লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
গেমের জন্য ল্যাপটপ পিসি
নিকোনো উঠোন; দখিনা হাওয়া; বিসত্মীর্ণ বালুচর; দিগন্ত বিসত্মৃত প্রান্তর কিংবা খেলার মাঠ এখন নাগরিক জীবনে সহজলভ্য নয়। শুধু বসতবাড়িই নয়, বিদ্যালয়গুলোও এখন হয়ে উঠছে ইট-কাঠের খাঁচা। নেই বুক ভরে অক্সিজেন নেয়ার ফুরসত। এতসব অপূর্ণতার পরও কিন্তু থেমে নেই খেলাধুলা। মুঠোফোন আর পিসিতে গেম খেলা তাই এখন শিশু আর উঠতি বয়সী তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন চাকরিজীবী থেকে বয়স্করাও পিসিতে ফুটবল, ক্রিকেট খেলেন। শুধু ঘোড় সওয়ার নয়, বিমান কিংবা ফেরারি হাঁকিয়ে নয়; ঐতিহাসিক বিশ^যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছেন আমাদের তরুণেরা। আর এ জন্য দীর্ঘ সময় ধরে তাদের নির্ভর করতে হয়েছে ডেস্কটপ পিসির ওপর। তাতে সেই ঘরবন্দি জীবন থেকে যেমন নিস্তার মেলেনি, তেমনি মুঠোফোনে দুর্দান্ত সব গেম খেলার খায়েশকেও বন্দি রাখতে হয়েছে মনের মুকুরে। তবে এবার দেশের বাজারে গেম খেলার উপযোগী ল্যাপটপ চলে আসায় পিসি গেমারেরা এখন আরেকটু নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। তাদের জন্য আরাধ্য হতে পারে সদ্য দেশের বাজারে আসা এসার ভিএক্স১৫, প্রিডেটর জি৯-৭৯৩, অ্যাসপাইরি লিএক্সপি-৫৯১জি, ডেল ইন্সপায়রন ৭৫৬৭, এইচপি ওমেন (১৫-এএক্স ২২০ টিএক্স ও ২২১ টিএক্স) ও এমএসআই।
এসব ল্যাপটপ নিয়েই কমপিউটার পণ্য নির্মাতারা কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই গেমিংয়ের জন্য ডেস্কটপের বিকল্প আনতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। ল্যাপটপে গেম খেলার পূর্ণ স্বাদ দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন তারা। ফলশ্রুতিতে সাধারণত প্রফেশনাল গেমারেরা গেমিংয়ের জন্য ডেস্কটপ পিসিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তারাও এখন গেমিং ল্যাপটপের দিকে কিছুটা ঝুঁকছেন। হাই কনফিগারেশন এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সমন্বয় ঘটাতে এই ল্যাপটপগুলো কি ডেস্কটপের বিকল্প হতে যাচ্ছে? এই উত্তর পেতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, এখনও গেমিংয়ের ক্ষেত্রে ল্যাপটপকে সেকেন্ড চয়েজ হিসেবে দেখছেন গেমারেরা। অন্যদিকে পেশাদার গেমিং কমিউনিটি গড়ে তুলতে মনোযোগী হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিকারক ও সেবাদানকারী স্থানীয় কোম্পানিগুলো। তারা মনে করছে, সময়ের প্রয়োজনেই যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর গেম বিশ^জুড়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে, তৈরি হয়েছে নতুন এক জগত। ক্রিকেট-ফুটবল খেলার মতো এই জগতেও দেশের অবস্থানকে সুসংহত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসা দরকার। কমপিউটার গেম আসক্তি নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা মোকাবেলা করতেও প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ পদক্ষেপ গ্রহণ। মেধানির্ভর এই বিনোদনের ক্ষেত্রটিকে একটি লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। গেমারদেরকে পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে তাদেরকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিশ্চিত করা দরকার দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট এবং ডেডিকেটেড ন্যাশনাল সার্ভার।
এইচপি ওমেন ১৫ (২০১৭)
নতুনত্ব ও বিস্ময় নিয়ে গেমিং ল্যাপটপের প্রথাগত ধারণা অনেকটাই এবার বদলে দিয়েছে এইচপি। এইচপি ওমেন ১৫ (২০১৭) সংস্করণের ল্যাপটপ ডিজাইনে রঙচঙের বাড়বাড়ন্ত ব্যবহার নেই। তবে ডিজাইনে রয়েছে এক ধরনের আভিজাত্য। দামও গেমারদের আয়ত্তের মধ্যেই বলা চলে। এই সিরিজের অন্যতম মডেলটিতে রয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। ল্যাপটপের ডিসপ্লেতে আইপিএস প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলের দিক থেকে চমৎকার অভিজ্ঞতা দেবে। ব্রাইটনেস ও ম্যাট ফিনিশের ফলে ডিসপ্লেটি কড়া রোদেও সুনদরভাবে ব্যবহার করা যাবে। এতে থাকছে সপ্তম প্রজন্মের ইন্টেল কোরআই৭ ৭৭০০এইচকিউ, ২ দশমিক ৮ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসর। ইন্টেল কোরআই৭ ৭৭০০এইচকিউ কাবিলেক কোয়াডকোর প্রসেসরটি এ মুহূর্তে সবচেয়ে শক্তিশালী ল্যাপটপ প্রসেসর। ফলে এটি কমপিউটারের সব কাজই দ্রম্নততার সাথে করতে সক্ষম।
১৬ গিগাবাইটের ২৪০০ মেগাহার্টজ গতির ডিডিআর৪ র্যা ম থাকায় মাল্টি-টাস্কিং হবে অনায়াসে। চাইলে এটি বাড়িয়েও নেয়া যাবে। দুটি র্যা ম স্লট থাকায় ৩২ গিগাবাইট র্যাথম সহজেই এ ল্যাপটপে ব্যবহার করা সম্ভব। ১২৮ গিগাবাইট এম২ এসএসডি, ১ টেরাবাইট ধারণক্ষমতার ৭২০০ আরপিএম হার্ডডিস্ক এনভিডিয়া জিটিএক্স ১০৫০টিআই গ্রাফিক্স চিপ, ৪ গিগাবাইট জিডিডিআর৫ ভির্যাাম। এ ছাড়া রয়েছে গিগাবিট ল্যান, ৮০১.১১এসি ওয়াইফাই, বস্নুটুথ ৪.২ মেমরি কার্ড রিডার, একটি ইউএসবি ২.০ পোর্ট, একটি এইচডিএমআই পোর্ট, একটি ল্যান পোর্ট, হেডফোন ও মাইক্রোফোন কম্বো জ্যাক, দুটি ইউএসবি ৩.১ প্রথম জেনারেশন ৫ গিগাবিট পোর্ট, ব্যাকলিট কিবোর্ড ৪ সেল ব্যাটারি, ১৫০ ওয়াটের অ্যাডাপ্টার, ২ দশমিক ২ কিলোগ্রাম ওজন। এটির ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার পোর্ট, ল্যান জ্যাক, এইচডিএমআই পোর্ট, ইউএসবি ২ পোর্ট ও কার্ড রিডার। বাকি দুটি ইউএসবি পোর্ট ও হেডফোন জ্যাক রয়েছে বাম পাশে। প্রায় সব কুলিং ভেন্ট পেছনে অবস্থিত। চিকলেট স্টাইলের লাল ব্যাকলাইটের কিবোর্ডটি রয়েছে ডিসপ্লের ঠিক সামনেই, যার নিচে রয়েছে বর্ডারবিহীন টাচপ্যাড।
গেমিং ল্যাপটপের মূল হচ্ছে এর গ্রাফিক্স চিপ। ওমেনে ব্যবহার হয়েছে জিটিএক্স ১০৫০ টিআই। ব্যাটারি লাইফ ৬৩ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি সমৃদ্ধ ল্যাপটপটি ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত মাঝারি কাজে ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। হালকা-পাতলা ডিজাইনের এ ডিভাইস দিয়ে গেমিংসহ অন্যান্য কাজও অনায়াসে করা যাবে। পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৩১ হাজার টাকায়।
নিজেদের গেমিং ল্যাপটপ নিয়ে এইচপি বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সালাউদ্দিন মোহাম্মদ আদেল বললেন, বিশে^ গেমিং কমিউনিটি বাড়ছে। বাংলাদেশেও বাড়ছে গেমারদের সংখ্যা। পোর্টেবিলিটি, পাওয়ার ইত্যাদি সমস্যা ছাড়াও ডেস্কটপ গেমিং পিসি যেহেতু ক্লোন হয়; এর মানও তাই এখন আন্তর্জাতিক মানের হয় না। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পোনেন্ট নিয়ে এসব পিসি তৈরি হওয়ায় পিসির বিক্রয়োত্তর সেবা গ্রহণে বেগ পেতে হয়। এসব সমস্যা ঘুচতেই এইচপি ওমেন গেমিং সিরিজ অবমুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, আগে মানুষ মনে করত শুধু ডেস্কটপেই খেলা হয়। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাচ্ছে। আর হার্ডকোর গেমারদের কথা মাথায় রেখে আমরা ল্যাপটপের সাথে মেকানিক্যাল গেমিং কিবোর্ড, মাউস, মাউস প্যাড নিয়ে এসেছি।
ডেস্কটপের বদলে ল্যাপটপ গেমারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য- এমন জবাবে আদেল বললেন, মাস দুয়েক আগে আমরা বুয়েটে গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। বুয়েট ল্যাবে মোট ২০টি ল্যাপটপে তিন দিন ধরে চলে এই প্রতিযোগিতা। সেখানে অংশ নেয় বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের ৬০০ পেশাদার গেমার। খেলা হয় কল অব ডিউটি, ফিফা ১৭, নিড ফর স্পিড। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াদের কাছ থেকে এইচপি ওমেন নিয়ে ভালো রেসপন্স পাওয়া যায়।
তিনি জানান, গেমারদের ল্যাপটপ ভীতি দূর করতেই আমরা ইতোমধ্যে রায়ানস বনানীতে এক্সক্লুসিভ গেমিং জোন করেছি। সেখানে দুটি ল্যাপটপে দিনভর অভিজ্ঞতা নেয়া হচ্ছে। দুই মাস পরে আরও অ্যাডভান্স লেভেলের গেমিং ল্যাপটপ অবমুক্তির কথাও আগাম জানালেন এইচপির এই বাংলাদেশী কর্মকর্তা।
সালাউদ্দিন আদেল বললেন, গেম খেললে সময় নষ্ট হয় না। এখন গেমিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আয় করা যায়। এই কথা মাথায় রেখে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে বিশেষ কোনো খেলোয়াড়কে স্পন্সর করার বদলে আমরা দেশে একটি গেমিং প্লাটফর্ম তৈরি করছি। বিভাগ পর্যায়ের পাশাপাশি আগামীতে জাতীয় পর্যায়ে গেমিং প্রতিযোগিতা করার পরিকল্পনা নিয়েছি।
ডেল ইন্সপায়রন ৭৫৬৭
দেশের বাজারে সর্বাধুনিক সংস্করণের নতুন ল্যাপটপ বাজারে এনেছে ডেল। ডেলের এ ল্যাপটপের ডিজাইনও চমৎকার। বিশেষ করে গেমারদের জন্য। এটিও বাজেটসাশ্রয়ী ল্যাপটপ। এটিও সপ্তম প্রজন্মের ইন্টেল কোরআই৭ কোয়াড কোর প্রসেসরসমৃদ্ধ ডিভাইস। এ জন্য প্রয়োজন মতো উন্নতমানের গেম ও বিনোদন উপভোগ করতে পারবেন গেমারেরা। প্রসেসর ও গ্রাফিক্সের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে এর কুলিং ফ্যান ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে রয়েছে দুটি কুলিং ফ্যান, সাথে তিনটি গরম হাওয়া নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এর সাথে থাকা বড় ধরনের ২৪০ থার্মাল ভেন্ট পুরো সিস্টেমকে ঠা-া রাখতে এবং নিরবচ্ছিন্ন গেমিং ও স্ট্রিমিং সুবিধা দিতে একসাথে কাজ করবে।
ল্যাপটপে থাকছে এনভিডিয়া জিফোর্স জিটিএক্স ১০৫০টিআই গ্রাফিক্স কার্ড, সাথে ৪ গিগাবাইটের জিডিডিআর৫ ডিসক্রিট মেমরি। রয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চির ফোরকে ইউএইচডি ডিসপ্লে। ফাইল স্টোরেজ ও অ্যাকসেসের চিন্তা দূর করতে এতে থাকছে মাল্টিপল হার্ডড্রাইভ অপশন, যেখানে ১ টেরাবাইট এইচডিডি ডুয়াল ড্রাইভ ও ২৫৬ গিগাবাইট এসএসডি ড্রাইভ। ডেল বাংলাদেশের কানিট্র ম্যানেজার আতিকুর রহমান বলেন, অধিক সময় গেম খেলা, ভিডিও দেখা কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুবিধার্থে রয়েছে ৬ সেলের ৭৪ ডবিস্নউএইচআর ব্যাটারি, যা সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা ব্যাকআপ দেবে। পাতলা ডিজাইন ও শক্তিশালী পারফরম্যান্সের এ ল্যাপটপ সহজে বহনযোগ্য। এ ছাড়া ল্যাপটপটিতে ওয়াইডস্ক্রিন এইচডি ওয়েবক্যাম, ডুয়াল অ্যারে ডিজিটাল মাইক্রোফোন, এইচডিএমআই ও ইউএসবি পোর্ট, নিরাপত্তা লকসহ প্রয়োজনীয় ফিচার তো রয়েছেই। উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমসহ ল্যাপটপটিতে মাই ডেল, ডেল ডিজিটাল ডেলিভারি, ডেল ব্যাকআপ অ্যান্ড রিকভারি, ২০ গিগাবাইটের ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধার ড্রপবক্স, মাইক্রোসফট অফিস, অ্যান্টিভাইরাসসহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু সফটওয়্যার রয়েছে। দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
ডেল বাংলাদেশ মার্কেটিং ম্যানেজার প্রতাপ সাহা জানান, গেমিং ল্যাপটপ বাংলাদেশে নতুন। অবশ্য বেশ কয়েক বছর আগে এ দেশের গেমারদের কাছে আরাধ্য এলিয়েন ওয়্যার ল্যাপটপ এসেছিল। কিন্তু কৌশলগত কারণে এটি বাংলাদেশ থেকে তুলে নেয়া হয়। তারপর গ্রাহক পর্যায়ে থেকে আমরা গেমিং ল্যাপটপের জন্য বেশ আগ্রহ লক্ষ করতে থাকি। এই আগ্রহটা শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে চাকরিজীবী পর্যায়ের। তাদের আগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই আমরা গত প্রামিত্মকে মার্কেট তৈরির চেষ্টা করেছি। সম্প্রতি ডেল ৭৫৬৭ মডেলের গেমিং ল্যাপটপ বাংলাদেশের বাজারে অবমুক্ত করেছি। অবমুক্ত করা ল্যাপটপগুলো অবশ্য হার্ডকোর গেমারের জন্য নয়; নিশ ব্যবহারকারীদের জন্য এই ল্যাপটপগুলো আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গেমিং ল্যাপটপ সিরিজটি অল্প কিছুদিন হলো অবমুক্ত করা হলেও ভালো সাড়া পেয়েছে। তবে এখনই সংখ্যাটা প্রকাশ করতে চাই না। আর গেমিং ল্যাপটপ বাংলাদেশের বাজারের জন্য এখনও ততটা ম্যাচিউর অবস্থায় না থাকায় সুফল পেতে আমাদের আরও দুই প্রামিত্মক অপেক্ষা করতে হবে। গেমারদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে পরবর্তী প্রামিত্মকে এবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে রোড শো, ইভেন্ট করবে ডেল বাংলাদেশ।
প্রতাপ জানান, ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়া ও খুলনায় নতুন নতুন গেমার তৈরি হচ্ছে। ঢাকার বাইরেও নিয়মিত ইভেন্ট করলে এসব গেমারকে পেশাদার গেমার হিসেবে তৈরি করা যাবে। গেমারেরা যেন সহজেই গেমিং ল্যাপটপের স্বাদ নিতে পারেন এ জন্য ডেল ঢাকায় দুটি গেমিং কিওস্ক স্থাপন করেছে। এর একটি রায়ানস কমপিউটারের আইডিবি শাখায় এবং অন্যটি মাল্টিপ্ল্যানের স্টারটেক কমপিউটারে স্থাপন করা হয়েছে। এবার তারা চট্টগ্রামের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
আসুস আরওজি জিএক্স ৮০০
তাইওয়ানের প্রযুক্তি ব্র্যান্ড আসুস দেশের বাজারে এনেছে নতুন গেমিং ল্যাপটপ ‘আরওজি জিএক্স ৮০০’। ল্যাপটপের বিশেষত্ব হলো এর শক্তিশালী কনফিগারেশন আর দুর্দান্ত শীতলকরণ প্রক্রিয়া। আসুস বাংলাদেশের একমাত্র পরিবেশক গ্লোবাল ব্র্যান্ড দেশের বাজারে সম্প্রতি ল্যাপটপটি উন্মোচন করেছে। রিপাবলিক অব গেমার সিরিজের এই ল্যাপটপে রয়েছে ১৬ গিগাবাইট এনভিডিয়া জিফোর্স জিটিএক্স ১০৮০ (এসএলআই) গ্রাফিক্স প্রযুক্তি, যা গেম খেলার অভিজ্ঞতা করবে দারুণ। ল্যাপটপটির আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পুরো সিস্টেমকে ওভারক্লক করাতে ব্যবহার হয়েছে লিকুইড হাইড্রো কুলিং সিস্টেম, যা ব্যবহার করে এর প্রসেসরের ক্লকস্পিড ২.৯ থেকে ৪.৪ গিগাহার্টজ পর্যন্ত নেয়া সম্ভব। হাইড্রো কুলিং সিস্টেমটি প্রসেসর আর গ্রাফিক্স কার্ডকে শীতল রাখতে তরল প্রবাহিত করে, যা এতে অবস্থিত কমপ্রেসরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বদা শীতল করতে থাকে। এই হাইড্রো কুলিং প্রযুক্তি আসুসই সর্বপ্রথম ব্যবহার করছে। ল্যাপটপে রয়েছে ইন্টেলের সপ্তম প্রজন্মের কোরআই৭ প্রসেসর, উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম এবং ৬৪ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র্যা ম। এর স্টোরেজে থাকছে ১.৫ টেরাবাইট এসএসডি। ১৮ দশমিক ৪ ইঞ্চি স্ক্রিনের আসুসের নতুন এই গেমিং ল্যাপটপটি বিশ্বের প্রথম ফোর-কে ইউএইচডি গেমিং সমর্থিত। এতে আরও রয়েছে এনভিডিয়া জি সিঙ্ক প্রযুক্তি, যা গেম-গ্রাফিক্সের গতিকে করে বাধাহীন। ল্যাপটপটি ভিআর গেমিং সমর্থন করে। তাই ভার্চু্যয়াল রিয়েলিটিতে গেম খেলায় ল্যাপটপটির পুরো প্রযুক্তি যোগ করবে নতুন মাত্রা। গেম খেলোয়াড়দের জন্য কিবোর্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আরওজি জিএক্স ৮০০ ল্যাপটপে ব্যবহার করা হয়েছে অরা আরজিবি সমর্থিত মেকানিক্যাল কিবোর্ড। এ ছাড়া এর ব্যবহারকারী তার পছন্দমতো কিবোর্ডের রঙ পাল্টে নিতে পারবেন। দাম আসুস আরওজি জিএক্স ৮০০ ল্যাপটপের দাম পড়বে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গেমিং সিরিজে ১০টি মডেলের ল্যাপটপ রয়েছে আসুসের।
এ নিয়ে কথা হয় আসুস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আল ফুয়াদের সাথে। তিনি বলেন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসকে এগিয়ে নিতেই আমরা ইতোমধ্যে দেশে একটি গেমিং কমিউনিটি গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। আসুস রিপাবলিক গেমারস অব বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের গেমিং সংস্কৃতিতে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নিয়ে যেতে কাজ করছে। পেশাদার গেমার তৈরির জন্য নিভৃতে কাজ করছে। সম্প্রতি ধানম--তে আসুস বাংলাদেশের নিজস্ব কার্যালয়ে দেশের পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘আরওজি মাস্টারস ২০১৭ : বাংলাদেশ জয়েনস দ্য রিপাবলিক’ অনুষ্ঠান। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রফেশনাল খেলোয়াড়েরা অংশ নেন। বলে রাখা ভালো, আসুস রিপাবলিক অব গেমারস ‘আরওজি মাস্টার্স ২০১৭’ শীর্ষক বিশ্বমানের ই-স্পোর্টস গেমিং টুর্নামেন্ট। এতে অংশ নিতে যাচ্ছে ৩০টিরও বেশি দেশের প্রফেশনাল গেমারেরা। প্রতিযোগিতায় রয়েছে মোট দুটি খেলা। এগুলো হলো কাউন্টার স্ট্রাইক : গ্লোবাল অফেন্সিভ এবং ডেটা ২। এই খেলায় অংশ নিতে স্থানীয় পর্যায়ে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসুস বাংলাদেশ। এতে অংশ নেয় ১০৩টি দল। এর মধ্যে বেঙ্গালুরুর টিকেট জিতেছে দ্য কাউন্সিল ও টিম এক্সএল। এদের মাধ্যমেই আগামী ১৭ আগস্ট প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তিনি আরও জানালেন, এ প্রতিযোগিতায় দুটি দলের বিজয়ীরা জিতে নেবেন সর্বমোট ৪ কোটি টাকার পুরস্কার। এ ছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজয়ীরা জিতে নেবেন মোট ১৩ লাখ রুপি পুরস্কার। গেমিং খেলার ক্ষেত্রে ডেস্কটপ পিসির আবেদন থাকলেও আগামীতে মোবিলিটির কারণে ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকছে জানিয়ে ফুয়াদ বললেন, আমরা এখন বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে কমপিউটার গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি। এর মাধ্যমে আমরা দেশেই আন্তর্জাতিক মানের যে প্রতিভা রয়েছে তাদের খুঁজে আনতে চেষ্টা করছি।
দেশে কমপিউটার গেমের মতো গেমিং ল্যাপটপের বাজারও বেশ ছোট। তাই এই খাতে বিনিয়োগ করাটাও চ্যালেঞ্জের। তারপরও এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসুস গোড়া থেকেই কাজ করছে বলে জানালেন আল ফুয়াদ। বললেন, খেলোয়াড়দের আস্থার কারণেই এখনও দেশের মোট গেমিং ল্যাপটপে ৭৫ শতাংশ আসুসের ঝুড়িতে রয়েছে।
এসার অ্যাস্পায়ার ভিএক্স ১৫
বাজেটবান্ধব গেমিং ডিভাইস হিসেবে বাজারে এসেছে এসারের গেমিং ল্যাপটপ অ্যাস্পায়ার ভিএক্স ১৫ মডেলের ল্যাপটপ। ১৫ দশমিক ৬ ইঞ্চি পর্দার এই ল্যাপটপটির ডিজাইন গেমারদের আকৃষ্ট করবে। পারফরম্যান্সের দিক থেকে ডিভাইসটি দারুণ। অ্যামাচার গেমারদের জন্য এই ল্যাপটপের আবির্ভাব ঘটলেও বাংলাদেশের বাজারের জন্য মূল্যবান্ধব এই ল্যাপটপটি গেমারদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। শুধু প্রসেসর নয়, ডুয়াল কুলিং সিস্টেমে এগিয়ে রয়েছে এই ল্যাপটপটি। অনলাইনে গেমিং খেলতে তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সে জন্য এই গেমিং ল্যাপটপে ব্যবহার হয়েছে এসি ওয়্যারলেস ও গিগাবিট ল্যানকার্ড। উইন্ডোজ ১০ চালিত গেমিং ডিভাইসটির ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন ১৯২০ বাই ১০৮০ পিক্সেল। এর এন্টিগেস্নয়ার আইপিএস প্যানেল গেমারের চোখে প্রশামিত্ম আনে সহজেই। এ ছাড়া কনফিগারেশন অনুযায়ী এর পিসি সিপিইউ ২.৫ গিগাহার্টজ ইন্টেল কোরআই৫ ও কোরআই৭। মেমরি ৮ জিবি ডিডিআর ফোর এসডি র্যািম ২৪০০ মেগাহার্টজ, ৪ জিবি এনভিডিয়া জিফোর্স জিটিএক্স ১০৫০ গ্রাফিক্স, স্টোরেজ ২৫৬ জিবি এসএসডি। হার্ডডিস্ক ১ টেরাবাইট। ওয়্যারলেস, বস্নুটুথ ফোর এবং ব্যাকলিট কিবোর্ড। পোর্টের মধ্যে রয়েছে ইউএসবি ৩.১ টাইপ সি, দুটি ইউএসবি ৩, একটি ইউএসবি ২.০, কার্ড স্লট, এইচডিএমআই এবং হেডফোন জ্যাক। দাম ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। গেমিং সিরিজের আরেকটি ল্যাপটপ এসার প্রিডেটর জি৯-৭৯৩। এই মডেলের দাম ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা।
এসারের গেমিং ল্যাপটপ ও বাংলাদেশের গেমারদের পছন্দ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসার বাংলাদেশ প্রতিনিধি এসএম সাকিব হাসান বললেন, এটি ইমার্জিং মার্কেট। কিন্তু আমরা আগে তা বুঝিনি। ফলে আমাদের বাজার অংশ খুব বেশি নয়। ৫-৮ শতাংশ। এই বাজার অংশকে আমরা ৪০ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। সেভাবেই প্রস্ত্ততি নেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশে এসার ব্র্যান্ড হিসেবে যেভাবে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাই খুব একটা বেগ পেতে হবে না। আমরা আশাবাদী। কেননা গেমারেরা ক্লোন নয়, স্বাচ্ছন্দ্য আর স্বসিত্মর জন্য ব্র্যান্ডের দিকে ফিরে আসবে।
তিনি বললেন, শুরুতে একটু হোঁচট খেলেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আগামীতে ল্যাপটপ গেমারদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসবে। নতুনত্বকে বরণ করে নেয়ার ক্ষেত্রে সবসময়ই এমন একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। গেমারদের কারণেও হয়তো বদলে যেতে পারে গেমিং প্যাটার্ন। নতুন মাত্রা যোগ হবে প্রযুক্তি প্রকৌশলেও।
তিনি জানান, গেমারদের অভিমত নিয়েই এসার পণ্যের মান উন্নয়নে কাজ করে থাকে। পেশাদার গেমারদের অভিজ্ঞতার ওপর ভর করেই আগামী প্রামিত্মকে বাংলাদেশে অবমুক্ত করা হবে প্রিডেটর সিরিজের আরও একটি গেমিং ল্যাপটপ। এটি হবে খুবই হালকা। থাকবে চমক। বাংলাদেশের গেমিং কমিউনিটির জন্য আগামী মাসে আসছে ভি নাইট্রো। এটা হবে রেজরর মানের।
প্রসঙ্গক্রমে সাকিব জানান, দেশে পেশাদার গেমার তৈরি করতে ভারতের মতো বাংলাদেশেও গেমিং ক্যাফে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে এসার। এ ছাড়া ঢাকায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আদলে একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। একটি ল্যাপটপ গেমিং জেনারেশন গড়ে তুলতে তারা এসব পরিকল্পনা নিয়েছেন।
এমএসআই
গেমিং মেশিনের অগ্রপথিক হিসেবে বিবেচিত এমএসআইয়ের সাতটি মডেলের গেমিং ল্যাপটপ অবমুক্ত করেছে ফ্লোরা লিমিটেড। সদ্য অবমুক্ত হওয়া এমএসআই জিএল, জিপি, জিএস ও জিই সিরিজের মধ্যে জিএল অ্যামেচার গেমারদের জন্য একটি দারুণ একটি ল্যাপটপ। জিপি সিরিজের যে দুটি ল্যাপটপ অবমুক্ত হয়েছে, সেগুলো মিড লেভেলের গেমারদের পছন্দ হবে। জিই সিরিজের গেমিং ল্যাপটপটি বেশ সিস্নম। এটি আপার লেভেল গেমারদের পছন্দ হবে। আলোচ্য প্রতিটি ল্যাপটপের পর্দার আকার ১৫.৬ ইঞ্চি। আর ১৭ ইঞ্চি মডেলের জিএস সিরিজের গেমিং ল্যাপটপটি হার্ডকোর গেমারদের কাজে লাগবে। এসব ল্যাপটপে ৪-কে এইচডি ডিসপ্লে, স্টিল সিরিজের কিবোর্ড ও সাউন্ড, হাজার সিরিজের ৪ জিবি, ৬ জিবি, ৮ জিবি গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে। হিটসিঙ্কেও ব্যবহার হয়েছে বাড়তি কুলিং প্রযুক্তি। ব্যবহার হয়েছে এনভিমি গ্রাফিক্স। এগুলোর দাম ৮০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো।
এমএসআই গেমিং ল্যাপটপ নিয়ে এমএসআই বাংলাদেশ প্রতিনিধি এমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ফাস্টার রেসপন্স ও পারফরম্যান্স, এয়ার ভেন্টিলেশন, মেকানিক্যাল কিবোর্ড, শার্প অ্যান্ড স্ট্রং কি এমএসআই ল্যাপটপের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। মানসম্মত ল্যাপটপের পাশাপাশি আমরা বাংলাদেশের গেমিং কমিউনিটিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি। দ্য কাউন্সিল এবং আরভি নামে দুটি গেমিং দলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করি। পেশাদার গেমার তৈরি করতে তাদের জন্য বেতন-ভাতা চালু করেছি। আগামীতে গেমিং প্রতিযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গেমিংয়ে হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে সব কোম্পানি প্রায় সমান। কিন্তু এমএসআই ভিন্ন তাদের বিল্টইন সফটওয়্যারের জন্য। তাই এই ল্যাপটপটি নকশা ও প্রকৌশল উভয় দিক দিয়েই টেকসই ও ব্যবহারবান্ধব। এ সময় বাংলাদেশে মাসে ২০০-২৫০টি গেমিং ল্যাপটপ বিক্রি হয়। আগামী বছর নাগাদ এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হওয়া বিস্ময়ের কিছু নয় বলে মত দেন তিনি।
গিগাবাইট
কমপিউটার গেমিং অনুষঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে বিশে^র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড গিগাবাইট। বাংলাদেশের কমপিউটার গেমিং কমিউনিটিকে দীর্ঘদিন ধরেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত এই ব্র্যান্ডটি। গেমিং গ্রাফিক্স, মাদারবোর্ড উৎপাদনের পাশাপাশি গিগাবাইটের রয়েছে আরজ নামে গেমিং ল্যাপটপ। কিন্তু এটা গেমারদের চাহিদা মেটাতে পারেনি। এমনটাই বললেন গিগাবাইট বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা মো: আনাস খান। তিনি বলেন, গেমারদের কারণেই মূলত ডেস্কটপ এখনও বহাল তবিয়তে বাজারে রয়েছে। সঙ্গত কারণেই ল্যাপটপ ডেস্কটপের প্রতিস্থাপন হবে না। কেননা গেমারদের জন্য গ্রাফিক্স ও ওয়াইড স্ক্রিন একটা বড় ব্যাপার। পাওয়ার সাপোর্ট, স্টোরেজ এখানে মুখ্য নয়। তিনি আরও বলেন, গেমিং ল্যাপটপের ওজন কিন্তু কম নয়। দামও কিন্তু চড়া। আর গেমের প্যাটার্ন পরিবর্তন হলেও গেমারদের কাছে ডেস্কটপের বিকল্প নেই।
আনাস বলেন, বাংলাদেশে কমপিউটার গেমার দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন অনলাইনে ১০-১৫ হাজার গেম খেলে। পেশাদার-অপেশাদার মিলিয়ে এখন দেশে লক্ষাধিক গেমার আছে। তাদের বদৌলতেই দেশের ডেস্কটপ পিসির বাজারের ১৫ শতাংশ এখন গেমিং পিসি। আগামী বছরের মধ্যে এই সংখ্যা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন কমপিউটার গেমিং কমিউনিটির অন্যতম এ পৃষ্ঠপোষক। তিনি বলেন, গিগাবাইটের মাধ্যমে আমি বরাবরই গেমারদের পাশেই ছিলাম। পৃষ্ঠপোষকতা করেছি। আগামীতেও করব। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গেমিং কনটেস্ট করে গিগাবাইট- এমন তথ্য দিয়ে খাজা মো: আনাস বললেন, আমরা বছরে ২০টির মতো গেমিং ইভেন্ট করি। আগামী বছর ৫০টির মতো এমন ইভেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে ‘গেমার মিট’ হবে আমাদের নতুন উদ্যোগ। এ বছরের মধ্যে ১০টি গোমার মিট করব ঢাকাতেই।
ই-স্পোটর্সের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশ
মাঠের ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশে এখনও ই-স্পোর্টস বা কমপিউটার গেম তার ধারেকাছে নেই। আসক্তি এবং ক্যারিয়ার ভাবনায় পিছিয়ে থাকায় সাইবার জগতের এই ক্রীড়ায় পিছিয়ে রয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। মূলত সচেতনতা আর পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ২০১৬ সালে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পিসি গেমিং মার্কেট বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যখন ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, সেখানে জনমিতি হারে আমাদের অবস্থান সত্যিই নাজুক। এখানে কমপিউটার গেম হয়ে উঠেছে শুধুই সাময়িক বিনোদন। কিন্তু এই বিনোদনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশও দাঁড়াতে পারে ডিজিটাল অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। কেননা, এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব খেলা হয় তার প্রাইজ ভ্যালু কিন্তু মোটেই ফেলনা নয়। শুধু ডটা ২-এর একটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন মূল্য ২২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বিষয়টি আমাদের অনুধাবন করতে পরামর্শ দিলেন সাইবার স্পেসে বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান খ্যাত আতিফ আল রশীদ। গেমিং কমিউনিটিতে হাল্ক নামে পরিচিত এই তরুণ একাধারে ফিফা, সিএস এবং ডটা : টু বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। তিনি বললেন, আমরা এখনও এশিয়ার মধ্যেই খেলতে পারি। ইউরোপের মাঠে আমরা যেতে পারিনি। ইন্টারনেটের গতি, ডেডিকেটেড সার্ভারের অভাব এ ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি।
তার ভাষায়, দেশে যদি নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোর আয়োজন করা যায়, তবে একটা লক্ষ ধরে পেশাদার গেমারেরা এগিয়ে যেতে পারবে। ইএসএল, ইন্টেল এক্সট্রিম মাস্টার্স, ইএসডবিস্নউ সি, দি ইন্টারন্যাশনালগুলোতে যে চ্যাম্পিয়ন মানি দেয়া হয়, তার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপর। বুঝতেই পারছেন, কমপিউটার গেম কিন্তু শুধুই খেলা নয়, এটাকে পেশা হিসেবে নেয়ারও দারুণ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কমপিউটার গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন স্বল্পতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কম থাকায় বাংলাদেশের ই- স্পোর্টস বা কমপিউটার গেম মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। ধানম--, বারিধারা, গুলশান, উত্তরা ও মিরপুরে সবচেয়ে বেশি গেমার রয়েছে। কিন্তু অভিভাবকদের সচেতনতার কারণে ই-স্পোর্টস হিসেবে বিশে^ কমপিউটার গেমারেরা পেশাদার হয়ে উঠলেও আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী গেমারেরা এখনও এই অঙ্গন থেকে বাইরে রয়েছে। এখানকার ই-ক্রীড়ামোদীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এখনও কমপিউটার গেমের ক্ষেত্রে ততটা অনুকূলে নেই। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হলে সচেতনতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। পেশাদার গেমারদের পরিচর্যার জন্য দেশের একটি জাতীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার। বিকেএসপির মতো একটি কাঠামোও গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রসঙ্গক্রমে আতিফ জানালেন, তার ধারণা প্রতিযোগিতামূলক গেমিং বাজারে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডেস্কটপ পিসির কোনো বিকল্প হতে পারবে না।
একাধারে গেমার ও কমপিউটার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ফ্লোরা লিমিটেডের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ফারহান ইসলাম বললেন, এখন ই-স্পোর্টস হবি কিংবা প্যাশন নয়, এটি একটি লাভজনক খাতও। আন্তর্জাতিক পরিম-লের কমপিউটার গেম ফিউচার ক্যারিয়ার প্লাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই অঙ্গনে আমাদের অবস্থান এগিয়ে নিতে হলে ইন্টারনেট, সার্ভার, পিঙ্ক, প্যাকেট লস ইত্যাদি কমানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। ফারহান জানালেন, ই-স্পোর্টস সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ফ্লোরা এবার নতুন করে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। অতীতের মতো এবারও গ্রাহকদের সাধ্যের মধ্যে গেমিং প্রযুক্তিপণ্য আমদানি করে তা বাজারে ছেড়েছে। এখন ই-স্পোর্টস এডুকেশন, ট্রেনিং নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই গুলশানে অরলাল গেমিং ক্যাফে গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে ২৫টি গেমিং পিসি রয়েছে। ওখানে খেলার সুযোগ করে দেয়ার পাশপাশি তিনি নিজেই কাউন্সেলিং করেন।
সম্প্রতি যমুনা ফিউচার পার্কে অনুষ্ঠিত গেমিং প্রতিযোগিতায় ১৫০০ খেলোয়াড় থাকলেও তা উপভোগ করতে সেখানে ৬-৭ হাজার দর্শক ছিল জানিয়ে এই তরুণ গেমার বললেন, দেশে যদি ই-স্পোর্টস স্টেডিয়াম ও ই-স্পোর্টস থিয়েটার স্থাপন করা হয়, তবে এই খাতটি খুব দ্রম্নত বিকশিত হবে। সিয়াটেলে চলমান দ্য ইন্টারন্যাশনাল থেকেও আমরা স্থানীয়ভাবে গেমিং প্রতিযোগিতা আয়োজনের ধারণা নিতে পারি। সেখানে এখন ২৫ মিলিয়ন ডলারের টুর্নামেন্ট হচ্ছে। যেখানে রয়েছে ১৭ হাজার সিট।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারহান বললেন, কাস্টমাইজিবিলিটির জন্য গেমারেরা এখন ডেস্কটপ পছন্দ করে। তাছাড়া যে গেম খেলে সে ফ্রিল্যান্সিংও করে। এজন্য গেমিং এন্ডের ল্যাপটপ লাগে। মোবিলিটির জন্য বিশ^জুড়েই এখন গেমিং ল্যাপটপ সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। নবীন গেমারদের জন্য ল্যাপটপ বেশি পছন্দের হওয়া বর্তমানে দেশে এই কমিউনিটি। কিন্তু যথেষ্ট আগাম সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেশে ১০-১৫ হাজার গেমার অ্যাক্টিভ। সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলাটাই এখন মুখ্য। তা না হলে আমরা ট্রেন মিস করতে পারি।
কো-ডিজাইন লিমিটেডের সিইও এবং পেশাদার গেমার অমিত বললেন, দেশে কমপিউটার গেমিংকে পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে কবে। গেমারদের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। তবে তার আগে আমাদের মাইনসেট ঠিক করা সবচেয়ে জরুরি। গেমারদের পরিবার থেকে যেমন, তেমনি সরকারিভাবে এ দিকটায় সুনজর দেয়া দরকার।
ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ বিতর্কে না গিয়ে গেমারদের নিয়ে নতুন করে ভাবছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড লজিটেক। এমনটাই জানিয়ে লজিটেক বাংলাদেশ চ্যানেল ম্যানেজার তারিকুল হাসান বললেন, বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলেই তারহীন প্রযুক্তি নিয়ে বিশ^জুড়ে লজিটেক ইতোমধ্যেই গেমারদের জন্য ৬ ধরনের মাউস, গেমিং ও মেকানিকাল কিবোর্ড, প্রোডিজি ও আরটিমিস স্পেকট্রাম হেডসেট, শক্ত ও নরম সারফেজের মাউস প্যাড, ড্রাইভিং হুইল নিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে ওয়্যারলেস গেমিং মাউস জি৬০০ বাংলাদেশে অবমুক্ত করা হবে। গেমারদের টাচ অ্যান্ড ফিল অভিজ্ঞতা দিতে রায়ানসের ৯টি স্টোরে গেমিং জোন খুলতে যাচ্ছে লজিটেক। এ ছাড়া গেমিং কমিউনিটির পাশে থাকতে স্মার্ট টেকনোলজির সাথে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।