লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
স্মার্টফোন হারিয়ে গেলে কী করবেন?
স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা যায়, অনেক সুবিধা একটি ডিভাইসে পাওয়ায় মানুষ অনেক নয় বরং একটি ডিভাইস সাথে রাখতে পছন্দ করছে। ফোন কল, ইন্টারনেট ব্রাউজ, ছবি তোলা ও সংরক্ষণ, ই-মেইল দেখা বা পাঠানো, নোট রাখা, অডিও বা ভিডিও ধারণ, বিনোদনের জন্য গান শোনা, চলচ্চিত্র দেখা বা গেম খেলা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো আছেই, আরও আছে নানা কাজের নানা অ্যাপ। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনটি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফোনটি হারিয়ে গেলে ক্ষতির হিসাবটাও তাই লাগামছাড়া বলা চলে। আর্থিক ক্ষতি তো আছেই, আপনার গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। আপনার গুরুত্বপূর্ণ স্মার্টফোনটি হারিয়ে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য করণীয় কী তা-ই এই লেখার বিষয়বস্ত্ত।
প্রথমেই উদ্বিগ্ন হবেন না, খুঁজে দেখুন
স্মার্টফোনটি হারিয়ে গেলে প্রথমেই উদ্বিগ্ন হবেন না। হয়তো আশপাশেই কোথাও আছে, চুরি হয়নি। অন্য কোনো মোবাইল বা টেলিফোন থেকে আপনার মোবাইলে কল করে দেখুন। আশপাশে থাকলে রিংটোন বেজে উঠলেই পেয়ে যাবেন অথবা হয়তো এমন কোথাও আছে, যেখানে আপনার পরিচিত কেউ আছে। সে রিসিভ করেও আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে। তবে ফোন সাইলেন্ট থাকলে কিংবা ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গেলে এভাবে কাজ হবে না। সে ক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজে দেখতে হবে। হয়তো আপনি নিজেই কোথাও ফেলে রেখেছেন, পরে ভুলে গেছেন। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে দেখুন। না পেলে সম্ভাব্য সবাইকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করুন যে ফোনটি কোথাও ফেলে এসেছেন কি-না। অফিস, আত্মীয়স্বজনের বাসা, দোকান বা এমন কোথাও গিয়েছিলেন, যার আগে ফোনটি আপনার সাথে ছিল।
আপনার ফোনটি অন্য কারও হাতে যাওয়া মানেই যে চুরি হওয়া, তা কিন্তু না। হয়তো এমন কেউ পেয়েছে যে আপনাকে ফিরিয়ে দিতে চায়। সে ক্ষেত্রে একটা এসএমএস দিয়ে আপনার নাম এবং ফোন করার জন্য নম্বরসহ জানাতে পারেন যে, আপনি ফোনটি হারিয়ে ফেলেছেন এবং ফেরত দেয়ার অনুরোধ করতে পারেন। ছোট কোনো পুরস্কারের কথাও জানাতে পারেন।
ফোন ট্র্যাক করার চেষ্টা করুন
যখন বুঝলেন আপনার স্মার্টফোনটি কোনো দুর্বৃত্তের হাতে পড়েছে, তখন জানতে চেষ্টা করুন ফোনটি কোথায় আছে। আইফোনের জন্য ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ এবং অ্যান্ড্রয়িড ফোনের ক্ষেত্রে ‘অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস ম্যানেজার’ ব্যবহার করতে পারেন। আইফোন ট্র্যাক করতে লগঅন করতে হবে আইক্লাউড ওয়েবসাইটে। ম্যাপে আপনার আইফোনের সর্বশেষ অবস্থান দেখতে পাবেন। লক করতে পারবেন, এমনকি সব তথ্য মুছেও ফেলতে পারবেন। ‘লস্ট মোড’ চালু করলে আপনার আইফোনটি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ আপনার অ্যাপল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনটি আনলক করে। এমনকি ফ্যাক্টরি রিসেটেও কোনো কিছু হবে না।
অ্যান্ড্রয়িডের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস ম্যানেজারের ওয়েবসাইটে (www.google.com/ android/devicemanager) গিয়ে আপনার অ্যান্ড্রয়িড ফোনে যে গুগল অ্যাকাউন্ট যোগ করা আছে তা দিয়ে লগইন করতে হবে। ইন্টারনেটে যুক্ত অবস্থায় আপনার স্মার্টফোন সর্বশেষ কোথায় ছিল তা গুগল ম্যাপে দেখাবে। আপনি চাইলে আপনার ফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক করতে পারবেন, আবার চাইলে সব ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোনে একই ধরনের সুবিধা পেতে চাইলে www.windowsphone.com ঠিকানায় অ্যাক্সেস করতে হবে।
থার্ড পার্টি অ্যাপ দিয়েও এই কাজগুলো করা যায়। আজকাল সব অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপের সাথেই চুরি প্রতিরোধী অ্যান্টিথেফট সুবিধা থাকে। থার্ড পার্টি অ্যাপে অবশ্য অতিরিক্ত কিছু সুবিধা আছে। যেমন- ‘অ্যাভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যান্টিভাইরাস’ অ্যাপ দিয়ে অনলাইনের পাশাপাশি এসএমএস দিয়েও চুরি হয়ে যাওয়া স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনার স্মার্টফোনটি এমনভাবে লক করবেন, যা আনলক করা ছাড়া ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে। অ্যাপটি পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। এমন আরও অনেক অ্যাপ আছে গুগল প্লে স্টোরে। সবগুলোর কাজ মোটামুটি কাছাকাছি।
উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে
নিকটবর্তী থানায় জানিয়ে দিন
মনে রাখবেন, নিজে সরাসরি চুরি হওয়া হ্যান্ডসেট উদ্ধার করতে যাওয়া বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। আপনি পুলিশে রিপোর্ট করে আপনার কাছে থাকা চুরি হওয়া হ্যান্ডসেটের অবস্থান তাদের জানিয়ে দিন। বাকি কাজটা তাদের করতে দিন।
পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিন
আপনার মোবাইল ফোনটি আপনি কী কী কাজে লাগাতেন, তা মনে করুন। হয়তো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন, যার পাসওয়ার্ড মোবাইলেই আছে। অথবা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যাপে লগইন করা থাকতে পারে। আবার ক্লাউড স্টোরেজ সেবায় আপনার হাজারো ফাইল থাকতে পারে, যা অন্যের হাতে যাওয়া আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই কেউ যেন লগইন করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। যত দ্রুত করবেন, ততই আপনার জন্য ভালো। প্রথমেই যে অ্যাকাউন্টগুলো মোবাইলে লগইন করা ছিল, সেগুলোর পাসওয়ার্ড বদলে দিন। এতে স্মার্টফোন থেকে সেগুলোতে কেউ লগইন করতে পারবে না। প্রথমেই বদলাতে হবে ই-মেইলের পাসওয়ার্ড। কারণ, আপনার সব অ্যাকাউন্ট ই-মেইলের সাথে যুক্ত। যদি ফোনে কোনো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে পাসওয়ার্ডও বদলে ফেলুন।
নেটওয়ার্ক অপারেটরকে জানিয়ে দিন
আপনার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ফোন করে আপনার পরিবার বা পরিচিতজনদের ক্ষতি করতে পারে। নিদেনপক্ষে, আপনার পোস্টপেইড সংযোগ ব্যবহার করে আপনার অনেক টাকা খরচ করে ফেলতে পারে। তাই আপনার সংযোগটি বন্ধ করে দিতে নেটওয়ার্ক অপারেটরকে দ্রুত জানিয়ে রাখুন।
ভুল থেকে শিক্ষা নিন
ভুল যখন হয়েই গেছে, তা বদলাবার সুযোগ নেই। তাই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এখনই আপনার স্মার্টফোন এবং তাতে থাকা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিন। প্রথমেই একটি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করে নিন, যাতে অ্যান্টিথেফট সুবিধা আছে। বর্তমানে এমন অ্যাপ বিনামূল্যেই পাওয়া যাচ্ছে। ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ফোনে সংরক্ষণ না করে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাস্টার পাসওয়ার্ড বদলে দিলেই কেউ কোনো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ‘লস্ট পাস’ পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। ফোনে ‘ওউনার ইনফরমেশন’ যোগ করতে ভুলবেন না। এটা সেটিংস থেকে নির্ধারণ করে দেয়া যায়। *#০৬# ডায়াল করে ফোনের আইএমইআই নম্বরটি জেনে নিন এবং নিরাপদ জায়গায় আলাদা কাগজে সংরক্ষণ করুন
ফিডব্যাক : mhasanbogra@gmail.com