৩ +০৩ + ৭৩

চার অঙ্কবিশিষ্ট নার্সিসিস্টিক নাম্বারগুলো হচ্ছে :

১৬৩৪ = ১৪ + ৬৪ + ৩৪ + ৪৪
৮২০২ = ৮৪ + ২৪ + ০৪ + ২৪
৯৪৭৪ = ৯৪ + ৪৪ + ৭৪ + ৪৪

পাঁচ অঙ্কবিশিষ্ট নার্সিসিস্টিক নাম্বারগুলো হলো :

৫৪৭৪৮ = ৫৫ + ৪৫ + ৭৫ + ৪৫ + ৮৫
৯২৭২৭ = ৯৫ + ২৫ + ৭৫ + ২৫ + ৭৫
৯৩০৮৪ = ৯৫ +৩৫ + ০৫ + ৮৫ +৪৫

এভাবে এগিয়ে গিয়ে আমরা নার্সিসিস্টিক নাম্বারের একটা তালিকা অবশ্যই পাবো। দেখা গেছে, এ তালিকায় পাওয়া যাবে ৮৮টি নার্সিসিস্টিক নাম্বার। আর সর্বশেষে নার্সিসিস্টিক নাম্বারটি হবে উপরে উল্লিখিত ৩৯ অঙ্কবিশিষ্ট নার্সিসিস্টিক নাম্বারটি।

আমরা অনেকেই জানি narcissus নামের একটি ফুল রয়েছে। আসলে গ্রিক পুরাণের বর্ণনা মতে, নার্সিসাস নামে এক অনন্য সুন্দর গ্রিক যুবক ছিল। সে কোনো মেয়েকেই পাত্তা দিত না। এমনকি এক দেবতার মেয়ে পর্যন্ত তার কাছে প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হয়। ফলে দেবতার অভিশাপে সে নিজের প্রেমে অভিভূত হয়ে পড়ে। একদিন এক ঝরণাধারায় পানি খেতে গিয়ে পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে নিজের প্রতিচ্ছবির প্রেমে পড়ে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে দেখেই সেখানে মারা যায়। দেবতার মাধ্যমে তার মৃত্যুস্থানে জন্ম দেয় একটি ফুলগাছ। সেই গাছের ফুলের নামই নার্সিসাস।

নার্সিসিস্টিক নাম্বারের নাম দেয়া হয়েছে এই নার্সিসাসের নাম অনুসরণ করে। নার্সিসাস যেমনি ছিলেন নিজের প্রেমে অভিভূত, তেমনি আমাদের আলোচ্য নার্সিসিস্টিক নাম্বারও নিজের প্রেমেই মগ্ন। যেমন প্রতিটি নার্সিসিস্টিক নাম্বার প্রকাশ করা হয় এর নিজের অঙ্কগুলো দিয়েই। শুধু অঙ্কগুলোর ওপর একটি পাওয়ার বা ঘাত বসিয়ে এর সমষ্টি আকারে তা প্রকাশ করা হয়। সেজন্য এই সংখ্যার নাম নার্সিসিস্টিক নাম্বার দেয়া যথার্থ সিদ্ধান্ত। যদিও এই সংখ্যাটিকে কেউ কেউ ‘আর্মস্ট্রং নাম্বার’ কিংবা ‘প্লাস পারফেক্ট নাম্বার’ নামেও অভিহিত করেন। আমি প্রথম নামটিরই পক্ষে। বেশিরভাগ গণিতবিদের মতে নার্সিসিস্টিক নাম্বার নামটিই যথার্থ। সেজন্য তারা বলতে চান : Narcissistic numbers are number that are ‘in love with themselves’।

কেউ কেউ আবার নার্সিসিস্টিক নাম্বারের সংজ্ঞার পরিধি আরেকটু সম্প্রসারিত করতে চান। তারা বলতে চান, কোনো একটি সংখ্যাকে ওই সংখ্যার অঙ্কগুলোকে একবার করে ব্যবহার করে এগুলোতে + - X /, ঘাত, মূল, ফ্যাক্টরিয়েল ইত্যাদি গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে যদি প্রকাশ করা যায়, তবে সেটিও হবে নার্সিসিস্টিক নাম্বার।

এ সংজ্ঞা মেনে নিলে ৪৫৬ ও ১৯৪৪ হবে দুটি নার্সিসিস্টিক নাম্বার। কারণ

৪৫৬ = ৪ (ফ্যাক্টরিয়েল ৫ - ৬)
১৯৪৪ = ৯৪ X ফ্যাক্টরিয়েল ৪
এখানে ফ্যাক্টরিয়েল ৫ = ৫ X ৪ X ৩ X ২ X ১ = ১২০
ফ্যাক্টরিয়েল ৪ = ৪ X ৩ X ২ X ১ = ২৪

কেউ যদি ফ্যাক্টরিয়েল ও বর্গমূল () চিহ্ন বাদ রেখে কোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যার অঙ্কগুলো নিয়ে শুধু + - X /, আর ঘাত (Power) ব্যবহার করে প্রকাশ করে তবে তাকে বলা হয় Nice Friedman number। গণিতবিদেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ১০ হাজারের কম অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যাগুলোর জন্য এ ধরনের Nice Friedman number-এর সংখ্যা মাত্র ১৪টি।

১২৭ = - ১ + ২৭
৭৩৬ = ৭ + ৩৬
২১৮৭ = (২ + ১৮)৭
২৫৯২ = ২৫৯২
৩১২৫ = (৩১ + ২)৫
৩৮৬৪ = ৩ (-৮ + ৬৪)
৪০৯৬ = ৪০৯ + ৬
৩৪৩ = (৩ + ৪)৩
১২৮৫ = (১ + ২৮)৫
২৫০২ = ২ + ৫০২
২৭৩৭ = (২ X ৭)৩ - ৭
৩৬৮৫ = (৩৬ + ৮)৫
৩৯৭২ = ৩ + (৯ X ৭)২
৬৪৫৫ = (৬৬-৫)৫

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
২৭ ডিসেম্বর ২০১০, ৪:১২ AM
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস