• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভার্চুয়াল জগতে কৃত্রিম ব্যক্তিত্ব
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভার্চুয়াল জগতে কৃত্রিম ব্যক্তিত্ব

রোবট নিয়ে গবেষণা চলছে বহু বছর ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি নানা আকৃতির, নানা ধরনের রোবট। এগুলো যেনো মানব জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছে। নির্দেশনা দেয়া মাত্রই যেকোনো ধরনের কাজ করে দেয় এরা। সম্প্রতি কিছু রোবট উদ্ভাবন করা হয়েছে, এগুলো নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে। অর্থাৎ কষ্ট পেলে কাদতে আর আনন্দে হাসতে পারে এরা। রোবট বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, এরা এ ব্যাপারে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তো আগেই ছিল, এখন উন্নয়ন ঘটানো গেছে আর্টিফিশিয়াল পারসোনালিটি বা কৃত্রিম ব্যক্তিত্বের। তাই ভবিষ্যতে আপনার সাথে থাকা রোবটটি যদি ক্ষেপাটে বা একটু অন্যরকম আচরণ করে; তাহলে ঘাবড়ে যাবেন না। বুঝতে হবে সেটা হয়ত তার ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।

সম্প্রতি গবেষকদের একটি দল কৃত্রিম ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সক্ষম এমন একটি ভার্চুয়াল প্রাণী বা বস্ত্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি দেখতে কুকুরছানার মতো। এতে ব্যবহার হয়েছে কমপিউটার কোড জেনম। মানবদেহে যেমন প্রকৃতির দেয়া জেনম অর্থাৎ বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান থাকে, ওই ভার্চুয়াল প্রাণীতেও কমপিউটার কোডে করা জেনমের সন্নিবেশ করা হয়েছে। ফলে সেটি পেয়েছে কৃত্রিম প্রাণ এবং প্রকাশ করতে পারছে নানা অভিব্যক্তি। এই গবেষণা মানুষ এবং কৃত্রিম প্রাণীর মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট করবে এবং একে অপরকে বুঝতে সহায়ক হবে। তাছাড়া এই গবেষণাকে ভিত্তি করে ভবিষ্যতে হয়ত ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বের করে আনা যাবে কৃত্রিম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রাণী বা বস্ত্তকে।



কুকুরছানার মতো দেখতে কমপিউটারের ভার্চুয়াল থ্রিডি বিশ্বের ওই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সফটওয়্যার চরিত্রের নাম দেয়া হয়েছে রিটি। এটিই প্রথম কৃত্রিম সৃষ্টি, যার মধ্যে রয়েছে জেনমিক পারসোনালিটি। রিটির জেনমে রয়েছে ১৪টি ক্রোমোজম। এরা একত্রে তৈরি করেছে ১ হাজার ৭৬৪টি জিন (বংশানুগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক উপাদান)। এই জিনের প্রতিটির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। ম্যানুয়ালি এই জিন ভ্যালু বা বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। তাই গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন এমন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ ব্যক্তিত্বের কৃত্রিম জেনম তৈরি করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন কোরিয়ার দায়েজিওনের ‘কোরিয়ান অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ তথা কাইস্টের জং-হওয়ান কিম, সিউলের স্যামসাং ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চি-হো লি এবং সুওন-সি-র স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্যাং-হি লি।

জং-হওয়ান কিম বলেছেন, এই প্রথম কোনো কৃত্রিম রোবট বা সফটওয়্যার এজেন্টের মতো কৃত্রিম উদ্ভাবনায় ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন জেনম দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কৃত্রিম ক্রোমোজম নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। যেহেতু ওই ক্রোমোজম ব্যক্তিত্ব প্রকাশে মুখ্য ভূমিকা রাখে- তাই গ্রাহক, ক্রেতা বা ব্যবহারকারীর চাহিদামতো রোবট তৈরি করে ভবিষ্যতে সেখানে সন্নিবেশ ঘটানো যেতে পারে কৃত্রিম জেনমের। এর ফলে মানুষের সাথে রোবটের সামঞ্জস্যপূর্ণ সংসর্গ বা সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। তবে মানুষের সাথে সমান্তেরালভাবে তারা কখনো সভ্যতার গোড়াপত্তন করবে কি না, তার ভবিষ্যদ্বাণী এখনই করা যাচ্ছে না। আগামী বছরগুলোতে রোবট গবেষণা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

গবেষকরা বলেন, রোবট হোক কিংবা সফটওয়্যারে তৈরি কিছু হোক না কেনো, একটি স্বায়ত্তশাসিত কৃত্রিম উপাদান পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে আচরণ করতে পারে এবং এমনকি ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দেখাতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিটি ভার্চুয়াল জগতে থেকে যোগাযোগ করতে পারে বাস্তব পৃথিবীর মানুষের সাথে। একটি মাউস, একটি ক্যামেরা বা একটি মাইক্রোফোন ব্যবহার করে ৪৭টি নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য বিনিময় করতে পারে সে। রিটির ভেতরে থাকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তার মোটিভেশন বা প্রেরণা, হোমিওস্ট্যাসিস এবং ইমোশন বা আবেগ- এই তিনটি ইউনিট নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই তিন ইউনিটে রয়েছে ১৪ ক্রোমোজমভিত্তিক মোট ১৪ উপাদান। মোটিভেশন ইউনিটে রয়েছে আগ্রহ, অন্তেরঙ্গতা, একঘেয়েমি, পরিহার, লোভ এবং নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছে। হোমিওস্ট্যাসিস ইউনিটে রয়েছে ক্লান্তি, ক্ষুধা এবং অলসতা। ইমোশন বা আবেগ ইউনিটে রয়েছে আনন্দ, দুঃখ, ক্রোধ, ভয় এবং স্বাভাবিক বা নিউট্রাল।

কিম বলেন, রিটির ক্ষেত্রে আবেগ, অনুভূতি, প্রেরণা পরিবর্তিত হয় তাকে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। রিটি যদি তার মালিককে দেখে তখন সে খুশি প্রকাশ করে। তখন হয়ত সে শুভেচ্ছা জানায় কিংবা আচরণে খুশিভাব আনে। তাই এটা বলা যায়, রিটি কিংবা ভার্চুয়াল কোনো চরিত্র ঠিক কী ধরনের আচরণ প্রকাশ করবে তা তার ইনকামিং স্টিমুলাসের ওপর নির্ভর করে। তার ভেতরে থাকা ‘ইন্টারনাল কন্ট্রোল’ ব্যবস্থা বাইরে থেকে আসা তথ্য-উপাত্ত বিশে­ষণ করে কিভাবে প্রকাশ করতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। তখন সে তেমনভাবেই সাড়া দিয়ে থাকে। এ কাজটি করা হয় আচরণ নির্দিষ্টকরণ মডিউলের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে রিটির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। বিশ্বে এই প্রথম কোনো ভার্চুয়াল রোবটে কমপিউটারাইজড ক্রোমোজম ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) কোড। বাস্তবে এমন রোবট তৈরি করতে হলে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করা গেলে রোবট কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারবে। অনুভব, কারণ অনুসন্ধান, আগ্রহ প্রকাশ এবং নিজের মতো করে কাউকে তৈরি করতে সক্ষম হবে। তবে এটা দূর ভবিষ্যতের ভাবনা। এখন থাকতে হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতেই। এই জগতের রোবটিক্সে নতুন মাত্রা যোগ করেছে রিটি। সে জীবন্তে যেকোনো প্রাণীর মতোই নিজের মুখের ভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অভিব্যক্তি মূর্ত করে তুলতে সক্ষম।

গবেষকরা জানান, রিটির জেনমে থাকা ১৪টি ক্রোমোজমের প্রতিটিতে রয়েছে ৩টি করে জিন ভেক্টর। এগুলো হলো- ফান্ডামেন্টাল জিন ভেক্টর, ইন্টারনাল স্টেট রিলেটেড জিন ভেক্টর এবং বিহেভিয়ার রিলেটেড জিন ভেক্টর। প্রতিটি ক্রোমোজমে রয়েছে ২টি এফ জিন, ৪৭টি আই জিন, এবং ৭৭টি বি জিন। সব মিলিয়ে রিটির জিন রয়েছে ১ হাজার ৭৬৪টি। প্রতিটি জিনের রয়েছে আলাদা কর্মপন্থা। অনেক সময় একটি একক জিন বহুমুখী আচরণকে প্রভাবিত করে থাকে। আবার অনেক সময় একক আচরণ প্রভাবিত করতে পারে একাধিক জিনকে।

কিম বলেন, বৃদ্ধি, পুনঃউৎপাদন এবং বিকাশের রহস্য উন্মোচনের জন্য জেনমের এনকোডিং আবশ্যক। ‘অরিজিন অব আর্টিফিশিয়াল স্পেসিস’ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এর বিকল্প নেই। এটি জানা হলেই ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বের করে আনা যাবে রিটির মতো সফটওয়্যার উপাদান বা বস্ত্তকে।

জেনেটিক অ্যালগরিদমভিত্তিক যে কৃত্রিম ব্যক্তিত্ব তৈরি করা হয়েছে, সেটিকে এক্ষেত্রে একেবারে প্রাথমিক একটা কিছু বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। স্যামসাং এবং কাইস্ট যৌথভাবে এ গবেষণা করছে। সিলিকন সিমুলেটেড জিনের ভিত্তিতে রিটির ব্যক্তিত্ব নির্ণয় হয়েছে। আরো গবেষণা এই ক্ষেত্রটিকে যে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে তা নিশ্চিত।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonlslam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস