লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
এক্সপির সাপোর্ট প্রত্যাহার নিছকই জুজুবুড়ির ভয়
আমার প্রিয় পত্রিকা মাসিক কমপিউটার জগৎ সবসময় প্রযুক্তিপ্রেমী, ব্যবসায়ীসহ এ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক নিত্যনতুন আগাম তথ্য দিয়ে যেমন সমৃদ্ধ ও আপডেট রাখতে সহায়তা করে থাকে, তেমনি সতর্ক করে থাকে ভবিষ্যতের কোনো সমূহ বিপদের আলামত দেখলে। আর এ কারণেই মাইক্রোসফটের ঘোষণা অনুযায়ী ৮ এপ্রিল ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট তার উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সিকিউরিটি আপডেট বন্ধ করে দেয়ার সময় ঘনিয়ে এলে কমপিউটার জগৎ এক্সপি ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে ব্যবহারকারীর পাতায় ‘বিদায় উইন্ডোজ এক্সপি : ব্যবহাকারীরা কী করবেন?’ শিরোনামে এক লেখা প্রকাশ করে। প্রযুক্তিবিশ্বের অনেকে এ জন্য ভয়াবহ আতঙ্কিত ছিলেন মারাত্মক কোনো বিপর্যয়ের ভয়ে। বিস্ময়কর ব্যাপার, ৮ এপ্রিল ২০১৪ সালে এক্সপির সিকিউরিটি আপডেট ইস্যু মাইক্রোসফট বন্ধ করার পরও এটি এখনও উইন্ডোজ ঘরানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় এবং ব্যবহার হওয়া অপারেটি সিস্টেম। সারা বিশ্বে বাসায় ও অফিসে পিসি ব্যবহারকারীদের প্রায় প্রতি তিনজনের একজন এখনও এক্সপি ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, এটিএম, ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এজেন্সি, এনজিওসহ অনেক কনজ্যুমার ব্যবসায় ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সিস্টেমে এখনও এক্সপি ব্যবহার হচ্ছে।
সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মেশিনে এখনও উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার হবে যেগুলো ভাইরাস, স্পাইওয়্যার ও ম্যালিশাস আক্রমণের জন্য খুবই ভলনিয়ারিবল হয়ে পড়বে অর্থাৎ খুবই অনিরাপদ সিস্টেমে পরিণত হবে মাইক্রোসফটের সিকিউরিটি সাপোর্ট প্রত্যাহার করে নেয়ার পর। কিন্তু Netmarketshare.com, NetApplication-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে এক্সপি ব্যবহারকারী ২৭.৬৯ শতাংশ। পক্ষান্তরে উইন্ডোজ ৭-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪৮ শতাংশ, অন্যান্য ৪.০১ শতাংশ, লিনআক্স ১.৪৯ শতাংশ, ভিস্তা ২.৯৯ শতাংশ, ম্যাক ওএস ৩.৭৫ শতাংশ, উইন্ডোজ ৮.১ ৪.৮৯ শতাংশ এবং উইন্ডোজ ৮ ৬.৪১ শতাংশ। এ তথ্য পর্যালোচনা করে সহজেই বুঝা যায়, এক্সপির সিকিউরিটি আপডেট ইস্যু মাইক্রোসফট বন্ধ করার বিষয়টি মাইক্রোসফটের ব্যবহারকারীরা খুব একটা আমলে নেননি মূলত আর্থিক কারণেই। কেননা, এক্সপি থেকে উন্নততর ভার্সনে আপডেট করলে উন্নত ভার্সনের উপযোগী হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হবে। যার ফলে ব্যবহারকারীকে বিরাট অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য ঝামেলা তো আছেই। তবে যাই হোক, এক্সপির সিকিউরিটি আপডেট ইস্যু মাইক্রোসফট বন্ধ করার কারণে ভয়াবহ মারাত্মক কোনো বিপর্যয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে, এমন তথ্য কারও জানা নেই বা শোনা যায়নি। এক্সপি ব্যবহারকারীদের বেশিভাগই মনে করেন, মাইক্রোসফটের এটি একটি ব্যবসায়িক কূটকৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।
যদি আপনি একজন এক্সপি ভক্ত বা ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে উইন্ডোজ ব্যবহারের শেয়ার পরিসংখ্যান জানার জন¨ Netmarketshare.com, NetApplication সাইটে ভিজিট করে দেখতে পারেন। এরা পরিমাপ করে ওয়েব ব্রাউজারের ব্যবহারের শেয়ার, সার্চ ইঞ্জিনের ব্যবহারের শেয়ার এবং অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের শেয়ার।
বিস্ময়কর হলো, ৮ এপ্রিল ২০১৪ এক্সপির সিকিউরিটি আপডেট ইস্যু মাইক্রোসফট বন্ধ করার ফলে কী কী ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ব্যবহারকারীরা পড়তে পারেন, তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম যে প্রচারণা চালিয়ে ছিল তা নিছকই উইন্টেল চক্রের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয় কিংবা এটি নিছকই এক জুজুবুড়ির ভয় ছাড়া আর কিছু নয়।
এ লেখায় উইন্ডোজ এক্সপির প্রত্যাহারের পরের যে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের শেয়ারের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে উইন্ডোজ এক্সপির সাপোর্ট প্রত্যাহারের বিষয়টি নিছকই জুজুবুড়ির ভয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, এক্সপির সাপোর্ট প্রত্যাহার করে নেয়ার পর প্রায় তিন মাস হতে চলছে, অথচ কোনো মারাত্মক বিপর্যয়ের তথ্য বা খবর শোনা যায়নি কোনো গণমাধ্যম বা অন্য কোনো উৎস থেকে, যার কারণ হতে পারে উইন্ডোজ এক্সপির ত্রম্নটিপূর্ণ সিকিউরিটি।
আফতাবউদ্দিন
রুহিতপুর, কেরানীগঞ্জ
দেশে প্রথম স্মার্টফোন তৈরিতে ইন্ডিগো গ্রুপের কার্যক্রম সফল হোক
বাংলাদেশে প্রযুক্তি বাজার যথেষ্ট বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সরকারি কোম্পানি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ছাড়া অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে তেমন মনোনিবেশ করেনি বা উদ্যোগী হয়নি। অবশ্য এর পেছনে বিভিন্ন কারণও রয়েছে। যেমন- আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দক্ষ জনবলের অভাবসহ অবকাঠামোগত দুর্বলতা।
সরকারি কোম্পানি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) ইতোমধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ দোয়েল তৈরি করতে শুরু করে, যা অবশ্য উৎপাদনের শুরুতেই হোঁচট খায় এবং এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে সফলতার আলো দেখতে পায়নি। তারপরও সরকারি কোম্পানি টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কেননা, ব্যর্থতাই সফলতার ভিত তৈরি করে।
সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো সংযোজিত হতে যাচ্ছে স্মার্ট মোবাইল হ্যান্ডসেট। এর সাথে কম দামের ফিচার ফোনসেট সংযোজন করা হবে। সরকারি কোম্পানি টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) সহযোগিতায় এ স্মার্টফোন বানাবে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ডিগো গ্রুপ। ইতোমধ্যেই হ্যান্ডসেট বানানোর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, ‘ওকে মোবাইল ব্র্যান্ড’ নামের এ স্মার্টফোন ঈদুল ফিতরের আগেই বাজারে আসবে। স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন সংযোজনের জন্য এখন প্লান্ট বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্লান্ট স্থাপনের জন্য টেশিসের কাছ থেকে জায়গা ও বিদ্যমান অবকাঠামো ভাড়া নিয়েছে দেশীয় বেসরকারি কোম্পানি ইন্ডিগো গ্রুপ। গ্রুপটি চীন থেকে মোবাইল স্মার্টফোন বানানোর প্রযুক্তি আনছে। আমেরিকান ব্র্যান্ড ‘ওকে মোবাইল’ নিয়ে হ্যান্ডসেট বাজারজাত করবে কোম্পানিটি।
আমরা চাই, আরও বেশি করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এভাবে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন আইসিটি পণ্য তৈরির উদ্যোগ নেবে এবং বাংলাদেশকে একটি ভেন্ডরকেন্দ্রিক দেশের অপবাদ থেকে বের করে নিয়ে আসবে। এর ফলে এ দেশের বিপুলসংখ্যক বেকার যুবকের যেমন কর্মসংস্থান হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতির ভিতও মজবুত হবে। সেই সাথে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি ভেন্ডরকেন্দ্রিক দেশ থেকে আইসিটি পণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে বাংলাদেশ যে একটি বিনিয়োগবান্ধব দেশ, তা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়নে সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। দূর করতে হবে সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কমিশনভোগীদের দৌরাত্ম্য। নিশ্চিত করতে হবে সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা।
সম্প্রতি চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ অন্য অনেক দেশে শ্রমমূল্য বেড়ে গেছে। এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমমূল্য এখনও অনেক কম, যা বিনিয়োগকারীদেরকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের প্রধান চাহিদা হলো কম শ্রমমূল্য এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। সুতরাং এ সুযোগটি এখনই কাজে লাগানো যায়।
আমজাদ হোসেন
পলস্নবী, ঢাকা