লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
BODMAS এবং PEMDAS
স্কুলের পাটীগণিতে আমরা সবাই কমবেশি সরল অঙ্ক করেছি। আর বীজগণিতেও একই কাজ আমরা করেছি, যার নাম সিমপ্লিফিকেশন।
পাটীগণিতের একটি সরল অঙ্কের প্রশ্ন হতে পারে এমন : ৮ ÷ ৭ + ৩ ৩ - ৪ এর ২ (৬ + ১৪ ÷ ৬ + ১) = কত? এই সরল অঙ্কটিতে রয়েছে গণিতের বেশ কয়েকটি কাজ : যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, এর, বন্ধনী বা ব্র্যাকেটের কাজ। বন্ধনী আবার কয়েক ধরনের : প্রথমবন্ধনী, দ্বিতীয়বন্ধনী, তৃতীয়বন্ধনী ও রেখাবন্ধনী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সরল অঙ্কটি করতে আমরা এর মধ্যে থাকা এসব কাজের কোন কাজটি কোনটির আগে করব? এলোপাতাড়িভাবে একটির আগে আরেকটি করলে এ প্রশ্নের সঠিক সমাধান পাব না। তাই এই অঙ্ক করতে কোন কাজের আগে কোনটি করতে হবে, তার নিয়ম বেঁধে দেয়া আছে। এই নিয়ম মেনে চলেই আমাদের বের করতে হবে সঠিক সমাধান।
সরল অঙ্কে কোন কাজের আগে কোনটি করতে হয়, তা স্কুল শিক্ষকেরা আমাদের শিখিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন- সরল অঙ্কে প্রথমেই করতে হবে বন্ধনীর কাজ, শুরুতেই করতে হবে রেখাবন্ধনীর কাজ। এরপর যথাক্রমে প্রথমবন্ধনী, দ্বিতীয়বন্ধনী, তৃতীয়বন্ধনীর কাজ। এরপর করতে হবে যথাক্রমে এর, ভাগ, গুণ, যোগ, বিয়োগের কাজ। এই ধারাক্রম অনুসরণ না করলে কখনই সরল অঙ্কের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না।
সরল অঙ্কে কোন কাজের পর কোনটি করতে হবে, সেই নিয়মটিই লুকিয়ে আছে BODMAS নামে অ্যাক্রোনিম বা শব্দসংক্ষেপটিতে। কোনো কোনো স্কুলের গণিত শিক্ষকেরা এই বুডমাস নিয়মটি শিক্ষার্থীদের শেখান। আসলে পুরো কথায় BODMAS হচ্ছে Brackets, Of/Orders, Division, Multiplication, Addition, Subtraction। তাহলে এই বুডমাস নিয়মটি আমাদের বলে দেয় সরল অঙ্ক করার সময় আমাদের একটি নির্দিষ্ট ধারা মেনে একটার পর একটা কাজ করে পরিশেষে সঠিক উত্তরটি বের করতে হবে। আর এই ধারাক্রমটি হচ্ছে : bracket (বন্ধনী), of/orders (এর), division (ভাগ), multiplication (গুণ), addition (যোগ), subtraction (বিয়োগ)। একাধিক বন্ধনী থাকলে প্রথমে রেখাবন্ধনী, এরপর প্রথমবন্ধনী, এরপর দ্বিতীয়বন্ধনী ও সবশেষে তৃতীয়বন্ধনীর কাজ করে বাকি সব কাজ ধারা মেনে সম্পন্ন করতে হবে। এই BODMAS শব্দসংক্ষেপটি মনে রাখলে আমরা সহজেই মনে রাখতে পারি সরল অঙ্কে কোন কাজের পর কোন কাজটি করব।
কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক :
৬ (৫ + ৩) = ৬ ৮ = ৪৮, সঠিক উত্তর।
৬ (৫ + ৩) = ৩০ + ৩ = ৩৩, ভুল উত্তর।
কারণ, গুণের আগে প্রথমবন্ধনীর কাজ করতে হয়।
২ + ৫ ৩ = ২ + ১৫ = ১৭, সঠিক উত্তর।
২ + ৫ ৩ = ৭ ৩ = ২১, ভুল উত্তর।
কারণ, এখানে যোগের আগে গুণের কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, BODMAS-এ থাকা O বর্ণ দিয়ে পাটীগণিতের বেলায় of বা ‘এর’-এর কাজ বোঝালেও বীজগণিতের বেলায় তা দিয়ে Orders (i.e. Powers and Square Roots, etc.) বোঝায়।
৫ ২২ = ৫ ৪ = ২০, সঠিক উত্তর।
৫ ২২ = ১০২ = ১০০, ভুল উত্তর।
কারণ, এখানে গুণের আগে পাওয়ারের কাজ করতে হবে।
আবার গুণ ও ভাগের কাজ একসাথে থাকলে যেটি বামে থাকে, সে কাজটি আগে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ‘লেফট টু রাইট’ বা ‘বাম থেকে ডানে’ করে যেতে হয়। একইভাবে এই ‘লেফট টু রাইট’ নিয়ম অনুসরণ করতে হয় যোগ ও বিয়োগের কাজ একসাথে থাকলে। গুণ ও ভাগ একসাথে থাকার এশটি উদাহরণ নেয়া যাক :
১২ ÷ ৬ ৩ ÷ ২ = কত? এখানে গুণ ও ভাগের কাজ রয়েছে। গুণ ও ভাগের কাজ থাকলে আমার ‘লেফট টু রাইট’ বা ‘বাম থেকে ডানে’ নিয়ম অনুসরণ করব। কিংবা যেটি আগে থাকবে, সেটি আগে করব। এখানে দেয়া প্রশ্নটি সমাধান করতে আমরা বামদিক থেকে শুরু করে এক-এক করে সবগুলো কাজ শেষ করব। এখানে প্রথমে ১২ ÷ ৬ = ২, এরপর ২ ৩ = ৬, এরপর ৬ ÷ ২ = ৩। উত্তর হচ্ছে ৩।
সবিশেষ লক্ষণীয়, কানাডায় Orders না বলে বলা হয় Exponents। অতএব সেখানে BODMAS পরিচিত BEDMAS নামে। আবার কোথাও কোথাও Exponents বা Orders পরিচিত Indices (সূচক) নামে। অতএব সেখানে BODMAS নিয়মটি পরিচিত BIDMAS নামে। আবার আমেরিকানেরা ব্র্যাকেট না বলে বলে Parentheses, তাই সেখানে BODMAS হয়ে গেছে PEMDAS।
এখন সরল বা সিমপ্লিফিকেশনের একটি ভাইরাল প্রবলেম নিয়ে আমরা আলোচনা করব। প্রশ্নটি হচ্ছে : ৬ ÷ ২ (১ + ২) = ?। এই প্রশ্নের সমাধান করতে কাজের ধারাক্রম বা অর্ডার অব অপারেশন মেনে চলতে হবে। আর কাজের এই ধারাক্রম আমরা মনে রাখি শব্দসংক্ষেপ BODMAS/PEMDAS মাথায় রেখে। সে অনুযায়ী প্রথম কাজ পেরেনথেসিস/ব্র্যাকেটের, এরপর এক্সপোনেন্ট/অর্ডারের, তৃতীয় কাজ মাল্টিপ্লিকেশন-ডিভিশনের এবং সবশেষে যোগ-বিয়োগের।
এই অঙ্কটি করতে সবাই একমত : এখানে প্রথম ধাপের কাজ হচ্ছে পেরেনথেসিস বা বন্ধনীর ভেতরে যোগ অঙ্কটি করা। অতএব ৬ ÷ ২ (১ + ২) = ৬ ভাগ ২ (৩)। এর পরের কাজ করতে গিয়েই বিতর্কের শুরু।
অঙ্কটির সঠিক উত্তর ৯।
এখন আপনি যদি Google অথবা Wolfram Alpha- এর ক্যালকুলেটরে টাইপ করেন ৬ ÷ ৩ (২), তাহলে এই ইনপুটকে পার্সিং করে ব্র্র্যাকেটকে গুণ চিহ্নে পরিবর্তন করে ‘৬ ÷ ২ (৩)’ না লিখে লিখতে হবে ‘৬ ÷ ২ ৩’। এখানে ভাগ ও গুণের কাজ থাকায় এরপর কাজের অর্ডার অব অপারেশন বা কাজের ধারাক্রম অনুসারে আমাকে বাকি কাজটুকু শেষ করতে হবে ‘লেফট টু রাইট’ বা ‘বাম থেকে ডানে’ নিয়ম অনুসরণ করে। অতএব ৬ ÷ ২ ৩ = ৩ ৩ = ৯। আর এ থেকে আমরা এই অঙ্কটির সঠিক উত্তর পাই ৯।
কিন্তু কিছু মানুষের এ ব্যাপারে আছে ভিন্নমত। এরা বলেন, এই অঙ্কটির সঠিক উত্তর ১। হতে পারে শত শত বছর আগে এর সঠিক উত্তর ১ ধরা হতো। কিন্তু আজকের এই আধুনিক সময়ে ৯-কেই সঠিক উত্তর বিবেচনা করা হয়।
ধরা যাক, আপনি ১৯১৭ সালের একটি পাঠ্যবইয়ে দেখতে পেলেন লেখা আছে : ৬ ÷ ২ (৩)। ঐতিহাসিকভাবে ÷ চিহ্নটি ব্যবহার হয়েছে, এর আগের সংখ্যাটিকে এর ডানের পুরো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা বোঝাতে। কিন্তু এই ভাগ চিহ্নের শেষে আমরা অনেক সময় সুদীর্ঘ এক্সপ্রেশন পাই। এখানে নেয়া অঙ্কটির উদাহরণে ৬ ÷ ২ (৩) = ৬ ÷ (২ (৩)), যা একটি পুরনো ব্যবহার মাত্র। অথচ এই পুরনো ব্যবহারকেই সামনে এনে ভিন্ন মতাবলম্বীরা দেখাচ্ছেন, ৬ ÷ ২ (৩) = ৬ ÷ (২ (৩)) = ৬ ÷ ৬ = ১। এ যুক্তিতেই এরা বলছেন অঙ্কটির সঠিক উত্তর ১। অথচ যদি আমরা গাণিতিক কাজ বা অপারেশনগুলোর আধুনিক ব্যবহার কাজে লাগাই, তবে সঠিক উত্তরটি হবে ৯।
এরপরেও গাণিতিক অপারেশনগুলোর পুরনো ও পরিত্যাজ্য ব্যবহারকে সামনে এনে এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর নিয়ে লাখ লাখ ভিন্নমত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে, যা করা উচিত নয়।
-গণিতদাদু