সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১০ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় জাতীয় বাজেট এবং ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯’ ঘোষিত হওয়ার পরবর্তী সময়ের প্রথম জাতীয় বাজেট। স্বভাবতই আশা করা যায়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রয়াসী এ সরকারের আসন্ন এ বাজেটে জায়মান ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯’-এ ঘোষিত রূপকল্প তথা ভিশনের একটি জোরালো প্রতিফলন থাকবে।
উল্লেখ্য, আমাদের ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০০৯’-এ ঘোষিত রূপকল্প তথা ভিশন হচ্ছে : আইসিটি’র সম্প্রসারণ এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা; দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন নিশ্চিত করা, সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা বাড়ানো, সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব ও সুলভ জনসেবা নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ত্রিশ বছরের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। সে লক্ষ্যেই আইসিটি নীতিমালায় একটিমাত্র রূপকল্প, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্ত্ত ও ৩০৬টি করণীয় বিষয়কে পিরামিড আকারে সাজানো হয়েছে। রূপকল্প ও উদ্দেশ্যকে জাতীয় লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে। বৃহত্তর উদ্দেশ্যের সাথে মিল রেখে কৌশলগত বিষয়বস্ত্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সুফল আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। করণীয় বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য তিনটি মেয়াদের কথা ভাবা হয়েছে- স্বল্পমেয়াদী : ১৮ মাস বা কম, মধ্যমেয়াদী : ৫ বছর বা কম এবং দীর্ঘমেয়াদী : ১০ বছর বা কম।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আইসিটি নীতিমালা ২০০৯-এর রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে ৩০৬টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সবার আগে প্রয়োজন পর্যাপ্ত তহবিল। আর এ তহবিল আসার একমাত্র উৎস হচ্ছে আমাদের জাতীয় বাজেট। জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছাড়া এসবের বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হতে পারে না। আমাদের জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় অর্থমন্ত্রীর জন্য ম্যান্ডেট রয়েছে উন্নয়ন বাজেটের ৫ শতাংশ আইসিটি খাতে বরাদ্দ দেয়ার। এ পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ আসন্ন বাজেটে নিশ্চিত হলে আশা করতে পারি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে নিয়ে পৌঁছানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের আশা, অর্থমন্ত্রী তার আসন্ন বাজেট প্রণয়নে এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখবেন।
সদ্য প্রণীত ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা-২০০৯’ প্রণয়নোত্তর পরিবেশে আসা সরকারের প্রথম জাতীয় বাজেটে আইসিটি খাত যথাযথ গুরুত্ব পাবার অধিকারী। সে বিবেচনা থেকেই এবার আমরা কমপিউটার জগৎ-এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উপজীব্য করেছি আসন্ন বাজেট ও আইসিটি খাতকে। এর মাধ্যমে আমরা এ খাতের উন্নয়নে বাজেটে বিবেচ্য হওয়ার মতো অনেক বিষয়ের বিস্তারিত উপস্থাপনের প্রয়াসী হয়েছি। পাশাপাশি আসন্ন বাজেট প্রণেতাদের সক্রিয় বিবেচনার জন্য একটি সুপারিশমালাও তুলে ধরেছি। আমাদের আশা, এ সুপারিশমালায় উল্লিখিত বিষয়গুলো সুবিবেচনা শেষে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব পাবে। আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস, এ সুপারিশগুলো আসন্ন জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এগিয়ে যাবে।
সম্প্রতি আমাদের প্রযুক্তি জগতে একটি বিতর্ক বেশ জোরালোভাবে চলছে। ইউনিকোডে বাংলা লেখার ফ্রি সফটওয়্যার অভ্রের বিরুদ্ধে পাইরেসির অভিযোগ এনে সম্প্রতি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন আনন্দ কমপিউটার্সের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জববার। অভ্র সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অমিক্রনল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কপিরাইট অফিস। পত্র-পত্রিকায় ইতোমধ্যে এ নিয়ে অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগও শুরু হয়েছে জোরেশোরে। আমরা চাই আইনী কিংবা দু’পক্ষের সমঝোতার সূত্র ধরেই এ বিতর্কের একটি সুষ্ঠু সমাধান টানা হোক। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে আবিষ্কার উদ্ভাবন সুষ্ঠু পথ ধরে এগিয়ে যাক।