• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > অরিগামি রোবট: হাঁটা আরোহণ সাঁতার বহন- সবই করবে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
অরিগামি রোবট: হাঁটা আরোহণ সাঁতার বহন- সবই করবে
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি ও টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি যৌথ গবেষক দল উদ্ভাবন করেছে একটি ছোট্ট অরিগামি রোবট। অরিগামি হচ্ছে কাগজের কৌশলী ভাঁজের মাধ্যমে নানা কাঠামো তৈরি করা। যেমন- কাগজে ভাঁজের পর ভাঁজ দিয়ে নানা জীব-জানোয়ার বা ভৌতবস্ত্তর কাঠামো তৈরির শিল্পের নাম অরিগামি, যা জাপানের নিজস্ব সংস্কৃতির এক গৌরবজনক দিক। আমরা স্কুলজীবনে কাগজ ভাঁজ করে কখনও উড়োজাহাজ, কখনও নৌকা, কিংবা কখনও হাতি-ঘোড়া কিংবা অন্য কিছু বানাতাম- এগুলো অরিগামিরই অংশ। মাত্র ১.৭ সেন্টিমিটার বর্গ আকারের আলোচ্য এই রোবটটি নিজে নিজে সংযোজন ঘটিয়ে একটি অরিগামি কাঠামোর আকার দিতে পারে বলেই এই রোবটের নাম দেয়া হয়েছে ‘অরিগামি রোবট’। এই রোবট হাঁটা-চলা করতে পারে বিভিন্ন তলে বা সারফেসে। ঢালু বা খাড়াপথে আরোহণ করতে পারে। এটি বহন করতে পারে এর নিজের ওজনের দ্বিগুণ ওজনের কোনো বস্ত্ত। খনন করতে পারে। সাঁতার কাটতে পারে অগভীর পানিতে। খুঁজে বের করতে পারে অজানা গোপন বস্ত্ত। এর শুধু চুম্বক অংশটুকু রেখে বাকি সবটুকু গলে যেতে পারে। ক্যাপসুল মুখে পুরে গিলে খেলে পেটের ভেতরেই ভাঁজ খুলে বেরিয়ে এসে আরাধ্য কাজ করতে পারে অ্যাসিটোন দ্রবণে। রোবটটির এই সক্ষমতা আমরা কাজে লাগাতে পারি চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এর ডিজাইন করা হয়েছে গিলে খাওয়ার উপযোগী করে। জেল ক্যাপসুলে পুরে এটি গিলে খাওয়া যাবে। গিলে খাওয়া ক্যাপসুল বাহ্যিক চুম্বকক্ষেত্রের মাধ্যমে চালিত হয়ে পাকস্থলীর দেয়াল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে চলে অনাকাঙিক্ষত কোনো বস্ত্ত পেট থেকে বের করে আনতে পারবে। বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করছেন, তারা এর চেয়েও ছোট আকারের অরিগামি রোবট উদ্ভাবন করতে পারবেন, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্যান্সার কোষ বের করে আনতে পারবে। রক্তনালীতে জমাটবাঁধা রক্ত সরিয়ে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে সহায়ক হতে পারে এই রোবট। অধিকতর ছোট আকারের এসব রোবটে ব্যবহার করতে হবে আরও অতিরিক্ত সেন্সর, যা হবে পানিতে দ্রবণীয়। এসব রোবটকে বাইরে থেকে নির্দেশনা দিয়ে কাজ করানো যাবে।
প্রচলিত ধারণায় এটিকে রোবট বলা যায় না। বরং এটি তৈরি কিছু মুভিং পার্টস ও ইলেকট্রনিকসের সাহায্যে। এটি ঠিক একটি পাতলা কাগজের ভাঁজ করা আকারের মতো। এটি প্রধানত তৈরি শূকরের শুকনো ক্ষুদ্রান্ত (ড্রাইড পিগ ইনটেস্টাইন) থেকে। রোবটের বাইরের দুটি স্তর মাঝখানে চাপা দিয়ে রাখে একটি পদার্থকে, যা সঙ্কুচিত হয় শরীরের তাপের প্রভাবে। ফোল্ড (ভাঁজ) বা স্লিট (সঙ্কীর্ণ ফাটল বা ফাঁক) এর একটি প্যাটার্ন, যা রোবটটিতে এই সঙ্কুচিত হওয়ার বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমে এটি বাদ্যযন্ত্র অ্যাকর্ডিয়ানের ভাঁজের মতো সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে পারে পাকস্থলীর মধ্যে এর পথে চলার সময়। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আসে এর ‘stick-slip’ motion থেকে। এটি চলার সময় একটি সারফেস বা তলে স্টিক থাকে বা সেঁটে থাকে। আবার দিক পরিবর্তনের সময় স্লিপ করে বা পিছলে চলে। রোবটটির শরীরের ওপরের ছোট্ট ফ্লিপার বা সাঁতার কাটার তাড়নির (কচ্ছপ বা মাছের মতো সাঁতার কাটার তাড়নি বা পাখনা) মাধ্যমে এটি পাকস্থলীতে থাকা পানিতে সাঁতার কাটতে পারে। গবেষকেরা মনে করেন, এই রোবটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এর গিলে খাওয়া বাটন ব্যাটারি পেটের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই রোগীরা প্রতিবছর ৩৫০০ বাটন ব্যাটারি গিলে খায়। সাধারণভাবে এই ব্যাটারি হজম করা যাবে। তবে তা যাদি পাকস্থলীর দেয়ালের উপরিতলের সাথে দীর্ঘদিন সংস্পর্শে থাকে, তবে এগুলো উৎপন্ন করতে পারে বিদ্যুৎ, যা উৎপাদন করে কস্টিক সোডা। এই কস্টিক সোডা কখনও কখনও ব্যবহার হয় ড্রেন পরিষ্কার করার কাজে। এই ব্যাটারি দীর্ঘদিন পাকস্থলীতে থাকলে তা পাকস্থলীতে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। এ সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজন হবে ইনট্রুসিভ অপারেশন। অর্থাৎ অনাহূত কিছুর প্রবেশ ঠেকানো প্রয়োজন হবে। এমআইটির গবেষকেরা মনে করছেন, এরা রোবটটি ব্যবহার করেই এই ব্যাটারি ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছার আগেই রোগীর পাকস্থলী থেকে বের করে আনার কাজটি সারতে পারবেন। গবেষকেরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে তারা এই রোবট ব্যবহার করতে পারবেন পাকস্থলীর ক্ষত সারানোর কাজে। এছাড়া এর মাধ্যমে শরীরের ভেতরের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে ওষুধ প্রয়োগ করার কাজেও এই রোবটকে ব্যবহার করা যাবে। এই রোবটটি চলে এর উপরিতলের নিচে রাখা ছোট একটি নিওডাইমিয়াম ম্যাগনেটে ও তিনটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক কয়েলের মাধমে। এর মাধ্যমে সৃষ্ট ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চুম্বকক্ষেত্রই এর চলাচলের শক্তি জোগায়।
এই রোবট গত বছর এই সম্মেলনে প্রদর্শিত আরেকটি রোবটের অনুগামী বা সাক্সেসর। তবে এর দেহাবয়বের ডিজাইন পুরোপুরি ভিন্ন। এর পূর্বসূরি রোবটের মতো এটি সামনের দিকে চলতে পারে এর স্টিক-স্লিট মোশনের মাধ্যমে। এ ছাড়া এর পূর্বসূরি রোবটের মতো, আরও কিছু অরিগামী রোবটের মতো এই নতুন রোবটের রয়েছে দুই স্তরের মাঝে চাপ দিয়ে রাখা পদার্থবিশেষ। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মধ্যস্তরে থাকা এই পদার্থ শরীরের তাপের প্রভাবে সঙ্কুচিত হয়।
গবেষকেরা বলছেন, যেহেতু আমাদের পাকস্থলী পরিপূর্ণ তরল পদার্থ দিয়ে, তাই এই রোবট শুধু স্টিক-স্লিট গতি নিয়ে চললেই হবে না। এটিকে সাঁতার কেটে চলতেও হবে। গবেষকেরা বলছেন, পাকস্থলীতে এর ২০ শতাংশ চলাফেরা চলে এই সাঁতার কেটে। আর ৮০ শতাংশ চলাফেরা চলে স্টিক-স্লিপ গতিতে। এর জন্যই গবেষকেরা এর ডিজাইনে মাছের মতো সাঁতার কাটাতে এর বডিতে তাড়নি বা পাখনা সংযোজন করেছেন।
কমপিউটারটিকে ভাঁজ করে এমন ছোট আকার দেয়া যায়, যাতে এটিকে একটি ক্যাপসুলের মধ্যে ঢোকানো যায়। একইভাবে এই ক্যাপসুল গিলে খাবার পর যখন তা গলে যায়, তখন এর ওপর পর্যাপ্ত বল প্রয়োগ করতে হয় যাতে এটি এর ভাঁজ পুরোপুরি খুলে ফেলতে পারে। একটি পরিবর্তনশীল চুম্বকক্ষেত্র এর সঙ্কোচন ও প্রসারণের পেছনে কাজ করে।
এর ডিজাইন নিয়ে এখনও আরও গবেষণার কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু এর উদ্ভাবকেরা মনে করেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল মডেল। সিএসএআইএলের ডিরেক্টর ও এই রোবটের সহ-উদ্ভাববক ডেনিয়েলা রাস মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবায় এই রোবট যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস