লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
math
গণিত জগতের কয়েকটি মজার তথ্য
মজার তথ্য : ০১
যেকোনো সংখ্যাকে যদি ৭ দিয়ে ভাগ করলে এই ভাগফল কখনই একটি পূর্ণ সংখ্যা হবে না। আর এই ভাগফল দশমিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করলে ভাগফলের শেষ দিকে ১৪২৮৫৭ সংখ্যাক্রম বা সিকুয়েন্সের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। নিচে উলিস্নখিত উদাহরণটি লক্ষ করি :
১/৭ = .১৪২৮৫৭১৪২৮৫৭
৩/৭ = .৪২৮৫৭১৪২৮৫৭১
২/৭ = .২৮৫৭১৪২৮৫৭১৪
৬/৭ = .৮৫৭১৪২৮৫৭১৪২
৪/৭ = .৫৭১৪২৮৫৭১৪২৮
৫/৭ = .৭১৪২৮৫৭১৪২৮৫
মজার তথ্য : ০২
আমরা অনেকেই জানি, ফেবোনাচ্চি নাম্বার সিকুয়েন্স বা সংখ্যাক্রমটি হচ্ছে :
১ ১ ২ ৩ ৫ ৮ ১৩ ২১ ৩৪ ৫৫ ৮৯...
এই সংখ্যাক্রমটি মনে রাখলে সহজেই মাইলের দূরত্বকে দ্রম্নত কিলোমিটারে পরিবর্তন করা যায়। এই হিসাবটা করতে হবে ভগ্নাংশকে কাছাকাছি পূর্ণসংখ্যা ধরে নিয়ে। আর মনে রাখতে হবে, ফেবোনাচ্চি সিকুয়েন্সের প্রথম তিনটি, অর্থাৎ ১, ১ ও ২-কে এ ক্ষেত্রে বিবেচনার বাইরে রাখতে হবে। লক্ষ করি, সিকুয়েন্সটিতে প্রথম তিনটি সংখ্যার পরে থাকা ৩-এর পর রয়েছে ৫। তাহলে আমরা সহজেই বলতে পারি, ৩ মাইল মোটামুটি ৫ কিলোমিটারের সমান। আবার সিকুয়েন্সটিতে ৫-এর পর রয়েছে ৮। অতএব আমরা বলতে পারি ৫ মাইল হচ্ছে প্রায় ৮ কিলোমিটারের সমান। আবার ৮-এর পর রয়েছে ১৩, অতএব বলতে পারি ৮ মাইল মোটামুটি ১৩ কিলোমিটারের সমান। একইভাবে ১৩-এর পর যেহেতু রয়েছে ২১, অতএব ১৩ মাইল হবে মোটামুটি ২১ কিলোমিটার। এভাবে ফেবোনাচ্চি সংখ্যাক্রমটি নিয়ে আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু মাইল সমান কত কিলোমিটার, তা সহজেই জেনে নিতে পারি। নিচের উদাহরণটি লক্ষ করি :
০৩ মাইল = ০৪.৮৩ কিলোমিটার = ০৫ কিলোমিটার (মোটামুটি হিসেবে)
০৫ মাইল = ০৮.০৪ কিলোমিটার = ০৮ কিলোমিটার (মোটামুটি হিসেবে)
০৮ মাইল = ১২.৮৭ কিলোমিটার = ১৩ কিলোমিটার (মোটামুটি হিসেবে)
১৩ মাইল = ২০.৯২ কিলোমিটার = ২১ কিলোমিটার (মোটামুটি হিসেবে)
২১ মাইল = ৩৩.৮০ কিলোমিটার = ৩৪ কিলোমিটার (মোটামুটিহিসেবে)
৩৪ মাইল = ৫৪.৭১ কিলোমিটার = ৫৫ কিলোমিটার (মোটামুটি হিসেবে)
৫৫ মাইল = ৮৮.৫১ কিলোমিটার = ৮৯ কিলোমিটার মোটামুটিহিসেবে)
মজার তথ্য : ০৩
গণিতে ফ্যাক্টরিয়াল বলে একটা কথা আছে। গণিতে ফ্যাক্টরিয়ালের চিহ্ন হচ্ছে, বাংলা ভাষার আশ্চর্যবোধক চিহ্নের (!) মতো। যেমন ৮! লিখলে আমরা বুঝব লেখা হয়েছে ফ্যাক্টরিয়াল ৮। তেমনি ৫! হচ্ছে ফ্যাক্টরিয়াল ৫। সাধারণ পাঠকদের জানিয়ে রাখি, এটি গণিতের জটিল কোনো বিষয় নয়। একটি সংখ্যার ফ্যাক্টরিয়াল কী, তা নিচের উদাহরণ থেকে সহজেই বোঝা যাবে। যেমন-
১! = ১
২! = ১ ২ = ২
৩! = ১ ২ ৩ = ৬
৪! = ১ ২ ৩ ৪ = ২৪
৫! = ১ ২ ৩ ৪ ৫ = ১২০
৬! = ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ = ৭২০ ইত্যাদি।
এভাবে আরও সামনে এগিয়ে গিয়ে যেকোনো সংখ্যার ফ্যাক্টরিয়ালের মান সারা যাবে। অতএব ফ্যাক্টরিয়াল ১০ সমান কত তা জানা যাবে। মজার ব্যাপার হলো, দেখা যাবে ৬ সপ্তাহ সময়কে সেকেন্ডে পরিণত করলে যত সেকেন্ড হয়, ১০! সমান তত হয়। হিসাব করেই দেখা যাক তা কতটুকু সত্য।
১০! = ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ = ৩৬২৮৮০০।
অপরদিকে, ৬ সপ্তাহ = ৬ ৭ দিন = ৪২ দিন = ৪২ ২৪ ঘণ্টা = ১০০৮ ঘণ্টা = ১০০৮ ৬০ মিনিট = ৬০৪৮০ মিনিট = ৬০৪৮০ ৬০ সেকেন্ড = ৩৬২৮৮০০ সেকেন্ড।
অতএব ৬ সপ্তাহ = ১০! সেকেন্ড।
হিসাবটা আমরা অন্যভাবেও করতে পারি।
৬ সপ্তাহ = ৬ ৭ ২৪ ৬০ ৬০ সেকেন্ড
= (১ ২ ৩) ৭ (৪ ৬) (৫ ৩ ৪) (২ ৩ ১০) সেকেন্ড
= ১ ২ ৩ ৭ ৪ ৬ ৫ ৩ ৪ ২ ৩ ১০ সেকেন্ড
= ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ (৪ ২) (৩ ৩) ১০ সেকেন্ড
= ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ সেকেন্ড
= ১০! সেকেন্ড = ফ্যাক্টরিয়াল ১০ সেকেন্ড।
মজার তথ্য : ০৪
২৬৭- ১ = ১৪৭, ৫৭৩, ৯৫২, ৫৮৯, ৬৭৬, ৪১২, ৯২৭
সুদীর্ঘ কাল ধরে মনে করা হতো এই সংখাটি একটি মৌলিক সংখ্যা। অর্থাৎ, এই সংখ্যাটিকে কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না। কিন্তু গণিতবিদ ফ্র্যাঙ্ক নেলসন কোলে প্রমাণ করেন এটি মৌলিক সংখ্যা নয়। তিনি তিন বছর রাত-দিন সাধনার পর এই প্রমাণ হাজির করতে সক্ষম হন।
১৯০৩ সালে অনুষ্ঠিত একটি গণিত সম্মেলনে তিনি এর প্রমাণ তুলে ধরেন। তিনি একটি কক্ষে সোজা হেঁটে চকবোর্ডে চলে যান। এ সময় তার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন আরও অনেক নামী-দামী গণিতবিদ। সবাই চুপচাপ বসা। ফ্র্যাঙ্ক নেলসন চক হাতে নিয়ে বোর্ডে ১৪৭, ৫৭৩, ৯৫২, ৫৮৯, ৬৭৬, ৪১২, ৯২৭ সংখ্যাটি লেখেন। আসলে এটিই হচ্ছে ২৬৭-১-এর মান। সংখাটি বোর্ডে লেখার পর তিনি বোর্ডের অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এরপর চক দিয়ে লেখেন-
১৯৩, ৭০৭, ৭২১, ৭৬১, ৩৮, ২৫৭, ২৮৭।
এরপর তিনি নিজে হাতে পুরো গুণ অঙ্কটি সম্পন্ন করেন। দেখা গেল, এই গুণফল দাঁড়ায় সেই সংখ্যা, যার মান ২৬৭-১-এর মানের সমান। তিনি নীরবে চকটি যথাস্থানে রেখে তার আসনে এসে বসেন। তখন অবশিষ্ট গণিতবিদেরা দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানান।
মজার তথ্য : ০৫
৭৩ সংখ্যাটি হচ্ছে ২১তম মৌলিক সংখ্যা। ৭৩-এর মিরর নাম্বার বা উল্টোদিক থেকে লেখা সংখ্যা হচ্ছে ৩৭। আর এই ৩৭ হচ্ছে ১২তম মৌলিক সংখ্যা। আবার ১২-এর মিরর নাম্বার হচ্ছে ২১, যা ৭ ও ৩-এর গুণফলের সমান। আমরা ৭৩ সংখ্যাটিকে ১০ নিধান বা দশমিক পদ্ধতিতে না লিখে যদি ২ নিধানে (বাইনারি পদ্ধতিতে) লিখি, তবে সংখ্যাটি লিখতে হবে এভাবে ১০০১০০১। এটি একটি প্যালিনড্রোম নাম্বার, এটি উল্টো করে লিখলে কোনো পরিবর্তন না হয়ে একই সংখ্যা ১০০১০০১ থেকে যায়।
৭৩ সংখ্যাটি আসলেই একটি মজার সংখ্যা। ৭৩ যেমন মৌলিক সংখ্যা, তেমনি এর মিরর নাম্বার ৩৭-ও একটি মৌলিক সংখ্যা। আর এই ৭৩ কিংবা ৩৭-এর সাথে ১০০ যোগ করে পাওয়া সংখ্যা ১৭৩ ও ১৩৭ উভয়ই আবার মৌলিক সংখ্যা। আবার সহজেই মনে রাখার মতো বিষয় হচ্ছে ৩৭ ও ১৩৭-এর গুণফল হচ্ছে ১০০০১।
চার অঙ্কের একটি সংখ্যা নিন, এই সংখ্যাকে প্রথমে ৭৩ দিয়ে গুণ করুন, এই গুণফলকে ১৩৭ দিয়ে গুণ করুন, দেখা যাবে সবশেষ গুণফলটি হচ্ছে শুরুতে নেয়া চার অঙ্কের সংখ্যাটি পাশাপাশি দুইবার বসালে যা হয়, তা। যেমন-
২১৩৪ ৭৩ ১৩৭ = ২১৩৪, ২১৩৪
৯০২১ ৭৩ ১৩৭ = ৯০২১, ৯০২১
৪৪৮৮ ৭৩ ১৩৭ = ৪৪৮৮, ৪৪৮৮
গণিতদাদু