লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
রাহিতুল ইসলাম
মোট লেখা:৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - ফেব্রুয়ারী
জুবায়েরের ফাইটার রোবট
নাম সানি জুবায়ের। পড়ে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে। এ বয়সেই নিজের মতো করে বানিয়েছে একটি ফাইটার রোবট। সানি এই ফাইটার রোবটের নাম দিয়েছে ‘এফআর ২১’। নিরাপত্তার কাজে লাগবে এই রোবট। এটি অগ্নিকা--, উদ্ধার কাজে, বোমা শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যাবে। আবার চাকা লাগানো রোবট যদি কোথাও যেতে না পারে বা ওপর থেকে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে সেখানে এই রোবটের অংশ হিসেবে রয়েছে ড্রোন বা চালকহীন বিমান। ফাইটার রোবট বানিয়ে এরই মধ্যে বেশ কটি পুরস্কারও জিতেছে সানি।
এক বছরে সানির সাফল্য
সানি জুবায়ের এক বছর ধরে বানিয়েছে এই রোবট। গত ২০ জানুয়ারি বনশ্রী এলাকায় সানিদের বাড়িতে গিয়ে কথা হলো কমপিউটার জগৎ-এর বিশেষ প্রতিনিধি রাহিতুল ইসলামের সাথে। আর দেখা গেল তার এই রোবটের সব কিছু। বাবা নাসির উদ্দিন ও মা শাহানাজ আফরোজের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে সানি জুবায়ের সবার বড়। ও জানাল, এই ফাইটার রোবট তৈরিতে তার মা এবং নানা আশরাফুজ জামান সব সময় সহযোগিতা করেছেন।
সানি জুবায়ের বলল, ‘অনেক দিন ধরেই রোবট বিজ্ঞান নিয়ে নানা কিছু পড়ছি আর কাজ করছি। সব সময় ভেবেছি দেশের জন্য কিছু করার। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় আমার খুব খারাপ লেগেছে। এরকম পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ঘটনার নিয়ন্ত্রণ দ্রুত আনা সম্ভব।’
সানির মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে এমন রোবট ব্যবহার করে সেনাদের প্রাণহানি এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আবার সীমামেত্মও এরকম রোবট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ক্লান্ত হলেও যন্ত্র ক্লান্ত হয় না। তাই কম খরচে এরকম রোবট তৈরি করে নানা কাজে এর ব্যবহার করা যায়।
ফাইটার রোবট তৈরির জন্য চীন থেকে আমদানি করা ক্যামেরা, সেন্সর, মোটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে সানি। রোবটের বিভিন্ন অংশ পরিচালনার জন্য দরকারি প্রোগ্রাম নিজেই লিখেছে। এই রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যায় ল্যাপটপ কমপিউটার থেকে। আবার দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও রয়েছে।
চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন
অনেক সময় কোনো স্থানে বা যুদ্ধের ময়দানে আহত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। এই রোবট ওষুধপত্র আহত ব্যক্তির কাছে সহজে নিয়ে যেতে পারবে।
রোবটের ক্যামেরা
রোবটে ছয়টি ওয়েব ক্যামেরা রয়েছে। আর প্রতিটি ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারবে। অর্থাৎ রোবট যেখানে যাবে, সেখানকার চারপাশ পুরোপুরি দেখতে পাবে এবং ছবিও তুলতে পারবে। এই ক্যামেরা দিয়ে রোবট তার নিজ অবস্থানও দেখাতে পারবে। প্রত্যেকটি ক্যামেরা ইন্টারনেটে যুক্ত। ফলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে খুব সহজেই রোবট ও শত্রম্নর অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে। পরবর্তী সময়ে এই রোবটটির ক্যামেরায় এমন জুমলেন্স যোগ করা হবে, যাতে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখা যায়।
বোমা শনাক্ত
মাটির নিচে বোমা পুঁতে রাখা হলে তা শনাক্ত করতে পারবে রোবটটি। একটু গভীরে থাকা বোমার অস্তিত্বও টের পায় ‘এফআর ২১’ নামের এই রোবট। বোমা পাওয়া গেলে রোবট একটা সঙ্কেত দেবে। সেই সঙ্কেত চলে যাবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। সাথে সাথে লাল একটি সতর্ক সঙ্কেত দেখা যাবে।
আহত ব্যক্তিদের বহন
অনেক সময় দেখা যায়, আহত ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। এ কাজটিও যাতে রোবট করতে পারে, এ জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। রোবটটিতে ব্যবহার করা হবে ৪৯ সিসির একটি ইঞ্জিন। এর ফলে আহত সৈন্য শুধু রোবটে উঠে বসলেই রোবটটি তাকে চিকিৎসা দলের কাছে পৌঁছে দেবে। বর্তমানে এই সিস্টেম তৈরি করার কাজ চলছে।
আগুন নেভানো
বাসাবাড়ি বা যেকোনো জায়গায় আগুন লেগে যেতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে রোবটটি সাহায্য করতে পারবে। রোবটে পানি মজুদ থাকবে। যখন পানি বের করার সঙ্কেত পাবে তখন চারটি ডিসি পাম্প পানি ও ফেনা ছিটাবে। যাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
পানিতেও চলবে
সাধারণ সড়ক ছাড়াও পানিতে চলতে পারে এই রোবট। এ কাজটি যেন করতে পারে সেজন্য রোবটে বিশেষ মোটর ব্যবহার করা হয়েছে।
জীবিত কিনা
এই রোবটে তাপমাত্রা নির্ণায়ক সেন্সর ব্যবহার হয়েছে। এর কাজ হলো নির্দিষ্ট করে দেয়া ব্যক্তি জীবিত না মৃত তা নির্ণয় করা। এটি মূলত শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করে ফলাফল জানাবে।
আছে ড্রোনও
রোবটের সংগ্রহ করা ছবি ও তথ্যগুলো ড্রোনে থাকা ডিস্কে সংরক্ষিত হবে। রোবটটি হঠাৎ থেমে গেলে বা ব্যস্ত থাকলে ড্রোনটিকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে সব তথ্যসহ।
ফাইটার রোবটের অর্জন
ফাইটার রোবট তৈরি করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে সানি জুবায়ের। জাতীয় বিজ্ঞান মেলা ২০১৫, আইডিয়াল বিজ্ঞান মেলা ২০১৬, বিএএফ শাহীন কলেজ বিজ্ঞান মেলা ২০১৬, বুয়েট বিজ্ঞান মেলা ২০১৬, উইলস লিটল স্কুল বিজ্ঞান মেলা ২০১৬ এবং আদমজী কলেজের বিজ্ঞান মেলা ২০১৬-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সানি। ও জানায়, রোবটের মান উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে। সানির চাওয়া, নিরাপত্তার জন্য ফাইটার রোবট তৈরি হোক দেশে