• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আঙ্কটাড রিপোর্টের উদঘাটন টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আঙ্কটাড রিপোর্টের উদঘাটন টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি
আঙ্কটাড রিপোর্টের উদঘাটন
টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি
গোলাপ মুনীর

আমরা বসবাস করছি প্রাযুক্তিক পরিবর্তনের এক যুগে। এর প্রভাবে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা অভূতপূর্ব। এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমাজের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে মানবসমাজের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের নিশ্চিত উপায়। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিগুলো ধারণ করে উৎপাদনশীলতাপুনরুদ্ধার ও প্রচুর সম্পদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে চিরদিনের জন্য দারিদ্র্য নাশ, আরো টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং কয়েক দশকের পরিবেশ বিনাশের নেতিবাচকতা থেকে মানবসমাজকে রক্ষার সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রাযুক্তিক পরিবর্তন ও উদ্ভাবনকে সুশীল সমাজ ও শিক্ষাবিদদের সাথে মিলে সরকারের কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে করতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই ফলমুখী। নীতিনির্ধারকেরা যদি অনুকূল ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে প্রাযুক্তিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বৈষম্য। এর ফলে গরিব মানুষকে ঠেলে দেয়া হবে আরো প্রান্তিকতায়, যা থেকে মুক্ত সমাজ ও মুক্ত অর্থনীতির বিরুদ্ধে সৃষ্টি হবে প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন। এ ধরনের আভাসই দেয়াহয়েছে আঙ্কটাডের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সম্পর্কিত ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে। এরই সার সংক্ষেপ তুলে ধারা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

‘The Technology and Innovation Report ২০১৮: Harnessing Frontier Technologies for Sustainable Developmentএ উল্লেখ করা হয়েছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ও ইনোভেশনের মিলিত প্রভাবের সুবাদে পরিবর্তনটা আসেছে এক্সপোনেনশিয়ালি, অর্থাৎ দ্রুতগতিতে। এখন নানা ধরনের প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনটা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। এটি উন্মুক্ত করেছে উন্নয়ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে টেকনোলজি ফ্রন্টিয়ারের বিস্ময়কর গণতন্ত্রায়নের। এই রিপোর্টে প্রস্তাব করা হয়েছে কিছু কৌশল ও কর্মের (স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড অ্যাকশনস)। এগুলোর কিছু বিদ্যমান ‘সায়েন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন’ তথা এসটিআইয়ের উন্নয়ন নীতিভিত্তিকএবং কিছু আরো উদ্ভাবনীমূলক, যাতে প্রযুক্তিকে করে তোলা যায় আমাদের সাধারণ উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের আরো কার্যকর উপায়Ñ জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে। এই রিপোর্টে আরো পরামর্শ দেয়া হয় প্রতিটি দেশকেএমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যাতে জনগণই আগামী পরিবর্তন-উত্তরণটা নিজে নিজেই পরিচালনা করতে পারে। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির যে জগৎ সৃষ্টি করে চলেছে, সে জগতের জন্য প্রয়োজন হতে পারে স্টেকহোল্ডারদের তথা অংশীজনদের সামাজিক চুক্তির। শিক্ষা হবে সামাজিক ন্যায়বিচারপ্রতিষ্ঠার জন্য অধিকতর অপরিহার্য উপায়। যেহেতু ডিজিটাল টেকনোলজি অন্যান্য টেকনোলজির সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার উপায় হিসেবে কাজ করে, তাই আমাদের উচিত হবে সবার জন্যÑ বিশেষত মহিলা ও বালিকাদের জন্য ডিজিটাল সক্ষমতা তৈরি নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এদেরকে জীবনব্যাপী শিক্ষা তথা লাইফ লং লার্নিং সহায়তা দিতে হবে। যাদের এই পরিবর্র্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে ইনোভেটিভ প্রোগ্রাম নিয়ে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমাজের টেকসই উদ্যোগ, যা প্রাযুক্তিক বৈষম্য দূর করতে পারে। এই প্রাযুক্তিক বৈষম্যই বিশ্বকে উন্নত ও উন্নয়নশীল এই দুইশিবিরে বিভক্ত করে রেখেছে। হার্ড ও সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং মানব মূলধনে বিনিয়োগ, পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য জোরালো উদ্ভাবন প্রয়োজন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির। কারণ, এর ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশিক উপকার সম্প্রসারিত হয়।

নীতিসংলাপ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফরমের সুযোগ দিয়ে এবং আঙ্কটাডের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রামের (সক্ষমতা গড়ার কর্মসূচি) মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন নিশ্চিত করায়আঙ্কটাড ও জাতিসংঘের ‘কমিশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফর ডেভেলপমেন্ট’-এর রয়েছে একটি নীতিভূমিকা। আঙ্কটাড মনে করে আলোচ্য এই রিপোর্ট সহায়তা করবে এমন একটি সংলাপের সূচনায়, যে সূত্রে আমরা সন্ধান পাব টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে কী করে প্রাযুক্তিকঅগ্রগতি ত্বরান্বিত করা যায়।

‘দ্য ২০৩০ অ্যাজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ নির্ধারণ করেছে কতগুলো উচ্চাকাক্সক্ষী বৈশ্বিক লক্ষ্য। এসব লক্ষ্য পূরণে চাই বহুমুখী আন্তঃসংশ্লিষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ সম্পর্কিত অভূতপূর্ব ধরনের উদ্যোগ ও কর্মকাÐ পরিচালনা। ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন’কে (এসটিআই) অবশ্যই এসব লক্ষ্য অর্জনে পালনকরতে হবে কেন্দ্রীয় বা মুখ্য ভূমিকা। প্রাযুক্তিক প্রক্রিয়া যেসব সৃজনশীল বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সেগুলোই আবার সহায়তা করতে পারে অর্থনৈতিক রূপান্তর ও জীবনমানের উন্নয়নে। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে, উৎপাদনব্যয়, পণ্যমূল্য ও সেবামূল্য কমিয়ে এনে এবং সেই সাথে প্রকৃত মজুরি বাড়িয়ে তুলে এই সহায়তা চলতে পারে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করে এবং সেই সাথে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যকার বিদ্যমান প্রযুক্তিতে প্রবেশ ও ব্যবহার এবং উদ্ভাবনে (অপ্রাযুক্তিক ও নতুন ধরনের সামাজিক উদ্ভাবনসহ) বৈষম্য কমিয়ে এনে ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ তথা ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো’ অর্জন করা সম্ভব। তা ছাড়া সম্ভব অধিকতর টেকসই অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলা। এগুলো খুলে দেবেনানা সমস্যা সমাধানের পথ। তাছাড়া এর ফলে আরো উন্নততর, সস্তাতর, দ্রæততর উপায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রাযুক্তিক উন্নয়নের প্রভাব ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে অনেক স্বল্প-আয়ের অর্থনীতিতে আইসিটি রূপান্তরের ক্ষেত্রে। তা ছাড়া প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে উন্নয়নে পরিবেশগত টেকসই অর্জন। সম্প্রতি আরো লক্ষ করা গেছে, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও অগ্রগতি এসেছে।তা সত্তে¡ও নতুন প্রযুক্তির প্রতি নীতিনির্ধারক ও সমাজ পর্যায়ে বিরোধিতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে।

ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির বৈশিষ্ট্য ও সম্ভাবনা
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নাটকীয়ভাবে ত্বরান্বিত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ কে প্রাযুক্তিক পরিবর্তনের পুঞ্জীভূত প্রকৃতি, খ. প্রযুক্তির এক্সপোনেনশিয়াল (দ্রুত অগ্রগতির) প্রকৃতি, যেমন মাইক্রোাচিপ গত ৫০ বছর ধরে প্রতি দুই বছরে এর ক্ষমতা দিগুণ করতে পারা, গ. নয়া যূথবদ্ধতায় প্রযুক্তিগুলোর একীভূত হওয়া, ঘ. ব্যয় নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়া, ঙ. ডিজিটাল ‘প্ল্যাটফরমের প্ল্যাটফরম’-এর উদ্ভববিশেষত ইন্টারনেট এবং চ. প্রবেশ-ব্যয় কমে যাওয়া।
বেশকিছু ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছে। বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস সহায়তা করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর ব্যবস্থাপনায় বা সমাধানে এবং রিয়েল-টাইম ইনফরমেশন স্ট্রিম ব্যবহার করে নতুন ও উন্নত ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি সৃষ্টিতে। ইন্টারনেট অব থিংস সুযোগ দেবে কানেক্টেড অবজেক্ট ও মেশিনের কর্মকাÐ মনিটর ও ব্যবস্থাপনা করার। এর ফলে প্রাকৃতিক জগৎ, প্রাণী ও মানুষকে আরো কার্যকরভাবে মনিটর করা যাবে। এই দুই প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, জ্বালানি, পানির ব্যবস্থাপনা ও মান নিয়ন্ত্রণে। একই সাথে এর প্রভাব রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ বিবেচনায় উন্নয়ন সূচকগুলো মনিটর করায়। সরকারগুলোর উচিত উন্নয়ন কৌশলগুলোতে এসব প্রযুক্তি ত্বরান্বিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া, যাতে তাদের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয়।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এখন অন্তর্ভুক্ত করে ইমেজ রিকগনিশনের সক্ষমতা, সমস্যার সমাধান ও যুক্তির প্রদর্শনের ক্ষমতাকে, যা কোনো কোনো সময় মানুষের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স রোবটিকের সাথে মিলে সম্ভাবনা রয়েছে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যবসায়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনার, বিশেষত বৃহদাকার উৎপাদনের ক্ষেত্রে। একই কাজটি করে থ্রিডি প্রিন্টিংও, যা সুযোগ করে দেয় জটিল পণ্য ও উপাদান কম সংখ্যায় দ্রæততর ও সস্তাতর উপায়ে তৈরির। এর ফলে পরিবহন ও উৎপাদনের প্রয়োজন কমানোর মাধ্যমে কার্বন সাশ্রয়ের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। থ্রিডি প্রিন্টিং উপকার বয়েআনতে পারে স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণকর্ম ও শিক্ষার ক্ষেত্রে। জৈবপ্রযুক্তিতে অসাধারণ অগ্রগতি মানব জিন এডিটিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডাটা এবং প্রাণী ও গাছ-গাছালির জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে পার্সোন্যালাইজড চিকিৎসার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। ন্যানোটেকনোলজির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পানি সরবরাহ (পনি বিশুদ্ধায়ন), জ্বালানি (ব্যাটারি স্টোরেজ), কৃষি রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারে, আইসিটি (উপাদানগুলোর আকার ছোটতর করায়) ও মেডিসিনে (সরবরাহ কৌশলও ওষুধ প্রয়োগে)।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিগুলো সুযোগ করে দিয়েছে এমনসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর, যেখানে কেন্দ্রীয় গ্রিড ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয়।এদিকে ড্রোন বিপ্লব এনে দিতে পারে সরবরাহ ব্যবস্থায়। কৃষককে সুযোগ করে দিতে যথার্থ সঠিক কৃষিকাজের ও অবসান ঘটাতে পারে মানুষের বিপজ্জনক কাজের। ছোটমাপের কাস্টমাইজ স্যাটেলাইট শিগগিরই চলে আসবেউন্নয়নশীল দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাগালের মধ্যে। এগুলোর মাধ্যমে মনিটর করা যাবে শস্য ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ওপর।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ

প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থানের সম্পর্কের বিষয়টি দীর্ঘদিনের একটি বিতর্কিত বিষয়। প্রথম দিককার প্রাযুক্তিক অগ্রগতির মতো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিগুলোও কিছু কর্মসংস্থানের অবসান ঘটাবে, আবার নতুন কিছু কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। তখন সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ওপর এর প্রভাব থেকে যাবে অনিশ্চিত। ইতোমধ্যেই আভাস-ইঙ্গিত মিলছে কর্মসংস্থানের মেরুকরণ ঘটছে কম-দক্ষতাপূর্ণ ও বেশি দক্ষতাপূর্ণ অনিয়মিত কাজের মধ্যে, আর মাঝারি-দক্ষতার কাজ কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে, মহিলাদের জন্য সামগ্রিক প্রভাবটা অনুকূল হবে না।

বেশিরভাগ উন্নত দেশের জন্যকর্মসংস্থানের ওপর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রভাব সম্ভবত কম নির্ভর করবে এর অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার চেয়ে প্রাযুক্তিক সম্ভাব্যতার ওপর। কর্মসংস্থাানের ওপর ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশনের স্বল্পমেয়াদি বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেহেতুপ্রযুক্তির প্রভাব নির্ভর করে প্রতিটি দেশের অর্থনীতির কাঠামোর ওপর, তাই জাতীয় পর্যায়ের প্রভাবকে নেতিবাচক ধরা যাবে না। বরং এখানে প্রয়োজন প্রাযুক্তিক ও বাজার শক্তির সামগ্রিক প্রভাবের একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্লেষণ।

বিকাশমান ডিজিটাল প্রযুক্তি, যেমন বিগ ডাটা ও ইন্টারনেট অব থিংস তুলে এনেছে নাগরিকদের অধিকার, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, ডাটার মালিকানা ও অনলাইন সিকিউরিটি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও ডাটা কালেকশনের নিয়ন্ত্রক প্রশাসন, ব্যবহার ওপ্রবেশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষা, ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য বিধান এবং বেসরকারি খাতে ইনোভেশনের অনুমোদনের বিষয়। একই ধরনের বিবেচনা প্রয়োগ করা হয় টেকনোলজিক্যাল কনভারজেন্স অর্থাৎ প্ল্যাটফরম, বাণিজ্যিক স্বার্থ ও বিনিয়োগের কনভারজেন্স সম্পর্কেওÑ যার ফলে বাজারশক্তিগুলোর একীভূতকরণ ঘটতে পারে।

যখন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রভাব অনিশ্চিত রয়ে গেছে তখন এটি স্পষ্ট, এগুলো ইতিবাচক সম্ভাবনা ধারণ করে টেকসই উন্নয়নের প্রায় সব ক্ষেত্রেই। এর সাথে রয়েছে বিদ্যমান অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রাযুক্তিক বিভাজন বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকিরও সমূহ সম্ভাবনা। কারণ তখন যেসব দেশে প্রাযুক্তিক প্রবল সক্ষমতা রয়েছে, সেগুলো তাদের প্রযুক্তিকে ত্বরান্বিত করে অন্য দেশগুলোকে আরো বেশি পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ব্যাপকভাবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তির প্রয়োগে প্রয়োজন স্থানীয় সক্ষমতা অর্জন এবং নীতিনির্ধারণ ও একটি অনুকূল পরিবেশ একই সাথে প্রয়োজন অভূতপূর্ব সম্পদ সঞ্চালন, অংশীদারিত্ব, বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক সহযোগিতা ক. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসংশ্লিষ্ট গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল সৃষ্টি, খ. নেটওয়ার্ক তৈরি, গ. গ্লোবাল সায়েন্স পলিসি ইন্টারফেস জোরালো করে তোলা, ঘ. প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা গড়ে তোলায় সহযোগিতা করা। এসব কাজের জন্য বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগগুলোখুবই অপর্যাপ্ত। ব্যাপক ও অব্যাহত ব্যবধান রয়েছে এসটিআই ক্যাপাসিটি ও মাল্টিপল ডিজিটাল ডিভাইডে। আর এসটিআই খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ সীমিত করে রেখেছে প্রযুক্তির আবিষ্কার-উদ্ভাবন, প্রচার, উন্ন্য়ন ও গ্রহণকে। তা না হলে এগুলো ত্বরান্বিত করতে পারত এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) অর্জনের কাজকে। পাশাপাশি সম্পদের সঞ্চালন ও নীতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন রয়েছে এসডিজি অর্জনে ও প্রযুক্তির প্রসারে উদ্ভাবন ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য।

প্রাযুক্তিক সক্ষমতার বিভাজন

নতুন বিকাশমান প্রযুক্তির দেয়া সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য একটি দেশের সক্ষমতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবে দেখা যায়, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের এই সক্ষমতার মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান বিদ্যমান। শুধু কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুর ও চীন ছাড়া উন্নয়নশীলদেশগুলোতে উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে ব্যয় সত্যিকার অর্থে থেকে গেছে বিশ্বের দেশগুলোরগড় ব্যয়ের তুলনায় অনেক ছোট আকারে এবং একই অবস্থা জিডিপির আকারের তুলনায়ও। এর বেশি প্রতিফলন রয়েছে ‘বিজনেস আরঅ্যান্ডডি’ খাতে কম ব্যয়ের মধ্যে। উন্নয়নশীল দেশের বিজনেস খাতে ব্যয় হয় আরঅ্যান্ডডি’র ৩২-৩৮ শতাংশ, যেখানে গোটা বিশ্বের এই গড় ব্যয় ৩৮ শতাংশ। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে অনেক উন্নয়নশীল অঞ্চলে গবেষণা সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটলেও সেগুলো জনসংখ্যার তুলনায় বিষমভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই বিশ্বে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এ সংখ্যায় আছে বিষম অনুপাতে। ২০১৪ সালের হিসাব মতে বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ লোকপ্রতি গবেষণাসংখ্যা ১০৯৮টি, কিন্তু উপসাহারীয় অঞ্চলে এই সংখ্যা প্রতি ১০ লাখ লোকে ৮৭.৯টি এবং স্বল্পোন্নত দেশে তাপ্রতি ১০ লাখে ৬৩.৪টি।
সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেথিকস (এসটিইএম) গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যাপার্থক্যও বিষম। এর দুই-তৃতীয়াংশই রয়েছে এশিয়ায়Ñ প্রধানত ভারতে ২৯.২ শতাংশ, চীনে ২৬ শতাংশ মাত্র ৫.২ শতাংশ লাতিন আমেরিকায়, আর ১ শতাংশেরও কম আফ্রিকায়। এতে আংশিক প্রতিফলন মিলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এসটিইএম শিক্ষায় এশিয়ায়, বিশেষত চীনে বিশ্বগড়ের চেয়ে এগিয়ে আছে।

দক্ষতা ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সম্পূরক
তা সত্তে¡ও গবেষণার সক্ষমতা হচ্ছে সক্ষমতাগুলোর মধ্যে একমাত্র বিষয়, যা প্রয়োজন হয় নতুন প্রযুক্তির সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর ব্যাপারে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেনেরিক, কোর ও ফান্ডামেন্টাল স্কিলগুলোও, যেগুলো হচ্ছে নয়া প্রযুক্তির সম্পূরক যেমন লিটারেসি, নিউমারেসি ও বেসিক অ্যাকাডেমিক স্কিলÑ একই সাথে রয়েছে ফিন্যান্সিয়াল ও এন্টারপ্রিনিউরিয়াল স্কিল এবং আরো বেশি করে বেসিক ডিজিটালস্কিল এমনকি কোডিং স্কিলও।ইন্টারনেট অ্যাক্সেসও গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া অগ্রসরমানের কগনিটিভ স্কিল, যেমন এসটিইএম, অন্তর্নিহিতভাবে মানবদক্ষতা ও প্রত্যুৎপন্নমতাও গুরুত্ব অর্জনবহ হয়ে উঠছে। কারণ, এগুলো অর্জন রোবটের জন্য মুশকিল। এসব দক্ষতার মাঝে আছেÑ বিভিন্ন ধরনের আচরণগত, আন্তঃব্যক্তিগত ও সামাজিক-আবেগিক দক্ষতা; সৃজনশীলতা, সহজাত, স্বপ্ন, উৎসুক্য, ঝুঁকিগ্রহণ, মানসিক উন্মুক্ততা, যৌক্তিক চিন্তাভাবনা, সমস্যার সমাধান, সিদ্ধান্তগ্রহণ, সহমর্মিতা, আবেগিক বুদ্ধিমত্তা, যোগাযোগ, সহমতে আনা ও সমঝোতার দক্ষতা; নেটওয়ার্কিং ও টিম ওয়ার্কিং এবং গ্রহণ করে নেয়ার সক্ষমতা ও নতুন সক্ষমতা শেখার দক্ষতা।

দ্রুত বিকাশমান বাজারের সাথে দক্ষতা সরবরাহকে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষানীতির ক্ষিপ্রতা। এর অর্থ হতে পারে শিক্ষার রূপান্তর ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনগুলো প্রাযুক্তিক অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। এর ফলে বেড়ে যাবে দক্ষতার অভাব, বিশেষ করে ডিজিটাল টেকনোলজির ক্ষেত্রে। অপরদিকে বিগ ডাটা পালন করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এর জন্যও প্রয়োজন সামগ্রিক উদ্যোগ। এই উদ্যোগে সহযোগিতা দরকার নীতিনির্ধারক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে এমনভাবে, যাতে জোর দেয়া হবে দক্ষতার ওপর। শিক্ষকদের প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। এগুলোকে সাজাতে হবে প্রয়োগধর্মী ও পরীক্ষণমুখী হিসেবে, যাতে দক্ষতা অর্জন করা যায়, শেখার কাজ চলে অব্যাহতভাবে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে। ডিজিটাল ও অনলাইন পদ্ধতির থাকবে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা।

টেকনোলজি ও ডিজিটাল জেন্ডার ডিভাইড

এসটিইএম, আইটি ও কমপিউটিংয়ের মুখ্য সমস্যা হচ্ছে জেন্ডার ডিভাইড তথা নারী-পুরুষের মধ্যকার বিভাজন। ২০১৩ সালের হিসাব মতে, বিশ্বে মাত্র২৮ শতাংশ গবেষক ছিল নারী। এখনো এই জেন্ডার ডিভাইড ব্যাপকভাবে বিদ্যমান দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এবং পূর্ব এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মাঝে। উপসাহারীয় অঞ্চলে তা বাড়া সত্তে¡ও আরব দুনিয়া ওএশিয়ার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারী গবেষকদের অনুপাত এখনো ১০-৪০ শতাংশ। কমপিউটার বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েটদের মাঝেও নারীরা পতনশীল সংখ্যালঘু। এসটিআই সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়ও এদের প্রতিনিধিত্ব কম। ডিজিটাল খাতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ভয়াবহভাবে কম। বড় ধরনের জেন্ডার ডিভাইড রয়েছে মোবাইল ফোন ব্যবহারে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে, বিশেষত স্বল্পোন্নত ও উপসাহারীয় আফ্রিকায় যেখানে ২০১৩ সাল থেকে এই ব্যবধান আরো বেড়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে ইন্টারনেটে প্রবেশের সুযোগ এখন দুঃসহ পর্যায়ে, উন্নয়নশীল দেশে ১৬.১ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বে ১১.৩ শতাংশ। গ্রাম এলাকায় নারী-পুরুষের সমভাবে আইসিটিতে প্রবেশের পথে প্রধান একটি বাধা হচ্ছে জ্বালানির অপ্রাপ্যতা। মিনি ও মাইক্রোগ্রিডভিত্তিক বিকেন্দ্রায়িত এনার্জি সিস্টেমগুলো ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি। এগুলো এই সমস্যা সমাধানে সম্ভাবনাময় সুযোগ, বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশে যদি অর্থনৈতিক, প্রাযুক্তিক, আর্থিক ও শাসন সম্পর্কিত সমস্যাগুলো কাটানো যায়।

যেসব দেশের মধ্যে এসটিআই সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ও অব্যাহত রয়েছে, সেগুলোতে বিদ্যমান বৈষম্য আরো বেড়ে যেতে পারে এবং নতুন নতুন বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে, যার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশে। এসব ডিভাইড বা বিভাজন দূর করতে প্রয়োজন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় নীতিমালা আরো জোরদার করে তোলা এবং সেই সাথে আন্তর্জাতিক সম্পূরক সহায়তা যাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য এসব দেশে নতুন ও বিকাশমান প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করা যায়।

ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ত্বরান্বিতকরণ

ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সুযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাথার ওপর উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ঝুলছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ। এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোরপ্রধান কাজ হবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিখতে, গ্রহণ করতে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়া। সাফল্য নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উদ্ভাবন-ব্যবস্থার ওপর। কিন্তু এই বিষয়টিই উন্নয়নশীল দেশে খুবই দুর্বল। আছে সিস্টেমের ব্যর্থতা ও কাঠামোগত ঘাটতি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ব্যবস্থানিয়ে বেশিরভাগ উদ্ভাবককে শিখতে হবে কী করে প্রযুক্তি গ্রহণ, শিক্ষার সমাহার ঘটানো এবং প্রযুক্তিজ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া যায়। প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য এটি একটি অপরিহার্য করণীয়। এটি স্বদেশী উদ্ভাবনের সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য বিকল্প নয়, পরিপূরক। শেখা, প্রযুক্তির গ্রহণ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য এ কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রয়োজন নেটওয়ার্কিংয়ে নিয়োজিত সবার সহযোগিতার সক্ষমতা। যেখানে স্থানীয় জ্ঞানভিত্তিক অনুন্নত ও মার্কেট ইন্টেলিজেন্সে অ্যাক্সেস সীমিত, সেখানে বিদেশী প্রতিষ্ঠান, তহবিলদাতা ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে মুখ্য পদক্ষেপ। উদ্ভাবন সহযোগিতা ঘটতে পারে তাৎক্ষণিকভাবে। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি খাতে যারা এ ক্ষেত্রে নিয়োজিত তাদের সক্রিয় সুযোগ সৃষ্টির। একটি কার্যকর উদ্ভাবন-ব্যবস্থার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন উদ্ভাবন-ব্যবস্থার পাঁচটি মুখ্য উপাদানের প্রতি মনোযোগী হওয়াÑ ক. রেগুলেটরি ও পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক, খ. ইনস্টিটিউশনাল সেটিং অ্যান্ড গভর্ন্যান্স, গ. এন্টারপ্রিনিউরিয়াল ইকোসিস্টেম, ঘ. হিউম্যান ক্যাপিট্যাল, ঙ.কারিগরি এবং আরঅ্যান্ডডি ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

আরঅ্যান্ডডি, টেকনোলজি ও ইনোভেশনের জন্য সহজে অর্থ পাওয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত অর্থায়ন-ব্যবস্থা উদ্ভাবনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর ফলে বেশিরভাগ সরকারই এখন প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত আরঅ্যান্ডডি ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের অর্থায়নে। কর-প্রণোদনা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে,তবে আছে অনিশ্চিত রাজস্ব-ব্যয়। তা সত্তে¡ও সফল উদ্ভাবন-ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন সরকারি অর্থায়ন ও উন্নয়ন ব্যাংকের তহবিল। এর মধ্যে কখনো কখনো অন্তর্ভুক্ত থাকে মঞ্জুরি, বেসরকারি তহবিল, বাজারভিত্তিক সমাধান এবং দানমূলক অর্থায়নও। এসটিআই পলিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার সব স্তরকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্ট গড়ে তোলা। গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বীজ অর্থায়নের জন্য মঞ্জুরির সাযুজ্যকরণ এবং অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঋণ মঞ্জুরির নিশ্চতাদান।
বিশেষত প্যাটেন্টের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে ইনোভেশনের জন্য মেধাসম্পদের সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরনের সংরক্ষণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। এর আংশিক কারণ হচ্ছে TRIPS (trade-related intellectual property rights) এবংঅবাধ বাণিজ্য চুক্তির প্রবিধান ও দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তিগুলো। উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেয়া যখন লক্ষ্য, প্যাটেন্ট সংরক্ষণ খুব একটি ভালো ফল বয়ে আনে না। কারণ, স্বদেশী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশিরভাগ প্যাটেন্ট নিয়ে যায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে পড়ে। কম খরচের গবেষণাকর্মের সৃষ্টি সাধারণত একটি উচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় এবং তা উৎসাহিত করা যেতে পারে petty patent সিস্টেমের মাধ্যমে,
তুলনামূলকভাবে কম অভিজাত উদ্ভাবনগুলোকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তরের লক্ষ্যে যখন বৈশ্বিকভাবে মেধাসম্পদ সংরক্ষণ জোরদার করা হবে, তখন এটি করা যেতে পারে শুধূ স্বদেশজাত ইনোভেশন সিস্টেমের আওতায়, অন্যান্য নীতিমালা ও সক্ষমতার সাথে সাযুজ্য এনে। মেধাসম্পদের সংরক্ষণ ও ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির সম্ভাবনা বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগের নানা ক্ষেত্রÑ কৃষি, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি। এর তাগিদ হচ্ছে, একান্তভাবে শুধু মেধাসম্পদের ওপর জোর তাগিদ দেয়াটা যথার্থ হবে না। প্রতিটি দেশের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নীতি পরিবর্তনের নমনীয়তার সুযোগ রাখতে হবে। .

সঙ্গতিপূর্ণ নীতি গুরুত্বপূর্ণ

পরিপূর্ণ কার্যকর করার জন্য এসটিআই নীতিমালা অন্তর্নিহিতভাবে সঙ্গতিপূর্ণ ও সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার সাথে মিল থাকতে হবে। এসটিআই নীতিমালা অন্তর্নিহিতভাবে সঙ্গতিপূর্ণ করার কাজটি করা যাবে যথাযথ পর্যায়ে নীতি-কৌশল গড়ে তোলার মাধ্যমে। আর জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে মিল রাখার কাজটির জন্য প্রয়োজন‘যিড়ষব-ড়ভ-মড়াবৎহসবহঃ ঢ়বৎংঢ়বপঃরাব’ অর্থাৎ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি কমিটিগুলোর নীতি-সহায়তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা। সঙ্গতিবিধান প্রয়োজন নীতিমালা পর্যায়ে, যেমন শিল্প নীতিমালার সাথে এসটিআই, এফডিআই, বাণিজ্য, শিক্ষা ও প্রতিযোগিতা, মুদ্রানীতিসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালায়।

এসটিআই নীতি ও সার্বিক উন্নয়ন নীতিমালার মধ্যে সঙ্গতি বিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ক. ইনোভেশন সিস্টেম ও এসটিআই পলিসির গভীর পর্যালোচনা করা; খ. দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের মাধ্যমে এসটিআই নীতির অগ্রাধিকার নির্ণয়; গ. কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা; ঘ. দীর্ঘমেয়াদি এসটিআই কৌশল, নীতি ও পথচিত্র প্রণয়ন এবং নজরদারি ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নীতিশিক্ষার উন্নয়ন এবং ঙ. পলিসি ডিজাইনে অগ্রসরমানের সক্ষমতা তৈরি।

উদ্ভাবনকে সামগ্রিকতা ও টেকসইমুখী করা

২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডার প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকতা ও টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনÑ ক. সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোর জন্যএসটিআই পলিসির কৌশলগত প্রতিফলনের প্রশস্তকরণ এবং খ. টেকসই উন্নয়নের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেরপ্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ অবদানগুলোর অন্তর্ভুক্তিকরণ।

কর্মসংস্থানের ওপর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রযুক্তিতে দ্রুত পরিবর্তনের বিষয়ে বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের একটি মুখ্য মাপকাঠিও। এই বিতর্কে দুটি ধারণা অব্যাহতভাবে আসছে। ক. দক্ষতার উন্নয়ন ও হালনাগাদ করার মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষা বা লাইফ লং লার্নিং এবং খ. ইউনিভার্সেল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই)। এসটিআই পলিসির এসব ভিত্তির বাইরে বেশকিছু নতুন ধারণা ও নীতি-উদ্যোগ প্রাযুক্তিক পরিবর্তনের অবদানকে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডাকে আরো গতিশীল করে তুলতে পারে।

করার আগে ভাবতে হবে

নতুন ও বিকাশমান প্রযুক্তিগুলো এর মাধ্যমিক স্তরগুলো এড়িয়ে লিপফ্রগিংয়ের অর্থাৎ লাফিয়ে চলার সুযোগ খুলে দিয়েছেÑ বিভিন্ন দেশ ঐতিহাসিকভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এসব স্তর অতিক্রম করে এসেছে। তা সত্তে¡ও বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের জন্য সীমিত সক্ষমতা বলতে বুঝায় এসব সুযোগ প্রাথমিকভাবে উঠে আসে বিদ্যমান প্রযুক্তি গ্রহণ করে নেয়ার আকারেÑ এর উদাহরণ হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলোতে নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের বদলে বরং মোবাইল টেলিফোনি গ্রহণ করার বিষয়টি।অপরদিকে মোবাইল টেলিকম খাতের বেলায় হুবহু নকল করাটা মুশকিল। জ্বালানি খাতে একটি কেন্দ্রীভূতনবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে লিপফ্রগিং তথা লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মাধ্যমে একটি ব্যয়সাশ্রয়ী টেকসই উন্নয়নের সুযোগ আসতে পারে। উদ্ভাবন নীতিমালা সহায়তা করতে পারে এই প্রক্রিয়াকে, যদি এর পেছনে থাকে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে সহায়তাÑ এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রশাসনসংক্রান্ত বাধাগুলোর অবসান করতে হবে, বিশেষকরে স্বল্পোন্নত দেশে।

উদ্ভাবনের নয়া উদ্যোগ

নতুন নতুন উদ্ভাবন বিকশিত হচ্ছে। এগুলোতে আলোকপাত রয়েছে সামগ্রিকতা, গরিবমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, মিতব্যয়িতা, তৃণমূল ও সামাজিক উদ্ভাবনের। এ ধরনের উদ্যোগে সহায়তা দেয়ার নীতিমালা আগেকার বঞ্চিতদের জন্য সহায়ক হতে পারে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনানুষ্ঠানিক উদ্ভাবন এগিয়ে নিতে পারে সামাজিক সম্পর্ক, অনুশীলন ও কাঠামো উদ্ভাবন এগিয়ে নিতে পারে সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক প্রয়োজন মোটানোর জন্য।

প্রাযুক্তিক ও উদ্ভাবনের প্রকৃতির চেয়ে বরং মৌলিক প্ল্যাটফরমস ফর ইকোনমিক ডিসকোভারির (পিইডি)মৌলভিত্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক। আলোচ্য রিপোর্টের প্রস্তাব হচ্ছেন স্থানীয় ও আঞ্চলিক পিইডিগুলো প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার। এত আলোকপাত থাকবে স্মার্ট স্পেশালাইজেশনের অগ্রাধিকারগুলো এবং উদ্ভাবনের জন্য উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও সেবা জোগানোর প্রতি যাতে অর্থনৈতিক আবিষ্কার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এধরনের উদ্যোগ উন্নয়নের অংশীদারদের জন্য উন্মুক্ত করবে একটি ব্যবহারিক সুযোগ। সেই সাথে উদ্ভাবনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তাও জোরদার করবে। ইনকিউবেটর, অ্যাক্সিলারেটর ও টেকনোলজি পার্ক প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারে স্মার্ট স্পেশালাইজেশন ও পিইডিগুলোর পরিপূরক হিসেবে।

গবেষণা সহযোগিতা

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈশ্বিক সহযোগিতা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাড়ছে। এর ফলে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক সক্ষমতাকে একীভূত করার এবং জানা সম্ভব হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের হালনাগাদ জ্ঞান ও তথ্য। এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নশীল দেশের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এ ধরনের গবেষণা নেটওয়ার্ককে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনমুখী করতে সরকারগুলোকে তহবিল সরবরাহ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের বাইরে আরো অনেক কিছইু করতে হবে এই নেটওয়ার্ককে প্রভাবিত করার জন্য। এজন্য বুঝতে হবে এর ফরমেশন, অর্গানাইজেশন, নর্মস, ডিনামিকস, মোটিভেশন ও অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল মেকানিজমগুলো। মুখ্য হস্তক্ষেপগুলোর মধ্যে আছে, ক. তহবিল সরবরাহ, খ. টেকসই উন্নয়নের নানা বিষয়ে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন, গ.গবেষণার জন্য সফর ও যোগাযোগ সহায়তা জোগানো, ঘ. প্রাইজ ও অ্যাওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা, ঙ. টেকসই উন্নয়ন-সংশ্লিষ্ট সহযোগিতাবিষয়ক জাতীয় প্ল্যাটফরম প্রতিষ্ঠা এবং চ. স্থানীয় সমস্যা এমনভাবে তুলে ধরা, যাতে এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গবেষণা মনোযোগ আকর্ষিত হয়। উন্নয়ন প্রভাব জোরদার করে তোলা যেতে পারে স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও গবেষণাগুলোকে চিহ্নিত করে ও এক্ষেত্রে অভাবগুলো বিশ্লেষণ করে।

উদ্ভাবন তহবিলে পরিবর্তন

উদ্ভাবনের তহবিলে পরিবর্তন আনাটাও এ ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে পারে নতুন নতুন সুযোগ। নীতিসহায়তা সহায়ক হতে পারে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফিন্যান্সিংয়ের আবির্ভাবে। সক্রিয় শেয়ার বাজারের অনুপস্থিতি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে বিদেশী বা আঞ্চলিক শেয়ার বাজারের পাবলিক অফারিংয়ের মাধ্যমে। কিংবা তা করা যেতে পারে এসএমইর জন্য মাধ্যমিক শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠা করে। এটি ঝুঁকি অর্থায়নের জন্য সৃষ্টি করতে পারে অতিরিক্ত চ্যানেল।

সরকারি ও বেসরকারি খাত, আন্তর্জাতিক দাতা, উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ‘উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি তহবিল’ উন্নয়নশীল দেশগুলোতেউদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে নতুন নতুন পদক্ষেপ বৃহত্তর সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে এসটিআই পলিসির ভিত্তি তৈরি করে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - জুলাই সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা