লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তিন অঙ্কের সংখ্যার বর্গ বের করার মজার কৌশল
গত সংখ্যায় আমরা প্রথমে জেনেছি, যেসব সংখ্যার শেষে ৫ আছে, সেসব সংখ্যার বর্গফল বের করার একটি মজার কৌশল। এরপর জেনেছি ২৫ ও ৫০ এই দুইটি সংখ্যাকে একসাথে মাথায় রেখে কিংবা শুধু ১০০ সংখ্যাটি মাথায় রেখে দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার বর্গফল সহজেই দ্রুত বের করার আরেকটি ভিন্ন কৌশল। আজ আমরা জানব তিন অঙ্কের কিছু সংখ্যার বর্গ নির্ণয়ের মজার দুইটি নিয়ম।
প্রথম নিয়ম
১০৪২ = কত?
এই নিয়মটি বুঝতে উদাহরণ দিয়ে শুরু করাই শ্রেয়। প্রথমেই ধরা যাক, আমরা জানতে চাই তিন অঙ্কের সংখ্যা ১০৪-এর বর্গ কত, অর্থাৎ ১০৪২ = কত? এ ক্ষেত্রে আমরা এই তিন অঙ্কের সংখ্যাটিকে দৃশ্যত দুই ভাগে বিভাজন করব। প্রথম ভাগে থাকবে শতকের ঘরের ১ এবং দ্বিতীয় ভাগে থাকবে শেষের দুইটি অঙ্ক ০৪। এবার আমাদের করণীয় হবে নির্ণেয় বর্গফলের প্রথম দিকে থাকা সংখ্যা কত এবং শেষ দিকে থাকা সংখ্যা কত, তা জানা। এরপর এই সংখ্যা দুইটি পাশাপাশি বসালেই পাওয়া যাবে নির্ণেয় বর্গফল। এ ক্ষেত্রে নির্ণেয় বর্গফলের প্রথম দিকে থাকা সংখ্যাটি হবে ১০৪ + ০৪ = ১০৮। আর শেষ দিকে থাকবে ০৪-এর দুই অঙ্কবিশিষ্ট বর্গফল অর্থাৎ ১৬। অতএব ১০৪-এর বর্গ হচ্ছে ১০৮, ১৬।
১১২২ = কত? তা জানতে প্রথমেই ১১২-কে মনে মনে দুই ভাগে কল্পনা করি। প্রথম ভাগে থাকবে একদম বামের অঙ্ক ১। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে ডানের দুইটি ঘরে থাকা ১২। তাহলে নির্ণেয় বর্গফলের শেষ দিকে থাকবে ১২২ বা ১৪৪-এর ডান দিকের ৪৪, আর হাতে থাকবে ১। আর নির্ণেয় বর্গফলের প্রথম দিকে বা বাম দিকে থাকবে ১১২ + ১২ + হাতে থাকা ১ = ১২৫। অতএব ১১২-এর বর্গফল হলো ১২৫, ৪৪।
১০৩২ = কত? এ ক্ষেত্রে ১০৩-কে দৃশ্যত দুই ভাগ করলে একভাগে থাকবে প্রথম ঘরের ১, অপর ভাগে থাকবে ০৩। অতএব আগের নিয়মের মতোই নির্ণেয় বর্গফলের শেষ দিকের দুই অঙ্ক হবে (০৩)২ বা ০৯। এ ক্ষেত্রে হাতে কিছু থাকবে না। আর বর্গফলের প্রথম দিকে থাকবে ১০৩ + ০৩ বা ১০৬। অতএব ১০৩২ = ১০৬, ০৯।
দ্বিতীয় নিয়ম
এবার আমরা দ্বিতীয় একটি নিয়মে বের করব এই ১০৪ ও ৮২৫-এর বর্গফল। এ ক্ষেত্রে নিয়মটি হলো তিনটি ধাপে আমাদেরকে তিনটি সংখ্যা বের করতে হবে। পরে এই তিনটি সংখ্যা যোগ করলে কাঙিক্ষত বর্গফল বের হয়ে যাবে। উদাহরণ দিয়ে নিয়মটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করা যাক।
জানতে চাই ১০৪২ = কত? এখানে শতকের বা প্রথম ঘরের অঙ্কটি ধরি ক (এ ক্ষেত্রে ক = ১)। আর একক ও দশকের ঘরের অঙ্ক দুইটিকে ধরি খ (এ ক্ষেত্রে খ = ০৪)। তাহলে প্রথম ধাপের অঙ্কটি হবে ক-এর বর্গফলের ডানে চারটি শূন্য বসিয়ে যা হয়, তা। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপের এ সংখ্যাটি হয় ১০০০০। আর দ্বিতীয় ধাপের সংখ্যাটি হচ্ছে ২ গুণ ক গুণ খ যত হয় তার ডানে দুই শূন্য বসিয়ে যা হয় তা। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপের সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২ ক্ম ১ ক্ম ০৪ বা ৮-এর ডানে দুইটি শূন্য, অর্থাৎ ৮০০। আর তৃতীয় ধাপের সংখ্যা = খ২ = ০৪২ = ১৬। অতএব ১০৪২ = ১০০০০ + ৮০০ + ১৬ = ১০৮১৬।
এবার জানব, ৮২৫২ = কত? এ ক্ষেত্রে ক = ৮। আর খ = ২৫, অতএব প্রথম ধাপের সংখ্যা = ৮২-এর ডানে চারটি শূন্য বসালে যা হয়, তা = ৬৪০০০০। আর দ্বিতীয় ধাপের সংখ্যাটি = ২ ক্ম ৮ ক্ম ২৫-এর ডানে দুই শূন্য বসিয়ে যা হয়, তা ৪০০০০। আর শেষ ধাপের সংখ্যাটি হয় খ২ বা ২৫২ বা ৬২৫। এখন ওই সংখ্যা তিনটি যোগ করলেই আমরা পেয়ে যাব ৮২৫-এর বর্গফল। অর্থাৎ ৮২৫২ = ৬৪০০০০ + ৪০০০০ + ৬২৫ = ৬৮০৬২৫।
এ নিয়মে আমরা যেকোনো তিন অঙ্কের সংখ্যার বর্গ বের করতে পারব।
দুই অঙ্কের সংখ্যা গুণ করার একটি সহজ কৌশল
আমরা এখানে জানব কী করে একটি দুই অঙ্কের সংখ্যাকে আরেকটি দুই অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে সহজে গুণ করা যায়। আমরা যে পদ্ধতিতে এই গুণের কাজটি করব, এটি পরিচিত ক্রিস-ক্রস মাল্টিপ্লিকেশন বা অাঁকাবাঁকা গুণন পদ্ধতি নামে।
ধরা যাক, আমরা ৪১ সংখ্যাটিকে ৫১ দিয়ে গুণ করতে চাই। লক্ষণীয়, এই দুইটি সংখ্যাই দুই অঙ্কের। এ ধরনের দুইটি দুই অঙ্কের সংখ্যার পারস্পরিক গুণ করার নিয়মটিই আমরা এখানে জানব। আমরা যদি স্কুলে শিখে আসা গুণন পদ্ধতি ব্যবহার করে ৪১-কে ৫১ দিয়ে গুণ করি, তবে এই গুণফল হবে ২০৯১। এই গুণফলের অঙ্কগুলোকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি এভাবে : গুণফলের শুরুতে থাকা ২০, এরপর মাঝখানে থাকা ৯ এবং একদম শেষে থাকা ১। অর্থাৎ একদম বামে আছে ২০, এর পর বসেছে ৯, এবং একদম শেষে বসেছে ১। লক্ষণীয়, এই গুণফলের একদম বামে থাকা ২০ সংখ্যাটি হচ্ছে ৪১ ও ৫১ এর বামের দুইটি অঙ্ক ৪ ও ৫-এর গুণফল। আর গুণফলের শেষের অঙ্ক ১ হচ্ছে ৪১ ও ৫১-এর ডান দিকের অঙ্ক বা শেষ অঙ্ক ১ ও ১-এর গুণফল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গুণফলের মাঝখানে থাকা ৯ অঙ্কটি আমরা কী করে পেতে পারি। সে অঙ্কটি পাওয়া যাবে ৪১ ও ৫১-এ থাকা অঙ্কগুলোর ক্রিস-ক্রস বা অাঁকাবাঁকা গুণফলের সমষ্টি রূপে। অর্থাৎ ৯ = (প্রথম সংখ্যার প্রথম অঙ্ক ক্ম দ্বিতীয় সংখ্যার দ্বিতীয় অঙ্ক) + ( প্রথম সংখ্যার দ্বিতীয় অঙ্ক ক্ম দ্বিতীয় সংখ্যার প্রথম অঙ্ক) = (৪ ক্ম ১) + (৫ ক্ম১) = ৪ + ৫ = ৯, যা নির্ণেয় গুণফলের মাঝখানে থাকা সংখ্যা ।
এখন ধরা যাক আমরা ৩০-কে ১২ দিয়ে গুণ করতে চাই। এখানে গুণফলের প্রথমে বসবে ৩০-এর প্রথম অঙ্ক ৩ এবং ১২-এর প্রথম অঙ্ক ১-এর গুণফল। অর্থাৎ গুণফলের প্রথমে বসবে ৩ ও ১-এর গুণফল ৩। গুণফলের শেষ দিকে বসবে প্রদত্ত সংখ্যা দুইটির শেষ দুইটি অঙ্ক ০ ও ২-এর গুণফল অর্থাৎ ০। আর মাঝখানে বসবে ৩০ ও ১২-এর মধ্যে থাকা অঙ্কগুলোর অাঁকাবাঁকা গুণফলের সমষ্টি বা (৩ ক্ম ২) + (১ ক্ম ০) বা ৬ + ০ বা ৬। অতএব, আমাদের কাঙিক্ষত গুণফলের প্রথমে বসবে ৩, এরপর বসবে ৬ এবং সবশেষে বসবে ০। সুতরাং ৩০ ও ১২-এর নির্ণেয় গুণফল হলো ৩৬০।
বিষয়বস্ত্ত আরও স্পষ্ট করার জন্য আরও কিছু উদাহরণ দেয়া প্রয়োজন। এবার ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ২৩ ক্ম ৪১ = কত? এখানে আগের পদ্ধতি অনুসারে নির্ণেয় গুণফলের প্রথমে বসবে প্রদত্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যার যথাক্রমিক প্রথম সংখ্যা ২ ও ৪-এর গুণফল ৮। আর শেষে বসবে শেষ দুটি অঙ্ক ৩ ও ১-এর গুণফল, অর্থাৎ ৩। আর গুণফলের মাঝখানে বসবে (২ ক্ম ১) + (৩ ক্ম ৪) বা ২ + ১২ বা ১৪-এর ডানের অঙ্ক ৪, আর বামের ১ হাতে থাকবে, যা আবার বামের ৮-এর সাথে যোগ হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে গুণফলের প্রথমে ৮ না বসে বসবে ৯। তাহলে আমরা পেলাম নির্ণেয় গুণফলের প্রথমেই বসবে ৯, এরপর বসবে ৪ এবং সবশেষে বসবে ৩। তাহলে নির্ণেয় গুণফল হবে ৯৪৩।
এবার জানব ১৫ ক্ম ১২ = কত? এখানে আগের নিয়মে নির্ণেয় গুণফলে ডানে বসবে ২ ক্ম ৫ বা ১০-এর ০, আর হাতে থাকবে ১। আর মাঝে বসবে (১ ক্ম ২) + (৫ ক্ম ১) + হাতে রাখা ১ = ২ + ৫ + ১ = ৮। আর গুণফলটির প্রথমে বসবে ১ ও ১-এর গুণফল ১। অতএব নির্ণেয় গুণফল হবে ১৮০।
এভাবে আমরা এই কৌশল ব্যবহার করে দুই অঙ্কের যেকোনো একটি সংখ্যাকে আরেকটি দুই অঙ্কের সংখ্যা দিয়ে সহজেই দ্রুততম সময়ে গুণ করতে পারি
- গণিতদাদু