• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল বাংলাদেশের বাজেট কিছু ভুল সঙ্কেত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বাজেট
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল বাংলাদেশের বাজেট কিছু ভুল সঙ্কেত
বাজেট অনেক বড় বিষয়। বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য কিছুটা সময় দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ এরচেয়েও বড়। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাজেট নিয়ে একসাথে আলোচনা এরচেয়েও বড় বিষয়। বাজেট পেশ করার পর আমার হাতে খুব স্বল্প সময় ছিল শুধু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা আইসিটির সাথে বাজেটের সম্পর্ক আলোচনা করার জন্য। কেউ কেউ বলতে পারেন, আপনি তো শুধু তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বাজেট নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমার নিজের কাছে আইসটি বড় বিষয় নয়, বড় বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আইসিটি আমাদের হাতিয়ার। ফলে আইসিটির সাথে বাজেট নিয়ে যে আলোচনা সেটি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার কিঞ্চিৎ প্রেক্ষেত মাত্র। আমি বাজেটের আলোকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও বিস্তৃত করে দেখতে চাই। সেজন্যই শুরুতেই বলে রাখি, এটি বাংলাদেশের বাজেট নিয়ে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। সামনের দিনে বিষয়টি আরও সম্প্রসারিত হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৪ জুন বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ সালের জন্য প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম বাজেট। মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে যে দেশের যাত্রা শুরু, সেই দেশ তলাহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছিল। আজ যখন এই দেশটিকে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট আমরা পেশ করতে দেখি, তখন হেনরি কিসিঞ্জারকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে ইচ্ছে করে। অভিনন্দন বাংলাদেশ!
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ : উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা’ সেস্নাগান দিয়েছেন। এবার তিনি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বস্ত্তত ৬ শতাংশের চক্রটি তিনি ভাঙতে চান। গত বাজেটে তিনি ‘সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ’ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন এবার তাকেই আরও একটু পরিমার্জিত করেছেন। তিনি সততার সাথেই বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা ও সঙ্কটসহ চ্যালেঞ্জগুলোর কথা স্বীকার করেছেন। জীবনের নবম বাজেট পেশ করার সময় তার মাঝে যে দৃঢ়তা ছিল সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। এবারই প্রথম তিনি শিশু বাজেট দিয়েছেন। এজন্য ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দও রেখেছেন। তবে জেলা বাজেট এখনও দিতে পারেননি। আমি নিজে জানি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য তিনি তার হাত কোনোদিন বন্ধ করেননি। সেই ২০০৯ সালে আমরা বাজেটে তার কাছে কিছু চাইলে প্রকল্পবিহীনভাবে ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এতদিনে তথ্যপ্রযুক্তি খাত অনেকটা পরিপূর্ণতা পেয়েছে। ২০০৯ সালে এই খাতে যখন তিনি কোনো প্রকল্প খুঁজে পাচ্ছিলেন না, এখন সেখানে তিনি সব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিতে পারবেন না। ২০০৯ সালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৭৬ কোটি টাকার বাজেটকে এখন শুধু আইসিটি ডিভিশনের বরাদ্দকে ১৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করাকে আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। গতবারের তুলনায় বাড়ানো হয় ৩৫৮ কোটি টাকা। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক ও সাহসী মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু আইসিটি ডিভিশনই নয়, ধারণা করি সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ বেড়েছে। গত ২ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সামনের বছর ষষ্ঠ শ্রেণির সব ছাত্র-ছাত্রী ট্যাবলেট পিসি পাবে। ধারণা করি, এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং এবারের বাজেটে তেমন বরাদ্দও হয়তো রয়েছে। বাজেট পেশের আগের মুহূর্তে কোনো মন্ত্রী এ বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে নিশ্চয়ই এমন ঘোষণা দেননি। যাহোক সরকারের বাজেট কর্মকা-- উন্নয়নমূলক বিষয়গুলো শুধু তখনই পর্যালোচনা করা যাবে, যখন আমাদের হাতে প্রকল্প বরাদ্দের দলিলটি আসবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেটের ইতিবাচক বিষয়গুলো হচ্ছে : ক. সফটওয়্যার ও সেবা খাতের কর অবকাশ ২০২৪ সাল অবধি বাড়ানো। খ. কমপিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ক্যামেরার শুল্ক ২৫ থেকে ১০ শতাংশ করা। গ. সিম কর ৩০০ থেকে ১০০ টাকা করা। ঘ. অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ ইত্যাদি সফটওয়্যার ছাড়া অন্য সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। ঙ. হাইটেক পার্কে যারা ব্যবসা করবেন তাদের জন্য বিদ্যুৎ ও ভ্যাট মওকুফ করা। আমরা বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে এই নিবন্ধের শেষ পর্যায়ে আলোচনা করব। তবে বাজেট নিয়ে আমার মূল আলোচনাটি বস্ত্তত ভিন্ন মাত্রার। এটি বাজেটের শুল্ককর বা বরাদ্দের মাঝে সীমিত করা যাবে না।
বাজেটের ভালো-মন্দ ও আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আরও আলোচনা হতেই থাকবে। সংসদে ও সংসদের বাইরের এসব আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসবে বাজেটের ভালো-মন্দ দিকগুলো। দেশের প্রেক্ষেত থেকে বাজেট দেখার চেয়ে আমাদের আগ্রহ অনেক বেশি থাকে এর ইনফোকম বিষয়গুলো নিয়ে। এরই মাঝে এফবিসিসিআই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। ১৪ দল খুব সঙ্গতকারণেই বাজেটকে অভিনন্দিত করেছে। বিএনপি ও ২০-দল এখনও একে কথামালার বাজেট বললেও সুস্পষ্ট কোনো সমালোচনা করেনি। সার্বিকভাবে বাজেট নিয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক সমালোচনার সুযোগ হয়তো নেই। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেটের বিষয়গুলো অনেকটাই আশাব্যঞ্জক। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেটের কিছু কর কাঠামো নিয়ে এরই মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের সেই প্রসঙ্গগুলোই আলোচনায় আনা দরকার।
অর্থমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাজেটে বলেছেন-
০১. কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন; ০২. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ; ০৩. কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ; ০৪. আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট কৌশল প্রণয়ন; ০৫. সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা; ০৬. রফতানির গতিশীলতা ও একই সাথে পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন।
তিনি চলতি বছরে জুলাই থেকে এসব লক্ষ্য পূরণের কাজ চলবে বলে বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেন। আমরা লক্ষ করেছি, এখানে শুধু আইসিটি সেবা রফতানির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই অভিপ্রায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারের পুরোটা হতে পারে না। সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চ্যালেঞ্জ যেমন আমাদের আছে, তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার চ্যালেঞ্জও আমাদের আছে। তবে আমাদের বোধহয় এটি বোঝা দরকার, আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার কিসে? আমার মনে হয়নি, ডিজিটাল বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় আকাঙক্ষা হিসেবে অর্থমন্ত্রীর বিবেচনায় রয়েছে। যদি সেই প্রেক্ষেতটি থাকতো তাহলে অর্থমন্ত্রী সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রাকে নতুন প্রেক্ষেতে ব্যাখ্যা করতেন।
আসল কথাটি অন্যরকম। শুধু এখানেই নয়, বাজেটের সামগ্রিক উপস্থাপনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই গুরুত্ব বহন করেনি, যা এর প্রাপ্য। আমি খুব বিনীতভাবে বলতে পারি, একুশ শতকের বাংলাদেশকে একেকবার একেক নামে অভিহিত না করে আমরা শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে যদি অভিহিত করতে পারি, তবেই আমাদের লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারতাম। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের টাকার শ্রাদ্ধ করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করার জন্য যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, সেখানেও ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিধাটিই প্রধান উপজীব্য হতে পারে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় আছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ যে বঙ্গবন্ধুর একুশ শতকের সোনার বাংলা তার প্রতিফলন নেই। আমি লক্ষ করেছি, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে অসাধারণ জনপ্রিয় ও সর্বস্তরে গৃহীত একটি ধারণাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হিসেবে বজায় রাখতে পারছে না। সরকারের সব কর্মকা-- ডিজিটাল বাংলাদেশ সেস্নাগানটির উচ্চ মর্যাদা থাকে না। আইসিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি ও বেসিসের মেলার সেস্নাগানগুলোতে এখন একটি প্রচেষ্টা লক্ষ করে চলেছি যে, পারতপক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ যেন না বলা হয়। বেসিস ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর থেকেই এর বিপরীতে অন্য সেস্নাগান দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। তাদের পাল্টা সেস্নাগান ছিল বাংলাদেশ নেক্সট। এটি দিয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর, সমৃদ্ধি বা উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার কী অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়, সেটি বুঝি না। এটি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সেবা রফতানির একটি সেস্নাগান হতে পারে। কিন্তু সেটি কি ডিজিটাল বাংলাদেশ সেস্নাগানের বিকল্প হতে পারে? সরকারের আইসিটি ডিভিশনের সাথে এরা যখন মেলার আয়োজন করে তখন বাংলাদেশ নেক্সট, মিট নিউ বাংলাদেশ এসব সেস্নাগান দেয়। এবার জোর করে বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপোর প্রস্তাবিত মিট নিউ বাংলাদেশ সেস্নাগানকে মিট ডিজিটাল বাংলাদেশ সেস্নাগান প্রস্তাব করা হয়েছে। জানি না, শেষ অবধি সেটি থাকবে কি না।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর আমরা সর্বশক্তি দিয়ে এর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করেই একটি কথা বলার চেষ্টা করেছি- ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্ত্তত একুশ শতকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। আমি বহুবার বলেছি, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষেত জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা সব ধরনের বৈষম্যহীন, প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকাশক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এটি বাঙালির উন্নত জীবনের প্রত্যাশা, স্বপ্ন ও আকাঙক্ষা। এটি বাংলাদেশের সব মানুষের ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থা। এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ, উন্নত ও ধনী দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার। এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। এটি বঙ্গবন্ধুর একুশ শতকের সোনার বাংলা।’
অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নটিকে কখনও সম্ভাবনার বাংলাদেশ বা কখনও মধ্যম আয়ের দেশ কিংবা কখনও সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ বলে অভিহিত করছেন। এই সঙ্কটটি সরকারের সারা অঙ্গেই আছে। বস্ত্তত ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে আত্মস্থ করার অবস্থাটি সরকারে নেই। সরকারি দল আওয়ামী লীগেও নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সরকারের সব অঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আইসিটি ডিভিশন বা তথ্যপ্রযুক্তিকেই বোঝে। ফলে কখনও ডিজিটাল বাংলাদেশ উচ্চস্বরে উচ্চারিত হয়, কখনও ডিজিটাল বাংলাদেশ তার পথ হারিয়ে ফেলে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বহমান উদ্যোগগুলো রয়েছে। আমি নিজে মনে করি অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য যথাযথ।
এ বছরের বাজেটে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আরও অনেকগুলো উদ্যোগের কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে মোটা দাগে আমার বলার কিছু নেই। তবে প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে প্রয়োজন অনুসারে বাস্তবায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমি বক্তব্যে আগেই বলেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাকে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে বিবেচনা না করার ফলে বাজেটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্থাপন করা হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি হয়েই আছে। আমি এখনও আশা করব, কোনো না কোনোভাবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশকেই আমাদের লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করা হবে।
আমরা লক্ষ করেছি, অনলাইন কেনাকাটায় ৪ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে মোবাইল সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক কর আরোপ করা হয়েছে।
প্রথমত, একটি ভালো কাজের সংশোধনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকার কমপিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ক্যামেরার ওপর করহার ২৫ থেকে ১০ শতাংশ করেছে। এই সিদ্ধামেত্মর ফলে ওয়েব ক্যাম বা সিসি ক্যামের দাম কমবে। কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরার দাম কমবে না। এর মানে দাঁড়াবে, সাধারণভাবে ব্যবহৃত ডিজিটাল ক্যামেরার চোরাচালান অব্যাহতই থেকে যাবে। আমি অনুরোধ করব, সরকার যেন ডিজিটাল ক্যামেরাকেও এই কর কমানোর আওতায় নিয়ে আসে।
অন্যদিকে ই-কমার্সের ওপর ভ্যাট আরোপ, ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার না করা ও মোবাইল সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক কর আরোপ সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে একটি ভুল সঙ্কেত দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছে, তার মাঝে একটি বড় বিষয় হলো ইন্টারনেটের প্রসার। একইভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসারও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের একটি বড় প্রত্যাশা। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, ই-কমার্স খাতে ট্রেড লাইসেন্স করার মতো অবস্থা তৈরি না করেই এর ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটি অাঁতুর ঘরেই শিশু মেরে ফেলার মতো একটি কাজ। অর্থমন্ত্রী নিজেই জানেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসার জিডিপির প্রবৃদ্ধি আনে। আমরা ২০০৯ সাল থেকেই ইন্টারনেটের ভ্যাট প্রত্যাহার করার কথা বলে আসছি। সরকার সেটি না করে নতুন করে সম্পূরক কর আরোপ করায় পুরো বিষয়টিকেই দুঃখজনক বলে মনে করতে হবে। আমি পুরো বিষয়গুলো সরকারকে সুবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ করব
ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস