• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > টেলেনরের প্রতিবেদন মতে ২০১৯ সালের ৭ প্রযুক্তি-প্রবণতা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৯ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
টেলেনরের প্রতিবেদন মতে ২০১৯ সালের ৭ প্রযুক্তি-প্রবণতা
টেলেনরের প্রতিবেদন মতে ২০১৯ সালের ৭ প্রযুক্তি-প্রবণতা
গোলাপ মুনীর

চলতি ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে মানুষ দেখতে পাবে ফাইভজি (পঞ্চম প্রজেক্টের) মোবাইল প্রযুক্তি অনেক বাণিজ্যিক অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে। এই প্রবণতার পাশাপাশি আরো ছয়টি প্রযুক্তি প্রবণতা বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিশিল্পে প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখতে পাব আমরা। সব মিলিয়ে চলতি বছরে আমরা প্রত্যক্ষ করব ৭টি প্রযুক্তি-প্রবণতা। এগুলো হচ্ছে : ভিডিও কনটেন্ট পরিবর্তনের প্রযুক্তি ডিপফেইক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ফাইভজি মোবাইল প্রযুক্তি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট অব থিংস, ভয়েস চ্যাটবট, ট্যাক অ্যাওয়ারনেস ফ্যাক্ট এবং মোবাইল-ড্রিভেন গ্রিনটেক। এমনটিই বলা হয়েছে টেলেনর গ্রুপের গবেষণা শাখা ‘টেলেনর রিসার্চ’-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, টেলেনর গ্রুপ হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর ‘গ্রামীণফোন’-এর মুরব্বি প্রতিষ্ঠান।

এই গবেষণা প্রতিবেদন মতে, চলতি বছরটিতে মানুষ আগের চেয়ে আরো বেশি সময় কাটাবে স্ক্রিনের সামনে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়ে যাবে ব্যাপকভাবে, শিল্পখাতে ইন্টারনেট অব থিংসের গ্রাহকেরা তাদের উত্তরণ ঘটাবে প্রটোটাইপ থেকে, মোবাইল-তাড়িত গ্রিন টেক সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতনতা বেড়ে চলবে। রিপোর্টে আরো বলা হয়, চলতি বছরের আরেকটি প্রবণতা হচ্ছে টেক্সটভিত্তিক চ্যাটবট থেকে ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটে উত্তরণ ঘটবে। আর অগ্রসর মানের অ্যালগরিদম মানুষকে সুযোগ করে দেবে ডক্টরড ভিডিও, ফটো ও ডিপফেইক কনটেন্ট সৃষ্টি করার। টেলেনরের গবেষকদের এর ফলে এগুলো নকল না আসল তা চেনা মুশকিল হবে। ২০১৯ সালে দেখা যাবে ইন্টারনেট অব থিংস সার্ভিস প্রোভাইডার, অপারেটর রেগুলেটর নজর দেবে ডিপফেইকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর।
যেহেতু বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন অর্জনের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখা হয়েছে, তাই প্রত্যাশা করা হয়েছে দেশটি এসব প্রযুক্তি প্রবণতার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। এমন বক্তব্য এসেছে গত ১৪ জানুয়ারি টেলেনরের এই রিপোর্ট বাংলাদেশে প্রকাশের লক্ষ্যে ঢাকায় গ্রামীণফোন অফিসে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বললেন, প্রযুক্তিবিশ্বে অব্যাহতভাবে বিকাশ ঘটতে থাকবে। আলোচকেরা মনে করেন, ২০১৯ সালে প্রযুক্তির দোলক দুলতে থাকবে। উল্লিখিত এসব প্রযুক্তির অভিযাত্রা বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেছে এবং এসব প্রযুক্তির ব্যবহার আগামী দিনে ত্বরান্বিত হবে দেশকে ডিজিটালায়নের দিকে এগিয়ে নিতে।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফলি বলেন, এটি একটি বড় চিহ্ন যে, বাংলাদেশ দ্রæত গ্রহণ করে নিচ্ছে বৈশ্বিক উদ্ভাবনগুলোকে ও আসন্ন প্রায় সেইসব বিশ্বপ্রযুক্তি প্রবণতাগুলোকে, যেগুলোর উল্লেখ রয়েছে এই প্রতিবেদনে। রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কী করে শিল্পখাত ও কোম্পানিগুলো এর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। প্রযুক্তি, জীবনযাপনের ধরন ও শিল্পখাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা বৈপ্লবিক ডিজিটাল সেবার ও সত্যিকারের ডিজিটাল ইকো-সিস্টেমের উদ্ভব ঘটার প্রত্যাশা করতে পারি।
টেলেনর রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট বি. হেনসেন এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ডাটাসফট ম্যানেজিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলিং ইঙ্ক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাসান রহমান এবং পাঠাওয়ের সিইও হুসেইন ইলিয়াস।

নিচে উল্লিখিত সাত প্রযুক্তি-প্রবণতা সম্পর্কে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

চিহ্নিত সাত প্রযুক্তি-প্রবণতা

‘টেলেনর রিসার্চ’-এর গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ২০১৯ সালের ৭টি প্রযুক্তি-প্রবণতা পাল্টে দেবে আমাদের ভোগ ও যোগাযোগের ধরন। এমনকি পাল্টে দেবে আমাদের চারপাশের দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি বোধকে। এক বছরের দ্রুত ও বিপজ্জনকভাবে প্রযুক্তিজগতের অগ্রগতি, অগ্রগতিতে পিছুটান ও সাফল্যের পর টেলেনর গ্রæপের গবেষণা শাখা ‘টেলেনর রিসার্চ’ চিহ্নিত করেছে ২০১৯ সালের ৭টি প্রযুক্তি-প্রবণতাকে। ‘টেলেনর রিসার্চ’-এর প্রধান টালে স্যান্ডবার্গ বলেন : ‘প্রযুক্তিজগত অব্যাহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অবাক করা সব উদ্ভাবনে এর প্রতিফলন রয়েছে। আমরা যে ৭টি প্রযুক্তি-প্রবণতা চিহ্নিত করেছি, সেগুলো আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো বৃহত্তর পরিসরে ২০১৯ সালে চলবে- আমাদের উচিত এসব প্রযুক্তি-প্রবণতার ওপর জোরালো প্রতিফল ঘটানো। আমরা মনে করি, টেক-পেন্ডুলাম দুলছে ২০১৯ সালকে সেদিকেই নিয়ে যেতে। মানুষ একধাপ পিছিয়ে গিয়ে মূল্যায়ন করছে, এই প্রবণতা গভীরভাবে প্রযুক্তি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে কী উন্নয়ন বয়ে আনবে। আর সে উন্নয়নের কী অর্থ দাঁড়াবে আমার নিজের, আমার পরিবারের ও আমার সমাজের জন্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই- প্রযুক্তি আমাদেরকে কয় ধাপ এগিয়ে নেবে সেটি কোনো বিষয় নয়, বিবেচ্য হচ্ছে- প্রযুক্তিকে আমরা আমাদের জীবনের সাথে নিরাপদে, সচেতনভাবে ও ইতিবাচকভাবে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারব।’

এক : ডিপফেইক

অ্যাপে মাস্ক, শেড ও ফিল্টার সামাজিক গণমাধ্যমে ও মেসেজিং অ্যাপে এক সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। আইফোন এক্স এই ধারণাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যায় ফ্যাসিয়েল রিকগনিশনের মাধ্যমে। কিন্তু যেহেতু প্রযুক্তির আরো অগ্রগতি ঘটেছে, তাহলে আমরা এখানেই থেমে থাকব কেনো? ‘মিশন ইম্পসিবল’ চলচ্চিত্রের টম ক্রুজের মাস্কের কথা আমরা স্মরণ করতে পারি। এখন তা করা হয় শুধু সাইবার জগতে আর মিশন ইম্পসিবলে নয়। এ বিষয়টিকে এখন পসিবল করে তুলেছে প্রযুক্তির জগৎ। প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ‘ফববঢ়ভধশব’। এখানে ‘ডিপ লার্নিং’ মিলিত হয় ফেইক নিউজের সাথে অথবা ডক্টরড ফটো ও ভিডিওর সাথে।

২০১৯ সাল আমাদের জন্য নিয়ে আসবে ডিপফেইক কনটেন্ট। কারণ, বিপুল পরিমাণ কাজ চলে যাবে Generative Adversarial Networks (GANs) নামের অ্যালগরিদমে। এই জেনারেটিভ অ্যাডভার্সিয়াল নেটওয়ার্কগুলো হচ্ছে এক শ্রেণীর আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যালগরিদম, যা ব্যবহার হয় আনসুপারভাইজড লার্নিংয়ে। বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম আসছে। আর সামগ্রিকভাবে সিস্টেমগুলো শিখছে আরো দ্রæততর গতিতে। এটি সেইসব অ্যালগরিদম, যা সক্ষম করে তুলবে ডিপফেইক কনটেন্ট সৃষ্টিতে, আর তা হবে এতটাই অগ্রসর মানের যে, ডিজিটাল জগতে কোনটা আসল বা রিয়েল এবং কোনটা ফেইক বা নকল তা ধরা মুশকিল হয়ে পড়বে। যদি ২০১৬ সাল ও ২০১৮ সালের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ ফেইক নিউজ পোস্ট ও রিয়েল নিউজ পোস্ট চিনতে মুশকিলে পড়ে গিয়ে থাকে, তবে ২০১৯ সালে বিষয়টি যে আমাদের কাছে আরো বেশি মাত্রায় দুর্বোধ্য হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সাধারণ নির্বাচন হবে চলতি বছরে। অপরদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালে শুরু হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লিডআপ ক্যাম্পেইন। এসব নির্বাচনে সম্ভাবনা রয়েছে সফিস্টিকেটেড ডিপফেইক কনটেন্ট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে। তবে ভালো খবর হলো, এগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুরক্ষা দিতে মিডিয়া ফরেনসিক টুলস ও টেকনিকের জোরালো উন্নয়ন সাধনও করতে পারে। ২০১৯ সালে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, অপারেটর ও রেগুলটরেরা গভীর নজর দেবে ফেইক কনটেন্টের তাণ্ডব উপশম করতে। এরা ব্যাপকভাবে ডিপফেইকের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারাভিযান চালাবে।

দুই : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

২০১৭ সালে টেলেনর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এথিকস একদিন আলোচনার এক বিষয় হয়ে উঠবে। সেই সময় এখন এসেছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এআই ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে প্রায় সব শিল্পে ও সমাজে। এ ব্যাপারে এখন আর কোনো প্রশ্ন নেই। এখন মানুষ দেখতে পাচ্ছে কী করে প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমান হারে আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে। এআই সেইসব প্রযুক্তির একটি, যা নিয়ে ২০১৯ সালে মানুষের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় হয়ে উঠবে। চলতি বছরে আমরা দেখতে পাব সরকারি-বেসরকারি কমিটিগুলো স্থাপন করছে এআই গভর্ন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক এবং গ্রহণ করে নিচ্ছে নয়া কোড অব কন্ডাক্ট। এটুকু নিশ্চিত করার জন্য যে, এরা চালু করতে পারে উঁচুমাত্রার এথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড। তা করা হবে এটুকু নিশ্চিত করতে যে, এআই সিস্টেমগুলো নন-ডিসক্রিমিনেটরি (বৈষম্যহীন), স্বচ্ছ, চিহ্নিত করা উপযোগী ও নিরাপদ হবে এবং এটুকুও নিশ্চিত করতে যে, মানুষ সব সময় একটি লুপ বা ফাঁসের মধ্যে থাকে, যারা এর ডিজাইন, সৃষ্টি ও গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। চলতি ২০১৯ সালে আমরা আরো দেখতে পাব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরো নতুন নতুন সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে রাজনীতির সব স্তরে, দেখব এআই শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য নতুন নতুন প্ল্যাটফরম এবং একই সাথে দেখতে পাব সেইসব টুল ও সিস্টেমে বিনিয়োগ, যেগুলো সক্ষমতা এনে দেবে এথিক্যাল এআই ডেভেলপমেন্টের।

কেউ কেউ বলতে পারেন, উঁচু ধরনের এথিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই আসতে পারে ইনোভেশন এবং এ ধরনের সজাগ দৃষ্টির অবর্তমানেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এআই ইকোসিস্টেম সৃষ্টি হতে পারে এবং উদ্ভাবন চলতে পারে বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে (যেমন ইউরাপীয় ইউনিয়ন চলেছে)। এরপরও টেলেনর দেখতে পাচ্ছে, এআই গভর্ন্যান্স টেকসই উদ্ভাবনের জন্য এবং একই সাথে এআই ব্যবসায়ের ত্বরণ ধরে রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনায়, এই অটোনোমাস সিস্টেম মানুষের সমস্যা নিরাপদে ব্যাপকভাবে ও নির্ভরযোগ্যভাবে সমাধানের জন্য প্রয়োজন। তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এআইয়ের এথিক্যাল ব্যবহারের ওপর ও গভর্ন্যান্স কাঠামোর ওপর সক্রিয় নজর দরকার।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পনা হচ্ছে- ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে এআইয়ের এথিক্যাল গাইডলাইন প্রকাশ করা, যাতে এথিক্যাল এআইয়ের একটি বিশ্বমান সৃষ্টি হয়। টেলেনরের গবেষকেরা আশা করছেন ব্যবসায়ে একটি বিশ্বস্ত এআই অনুমোদন ও বাস্তবায়নের। এটি কঠোর এথিক্যাল বিধিবিধানের আওতাধীন।

তিন : ফাইভজি মোবাইল প্রযুক্তি

২০১৭ সালের প্রায় সবই ছিল ফাইভজি টেস্টিং নিয়ে : দেখার বিষয় ছিল, একটি কমপিউটার কি কয়েক মিটার দূরে রাখা ফাইভজি ফ্রিকুয়েন্সিতে চলা একটি সিগন্যাল স্টেশনকে সংযুক্ত করতে পারে কি না। ২০১৮ সালে এসে আমরা দেখলাম, ফাইভজির নানা পাইওনিয়ার ব্যবহার- যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিকের ফাইভজি ড্রোন কভারেজ এবং চলতি ২০১৯ সালে দেখব ‘ফাইভজি আয়ল্যান্ড’-এর উদ্ভব ঘটবে বিশ্বজুড়ে- ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকা ও উত্তর-এশিয়া পর্যন্ত- সংযুক্ত করবে বাছাই করা কিছু কমিউনিটি ও বিজনেস নেটওয়ার্ককে। বিগত কয়েক বছর ধরে অপারেটর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিটি ও সরকারগুলোর মধ্যে ‘সমাজের ডিজিটালায়ন’ তথা ‘ডিজিটাইজিং সোসাইটিজ’ ছিল একটি বহুল আলোচিত শব্দবাচ্য। কিন্তু ২০১৯ সালটি হবে প্রথম বছর, যে বছরে কমিউনিটিগুলো অভিজ্ঞতা লাভ করবে ‘সমাজের ডিজিটালায়নের’ প্রকৃত অর্থ কী। সেই ‘সমাজের ডিজিটালায়নের’ প্রথম উদাহরণ হয়ে আসবে নরওয়ের
‘কংগসবার্গ’, একটি পাইলট টাউন হিসেবে।
যদিও ২০২০ সালটি হচ্ছে সেই বছর, যে বছরটিতে ফাইভজির গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড রিলিজ করা হবে, তবুও ২০১৯ সালেই আমরা দেখতে পাব ফাইভজির বাণিজ্যিক অগ্রগতি, যা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পাই যুক্তরাষ্ট্র ও এশীয় অঞ্চলেও। এ ছাড়া আমরা দেখব প্রথমবারের মতো ফাইভজিভিত্তিক বিপণন প্রচারাভিযান, প্রথম সেলফ-ড্রাইভিং, ফাইভজি স্টেয়ারিংয়ের বাস থেকে শুরু করে স্বয়ংক্রিয় মাছধরা পর্যন্ত, ফাইভজিচালিত টিভি ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড থেকে ফাইভজিসমৃদ্ধ রিমোট সার্জারির সম্ভাবনাময় ক্ষমতা। ফাইভজি ফ্লাডগেট ওপেন হবে ২০১৯ সালে। আর এর বাণিজ্যিক সেবা বাজারে পৌঁছবে ২০২০ সালে।

চার : ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইওটি

‘টেলেনর রিসার্চ’ মনে করে- ২০১৯ সালটি হবে সেই বছর, যখন ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) গ্রাহকেরা আমাদের সাম্প্রতিক কয় বছর ধরে দেখে আসা ‘প্রুফ অব কনসেপটস’ থেকে ‘লো-পাওয়ার-ওয়াইড-এরিয়া’ (এলপিডবিউএ) ইকোসিস্টেমে উত্তরণ ঘটাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এলপিডবিউএ টেকনোলজি সংযুক্ত ডিভাইসগুলোকে, যেমন সেন্সর, মিটার অথবা এমনকি বড় ধরনের ভৌগোলিক এলাকায় জাহাজের কন্টেইনারগুলোকে যোগাযোগের সুযোগ করে দেবে একটি লো বিট রেটে। গবেষকদের প্রত্যাশা, এলপিডবিউএ ইকোসিস্টেম বিশেষত এই বছরটিতে বিকশিত হবে। এটি শিল্পে বৃহত্তর প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা আজ পর্যন্ত দ্রুত পরিপক্ব হয়ে উঠতে পারেনি। এলপিডবিউএ ইকোসিস্টেম পরিপক্ব হয়ে উঠলে এবং ডেভেলপারেরা তাদের অতীতের প্রযুক্তির উপায়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে, আমরা আশা করতে পারি- শিল্পকারখানায় আইওটি চালু হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়, বিশেষ করে স্মার্ট সিটি, শিল্প উৎপাদন ও শিল্প প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রগুলোতে। যেমন : শিপিং, ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট মনিটরিং এবং মাছ ধরার কাজে। সংক্ষেপে বলতে হয় : ‘আইওটি ইজ গোয়িং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন ২০১৯’।

শেষাংশে এটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, কী করে বিভিন্ন কানেক্টিভিটি টেকনোলজি বিভিন্ন ব্যবহার ক্ষেত্রে সেবা জোগাচ্ছে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, সিসিটিভি ও অটোমেটিভের জন্য এলটিই নেটওয়ার্কগুলোর কথা, যেগুলো এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।’ আরো উদহরণ দেয়া যায় লজিস্টিকের জন্য এলটিই-এম, মিটারিংয়ের জন্য এনবি-আইওটি এবং অনেক ব্যবহারের ক্ষেত্রে। যদিও প্রশ্ন হচ্ছে, কোন আইওটি টেকনোলজি মাত্রা সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে দ্রুত বাড়বে। একটা বিষয় স্পষ্ট, এলপিডবিøউএ আইওটি নেটওয়ার্কগুলোর ব্যবহারই ২০১৯ সালে এবং তারও পরে সবচেয়ে বেশি হবে।

পাঁচ : ভয়েস চ্যাটবট

বাস্তবতা হচ্ছে, টেক্সটভিত্তিক নিয়ে কাজ করা ছিল কতই না কঠিন কজ। আমরা এখন দেখছি ২০১৯ সালে ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটগুলো ভালোই কাজ করছে- বিশেষ করে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের ডিভাইসগুলোতে। তবে এখনো খুব বেশি একটা ক্লেভার সিস্টেম হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এগুলো যেভাবে অগ্রগতি ঘটিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা আশা করতে পারি, আগের চেয়ে আগামী দিনে আরো বেশি সংখ্যায় চ্যাটবটকে আমাদের সহায়তায় কাছে পাব। টেলেনর গবেষকেরা মনে করেন, ২০১৯ সালে আমরা দেখতে পাব ভয়েস-কনট্রোল্ড চ্যাটবটের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। এর ফলে আমরা পাব আরো বেশি স্মার্ট ভয়েস রিকগনিশন অ্যাপ্লিকেশন। এগুলো সীমিত থাকবে একটি ন্যারো স্কিল-সেটে, যেখানে ভালো কাজ করবে। সম্ভাবনা আছে- ডমেস্টিক চ্যাটবটগুলো বিশ্বের অনেক বাজারে থাকবে ২০১৯ সালের সেরা হলিডে উইশ লিস্টে।

ছয় : স্ক্রিনটাইম সতর্কতা

স্ক্রিনটাইম নিয়ে সতর্কতা এবং আমাদের ওপর এর প্রভাব ২০১৯ সালে হয়ে উঠবে আরো ব্যাপকতর। প্রথম দিকে কিছু প্রবর্তককে অনুসরণ করে মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার করবে স্ক্রিনটাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ, নাইট-টাইম ও ফোনে ‘ডু-নট-ডিস্টার্ব মোড’। কারণ, ডেভেলপারেরা মনোযোগ দেবে মোবাইল ফোন ব্যবহারে আমাদের আরো বেশি সুযোগ করে দিতে, যাতে আমরা আমাদের ডিভাইসগুলো আরো ভালোভাবে সহজে ব্যবহার করতে ও চালাতে পারি। এর ফলে বাজারে ক্রমবর্ধমান হারে স্ক্রিনটাইম সতর্কতা বাড়বে এবং ২০১৯ সালে এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আরো বাড়বে।
নতুন অ্যাপ ও সফটওয়্যারের বাইরে আমরা ২০১৯ সালে দেখতে পাব বিভিন্ন সোশ্যাল ও প্রফেশনাল সেটিংয়ে স্ত্রিনটাইমের ওপর আরো কঠোর সীমা। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে মোবাইলমুক্ত পরিবেশে খাওয়া-দাওয়া তথা মোবাইল-ফ্রি মিল, মোবাইল-ফ্রি মিটিং নিশ্চিতভাবে সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠছে। ক্ষেত্র যা-ই হোক, স্ক্রিনটাইম পণ্যের ব্যাপক উৎপাদন এবং বেসরকারি শিল্পের প্রচারাভিযান আরো এগিয়ে যাবে স্ক্রিনটাইম অ্যাওয়ারনেস বাড়িয়ে তুলতে। অধিকন্তু, যেসব মানুষ তার নিজস্ব স্ক্রিনটাইম নিয়ে উদ্বিগ্ন কিন্তু মোটেও ডিসকানেক্ট থাকতে চান না, তারা আরো সরলতর কানেকশনের দিকে ঝুঁকতে পারেন। আমরা তা দেখতে পারি ওয়্যারেবল, অন্যান্য স্মল কানেকটেড ডিভাইস আকারে।

সাত : মোবাইল-ড্রিভেন গ্রিনটেক

গ্রিন কনজাম্পশনের একটি শুভচক্র সৃষ্টি হবে, সচেতনতা ও গ্রিনটেক উন্নয়নের বিষয়গুলো একটা সুষ্ঠু আকার নেবে ২০১৯ সালে। আর এর বড় অংশের কাজটি ঘটবে মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে। জাতিসংঘের ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর ২০১৮ সালের শেষদিকের একটি প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে তাদেরকে জেগে ওঠার আহŸান জানিয়েছে, যারা এখনো এ ব্যাপারে মনোযোগী হয়ে ওঠেনি। আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এক সাথে ভোগ বা কনজাম্পশন নিয়ে সমাজে সচেতনতাও আকাশস্পর্শী হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মোবাইল-তাড়িত গ্রিন টেকনোলজি মানুষের জন্য সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে জীবন বাঁচাতে এবং আগের চেয়ে আরো স্মার্ট উপায়ে ভোগের কাজটি সম্পন্ন করতে। ২০১৯ সালে এই ঢেউ আরো জোরালো হবে।
অসলো হয়ে উঠছে গ্রিনটেকের সক্ষমতাকে পর্যাপ্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে সবচেয়ে অগ্রগামী। খাবারের অপচয় কমিয়ে আনার ঞড়ড় এড়ড়ফ ঞড় এড়, কার-শেয়ারিং প্ল্যাটফরম ও বাইসাইকেল-অনলি ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের মতো পণ্য ও সেবার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ‘তেসলা’ ও ইলেকট্রিক কারগুলো (২০১৮ সালে নরওয়ের নতুন কারের ৩০ শতাংশই ইলেকট্রিক কার) প্রমাণ করে ভোক্তারা খুব উচ্চহারে গ্রিনটেক গ্রহণে আগ্রহী, যদিও এখনো এরা পুরোপুরি তা চাইছে না। পরিবেশ বিনাশকারী যানবাহনের ওপর ও তা ব্যবহারের ওপর আরো আগ্রাসী মাত্রায় প্রণোদনা বিরোধীকর তথা ডিসইনসেনটিভ-টেক্স ও টুল পরিবেশবিরোধীদের ওপর নকআউট মুষ্ঠাঘাত সৃষ্টি করেছে। সামগ্রিক পর্যায়ে এর জন্য ধন্যবাদটা পেতে পারে সরকারি নীতি, গ্রিনটেকে আগ্রহী ডেভেলপার ও ভোক্তাদের গ্রিনটেক গ্রহণ করে নেয়ার মানসিকতা ও সামাজিক চাপ। ২০১৯ সালে নরওয়েতে এই চারটিই কার্যকর বিষয়
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৯ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা