লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
ঢাকায় ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’ অনুষ্ঠিত
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’। উদ্বোধন করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন এবং সহকারী কমিশনার (আইসিটি) তানবীর মোহাম্মদ আজিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় ৩০টি স্টলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। মেলায় ছিল সেমিনার ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। মেলার ইন্টারনেট পার্টনার বাংলালায়নের সহযোগিতায় ছিল ফ্রি ওয়াইফাই জোন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। মেলার মিডিয়া পার্টনার ছিল তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা কমপিউটার জগৎ।
মেলার প্রথম দিন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) আয়োজনে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘ডিজিটাল সেন্টার’ শিরোনামের এ সেমিনারে বক্তারা ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে কীভাবে ই-কমার্সকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ই-ক্যাবের সভাপতি রাজিব আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক মীর শাহেদ আলী, ডিরেক্টর (গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স) রেজওয়ানুল হক জামী, ই-ক্যাব নারী উদ্যোক্তা ও ই-কমার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সারাহ জিতা এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের হেড অব অনলাইন প্রমোশন মো: গিয়াস উদ্দীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ই-ক্যাবের ডিরেক্টর (কমিউনিকেশন্স) আসিফ আহনাফ।
মীর শাহেদ আলী বলেন, ‘ই-কমার্স আমাদের দেশে চালু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। কিন্তু এ অল্প সময়ের মধ্যেই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তরুণ-তরুণীরা ই-কমার্সের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ই-কমার্স শুধুই একটি ওয়েবসাইট খুলে ফেললাম তা নয়, এটি একটি প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা গ্রাহকের কাছে তার পণ্য ও সেবা বিক্রি করবে। গ্রাহকের বিশ্বাস ও আস্থা এখানে খুবই জরুরি। তাই গ্রাহককে সময়মতো পণ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেন্টারগুলো বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে।’
রেজওয়ানুল হক জামী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশ গ্রামে বাস করে। দেশের সব জায়গায় ই-কমার্স ছড়িয়ে দিতে হলে গ্রামগুলোর দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অনলাইনে পণ্য অর্ডার করার পর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে অর্ডার পয়েন্ট ও ডেলিভারি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রয়েছে, তাই এখানে লোকজনের বিশ্বাসের ব্যাপারটাও তৈরি হবে।’
মো: গিয়াস উদ্দীন বাংলাদেশের ই-কমার্সের শুরুর দিকের কথা তুলে ধরেন। তিনি ২০০০ সালে মুন্সিজী ডটকম নামে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট চালু করেন। কিন্তু ই-কমার্স সম্পর্কে তখন কারও কোনো ধারণা ছিল না এবং প্রচুর সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স আমাদের দেশে জনপ্রিয় হতে সময় লেগেছে, কিন্তু এখন এর প্রচুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ই-কমার্সের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের দেশের সব মানুষের কাছে ই-কমার্সকে নিয়ে যেতে হবে।’
সারাহ জিতা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী এবং এরা কাজ করেই তাদের সংসার চালাচ্ছেন। প্রথাগত ব্যবসায় নারীরা আসতে চান না, কারণ বাইরে নারীদের প্রচুর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ই-কমার্স এ সমস্যার খুবই দারুণ একটি সমাধান। ঘরে বসেই একজন নারী তার পণ্য ও সেবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন। ই-ক্যাব থেকে আমরা সবসময় চেষ্টা করছি কীভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে সারাদেশে ৪৫৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদে যেসব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে সেগুলো সার্থকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজিব আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ই-কমার্সের অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ই-কমার্স তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা একে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে পারব। কেননা, শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষদের ই-কমার্স আরও বেশি দরকার। একজন গ্রামের মানুষের দামি ওষুধ দরকার। সেটা সে ই-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে কিনতে পারে। গ্রামের মানুষদের কাছে ই-কমার্সের সুফল পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার খুব বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।’
আলোচনা পর্ব শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তারা সেমিনারে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের ই-কমার্স সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
১৫ জানুয়ারি বিকেলে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এ সময় তিনি বলেন, ‘এক সময় তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে দেশের মানুষ হাসাহাসি করত। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই এর কার্যকারিতা সবার ভাবনাকে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে একে উপেক্ষা করে একদিনও চলা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এই উৎসব ভবিষ্যতেও আয়োজন করার আহবান জানান তিনি। সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন ও সহকারী কমিশনার (আইসিটি) তানবীর মোহাম্মদ, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমসহ অনেকেই। মেলায় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ চ্যাম্পিয়ন ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ রানারআপ হয়। মেলায় সেরা স্টলের মর্যাদা পায় ঢাকা জেলা পুলিশের একটি স্টল। এ ছাড়া মেলায় সেরা উদ্ভাবনী পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাসার মো: ফখরুজ্জামান।
‘বাংলাদেশ পুলিশ’ নামে একটি অ্যাপও মেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। এতে আছে দেশের সব পুলিশের নম্বর। প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি ইতোমধ্যেই ৪৫ হাজারেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে। কার্যকর এই অ্যাপটির নির্মাতা কনস্টেবল নাসিরকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়