লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
বিকাশমান ১০ নয়া প্রযুক্তি
বিকাশমান ১০ নয়া প্রযুক্তি
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ল্যাব-গ্রউন মিট, হলোগ্রাফিক মিউজিয়াম গাইড এবং অ্যামাজনের অ্যালেক্সার সুপার-চার্জড ভার্সনের মধ্যে অভিন্ন কী রয়েছে? এগুলো সবই ব্রেকথ্রো টেকনোলজি, জোরালোভাবে নিজের পথ করে নেয়া প্রযুক্তি। সম্ভবত নিকট ভবিষ্যতে এগুলো আমাদের জীবনকে নতুন করে সাজাবে কিংবা বলা যায় আমাদের জীবনযাত্রাকে পাল্টে দেবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি বিজ্ঞানী প্যানেল গত সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এ ধরনের সেরা ১০ বিকাশমান প্রযুক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এগুলো মানবজীবনে ও ভবিষ্যৎ শিল্পে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যেই আমরা সবাই শুনেছি ও জেনেছিÑ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম কমপিউটিং এখন আমাদের জীবন পাল্টে দিতে শুরু করেছে। এই অস্পষ্ট পরিবর্তন কেমন হবে, তার সংজ্ঞায়ন এই মুহূর্তে কঠিন। যে ১০ প্রযুক্তির কথা উল্লিখিত বিজ্ঞানী প্যানেল সেরা দশে অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেগুলো আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে মানবসমাজে জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। বক্ষ্যমাণ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে আমরা এই সেরা ১০ বিকাশমান প্রযুক্তির ওপর আলোকপাত করার প্রয়াস পাব। লিখেছেন গোলাপ মুনীর
অধিক সক্ষম ডিজিটাল হেলপার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিমত দিতে পারবে, নিজেই সৃষ্টি করবে নয়া অ্যালগরিদম। ফলে পারসোনাল ডিভাইসগুলো হবে আরো সক্ষম সহায়তাকারী। আজকের দিনের ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো দেখে কোনো কোনো সময় আপনি ব্যাকুপ বনে যাবেন, মনে হবে এগুলো যেন মানুষ। কিন্তু এর চেয়ে আরো বেশি কর্মক্ষম ডিজিটাল হেলপারগুলো এখনো আসার অপেক্ষায়। ঝরৎর, অষবীধ এবং এগুলোর স্বজাতীয়রা আপনার প্রশ্ন বুঝতে ও এর জবাব দিতে ব্যবহার করে অতি উৎকৃষ্ট ধরনের স্পিচ-রিকগনিশন সফটওয়্যার। আর এগুলো প্রশ্নের জবার দিতে সৃষ্টি করে স্বাভাবিক কথা বলার ভাষা এবং প্রশ্নের সাথে মানানসই জবাব সরবরাহ করে পাÐুলিপির আকারে। প্রথমে এ ধরনের সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হয়, যাতে মানুষের নানা ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। জবাবটি অবশ্য মানুষকে লিখতে হবে এবং তা সংগঠিত করতে হবে কাঠামোগত ডাটা ফরম্যাটে। কাজটি সময়ক্ষেপী এবং এর ফল সীমাবদ্ধ ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টের কর্মসক্ষমতার মধ্যে। এই সিস্টেম ‘শিখতে’ পারে, এগুলোর মেশিন-লার্নিং সক্ষমতা এগুলোকে সুযোগ করে দেয় ইনকামিং প্রশ্নের যথাযথ সঠিক জবাব দিতে, তবে এতেও আছে কিছু সীমাবদ্ধতা। এরপরও এগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক। অতি উচ্চতর পর্যায়ের পরবর্তী প্রজন্মের এ সম্পর্কিত প্রযুক্তি এখন উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফলে এসব সিস্টেম বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য উৎস থেকে অর্গানাইজ করতে পারবে কাঠামোহীন ডাটাও (রো টেক্সট, ভিডিও, পিকচার, অডিও, ই-মেইল ইত্যাদি) এবং এরপর নিজে নিজে কম্পোজ করতে পারবে অকাট্য পরামর্শ, কিংবা একজন প্রতিপক্ষের সাথে বিতর্ক করতে পারবে সেই বিষয়ের ওপর, যে সম্পর্কে এসব সিস্টেমকে কখনোই প্রশিক্ষিত করা হয়নি।
কোয়ান্টাম কমপিউটারের অ্যালগরিদম
ডেভেলপারেরা প্রোগ্রামকে এমনভাবে পরিপক্ব করে তুলছেন, যাতে করে তা কোয়ান্টাম কমপিউটারে চালানো যায়। কয়েক বছরের মধ্যে কোয়ান্টাম কমপিউটার হয়তো ক্লাসিক্যাল কমপিউটারের নাগাল পেয়ে যাবে কিংবা এমনকি ক্লাসিক্যাল কমপিউটারকে ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় হার্ডওয়্যার ও এতে চালানোর উপযোগী অ্যালগরিদমের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে। কোয়ান্টাম কমপিউটার কোয়ান্টাম মেকানিকসকে কাজে লাগায় ক্যালকুলেশন সম্পন্ন করার জন্য। এর মৌলিক কমপিউটেশন ইউনিট হচ্ছে qubit, যা স্ট্যান্ডার্ট নরঃ yero or one-এর অনুরূপ। কিন্তু এই দুটি কমপিউটেশনাল কোয়ান্টাম স্টেটের মধ্যে একটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশন এটি একই সময়ে একটি জিরো ও একটি ওয়ান হতে পারে। এই বৈশিষ্ট্য ‘এন্টঙ্গলমেন্ট’ নামের কোয়ান্টামের আরেকটি অনন্য ফিচারের সাথে মিলে কোয়ান্টাম কমপিউটারকে সক্ষম করে তুলতে পারে অন্য যেকোনো কনভেনশনাল কমিউটারের তুলনায় অধিকতর কার্যকরভাবে সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর কিছু সমস্যা সমাধানে।
এই প্রযুক্তি বিস্ময়কর হলেও চরমভাবে খুঁতখুঁতে। যেমন ফবপড়যবৎবহপব নামের একটি প্রক্রিয়া এর ফাঙ্কশন বা কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। পরীক্ষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, কয়েক হাজার কিউবিট এমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কোয়ান্টাম কমপিউটার ডিকোহারেন্স প্রক্রিয়া ঠেকাতে পারে quantum error correction নামের একটি টেকনিক ব্যবহার করে। কিন্তু এ পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে প্রদর্শিত সবচেয়ে বড় কোয়ান্টাম কমপিউটারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে IBM, Google, Rigetti Computing এবং ওড়হছ-এর কোয়ান্টাম কমপিউটার। এগুলোতে রয়েছে মাত্র কয়েক হাজার কোয়ান্টাম বিট। এসব সংস্করণকে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জন প্রেসকিল নাম দিয়েছেন ‘নয়েজি ইন্টারমেডিয়েট-স্কেল কোয়ান্টাম (এনআইএসকিউ) কমপিউটার’। এগুলো এখনো এরর কারেকশন করতে সক্ষম নয়। তা সত্তে¡ও বিশেষ করে এনআইএসকিউ কমপিউটারের জন্য অ্যালগরিদম লেখার ব্যাপারে লেখা ব্যাপক গবেষণার ফলে এসব কমপিউটার এনআইএসকিউ ডিভাইসকে সক্ষম করে তুলতে পারে ক্লাসিক কমপিউটারের তুলনায় অধিকতর কার্যকরভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্যালকুলেশন সম্পন্ন করতে।
গবেষকেরা মনে করছেন, এনআইএসকিউর জন্য দুই ধরনের অ্যালগরিদম প্রতিশ্রুতিশীল একটি হচ্ছে সিমুলেশনের জন্য, অপরটি হচ্ছে মেশিন লার্নিংয়ের জন্য। ১৯৮২ সালে রূপকথাসম তাত্তি¡ক পদার্থবিদ রিচার্ড ফিনম্যান মনে করেন, কোয়ান্টাম কমপিউটারের শক্তিশালী প্রয়োগের মধ্যে একটি হবে সিমুলেটিং প্রকৃতির অ্যাটম, মলিকুলস ও ম্যাটেরিয়ালস। অনেক গবেষক অ্যালগরিদম ডেভেলপ করেছেন এনআইএসকিউ ডিভাইসে মলিকুলস ও ম্যাটেরিয়ালস সিমুলেট করতে যেগুলো সিমুলেশন ও মেশিন লার্নিংয়ের জন্য (একই সাথে ভবিষ্যতের পরিপূর্ণ এরর-কানেকটেড কোয়ান্টাম কমপিউটার বিষয়ে)। এসব অ্যালগরিদম জোরদার করতে পারে নতুন ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন করাকে। এসব ম্যাটেরিয়াল হতে পারে জ্বালানি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পর্যন্ত।
প্লাজমোনিক টেকনোলজি
আলো-নিয়ন্ত্রিত ন্যানো-ম্যাটেরিয়ালগুলো বিপ্লবের সৃষ্টি করছে সেন্সর প্রযুক্তিতে। ২০০৭ সালে ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’-এ এক লেখায় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হ্যারি অ্যাটওয়াটার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তার অভিহিত ‘প্লাজমোনিক টেকনোলজি’ শেষ পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারে একগুচ্ছ অ্যাপ্লিকেশন, অতি সেনসিটিভ বায়োলজিক্যাল ডিটেক্টর থেকে শুরু করে ইনভিজিবিলিটি ক্লোকস পর্যন্ত। এর এক দশক পর বিভিন্ন ধরনের প্লাজমোনিক টেকনোলজি এরই মধ্যে এখন বাণিজ্যিক বাস্তবতা, বাকি প্লাজমোনিক প্রযুক্তিগুলো ল্যাবরেটরি থেকে বাজারে যাওয়ার যুগসন্ধিক্ষণে রয়েছে। এসব প্রযুক্তি নির্ভর করে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ও একটি ধাতুর (বিশেষত সোনা বা রূপা) ফ্রি ইলেকট্রনিকসের আন্তঃক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ওপর, যা ধাতুর কন্ডাক্টিভিটি ও অপটিক্যাল প্রপারটিজের জন্য দায়ী। একটি ধাতুর উপরিতলের ফ্রি ইলেকট্রনগুলো সংঘবদ্ধভাবে দোলে, যখন এর ওপর আলোর আঘাত পড়ে। এর ফলে যা সৃষ্টি হয়, তার নাম সারফেস প্লাজমোন। যখন একটি ধাতুর টুকরা বড় হয়, তখন ফ্রি ইলেকট্রন আলোকসম্পাত করে, যা ধাতুর ওপর আঘাত সৃষ্টি করে ধাতুকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে। কিন্তু যখন ধাতুর পরিমাপ হয় মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার, এর ফ্রি ইলেকট্রনসগুলো বন্দি থাকে একটি খুবই ছোট্ট স্থানে, এর ফলে তাদের কম্পনের কম্পাঙ্ক (ফ্রিকুয়েন্সি) সীমিত হয়ে পড়ে। কম্পনের বা দোলার সুনির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সি নির্ভর করে মেটাল ন্যানোপার্টিকলের আকারের ওপর। রোজোন্যান্স নামের একটি অনুমান মতে, প্লাজমন অঙ্গীভূত করে ইনকামিং আলোর একটি ভগ্নাংশ মাত্র, যা প্লাজমনের একই ফ্রিকুয়েন্সিতে দোলে। বাকি আলোটুকু প্রতিফলিত হয়। এই সারফেস প্লাজমোন রেজোন্যান্স কাজে লাগানো যাবে কিছু ন্যানোঅ্যান্টিনা, কার্যকর সোলার সেল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস সৃষ্টি করতে।
প্লাজমোনিক টেকনোলজি কাজ করছে একটি ডিস্কে ম্যাগনেটিক মেমরি স্টোরেজের পথ করে নেয়ার জন্য। চিকিৎসার ক্ষেত্রে লাইট-অ্যাক্টিভেটেড ন্যানোপার্টিকলগুলো ক্লিনিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে ক্যান্সার চিকিৎসায় এর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য। ন্যানোপার্টিকলগুলো রক্তের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ঢেলে দেয়া হয়। এরপর এগুলো একটি টিউমারের ভেতরে সম্পৃক্ত হয়। তখন একই ফ্রিকুয়েন্সির আলো সারফেস প্লাজমোন হিসেবে বস্তুর ওপর দেখা যায়, যার ফলে পার্টিকল হিট হয় রেজোন্যান্সের মাধ্যমে। এই হিট ভালো কোষগুলোর কোনো ক্ষতি না করে বেছে বেছে টিউমারের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।
জিন ড্রাইভ
একটি জেনেটিক টুল পাল্টে দিতে পারে এবং প্রবলভাবে সরিয়ে দিতে পারে পুরো প্রজাতিগুলোকে। ফলে জেনেটিক টুল প্রযুক্তিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। জেনেটিক প্রকৌশল প্রযুক্তির গবেষণা একটি জনগোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারে। এমনকি পুরো প্রজাতিগুলো যেভাবে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে, তা-ও পাল্টে দিতে পারে। এ পদক্ষেপে ব্যবহার হয় জিন ড্রাইভ। জিন ড্রাইভ হচ্ছে জেনেটিক উপাদান, যা মা-বাবা থেকে তাদের সন্তানের মধ্যে চলে যায়। এর ফলে পুরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জিন ড্রাইভ ঘটে প্রাকৃতিকভাবে, কিন্তু একে ইঞ্জিনিয়ারিং করা যায় এবং জিন ইঞ্জিনিয়ারিং মানবজাতির জন্য নানাভাবে আশীর্বাদ হতে পারে। এই প্রযুক্তি পোকামাকড়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়ানো বন্ধ করতে, পরিবেশগত চাপ কমাতে সহায়তা করতে এবং আগ্রাসী গাছ-গাছড়া ও পশুকে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এরপরও পরীক্ষকেরা গভীরভাবে সতর্ক, যাতে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন বা অপসারণ বড় ধরনের পরণতি ডেকে আনতে না পারে। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে এরা জিন ড্রাইভ ল্যাবরেটরি থেকে ভবিষ্যৎ ফিল্ড টেস্টে স্থানান্তর ও বৃহত্তর পরিসরে ব্যবহারের নিয়মকানুন তৈরি করছেন। গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখছেনÑ কী করে বিভিন্ন রোগের ও কয়েক দশক ধরে চলা অন্যান্য সমস্যার বিরুদ্ধে জিন ড্রাইভ কাজে লাগানো যায়। এই উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোরদার হয়েছে সিআরআইএসপিআর জিন এডিটিং সূচনার ফলে। এই জিন এডিটিং ক্রমোজমের সুনির্দিষ্ট স্থানে জেনেটিক বস্তু ঢুকিয়ে দেয়ার কাজটিকে সহজ করে দিয়েছে। ২০১৫ সালে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে জানানো হয়, সিআরআইএসপিআরভিত্তিক জিন ড্রাইভ সফলভাবে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে এককোষী ছত্রাক (ইস্ট), ফলের মাছি ও মশায়। একটি ডেমোনস্ট্রেশনে একদল মশার মাধ্যমে জিন ড্রাইভ করা হয় ম্যালেরিয়া পরজীবী প্রতিরোধের জন্য, যা তাত্তি¡কভাবে প্যারাসইট ট্র্যান্সমিশন সীমিত করার কথা। আরেকটি সমীক্ষায় বিভিন্ন স্ত্রী মশা প্রজাতির প্রজনন ক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করা হয়।
এই প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি (ডিএআরপিএ)। এটি জিন ড্রাইভ প্রযুক্তি গবেষণার পেছনে এরই মধ্যে বিনিয়োগ করেছে ১০ কোটি ডলার। এই গবেষণার লক্ষ্য মশাবাহিত রোগ এবং কাঠবিড়ালীর মতো আগ্রাসী তীক্ষè দাঁতওয়ালা প্রাণীর বিরুদ্ধে লড়াই করা। বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন একটি রিসার্চ কনসোর্টিয়ামে বিনিয়োগ করেছে সাড়ে ৭ কোটি ডলার। এই কনসোর্টিয়াম কাজ করছে ম্যালেরিয়া দমনে জিন ড্রাইভ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে।
২০১৭ সালে কীটনাশক প্রাণী অপসারণে জিন ড্রাইভের সম্ভাবনাময় ব্যবহার বিষয়ে লেখা একটি রচনায় এমআইটির কেভিন এম. এসভেল্ট এবং নিউজিল্যান্ডের ওতাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের নেইল জে. গেম্মেল উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক ঘটনা গবেষণাকে এক বা দুই দশক পিছিয়ে দিতে পারে। এরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, শুধু ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এই দেরির জন্য লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এড়ানো যাবে না।
ইলেকট্রোসিউটিক্যালস
আমরা কি বেশিরভাগ রোগের বেলায় ওষুধের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারি? কেউ কেউ বলেন, ইলেকট্রোসিউটিক্যালস আমাদের সক্ষম করে তুলছে ইলেকট্রনিক ইমপালস ব্যবহার অনেক রোগের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে। একটি পদক্ষেপ হচ্ছে, ভ্যাগাস নার্ভকে টার্গেট করে। এই নার্ভ সিস্টেম মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল পাঠায় শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইলেকট্রোসিউটিক্যালস ব্যবহার হয়ে আসছে ইপিলেপসি ও ডিপ্রেশনের চিকিৎসায়। এখন চেষ্টা চলছে তা ব্যবহার করতে মাইগ্রেন, মুটিয়ে যাওয়া ও থিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে।
ভ্যাগাল নার্ভ স্টিমুলেশনের (ভিএনএস) নতুন ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। এর আংশিক কারণ ফিনস্টিন ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল রিসার্চের কেভিন ট্রেসে ও অন্যদের গবেষণা। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাগাস নার্ভ কিছু রাসায়নিক নির্গত করে, যা ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, প্লীহায় (পাকস্থলীর বাঁ বাশের দেহাংশবিশেষ) সুনির্দিষ্ট ধরনের নিউরোট্র্যান্সমিটার ছেড়ে দিলে শরীরের জ্বালাপোড়া করার জন্য দায়ী ইমিউন সেলগুলোকে শান্ত করে। এই গবেষণা তথ্য নির্দেশ করে ভিএনএস উপকারী হতে পারে ইলেকট্রিক সিগন্যালের অসুবিধার বাইরেও অন্যান্য সমস্যা দূর করায়। এটি একটি আশীর্বাদ হতে পারে সেইসব রোগীর জন্য, যারা এ ধরনের অসুবিধায় ভুগছেন। কারণ, এটি কাজ করে নির্দিষ্ট একটি নার্ভে, যেখানে ওষুধ শরীরে পরিভ্রমণ করে চিকিৎসার টার্গেটের বইরের টিস্যুগুলোকে বাধাগ্রস্ত করে।
এ পর্যন্ত জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগে উৎসাহব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। Set Point গবফরপধষ (co-founded by Tracey)-এর উদ্ভাবিত ভিএনএস ডিভাইসগুলোও ঈৎড়যহ’ং ফরংবধংব এবং রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসের রোগীর ওপর প্রাথমিক প্রয়োগে নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিসের ফলে শরীরের জোড়ায় জোড়ায় প্রবল ব্যথা হয়। আর কোহন রোগীর ইনটেস্টাইনে (পাকস্থলী থেকে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যনালীর নি¤œাংশ, ক্ষুদ্রান্ত্র) জ্বালাপোড়া হয়। উভয়ের জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন চলছে। ইলেকট্রোসিউটক্যাল পদক্ষেপ বিবেচনা করা হয় অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও, যেগুলো জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (হৃদরোগ), মেটাবলিক ডিজরেগুলেশন (বিপাক সমস্যা), ডিমেনশিয়া (চিত্তভ্রংশ)। সেই সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে লুপুসের মতো অটোইমিউন ডিজিজ নিয়েও। এ ক্ষেত্রে ভ্যাগাল নার্ভস নিজেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর একটি সম্ভাবনাময় প্রয়োগ ক্ষেত্র হচ্ছে, প্রতিস্থাপিত টিস্যুর ইমিউনাইজেন প্রতিরোধ করা।
ল্যাব-গ্রউন মিট
ল্যাব-গ্রউন মিট। সোজা কথায় ল্যাবরেটরিতে তৈরি গোশত। কোনো পশু জবাই না করে ল্যাবরেটরিতে তৈরি গোশত আসছে আমাদের খাবার টেবিলে। ভাবুন তো আপনি যে বিফ বার্গারটি খাচ্ছেন, তাতে তৈরি এমন গোশত দিয়ে, যা কোনো পশু জবাই করে তৈরি নয়। সেল কালচার করে তৈরি করা হচ্ছে এই গোশত। এটি পরিচিতি পাচ্ছে ‘ল্যাব-গ্রউন মিট’ নামে। বেশ কিছু নতুন কোম্পানি উৎপাদন করছে ল্যাব-গ্রউন মিট : গরুর গোশত (বিফ), শূকরের গোশত (ফর্ক), মুরগির গোশত (পোল্ট্রি) এবং এমনকি সামুদ্রিক খাবার (সি ফুড)। এসব গোশত উৎপাদক কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে মুসা মিট, মেমফিশ মিট, সুপার মিট এবং ফিনলেস ফুডস। এসব কোম্পানি পাচ্ছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। উদাহরণস্বরূপ, মেমফিশ মিটস ২০১৭ সালে বিভিন্ন উৎস থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে আছেন বিল গেটস এবং কৃষি কোম্পানি কার্গিল।
এই গোশত তৈরি করার জন্য নেয়া হয় পশুর মাংসপেশীর নমুনা। টেকনেশিয়ানেরা টিস্যু থেকে এর স্টেম সেল সংগ্রহ করেন। নাটকীয়ভাবে তা মাল্টিপ্লাই করেন, অর্থাৎ বহু গুণে বাড়িয়ে তোলেন এবং এগুলোকে মূল গোশতের আঁশ থেকে আলাদা আঁশে পরিণত করেন। এগুলোকে প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে নেন পেশী তৈরি করার জন্য। মুসা মিট বলেছে, একটি গরুর টিস্যু স্যাম্পল থেকে এত বেশি পরিমাণে মাসল টিস্যু তৈরি করা যায়, যা দিয়ে তৈরি করা সম্ভব কোয়ার্টার-পাউন্ড ওজনের ৮০ হাজার বার্গার। বেশ কয়েকটি নতুন কোম্পানি বলেছে তারা আশা করছে, কয়েক বছরের মধ্যেই বিক্রির জন্য ল্যাব-গ্রউন গোশত উৎপাদন করবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব হলেও এই ক্লিন মিটকে বেশ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে এর দাম ও স্বাদ। ২০১৩ সালে যখন ল্যাব-গ্রউন মিট দিয়ে তৈরি একটি বার্গার সাংবাদিকদের পরিবেশন করা হয়, তখন এটি তৈরি খরতে খরচ পড়ে ৩ লাখ ডলারেরও বেশি এবং এতে চর্বি কম থাকায় এটি ছিল খুবই শুষ্ক। এরপর খরচ অবশ্য কমেছে। মেমফিশ মিট এ বছর জানিয়েছে, তাদের কোয়ার্টার-পাউন্ড গরুর গোশত তৈরিতে খরচ পড়েছে ৬০০ ডলারের মতো। দাম কমানোর এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্লিন মিট প্রচলিত গোশতের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। সযতœ গবেষণার মাধ্যমে উপযুক্ত উপাদান মিশিয়ে স্বাদের সমস্যাটিরও সমাধান করতে পারবে।
ইমপ্ল্যান্টেবল ড্রাগ-মেকিং সেল
প্রয়োজনীয় ড্রাগ বা ওষুধটি সরাসরি রোগীর শরীরে প্রয়োগের বিষয়টি দ্রæত সম্ভব হয়ে উঠছে ইমপ্ল্যান্টেবল ড্রাগ-মেকিং সেল তথা প্রতিস্থাপনীয় ড্রাগ তৈরির কোষের কল্যাণে। অনেক ডায়াবেটিস রোগী প্রতিদিন কয়েকবার করে তাদের আঙুল সূচ দিয়ে ফুটা করেন তাদের ব্লাড সুগারের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য। এর মাধ্যমে এরা নির্ধারণ করেন তাদের কী পরিমাণ ইনসুলিন নেয়া প্রয়োজন। প্যানক্রিয়াটিক সেল ইপ্ল্যান্ট বা প্রতিস্থানের মাধ্যমেশরীরের ইনসুলিন স্বাভাবিক রাখা যায়। তথাকথিত রংষবঃ পবষষং সহায়তা করতে পারে এই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলাপূর্ণ প্রক্রিয়া থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের মুক্তি পেতে। একইভাবে সেলুরার ইমপ্ল্যান্ট (কোষ প্রতিস্থাপন) ক্যান্সার, হৃদরোগ, হেমোফিলিয়া, গ্লোকোমা ও পারকিনসন রোগসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসাকেও পাল্টে দিতে পারে।
কয়েক বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা উপায় উদ্ভাবন করেছেন সেমিপারমিবল সুরক্ষিত পর্দা, যা ইমপ্ল্যান্টেড সেল বা প্রতিস্থাপিত কোষকে ইমিউন সিস্টেমের হামলা থেকে রক্ষা করে। এই ক্যাপসুল এরপরও পুষ্টি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র অণুকে ভেতরে যেতে দেয় এবং অন্যান্য থেরাপিউটিক প্রোটিনকে বেরিয়ে যেতে দেয়। এরপরও কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার উপায় পর্যাপ্ত নয়। যদি ইমিউন সিস্টেম এই প্রটেক্টিভ ম্যাটেরিয়ালকে বাহ্যিক হিসেবে বিবেচনা করে, তবে তা ক্যাপসুলের ওপর ক্ষত সৃষ্টিকর কোষ সৃষ্টি করে। এই ‘ফিব্রোসিস’ কোষে পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা দেয়। আর এভাবেই কোষকে হত্যা করে। এখন গবেষকেরা শুরু করেছেন এই ফিব্রোসিস চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কাজ। উদাহরণত, ২০১৬ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি গবেষকদল একটি উপায় বের করেছেন, যাতে ইমপ্ল্যান্টকে ইমিউন সিস্টেমের কাছে অদৃশ্য করে রাখা যায়।
মলিকুলার ডিজাইনের জন্য এআই
মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদম ছড়িয়ে পড়ছে আদর্শ ওষুধ ও বস্তুর সন্ধানে। আমরা কি সৌরশক্তি, ক্যান্সারবিরোধী ওষুধ অথবা একটি যৌগ ডিজাইন করতে চাই, যা কোনো ফসলকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে? তাহলে, প্রথমেই আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে দুটো চ্যালেঞ্জÑ সেই বস্তুর জন্য পেতে হবে যথাযথ রাসায়নিক কাঠামো এবং নির্ধারণ করতে হবে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া যথাযথ অণুকে রূপান্তর করবে প্রত্যাশিত মলিকুলে বা মলিকুলের যৌগে।
এই প্রক্রিয়া খুবই সময়ক্ষেপী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যর্থ পদক্ষেপ। যেমন একটি সিনথেসিস পরিকল্পনায় থাকতে পারে শত শত আলাদা ধাপ। এর অনেক ধাপ তৈরি করবে অবাঞ্ছিত পার্শ্বক্রিয়া অথবা উপজাত অথবা কোনো কাজই করবে না। এখন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ডিজাইন ও সিনথেসিস এই দুয়েরই কার্যকারিতা বাড়াতে শুরু করেছে। এর ফলে এন্টারপ্রাইজকে করে তুলছে দ্রুততর, সহজতর ও সস্তাতর এবং কমেছে রাসায়নিকের অপচয়ও। একটি মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করে জানা সব অতীত পরীক্ষা, যেগুলো করা হয়েছে কাক্সিক্ষত বস্তুটি বিশ্লেষণ ও আবিষ্কারের লক্ষ্যে যেসব পরীক্ষা সফল হয়েছে এবং যেগুলো ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোও। এই প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে এরা উপলব্ধি করতে পারেন সেইসব অ্যালগরিদম, যেগুলো সম্ভাব্য উপকারী বস্তুর কাঠামো হতে পারে। সেই সাথে এরা উপলব্ধি করতে পারেন তা উৎপাদনের সম্ভব্য উপায়গুলো। একটি সুইচ টিপে কোনো একক মেশিন-লার্নিং টুল দিয়ে এসব কাজ করা যাবে না। কিন্তু এআই টেকনোলজি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে ড্রাগ মলিকিউল ও মেটেরিয়াল ডিজাইনের বাস্তব জগতে।
একটি এআই টুল উদ্ভাবন করেছেন জার্মানির মিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এটি বার বার সিমুলেট করে ১ কোটি ২৪ লাখ জানা একক-ধাপ রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন করে, একটি বহু-ধাপ সিনথেটিক রুটে আসার জন্য যা সম্পন্ন করা হয় মানুষের তুলনায় ৩০ ভাগের ১ ভাগ সময়ে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এআইসমৃদ্ধ ডিজাইনের গবেষণায় সহায়তা করছে। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৫ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে ‘মেটেরিয়ালস জেনোম ইনশিয়েটিভে’। এই উদ্যোগের মাধ্যম এমন একটি অবকাঠামো তৈরি করছে, যাতে অন্তর্ভুক্ত অ্যাডভান্সড মেটেরিয়াল তৈরি ত্বরান্বিত করার এআই ও অন্যান্য কমপিউটিং পদক্ষেপ। অতীত অভিজ্ঞতা শিখিয়েছে নতুন মেটেরিয়ালও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য অজানা ঝুঁকি সৃষ্টি করত পারে। সৌভাগ্য, এআই উদ্যোগগুলো এসব অপ্রত্যাশিত ঝামেলা কমিয়ে আনতে পারে।
পার্সোনালাইজড মেডিসিন
পুরো বিংশ শতাব্দী জুড়ে স্তন ক্যান্সারগ্রস্ত সব মহিলা একই ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন। তখন থেকে থেরাপি হয়ে ওঠে অধিকতর ব্যক্তিগতায়িত। এখন স্তন ক্যান্সারকে ভাগ করা হয় দুটি উপধরন বা সাব-টাইপে। আর চিকিৎসাও চলে সে অনুযায়ী। অনেক মহিলার টিউমার তৈরি করে কিছু এস্ট্রোজেন রিসিপ্টর। এরা এমন ওষুধ পেতে পারেন, যেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে এসব রিসিপ্টরকে। পাশাপাশি পেতে পারেন সার্জারির পরবর্তী সময়ের কেমোথেরাপি। এ বছর গবেষকেরা পদক্ষেপ নিয়েছেন অধিকতর পার্সোনালাইজড চিকিৎসার ব্যাপারে। এরা চিহ্নিত করেছেন রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে। এদের টিউমারে রয়েছে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য, যার ফলে এদেরকে নিরাপদে কেমো দেয়া যায়। এদের জন্য কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অনেক রোগে পার্সোনালাইজড বা প্রিসিশন (যথাযথ সঠিক) মেডিসিনে এই অগ্রগতি ত্বরান্বিত হচ্ছে ডায়াগনস্টিক টুলসের মাধ্যমে। এসব প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সহায়তা করতে পারে মাল্টিপল বায়োমেকার চিহ্নিত ও পরিমাপ করার ক্ষেত্রে। বায়োমেকার হচ্ছে এক ধরনের মলিকুল, যা রোগের অস্তিত্বের সিগন্যাল দেয়। এই বায়োমেকার দিয়ে রোগীদের সাব-গ্রুপে ভাগ করা হয়।
বেশ কিছু অগ্রসরমানের ডায়াগনস্টিক ইতোমেধ্যেই ব্যবহার হচ্ছে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। একটিকে বলা হয় ঙহপড়ঃুঢ়ব উঢ। এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় ২১টি জিন। এটি এমন একটি টেস্ট, যার মাধমে উদঘাটন অনেক স্তন ক্যান্সারের মহিলা কেমোথেরাপি এড়িয়ে যেতে পারেন। আরেকটি ডায়াগনস্টিকের নাম ঋড়ঁহফধঃরড়হঙহব ঈউী ঃবংঃ। এই টেস্টের মাধ্যমে সলিড টিউমারে তিনশরও বেশি জিন মিউটেশন চিহ্নিত করা যায়। তা ছাড়া এটি নির্দেশ করে জিন চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট ওষুধ, যা সংশ্লিষ্ট রোগীর জন্য উপকারী হতে পারে।
সর্বত্র অগমেন্টেড রিয়েলিটি
খুব শিগগিরই বিশ্বকে ডুবিয়ে দেবে ডাটা আর ডাটায়। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) আপনাকে নিমজ্জিত করবে এক রূপকথার বিচ্ছিন্ন এক মহাবিশ্বে। অপরদিকে, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রলেপে ডেকে দেবে রিয়েলটাইমে রিয়েল ওয়ার্ল্ডে কমপিউটারসৃষ্ট তথ্য। আপনি দেখবেন কিংবা পরিধান করবেন একটি ডিভাইস, যা থাকবে এআর সফটওয়্যার ও একটি ক্যামেরায় সজ্জিত হতে পারে এটি একটি স্মার্টফোন, একটি ট্যাবলেট, একটি হেডসেট কিংবা একটি স্মার্ট চশমা। এই প্রোগ্রাম বিশ্লেষণ করে ইনকামিং ভিডিও স্ট্রিম, ডাউনলোড করে দৃশ্যসম্পর্কিত ব্যাপক তথ্য এবং এর ওপর সুপারপোজ করে সংশ্লিষ্ট ডাটা, ছবি অথবা অ্যানিমেশন, যা কখনো কখনো ত্রিমাত্রিক।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ অথবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য এক উপাদান। অগমেন্টেড রিয়েলিটি আজকের এই দিনে শিল্পের ওপর সবচেয়ে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে। মান উন্নয়ন, ব্যয় কমানো ও দক্ষতা বাড়ানোয় সুষ্ঠু ভৌত ও ডিজিটাল ব্যবস্থার সমন্বয়নের মাধ্যমে বৃহদাকার উৎপাদনে একটি সুষ্ঠু পরিবর্তন ঘটছে। উদাহরণত, অনেক কোম্পানি অ্যাসেম্বলি লাইন পরীক্ষা করছে। ‘এআর’ সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যটি দিতে পারে। এর ফলে কমবে ভুলের মাত্রা ও পরিমাণ, বাড়াবে দক্ষতা, উন্নয়ন ঘটাবে উন্নয়নশীলতার। এটি দেখাবে যন্ত্রের উপরকার পীড়ন এবং যেখানে সমস্যা তার রিয়েল টাইম ছবি দেখাবে।
বাধাও আছে। এই সময়ে হার্ডওয়্যার ও কমিউনিকেশন ব্যান্ডউইডথ বাধা সৃষ্টি করছে ভোক্তাদের প্রতিদিনের ব্যবহার। যেমন অনেক বিদ্যমান মিউজিয়াম ও এআর ব্যবহারকারী ট্র্রাভেল অ্যাপের অভিজ্ঞতা জোরদার করতে আগে থেকেই ডাউনলোড করতে হয়। এমনকি এরপরও গ্রাফিকসের মান ব্যবহারকারীর প্রত্যাশা নাও মেটাতে পারে। তবে ক্ষেত্রটি এখন তৈরি নাটকীয়ভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য আরো সস্তাতর, দ্রুততর এআর-মোবাইল চিপ, আরো বহুমুখী চশমা বাজারে আসার ও ব্যান্ডউইডথ বাড়ানোর অপেক্ষায়। তখন অগমেন্টেড যোগ দেবে ইন্টারনেটে ও রিয়েল টাইম ভিডিওতে, আমাদের প্রতিদিনের জীবনের এক সাধারণ বিষয় হিসেবে