• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সর্বোচ্চ করবাধার দেশে ডিজিটাল বিপ্লব হয় না
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সর্বোচ্চ করবাধার দেশে ডিজিটাল বিপ্লব হয় না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি বহুল আলোচিত প্রত্যাশা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। এজন্য প্রয়োজন আইসিটিকে ব্যবহার করে, বিশেষ করে মোবাইলপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে দেশের উৎপাদনশীলতা ও নাগরিক সাধারণের কল্যাণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েও গেছি কিছুটা, তবে এ অগ্রগতি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইসিটি বিপ্লব এখনও ঘটানো যায়নি। এর প্রমাণ মিলবে আমরা যদি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক বিশ্ব আইসিটি রিপোর্টের সিরিজগুলোর দিকে তাকাই। উল্লেখ্য, এই সিরিজ রিপোর্টগুলো হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপকভিত্তিক আইসিটি রিপোর্ট। এসব রিপোর্টে প্রতিটি দেশের আইসিটি অবস্থানচিত্র স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে ‘গ্লোবাল আইসিটি রিপোর্ট ২০১৫’ সংস্করণটি। এতে রয়েছে ১৪৩টি দেশের সার্বিক আইসিটি পরিস্থিতিসহ এসব দেশের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স।
এবারের এই নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম স্থানে। ভারত ৮৯তম ও পাকিস্তান ১১২তম স্থানে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ছিল ১১৪তম অবস্থানে, ২০১৪ সালে পাঁচ ঘর পিছিয়ে ১১৯তম স্থানে। লক্ষণীয়- ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের রেডিনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থানের যে ওঠানামা, বাস্তবে এর তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। আসলে উল্লিখিত এই তিন বছরে আমাদের অবস্থানের কোনো উন্নয়ন বা অবনতি ঘটেনি। কারণ, এই তিন বছরেই আমাদের স্কোর ছিল ৭-এর মধ্যে ৩.২। র্যা ঙ্কিংয়ের যে হেরফের লক্ষ করা যাচ্ছে, এর কারণ অন্যান্য দেশের স্কোর ভ্যালুর উন্নতি বা অবনতির কারণে। তাই ধরে নিতে হবে, উল্লিখিত এই তিন বছরে আমাদের আইসিটি পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি কোনোটিই ঘটেনি। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনের তৈরি ২০১৩ সালের আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের দিকে তাকালে একই চিত্র ধরা পড়বে। এই আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের র্যাআঙ্কিংয়ে ১৬৬ দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ১৪৫তম স্থানে। আমাদের এই অবস্থান আফগানিস্তান ছাড়া অন্যান্য প্রধান প্রধান দক্ষেণ এশীয় দেশের অবস্থানের নিচে। এরপরও পরিসংখ্যানের নানা কৌশলী উপস্থাপনার মাধ্যমে কেউ কেউ আইসিটি ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়নের ঢাকঢোল পেটাতে সচেষ্ট। আসলে আইসিটির জন্য নিজেদের তৈরির ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চল দাঁড়িয়ে। তাই বলছি, আমাদের প্রত্যাশিত আইসিটি বিপ্লবটি এখনও ঘটাতে পারিনি। অথচ আমাদের প্রত্যাশিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য খুবই প্রয়োজন এই বিপ্লবের।
এই বিপ্লব পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আমাদের অনেকদূর হাঁটতে হবে, নিতে হবে নানা পদক্ষেপ। তবে সামনে বাজেটের মাস থাকায় আমরা এখানে আমাদের করবাধা দূর করা এবং বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহিত করার তাগিদটাই দিতে চাই। আমরা জানি স্থায়ী অবকাঠামো এবং আরঅ্যান্ডডি খাতের ব্যয়ের জোগানটা প্রধানত সরকারি খাত থেকে আসে। কিন্তু, আইসিটি সেবার বেশিরভাগটাই আসে বেসরকারি খাতের অবদানসূত্রে। বেসরকারি খাতের বিনিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক সাড়া পরিলক্ষেত হয়েছে আইসিটির ক্ষেত্রেও, এসেছে বিদেশী বিনিয়োগও। এর ফলে বাংলাদেশে দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছে মোবাইল টেলিডেনসিটি ও মোবাইল ডিজিটাল সার্ভিস। তা সত্ত্বেও সার্ভিস প্রোভাইডারেরা মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইসিটি শিল্পের ওপর করারোপের উচ্চমাত্রা নিয়ে। স্বাধীন গবেষণায়ও দেখা গেছে, এসব উদ্বেগ যথেষ্ট যৌক্তিক এবং এর একটা সমাধান দরকার। আমরা আশা করি, বিষয়টি সংশ্লিষ্টজনেরা বিবেচনায় নেবেন।
অপরদিকে মিলার অ্যান্ড অ্যাটকিনসন ‘ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি ইনফরমেশন ফাউন্ডেশন’ তথা আইটিআইএফের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখিয়েছেন, এই সমীক্ষাধীন ১২৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ হারে আইসিটির ওপর করারোপ করা হয়। এ সমীক্ষায় যেসব আইসিটি পণ্য ও সেবার ওপর করের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত, সেগুলোর মধ্যে আছে : সাধারণ মোবাইল ফোন, স্মার্ট মোবাইল ফোন, কমপিউটার এবং ক্যামেরাসহ ডিজিটাল অডিও সার্ভিসের মতো অন্যান্য ডিজিটাল পণ্য। এ সমীক্ষা মতে, আইসিটি পণ্য ও সেবায় বাংলাদেশে কস্টের ৫৮ শতাংশই কর। এরপর এই করহারে যথাক্রমে রয়েছে তুরস্ক ২৬ শতাংশ, কঙ্গো ২৫ শতাংশ, ব্রাজিল ১৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ১২ শতাংশ, পাকিস্তান ১০ শতাংশ, নাইজেরিয়া ৮ শতাংশ, কেনিয়া ৭ শতাংশ, ঘানা ৫ শতাংশ ও সবচেয়ে কম হারে করারোপের দেশ চীন ৩ শতাংশ। স্পষ্টতই বাংলাদেশে আইসিটি বিপ্লবের ক্ষেত্রে এই করবাধা বড় মাপের। অবশ্যই এ করবাধা দূর করতে হবে। নইলে আইসিটি বিপ্লবের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হবে একটি দূরাশা মাত্র।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা