লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গোল্ডেন রেশিওর অনন্য মজা
শুরুতেই জেনে নেয়া চাই গোল্ডেন রেশিও কী। গোল্ডেন রেশিও হচ্ছে একটি বিশেষ সংখ্যা। একটি রেখাকে এমন দুই ভাগে ভাগ করে এর বড় অংশটিকে ছোট অংশ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, যদি পুরো রেখাকে বড় অংশ দিয়ে ভাগ করলে একই সংখ্যা পাওয়া যায়, তখন এই সংখ্যাকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও। আর কার্যত এই ভাগফল বা গোল্ডেন রেশিওর মান দাঁড়ায় ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৯৪৮৪২০...। এই মানকে মোটামুটি হিসেবে ধরা হয় ১.৬১৮। এই সংখ্যাটিই গোল্ডেন রেশিও হিসেবে গণিত জগতে সুপরিচিত। এটি আবিষ্কার ও পুনঃআবিষ্কার হয়েছে বহুবার। আর এটি পরিচিত কয়েকটি নামে- গোল্ডেন মিন, গোল্ডেন সেকশন ও ডিভাইন প্রপরশন।
যদি যেকোনো রেখা নিয়ে রেখাটিকে এমনভাবে দু’টি অসমান অংশে ভাগ করি, যার বড় অংশ a এবং ছোট অংশ b, তখন গোল্ডেন রেশিওকে আমরা সমীকরণের আকারে লিখতে পারি এভাবে-
a/b = (a+b)/a = 1.6180339887498948420 …
এই গোল্ডেন রেশিওর সাথে মজার সম্পর্ক রয়েছে ফেবোনাচ্চি নাম্বার, ব্রাডি নাম্বার ও লুকাস নাম্বারের। এ লেখায় আজ আমরা তাই জানব। প্রথমেই আসি ফেবোনাচ্চি নাম্বারের বিষয়ে।
১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪...
উপরের সংখ্যাধারাটি লক্ষ করুন। এখানে প্রথমে বসানো হয়েছে ১ এবং ১। এরপর প্রতিটি সংখ্যা এমনভাবে বসানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি সংখ্যাই এর পূর্ববর্তী দু’টি সংখ্যার যোগফলের সমান হয়। এভাবে আসা যেসব সংখ্যা নিয়ে এই সংখ্যাধারাটি তৈরি করা হয়েছে, এই সংখ্যাধারাটির সংখ্যাগুলোকে বলা হয় ফেবোনাচ্চি নাম্বার। আর ধারাটির নাম ফেবোনাচ্চি নাম্বার সিরিজ বা সংখ্যাধারা। এই ধারায় রয়েছে অসংখ্য সংখ্যা। গণিতবিদেরা লক্ষ করেছেন এই ফেবোনাচ্চি নাম্বার সিরিজের সংখ্যাগুলোর সাথে গোল্ডেন রেশিওর একটি মজার সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কটি হচ্ছে, এই সিরিজের মধ্য থেকে যেকোনো একটি সংখ্যা নিয়ে এর পূর্ববর্তী সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে এই ভাগফল মোটামুটি গোল্ডেন রেশিওর সমান হয়। যেমন- উপরের ফেবোনাচ্চি সংখ্যাধারায় ৩৪ সংখ্যাটির আগে রয়েছে ১৩। এখন আমরা যদি ৩৪-কে ১৩ দিয়ে ভাগ করি, তবে ভাগফল দাঁড়ায় ১.৬১৯০৪৭...। আর এই সংখ্যামান মোটামুটি গোল্ডেন রেশিও ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৯৪৮৪৮২০৪৫৮৬৮...-এর মানের সমান। একইভাবে ২১-কে এর আগের সংখ্যা ১৩ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল দাঁড়ায় ১.৬১৫৩৮৪৬১৫৩৮৪..., এবং ১৩-কে এর আগের সংখ্যা ৮ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ১.৬২৫। আর এই উভয় ভাগফলই মোটামুটিভাবে গোল্ডেন রেশিওর মানের সমান।
আমরা যদি উপরের ফেবোনাচ্চি নাম্বার সিরিজটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই, তবে সামনের দিকে আরও বড় বড় ফেবোনাচ্চি সংখ্যার দেখা পাব। এক সময় সংখ্যাধারাটির একটি স্থানে ধারাবাহিকভাবে দেখতে পাব এসব সংখ্যা।
২১৭৮৩০৯, ৩৫২৪৫৭৮, ৫৭০২৮৮৭, ৯২২৭৪৬৫, ১৪৯৩০৩৫২, ২৪১৫৭৮১৭, ... এই বড় বড় ফেবোনাচ্চি সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাবে পরের সংখ্যাকে আগের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল আসে, তার মান মোটমুটিভাবে গোল্ডেন রেশিওর সমান। যেমন-
৩৫২৪৫৭৮ ২১৭৮৩০৯ = ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৯৮৯০৯৭০৪৭২
৫৭০২৮৮৭ ৩৫২৪৫৭৮ = ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৫৮৮৪৮৪৫০০
৯২২৭৪৬৫ ৫৭০২৮৮৭ = ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৯০৮৫৯৮৯২৫৪
১৪৯৩০৩৫২ ৯২২৭৪৬৫ = ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৮৯৫৯৫৮৯৬৫
২৪১৫৭৮১৭ ১৪৯৩০৩৫২ = ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৯৬৮৫৪৪০৭৭
এবারে আমরা দেখব, গোল্ডেন রেশিওর সাথে ব্রাডি নাম্বারের মজার সম্পর্কটা কোথায়। ধরা যাক, আমরা প্রথমে সুনির্দিষ্ট দু’টি সংখ্যা নিলাম। একটি ২৩০৮ এবং অপরটি ৪২৬১। এই সংখ্যা দু’টি নিয়ে আমরা নিচের মতো করে একটি নাম্বার সিকুয়েন্স বা সংখ্যাধারা তৈরি করতে পারি। মনে রাখতে হবে, প্রথমে নেয়া এই দু’টি সংখ্যা কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। সংখ্যাধারাটি এই দু’টি সংখ্যা দিয়ে অবশ্যই শুরু করতে হবে। লক্ষ করুন, আমরা এই সংখ্যাধারাটি তৈরি করেছি এমনভাবে, যাতে প্রথমে নেয়া দু’টি সংখ্যা ছাড়া বাকি পরবর্তী প্রতিটি সংখ্যাই এর পূর্ববর্তী সংখ্যা দু’টির যোগফলের সমান।
২৩০৮, ৪২৬১, ৬৫৬৯, ১০৮৩০, ১৭৩৯৯, ২৮২২৯, ৪৫৬২৮, ৭৩৮৫৭, ১১৯৪৮৫, ১৯৩৩৪২, ৩১২৮২৭, ৫০৬১৬৯, ৮১৮৯৯৬, ১৩২৫১৬৫, ২১৪৪১৬১, ৩৪৬৯৩২৬, ৫৬১৩৪৮৭, ৯০৮২৮১৩, ১৪৬৯৬৩০০, ২৩৭৭৯১১৩, ৩৮৪৭৫৪১৩, ৬২২৫৪৫২৬, ১০০৭২৯৯৩৯, ১৬২৯৮৪৪৬৫, ২৬৩৭১৪৪০৪, ৪২৬৬৯৮৮৬৯, ৬৯০৪১৩২৭৩, ১১১৭১১২১৪২, ১৮০৭৫২৫৪১৫, ২৯২৪৬৩৭৫৫৭, ৪৭৩২১৬২৯৭২, ৭৬৫৬৮০০৫২৯, ...
এভাবে ২৩০৮ এবং ৪২৬১ নিয়ে শুরু করে উল্লিখিত নিয়মানুসারে আমরা যে ব্রাডি নাম্বার সিরিজ তৈরি করি, এ সিরিজের প্রতিটি সংখ্যা একটি ব্রাডি নাম্বার। ব্রাডি সিরিজের নাম্বারগুলোও আগের ফেবোনাচ্চি নাম্বারের মতো একই সম্পর্ক রাখে। অর্থাৎ ব্রাডি সিরিজ থেকে যেকোনো সংখ্যা নিয়ে এর আগের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল আগের মতোই মোটামুটি গোল্ডেন রেশিওর মানের সমান হয়। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি সংখ্যা নিয়ে উদাহরণ দেয়া যাক।
১৩২৫১৬৫ ৮১৮৯৯৬ = ১.৬১৮০৩৫৯৮৫৫২৩৭৩৮৮২১৬৭, যা মোটামুটিভাবে গোল্ডেন রেশিওর সমান। এভাবে আমরা উপরে দেয়া ব্রাডি নাম্বার সিরিজ থেকে যেকোনো ব্রাডি নাম্বার নিয়ে এর পূর্ববর্তী ব্রাডি নাম্বার দিয়ে ভাগ করলে এই ভাগফল গোল্ডেন রেশিও তথা ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭৪৯৮৮৭৪৯৮৯৪৮৪২০...-এর মানের সমান।
আমরা জানি লুকাস নাম্বার এবং এসব নাম্বার দিয়ে গঠিত লুকাস নাম্বার সিরিজ বলে এক ধরনের নাম্বার সিরিজ রয়েছে। প্রথমে ২ ও ১ এই সংখ্যা নিয়ে লুকাস সিরিজ লেখা শুরু করা হয়। এরপর আগের দু’টির যোগফল হয় এর পরের সংখ্যা। এভাবে পূর্ববর্তী দুই সংখ্যার যোগফল পরপর বসিয়ে আমরা তৈরি করতে পারি লুকাস নাম্বার সিরিজ। তাহলে লুকাস সিরিজটি দাঁড়ায় এমন-
২, ১, ৩, ৪, ৭, ১১, ১৮, ২৯, ৪৭, ৭৬, ...। এই সিরিজের প্রতিটি সংখ্যা একেকটি লুকাস নাম্বার। গণিতবিদেরা গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন লুকাস সিরিজের সংখ্যাগুলো গোল্ডেন রেশিওর সাথে একটি মজার সম্পর্ক রাখে।
আমরা জনি, গোল্ডেন রেশিও (জিআর) = ১.৬৮০৩৩৯৮১...
অতএব,
জিআর২ = ২.৬১৮০৩ ... = ৩ (পূর্ণ সংখ্যায়),
জিআর৩ = ৪.২৩৬০৬ ... = ৪ (পূর্ণ সংখ্যায়),
জিআর৪ = ৬.৮৫৪৪০ ... = ৭ (পূর্ণ সংখ্যায়),
জিআর৫ = ১১.০৯০১৬ ... = ১১ (পূর্ণ সংখ্যায়),
.. .. .. .. .. .. ..
এই মানগুলোকে সিরিজ আকারে সাজালে আমরা পাই-
জিআর২, জিআর৩, জিআর৪, জিআর৫ ... = ৩, ৪, ৭, ১১, ...। আর এই সিরিজটি লুকাস সিরিজের প্রথম দু’টি সংখ্যা বাদ দিলে যে সিরিজ দাঁড়ায় তার সাথে মিলে যায়। আর এটিই হচ্ছে লুকাস নাম্বার সিরিজের সাথে গোল্ডেন রেশিওর মজার সম্পর্ক।
-গণিতদাদু