• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ফেইক নিউজ উদঘাটনের ৬ কৌশল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ফেইক নিউজ উদঘাটনের ৬ কৌশল
ফেইক নিউজ উদঘাটনের ৬ কৌশল
গোলাপ মুনীর

ভুয়া খবর ও ছবি সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছয়টি কৌশলের ওপর এখানে আমরা আলোকপাত করব। ভুয়া খবর ও ছবি গণমাধ্যমে ছড়ানো হয় ৬টি উপায়ে

এক : ফটো ম্যানিপুলেশন এসব ম্যানিপুলেটেড ছবি সহজেই পরীক্ষা করা যায় বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে। এমনই একটি টুল হচ্ছে ‘গুগল রিভার্স সার্চ’।

দুই : ভিডিও ট্রিকস ভিডিওকে নিবিড় পরীক্ষার মাধ্যমে এবং মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়ার মধ্যে এর সমাধান নিহিত রয়েছে।

তিন : টুইস্টিং ফ্যাক্টস এর অর্থ হচ্ছে তথ্য বিকৃত করা। এক্ষেত্রে খবরের বিকৃত শিরোনাম, সত্য হিসেবে উপস্থাপিত অভিমত এবং এড়িয়ে যাওয়া বিস্তারিত বিষয় নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।

চার : জিওডো এক্সপার্টস, ইমাজিনড এক্সপার্টস এবং মিসপ্রেজেন্টেড এক্সপার্টস এ ক্ষেত্রে জানা দরকার কী করে তাদের সঠিক পরিচয় ও বক্তব্য সম্পর্কে জানা যায়।

পাঁচ : গণমাধ্যম ব্যবহার করে মূলধারার গণমাধ্যম ব্যবহার করে ভুল দাবির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়।

ছয় : ডাটা ম্যানিপুলেট করা নজর দিতে হবে অবলম্বিত মেথোডোলজি,
প্রশ্নমালা, ক্লায়েন্ট ও আরো অনেক বিষয়ের ওপর।
এক : ফটো ম্যানিপুলেশন

ফেইক নিউজর ক্ষেত্রে ফটো ম্যানিপুলেশন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। আর এটি উদঘাটন করাও সবচেয়ে সহজ।

ফটো ম্যানিপুলেশন করার সবচেয়ে সহজ দুটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে ফটো এডিট করা। যেমন অ্যাডোবি ফটোশপের সাহায্যে ফটো এডিট করা। আর দ্বিতীয় উপায়টি হচ্ছে প্রকৃত ছবি ব্যবহার করা, যেন ছবিটি নেয়া হয়েছে অন্য সময়ে, অন্য কোনো স্থানে। উভয় ক্ষেত্রে নকল ছবিটি বের করার জন্য টুল রয়েছে। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কখন ও কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছিল এবং জানতে হবে এটি কোনো এডিটিং প্রোগ্রামের সাহায্য নিয়ে প্রসেস করা হয়েছে কি না।
০১. ফটো এডিটিং করে ম্যানিপুলেশন একটি সাধারণ উদাহরণ দিই, যেখানে একটি মূল ছবি অ্যাডেবি ফটোশপের সাহায্যে এডিট করে একটি ফেইক ছবি তৈরি করা হয়েছে।

পাশের এই স্ক্রিনশুটটি নেয়া হয়েছে একটি রুশ-সমর্থক গোষ্ঠীর ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক ঠশড়হঃধশঃব-এর পেজ থেকে। ২০১৫ সালে এটি ব্যাপকভাবে ওই নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ছবিটিতে দেখা যায় একটি নবজাতক শিশুর বাহুতে ষষ্ঠিকা ( ) চিহ্নটি রয়েছে। ছবিটির নিচে ক্যাপশনে লেখা ছিল “Shock! Personnel of one of the maternity hospitals in Dnipropetrovsk learned that a birthing mother was a refugee from Donbas and the wife of a dead militia man. They decided to make a cut in the form of swastika on the babyÕs arm. Three months later but a scar can still be seen.”

মোটামুটিভাবে এই ক্যাপশনটিতে লেখা ছিল ‘মর্মান্তিক! নাইপ্রোপেট্রোভস্কের একটি মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের লোকেরা জানতে পারেন জন্মদাত্রী এই মা ডোনবাসের একজন শরণার্থী এবং তিনি একজন মৃত মিলিশিয়ার স্ত্রী। এরা সিদ্ধান্ত নেয় শিশুটির বাহুতে ষষ্ঠিকা আকারের দাগ কেটে দেবেন। তিন মাস পরও শিশুটির বাহুতে কাটার দাগ দেখা গেছে।’
কিন্তু ওই ছবিটি ছিল ফেইক। এর মূল ছবিটি পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে এবং দেখা যাবে, শিশুটির বাহুতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
তা জানতে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ‘গুগল ইমেজ রিভার্স সার্চ’ ব্যবহার করে ছবিটি পরীক্ষা করে নেয়া। এই সার্ভিসটির অনেক উপকারী ফাংশন রয়েছে। যেমনÑ একই ধরনের ছবি সার্চ করা, বিভিন্ন আকারের ছবি সার্চ করা। মাউস ব্যবহার করে ছবিটিকে গ্র্যাব করে এটিকে গুগল ইমেজ পেজে ড্র্যাগ করে সার্চবারে ড্রপ করতে হবে। অথবা শুধু কপি করে পেস্ট করতে হবে ইমেজ অ্যাড্রেসটি। টুল মেন্যু থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন অপশন : ‘Visually similar’ অথবা ‘More si“es’।
‘More si“es’ অপশন ব্যবহার করলে এতে মূল ছবি নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি প্রমাণ করে এই ছবিটি ২০১৫ সালে তোলা হয়নি এবং মূল ছবিতে শিশুর বাহুতে ষষ্ঠিকা চিহ্ন ছিল না।

চলুন আমরা দেখি আরো জটিল একটি ফটো ফেইক। একটি ভুয়া ছবিতে দেখানো হয় একজন ইউক্রেনিয়ান সৈন্য আমেরিকান একটি পতাকাকে চুম্বন করছে। ছবিটি ছড়িয়ে দেয়া হয় ২০১৫ সালের ইউক্রেনীয় জাতীয় পতাকা দিবসে। এটি প্রথম প্রদর্শিত হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওয়েবসাইটে, ‘দ্য
ডে অব দ্য ফেইভ’ শিরোনামের একটি লেখার মধ্যে।

এই ছবিটি যে ফেইক তা আপনি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রমাণ করতে পারবেন। প্রথমত, ফটো থেকে কেটে বের করুন নানা তথ্য লেজেন্ডস, টাইটেল, ফ্রেম ইত্যাদি। কারণ, এগুলো সার্চ রেজাল্টের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফ্রি টুল ঔবঃংপৎববহংযড়ঃ (গধপ াবৎংরড়হ) ব্যবহার করে আপনি কাটতে পারেন ছবিটির একদম ডান পাশে নিচের দিকে থাকা উবসড়ঃরাধঃড়ৎং শব্দটি। দ্বিতীয়ত, মিরর ইফেক্ট টুল, যেমনÑ খঁহধচরপ ব্যবহার করে চেষ্টা করুন ছবিটি উল্টে দিতে এবং রেজাল্টটি সেভ করুন।
এরপর গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ অথবা অন্য কোনো রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল ব্যবহার করে এই ছবিটি পরীক্ষা করুন। এভাবে জানা যাবে ছবিটি মূল ছবি না এডিটেড ছবি এবং জানা যাবে ছবিটির প্রকৃত তারিখ, স্থান এবং এটি প্রকাশের প্রেক্ষাপটও।

অতএব ফটোটি আসলে তোলা হয়েছিল তাজিকিস্তানে ২০১০ সালে। আর যে সৈন্য পতাকাকে চুম্বন করছিলেন, তিনি একজন তাজিক শুল্ক কর্মকর্তা। তার আস্তিনের উপরের ইউক্রেনীয় পতাকা পরে সংযোজন করা হয়েছে একটি ফটো এডিটিং প্রোগ্রামের সাহায্যে। আর ফটোটি আনুভূমিকভাবে উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে মিরর ইফেক্ট ব্যবহার করে।

কোনো কোনো সময় গুগল সার্চ ছবির সোর্স বের করার জন্য যথেষ্ট নয়। তখন চেষ্টা করতে হবে ঞরহঊুব নামের আরেকটি রিভার্স সার্চ টুল দিয়ে। ঞরহঊুব এবং এড়ড়মষব রিভার্স সার্চ টুলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে টিনআই রিকগনাইজ করে একই ধরনের অথবা এডিটেড ছবি। এই উপায়ে আপনি একই ছবির ক্রপড অথবা মাউন্টেড ভার্সন পেতে পারেন। অধিকন্তু, কোন কোন সাইটে এই ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেসব সাইটে ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাড়তি তথ্য দিতে পারে।

এই ফেইক ছবিটি রিটুইট করা হয়েছে এবং টুইটারে এটি লাইক দেয়া হয়েছে হাজার হাজার বার। ছবিতে দেখানো হয়েছে পুতিনকে ঘিরে রেখেছে বেশ কয়জন বিশ্বনেতা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে, তিনি যেন সবাইকে কী বলছেন। ছবিটি নকল। আপনি আসল ছবিটি পেতে পারেন টিনআই ব্যবহার করে। ইমেজ অ্যাড্রেসটি সার্চবারে এন্টার করুন অথবা আপনার হার্ডড্রাইভ থেকে ছবিটি ড্র্যাগ ও ড্রপ করুন। আপনি সম্ভাব্য প্রাথমিক ছবিটি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন একটি ‘বিগেস্ট ইমেজ’ অপশন। কারণ, প্রতিটি এডিটেড ছবির সাইজ রিডিউস করা হয় এবং ছবিটির গুণগত মান কমানো হয়। আমরা দেখতে পারি, এই ছবিটি নেয়া হয়েছে একটি টার্কিশ ওয়েবসাইট থেকে।

Best Match, Newest, Oldest Ges GgbwK Most Changed-এর মতো অন্য কোনো টুলবার অপশন ব্যবহার করেও জানা যাবে ছবিটিতে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আপনি ডোমেইন দিয়ে রেজাল্ট ফিল্টারও করতে পারেন। যেমন টুইটার না অন্য কোনো সাইটে এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল।

০২ : প্রকৃত ছবি দেখিয়ে ম্যানিপুলেশন, যা অন্য সময়ে অন্য স্থানে নেয়া হয়েছিল ম্যানিপুলেশন চলতে পারে বিকৃত উপায়ে কোনো ঘটনা উপস্থাপন করে। ২০১৪ সালে ইসরাইলে নেয়া হয়েছিল একটি ছবি। সেই ছবিটিই ২০১৫ সালে পোস্ট করা হয়েছে ইউক্রেনে।

ছবিটি যে ফেইক তা আবিষ্কার করা হয়। তা প্রথম আবিষ্কার করেন ইসরাইলি সাংবাদিক ও ইউক্রেনের বিশেষজ্ঞ শিমন ব্রিমান। আমরা এই ছবির অথেনটিসিটি পরীক্ষা করতে পারি যেকোনো রিভার্স সার্চ ব্যবহার করে, সংযুক্ত উপাদান (যেমন টাইটেল) কেটে আলাদা করে। টিনআইয়ের অপশন ‘ওল্ডেস্ট’ এখানে খুবই উপকারী। এখানে কমপক্ষে দুটি ইসরাইল সম্পর্কিত রেজাল্ট পাওয়া যাবে, যার প্রকৃত তারিখ এক বছর আগের। আমরা সব সময় এভাবে ছবির সোর্স জেনে নিতে পারি। এক্ষেত্রে এই রেজাল্ট আরো পরীক্ষার ক্লু হিসেবে কাজ করে।

এই সার্চের পঞ্চম রেজাল্টটি হচ্ছে, এই ছবিটি নেয়া হয়ছে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি ইসরাইলি পত্রিকা থেকে। এতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে কখন কীভাবে ছবিটি তোলা হয়েছিল। একজন বালিকা শিরা ডি পোর্টো এই ছবিটি নিয়েছিল তার মোবাইল ফোন থেকে বীরসেবায় রকেট হামলার সময়ে। বাবা ও অন্য আরেকজন শিশুটিকে আগলে রেখেছেন তাদের শরীর দিয়ে।

যদি একটি সন্দেহজনক ছবি সামাজিক মিডিয়ায় দেখা যায়, তবে আমরা ব্যবহার করতে পারি এমবেডেড টিনআই সার্চ টুল। উদাহরণত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরকালে একটি ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ও রুশ-সমর্থিত ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়। ছবিতে দেখা যায় ইউক্রেনের ক্যাবিনেট মিনিস্টার বিল্ডিংয়ের বাইরে জনতা হাঁটু গেড়ে বসে আছে। ছবিটি ক্যাপশনে দাবি করা হয় এরা ছিল কিয়েভের অধিবাসী। এরা বাইডেনের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তাদেরকে ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ আর্সেনি ইয়াতসেনউকের হাত থেকে বাঁচাতে। ছবিটি প্রথম দেখা যায় ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরে।
TinEye, StopFake ব্যবহার করে দেখা যায়, মূল ছবিটি ইউডোমেইডেন হ্যাশটেগ দিয়ে পোস্ট করা হয়েছিল টুইটারে, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। এর কনটেক্সট জানতে আমরা ব্যবহার করতে পারি টুইটার সার্চ টুল। ‘সার্চ ফিল্টার’ বেছে নেয়ার পর দিতে পারি ‘অ্যাডভান্সড টুল’।
এরপর এন্টার করতে পারি যেকোনো ইনফরমেশনেÑ এ ক্ষেত্রে হ্যাশটেগ এবং তারিখটি জানুয়ারি ১৮, ২০১৫।

প্রথম সার্চ রেজাল্টে দেখা যায়, মূল টুইটটিতে ছিল প্রাথমিক ছবিটি। এটি তোলা হয়েছিল কিয়েভের রুশকেভস্কি স্ট্রিটে, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। তখন হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল ২০১৩ সালের Euromaidan প্রতিবাদের সময় সংঘর্ষের প্রথম শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
টিনআই এবং গুগল ইমেজেস ছাড়াও Baidu এবং Yandex-সহ আরো অনেক ধরনের টুল রয়েছে। আছে FotoForensics-এর মতো অনেক মেটাডাটা সার্চিং টুলও। প্রসঙ্গত, বাইদু ভালো কাজ করে চীনা কনটেকস্টের ক্ষেত্রে। আমরা যদি এসব টুল ব্যবহার করে ছবি পরীক্ষা করতে যাই, তবে ব্যবহার করতে পারি ওসমঙঢ়ং, এতে রয়েছে উপরে উল্লিখিত টুলগুলো। আমরা চাইলে আমাদের নিজস্ব কোনো টুলও ব্যবহার করতে পারি। আরেকটি হচ্ছে ওসধমবৎধরফবৎ.পড়স, এটি টিনআইয়ের মতোই। তবে সামান্য কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন বেশ কিছু ছবি বিশ্লেষণের ক্ষমতার পার্থক্য এবং এটি কিছু ওয়েবসাইটকে সার্চ রেজাল্টের বাইরে রাখে।

সার-সংক্ষেপ

* মনোযোগী হবেন সবচেয়ে বড় আকার ও রেজ্যুলেশনের ছবির ব্যাপারে। ছবির রেজ্যুলেশন কমে যায় প্রতিটি নতুন এডিটিংয়ের ফলে। অতএব সবচেয়ে বড় আকারের ও সবচেয়ে বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি হবে সমসংখ্যক বার এডিটেড ছবি। এটি একটি অপ্রত্যক্ষ চিহ্ন যে, একটি ছবি হতে পারে প্রকৃত ছবি।

* মনোযোগ দিন প্রকাশের তারিখের ওপর। সবচেয়ে আগের তারিখের ছবিটিই হবে মূল ছবির সবচেয়ে কাছাকাছি ছবি।

* ছবির ক্যাপশন বার বার পড়–ন। একই ধরনের দুটি ছবির বর্ণনা আলাদা থাকতে পারে।

* ফেইক ছবি শুধু ক্রপড বা এডিটেড নয়, তা মিররডও হতে পারে।


* আপনি বিশেষ কোনো ওয়েবসাইট, সামাজিক নেটওয়ার্ক কিংবা ডোমেইন সার্চ করতে পারেন।

দুই : ভিডিও ম্যানিপুলেটিং
ছবির যেমন ম্যানিপুলেশন চলে, তেমনি ভিডিওরও ম্যানিপুলেশন চলতে পারে। তবে ফেইক ভিডিও ধরা অনেকটা জটিল ও সময়ক্ষেপী। প্রথমত, ভিডিওটি দেখুন এবং বের করুন এর অসামঞ্জস্যতাগুলো অযথাযথ জোড়া লাগানো, বিকৃত অনুপাত এবং অদ্ভুত মুহূর্তগুলো।
বিস্তারিতভাবে দেখুন শ্যাডো, রিফ্লেকশন এবং বিভিন্ন উপাদানের শার্পনেস। যে দেশ বা সিটিতে ভিডিওটি করা হয়েছে তা জানা যেতে পারে গাড়ির নম্বর, দোকানের চিহ্ন ও সড়কের নাম লক্ষ করে। যদি ভিডিওটিতে অস্বাভাবিক ভবন দেখা যায়, সেগুলো খুঁজে দেখুন গুগল ম্যাপসের স্ট্রিট ভিউয়ে। আপনি আরো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সুনির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের আবহাওয়া। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোর আর্কাইভ। যদি সেদিনে দিনভর বৃষ্টি থাকে, আর ভিডিওতে দেখা যায় সূর্য উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে, তবে ছবিটি প্রকৃত বলে মেনে নেয়া যাবে না। এ ধরনের একটি সাইট হচ্ছে Weather Underground। ভিডিওসহ যেসব ফেইক নিউজ প্রকাশ করা হয়, সেগুলো ধরার জন্য নিচে উল্লিখিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

০১. নতুন ঘটনা বিশ্লেষণের জন্য পুরনো ভিডিও ব্যবহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিলে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ হামলাসংক্রান্ত প্রচুর ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেমন একটি ভিডিওতে দেখানো হয় ভোরবেলায় দামেস্কের জামরায়া রিসার্চ সেন্টারে হামলার চিত্র। যদি একটি খবরের ভেতরে একটি ভিডিও এমবেডেড করে দেয়া হয়, তবে আপনি অরিজিনাল টুইট, ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক পোস্টে গিয়ে এ সম্পর্কিত কমেন্টগুলো পাঠ করুন। অনলাইন শ্রোতারা, বিশেষত টুইটার ও ইউটিউবের শ্রোতারা খুবই সক্রিয় ও সাড়াদায়ক। কোনো কোনো সময় এখানে এদের সোর্সের লিঙ্ক থাকে। এছাড়া আরো প্রচুর তথ্য থাকে, যা থেকে ভিডিওটি ফেইক প্রমাণ করার সূত্র পাওয়া যায়। এটি করার পর আমরা দেখতে পারি ইউটিউব ভিডিওর অরিজিনাল লিঙ্কটি। এখানে দেখা যাবে সঠিক লোকেশন। এটি তোলা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। ইসরাইলে পরিচালিত একই ধরনের একটি হামলার সময়।

তা ছাড়া আপনি দ্রæত জানতে পারবেন সেই অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে, যেখান থেকে এটি পোস্ট করা হয়েছিল। ইউজার সম্পর্কে এটি কী তথ্য শেয়ার করে? অন্য কোনো সামাজিক গণমাধ্যমের লিঙ্ক রয়েছে কি এর সাথে? কী ধরনের তথ্য এটি শেয়ার করে?

অরিজিনাল ভিডিওটি পেতে আমরা ব্যবহার করতে পারি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ণড়ঁঞঁনব উধঃধঠরববিৎ। এটি আমাদের সুযোগ দেবে একদম সঠিক আপলোড তারিখটি ও সময় এবং পরীক্ষা করে দেখবে, এটি কী এর আগে এই প্ল্যাটফরমে পোস্ট করা হয়েছিল কি না। চলুন উপরে উল্লিখিত ভিডিওটির আপলোড টাইম চেক করে দেখা যাক। ডাটা ভিউয়ার নিশ্চিত করেছে, এটি আপলোড করা হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে।
এর পরের ধাপটি হচ্ছে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা ঠিক একই প্রক্রিয়ায়, যেভাবে ফটো ভেরিফাই করা হয়েছে ডাইভার্স ইমেজ সার্চের বেলায়। আপনি ম্যানুয়ালি ভিডিওর মুখ্য মুহূর্তগুলোর স্ক্রিনশুট নিতে পারেন এবং এগুলো গুগল ইমেজ কিংবা টিনআইয়ের মতো সার্চ মেশিনে পরীক্ষা করতে পারেন। এ প্রক্রিয়া সরল করার জন্য আপনি বিশেষ ধরনের টুলও ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউব ডাটা ভিউয়ার জেনারেট করে ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইল। এগুলোতে একটি মাত্র ক্লিক করে আপনি রিভার্স ইমেজ সার্চ সম্পন্ন করতে পারেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ফ্রান্স ২৪’-এর অবজারভারেরা উদঘাটন করেন একটি ফেইক ভিডিও। এই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছিল টার্কিশ ফাইটার জেটের কয়েকটি স্কোয়াড সিরিয়ার আফরিনে বম্বিং মিশনে ছিল। এই ভিডিও চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছিল এফ-১৬-এর ককপিট থেকে এবং বেশ কয়েকটি ইউটিউব অ্যাকাউন্টে তা পোস্ট করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি। এরা ভিডিওটি পরীক্ষা করেন ইউটিউব ডাটা ভিউয়ারে।

অরিজিনাল পোস্টে ক্যামেরায় টার্কিশ ভয়েস ছিল না, যা পরে সংযুক্ত করা হয়। বাস্তবে এই ভিডিওটি করা হয় আমস্টারডামের একটি বিমান মহড়ার সময়ে।

০২. একটি ভিডিও অথবা এর অংশবিশষ অন্য কনটেক্সটে রেখে কোনো কোনো সময় একটি ভিডিওকে ফেইক প্রমাণ করতে প্রয়োজন হয় ভিডিও সম্পর্কিত কিছু অতিরিক্ত তথ্য জানার। যেমন একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট। এটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ৮টি দেশে। এটিতে দেখানোর চেষ্টা চলেছিল গ্রিস ও মেসিডোনিয়া সীমান্তে মুসলিম অভিবাসীরা রেডক্রসের খাবার দিতে অস্বীকার করছে, কারণ ওই খাবার হালাল ছিল না অথবা মোড়কের ওপর ‘ক্রস চিহ্ন’ দেয়া ছিল।
ভিডিওটি সম্পর্কে অধিকতর জানার জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারি শক্তিশালী ওহঠরফ রিভার্স সার্চ টুল। এটি আমাদের সাহায্য করতে পারে Twitter, Facebook, YouTube, Instagram, Vimeo, Dailymotion, LiveLeak and Dropbox, Download the InVid plugin ইত্যাদির মতো সামাজিক গণমাধ্যমের ভিডিও পরীক্ষা করে দেখার বেলায়। ভিডিও লিঙ্কটি কপি করুন। এটি পেস্ট করুন InVid-এর Keyframes উইন্ডোতে এবং Submit-এ ক্লিক করুন।

রিভার্স ইমেজ সার্চ করার জন্য থাম্বনেইলগুলো বরাবর এক এক করে ক্লিক করুন এবং রেজাল্টগুলো উদঘাটন করুন।
বাস্তবতা হচ্ছে, অভিবাসীরা খাবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়েছিল এক বাজে পরিস্থিতিতে। ইতালীয় সাংবাদিকেরা এ নিয়ে লিখেছেন ১১টি পোস্টে সরেজমিন মানবাধিকার কর্মীদের সাথে কথা বলে। যে সাংবাদিকেরাই এই ভিডিওটি তোলেন, তারাই তা নিশ্চিত করেন। এটি প্রাথমিকভাবে পোস্ট করা হয়েছিল এর ওয়েবসাইটে এবং ক্যাপশনে লেখা ছিল “The refugees refuse food after spending the night in the rain without being able to cross the border.”
এ ধরনের ফেইক ভিডিওর আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, গেলআরিয়া টিভি থেকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল সম্পর্কিত একটি পোস্ট। এটি ছিল ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ। ভিডিওটিতে চ্যান্সেলর একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। ভিডিওটির টাইটেল ছিল “Angela Merkel: Germans have to accept foreigners violence.”
আসলে বাক্যটি নেয়া হয়েছে বিষয়বস্তুর বাইরে। আর শিরোনামে তার বক্তব্যের অর্থ একদম পাল্টে দেয়া হয়েছে। Byyu Feed News Analysis-এ তা জানা যায়। এখানে তার পুরো বক্তব্যটি ছিল এরূপ The thing here is to ensure security on the ground and to eradicate the causes of violence in the society at the same time. This applies to all parts of the society, but we have to accept that the number of crimes is particularly high among young immigrants. Therefore, the theme of integration is connected with the issue of violence prevention in all parts of our society.

জার্মান ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট গরসরশধসধ লিখেছে ২০১১ সালের একটি প্লট থেকে আংশিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ধরনের ভিডিওর সোর্স উদঘাটন করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, গুগলের মতো সার্চ মেশিন ব্যবহার করা।

তিন : ম্যানিপুলেটিং নিউজ
০১. ভুল শিরোনামের নিচে সঠিক খবর প্রকাশ করা সামজিক গণমাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ লেখা রিপোস্ট করা হয় শুধু শিরোনাম পাঠ করার পর, পুরো বিষয়বস্তু না পড়েই। এ ধরনের খবরে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দেয়া হচ্ছে একটি সাধারণ ফেইক নিউজ কৌশল। বিষয়বস্তুর বাইরে উদ্ধৃতি দেয়া আরেকটি সাধারণ ফেইক নিউজ কৌশল। যেমন ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রুশ গণমাধ্যম ঘোষণা দেয়, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বিট্রে করার অভিযোগ করেছে। রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা  RIA Novosti, Vesti Ges Ukraina.ru ফিচার স্টোরি ছেপে দাবি করে, ইউক্রেন ইইউর ব্যাপারে মেশিনেশন ও থ্রেচারির আশঙ্কা করছে। এরা উপস্থাপন করে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলেনা জেরকেলের ফিন্যান্সিয়াল টাইমের সাথে ইউরোপিয়ান ইন্টিগ্রেশন সংস্ক্রান্ত সাক্ষাৎকার This is testing the credibility of the European Unioü I am not being very diplomatic now. It feels like some kind of betrayal… especially taking into account the price we paid for our European aspirations. None of the European Union member countries paid such a price. While visa-free travel for Ukrainians had in principle been agreed upon with the EU, it had yet to officially begin.

আসলে জেকরেল দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছেন মাত্র, যদিও ইউক্রেন সব শর্ত পূরণ করেছে। তিনি ইইউকে বিট্রে করার জন্য অভিযুক্ত করেননি।

আরেকটি উদাহরণ নিচ্ছি ‘ফ্রি স্পিচ টাইম’ ব্লগ থেকে। ২০১৮ সালের ৬ মে এতে পোস্ট করা একটি লেখার শিরোনাম ছিল Watch: London Muslim Mayor Encourages Muslims to Riot during TrumpÕs Visit to the UK। এর শুরুটা ছিল এমন London Muslim mayor incited Islamic-based hatred against president Trump. He took every opportunity to lash out at the US president for daring to critici“e Islam and to ban terrorists from entering America. Nwo he warns Trump not to come to the UK because Òpeace-lovingÓ Muslims who represent the Òreligion of peaceÓ will have to riot, demonstrate and protest during his visit to the UK. Sadiq Khan himself incited hatred against the US president among British Muslims. Shame on a Muslim mayor ofLondon.

প্রমাণ হিসেবে পোস্টে একটি ভিডিও সংযোজন করা হয়। তা সত্তে¡ও লেখায় কোনো প্রমাণ নেই শিরোনামের দাবির পক্ষে। একটি এমবেডেড ইন্টারভিউ ভিডিওতে শুধু ধারণ করা হয়েছে সাদিক খানের বক্তব্য “I think there will be protests, I speak to Londoners every day of the week, and I think they will use the rights they have to express their freedom of speech.”

যখন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সরাসরি সাদিক খানকে প্রশ্ন করেন, তিনি এ ধরনের প্রটেস্টকে অনুসমর্থন করেন কি না? এর উত্তরে তিনি বলেন “The key thing is this — they must be peaceful, they must be lawful.” তিনি একটিবারের জন্য মুসলিম, মুসলিমস, ইসলাম ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেননি। কিন্তু লিড স্টোরিজে তা উল্লেখ করেছেন।
আমরা চাইলে এই উদ্ধৃতি পেতে পারি গুগল অ্যাডভান্সড সার্চ ব্যবহার করে। আপনি সংজ্ঞায়িত করতে পারেন টাইম প্যারামিটার ও সার্চের ওয়েবসাইটগুলো। কোনো কোনো সময় নিউজের প্রাথমিক বিট রিমুভ করা হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তা অন্য মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। গুগল ক্যাশে সার্চ ব্যবহার করে অথবা সোর্সের আর্কাইভ দেখে তারিখ অনুসারে সোর্স পেতে পারেন।

০২. অভিমতকে ফ্যাক্ট হিসেবে উপস্থাপন করা কোনো লেখা পড়ার সময় নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, এটি কোনো ফ্যাক্ট না কারো অভিমত?
কিছু রুশ মিডিয়া বলেছিল, ২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্ককে ন্যাটো থেকে বের করে দেয়া হবে। Ukraina.ruরিপোর্ট করেছিল “Turkey should not be a member of NATO; it should be thrown out of the Alliance. This was announced by retired US Army Major General and senior military analyst for Fox News Paul Vallely.”

আসলে একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কর্মকর্তা ন্যাটোর বা এর সদস্যদের হয়ে কথা বলতে পারেন না। পল ভেলি ইউএস পলিসি ও বারাক ওবামার একজন সমালোচক। ওবামা কথা বলেছেন তুরস্কের পক্ষে।
০৩. তথ্য বিকৃতি করা ‘রাশিয়া টুডে’ নামের নিউজ চ্যানেল একটি স্টোরিতে রাব্বি মিহাইল কাপুস্টিনের বরাত দিয়ে বলে, ইউক্রেন সরকারের ইহুদি বিরোধিতার কারণে ইহুদিরা কিয়েভ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি মৌলিক সার্চে দেখা গেছে, তিনি কিয়েভ সিনাগগের রাব্বি নন। বরং এর পরিবর্তে তিনি ক্রিমিয়ার একটি সিনাগগের রাব্বি। স্টপফেইক ডটঅর্গ জানতে পেরেছে, সেখানে নতুন রুশ সরকার হওয়ার কারণে তিনি ক্রিমিয়া থেকে পালিয়ে যান।

০৪. পুরোপুরি বানোয়াট খবর উপস্থাপন বানোয়াট খবরকে সত্য ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার বিষয়টি ধরা যায় কিছু মৌলিক সার্চের মাধ্যমে। ইউক্রেনে এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে ‘ক্রুসিফাইড বয়’। ২০১৪ সালে করা এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মিলেনি। ক্রেমলিনের সরকারি টিভি চ্যানেলে এক মহিলা এই অভিযোগ তোলেন। স্টপফেইক ডটঅর্গ মতে, এই মহিলা চেয়েছিলেন একজন রুশপন্থী মিলিট্যান্টের স্ত্রী হতে।

ইউক্রেনের তথাকথিত আইএসআইএস প্রশিক্ষণ শিবির সম্পর্কিত প্রচুর খবর ২০১৭ সালে স্পেনীয় ভাষার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু স্টপফেইক ডটঅর্গ জানিয়েছে, অ্যাডভান্সড গুগল সার্চে উদঘাটন করা হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই। ফেইক নিউজ ক্রিয়েটরেরা উদ্ধৃতি ম্যানিপুলেট করতেও চেষ্টা করে। এমনকি এরা ভুয়া উদ্ধৃতি নিজেরা তৈরি করে। সাবেক ফেসবুক ভাইস প্রেসিডেন্ট জেফ রথসচাইল্ড নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চেয়েছেন বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষ নিঃশেষ করে দিতে। কিন্তু এই অনুমিত উদ্ধৃতি প্রথম পাওয়া যায় অ্যানার্কেডিয়া ব্লগে। ফ্যাক্ট-চেকিং সাইট Snopes.com জানিয়েছে, আসলে এই উদ্ধৃতির কোনো ভিত্তি নেই।

০৫. গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা বাদ দিয়ে খবরের বিষয়বস্তু পাল্টে দেয়া ২০১৭ সালের মার্চে ইুুঁভববফ একটি নিউজ স্টোরি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী বলোডিমির গ্রোয়েসম্যান সম্মত হয়েছেন ইউক্রেন তুরস্ককে সহায়তা করবে সিরিয়ার শরণার্থীর ব্যাপারে। সরকারি বার্তা সংস্থার একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বাজফিডের কন্ট্রিবিউটর ব্লেইক অ্যাডামস লেখেন, ইউক্রেন গড়ে তুলবে তিনটি শরণার্থী কেন্দ্র, তথ্য সূত্রে উল্লেখ করা হয় মিডল ইস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ইহর সেমিভোলসের নাম। কিন্তু সেমিভোলস শরণার্থী বা শরণার্থী কেন্দ্র সম্পর্কে কিছুই বলেননি। তিনি তা জানিয়েছেন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে।

চার : এক্সপার্ট অ্যাসেসমেন্ট ম্যানিপুলেট করা
পরবর্তী ধরনের প্রতারণা হচ্ছে ভুয়া এক্সপার্ট অথবা প্রকৃত এক্সপার্টের ভুল উপস্থাপন।

০১. জিওডো এক্সপার্ট এবং থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রকৃত এক্সপার্টেরা সাধারণত স্থানীয়ভাবে ও পেশাজীবীদের মাঝে সুপরিচিত হন। এরা তাদের সুনাম রক্ষা করেন সতর্কতার সাথে। অপরদিকে জিওডো (ভুয়া) এক্সপার্টেরা কখনো হঠাৎ করে একবার উদয় হয়ে পরে অদৃশ্য হয়ে যান। একজন এক্সপার্টের যথার্থতা পরীক্ষা করতে তার জীবনী, সামাজিক নেটওয়ার্কিং পেজ, ওয়েবসাইট, লেখালেখি, অন্যান্য মিডিয়ায় মন্তব্য, তার কর্মকান্ড ইত্যাদি খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঠবপযবৎহুধুধ গড়ংশাধ নামের একটি সংবাদপত্র একটি সাক্ষাৎকার ছাপে লাটভিয়ান রাজনীতি বিজ্ঞানী এইনারস গ্রাউডিননসের। তিনি তার সাক্ষাৎকারটি দেন একজন ওএসসিই (অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন আন ইউরোপ) এক্সপার্ট হিসেবে। কিন্তু এই ব্যক্তির এ বিষয়ে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনের ওএসসি মিশন।

প্রথমত, এসব এক্সপার্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। যদি তারা সেখানে না থাকেন, তবে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন। এটি করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে টুইটার বা ফেসবুকের মাধ্যমে করা। সুখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজের ও তাদের এক্সপার্টদের সম্পর্কে ফেইক নিউজ বন্ধ করার ব্যাপারে আগ্রহী।
মিডিয়াতে প্রায়ই আবির্ভূত হন কিছু জিওডো এক্সপার্ট। রাশিয়ার এনটিভি ভøাদিমির পুতিনের কথার ওপর পাশ্চাত্যে প্রবল প্রতিক্রিয়ার খবর প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর নেতৃস্থানীয় সামরিক শক্তি নয়। একজন আমেরিকান রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে এই অভিমত প্রকাশ করেন ড্যানিয়েল পেট্রিক ওয়েলস।

কিন্তু ‘দ্য ইনসাইডার’-এর সাহায্যে গুগল সার্চে জানা যায় ওয়েলস নিজে তাকে বর্ণনা করেছেন একজন লেখক, গায়ক, অনুবাদক, সক্রিয়বাদী গায়ক-কবি হিসেবে। তিনি মাঝেমধ্যে রাজনীতিবিষয়ক লেখা প্রকাশ করেন স্বল্প পরিচিত অনলাইন প্রকাশনায়। তার লেখায় মার্কিন বস্তুবাদী ও সম্প্রসারণবাদী নীতির সমালোচনা থাকে। তিনি ইস্টার্ন ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের প্রতি সমব্যথী। আর ইউক্রেনের সরকারি কর্তৃপক্ষকে দেখেন ‘ওয়াশিংটন নিয়ন্ত্রিত জান্তা’ হিসেবে। রাশিয়ার বড় বড় সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশন কোম্পানি তার কথা উল্লেখ করে এবং তার মন্তব্য প্রকাশ করে।
সুখ্যাত থিঙ্কট্যাঙ্কও কখনো কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ব্রায়ান মেফোর্ড খুঁজে পেয়েছেন এমনি একটি সংস্থাকে। এর নাম সেন্টার ফর গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক মনিটরিং। এটি এর ওয়েবসাইটে ভুল করে তাকে উল্লেখ করেছে এর এক্সপার্ট হিসেবে। তিনি এর ওয়েবসাইট সার্চ করে কন্টাক্ট ইনফরশেন পেতে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি তার নাম তাদের এক্সপার্ট হিসেবে বাদ দিতে অনুরোধ জানাতে পারেননি। মেফোর্ড লিখেছেন, প্রথম দর্শনে সেন্টারটির ওয়েবসাইট খুবই ইমপ্রেসিভ মনে হবে। মনে হবে এখানে খুবই চিন্তাশীল লেখা, অভিমত প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সহজেই জানা যায় এই সংস্থাটি খাঁটি নয়, প্রতারণাপূর্ণ। প্রথমত, এর ওয়েবসাইটে কোনো অনুমতি ছাড়াই স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাপত্রের অংশবিশেষ, বিশ্লেষণ ও অভিমত পুনঃপ্রকাশ করা হয়।
০২. সঠিক এক্সপার্ট আবিষ্কার কোনো কোনো সময় গণমাধ্যমে পুরোপুরি ভুয়া ব্যক্তিকে এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক মতবিশেষকে প্রতিষ্ঠা করা, কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তের পক্ষে শ্রোতাদের নিয়ে আসা। যেমন ‘সিনিয়র পেন্টাগন রাশিয়া অ্যানালিস্ট এলটিসি ডেভিড জিউবার্গ’ একটি পপুলার ফেসবুক পেজ চালান। মাঝেমধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেন সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে পেন্টাগন ইনসাইডার হিসেবে উদ্ধৃত করা হয় রুশ ও ইউক্রেনিয়ান মিডিয়ায়। তিনি নিজেকে উপস্থাপন করেন ‘ডেভিড জিউবার্গ’ বৈধ নামের একজন প্রকৃত ব্যক্তি হিসেবে। বেশ কয়েকজন সুপরিচিত রুশবিরোধী ব্যক্তি মাঝেমধ্যেই ডেভিড জিউবার্গকে উদ্ধৃত করেন একজন শ্রদ্ধেয় বিশ্লেষক ও রিয়েল-লাইফ কনট্যাক্ট হিসেবে।

তাদের তদন্তে ইবষষরহমপধঃ জানতে পারে, আসলে জিউবার্গ একজন কল্পিত চরিত্র। তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির একটি গোষ্ঠীর সাথে। এদের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমেরিকান ফিন্যান্সিয়াল ড্যান কে র‌্যাপোপোর্ট। তার বেশ কয়েকজন ব্যক্তিগত বন্ধু ও প্রফেশনাল কনট্যাক্ট সহায়তা করেন তাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জিইয়ে রাখতে। কলেজবন্ধুদের একটি ছবি ব্যবহার করা হয় জিউবার্গকে উপস্থাপন করতে। আররোপোপোর্টের বেশ কিছু বন্ধু এমনভাবে লেখালেখি করেছেন যেন জিউবার্গ একজন প্রকৃত ব্যক্তি।

একটি উদাহরণ হচ্ছে ড্রিউ ক্লাউড। তাকে মাঝেমধ্যেই উদ্ধৃত করা হয় একজন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন স্টুডেন্ট লোন এক্সপার্ট হিসেবে। কিন্তু জানা গেছে তিনি একজন ভুয়া ব্যক্তি। এই ভুয়া ব্যক্তি সংবাদ সংস্থায় স্টুডেন্ট লোন সম্পর্কিত খবর সরবরাহ করেন এবং ই-মেইলের সাহায্যে সাক্ষাৎকার দেন। একজন গেস্ট রাইটার হিসেবে ক্লাউড মাঝেমধ্যেই আসেন ফিন্যান্সিয়াল সাইটগুলোতে। কিংবা আসেন সাক্ষাৎকারের বিষয় হয়ে। তিনি বলেন না, কোথায় তিনি কলেজে যোগ দেন, তবে তিনি বলেন তিনি ছাত্রদের লোন নিয়ে দেন। ‘ক্রনিকল অব হাইয়ার এডুকেশন’ প্রমাণ করে ক্লাউড হচ্ছেন ‘দ্য স্টুডেন্ট লোন রিপোর্ট’ সৃষ্ট একজন কাল্পনিক চরিত্র। আর ‘দ্য স্টুডেন্ট লোন রিপোর্ট’ হচ্ছে একটি রিফিন্যান্স কোম্পানি পরিচালিত ওয়েবসাইট।

০৩. এক্সপার্টের বক্তব্য বিকৃত করা মাঝেমধ্যেই ম্যানিপুলেটরেরা এক্সপার্টের শব্দের অর্থকে বিকৃত করে। এ ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর বাইরের বাগধারা টেনে আনে। ২০১৮ সালের মে মাসে যৌনশিক্ষক ডিয়ানি কার্সন টেলিভিশনে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কিত টুইট ও ব্লগ পোস্ট সামাজিক গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ব্যবহারকারীরা তার নকল পরামর্শের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। অভিযোগ তিনি বলেছেন, মা-বাবার উচিত ডায়াপার বদলের আগে শিশুর অনুমতি নেয়া। কিন্তু এটি ছিল একটি অতিরঞ্জন। তিনি বলেছিলেন, মা-বাবা শিশুদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন তার ডায়াপার ঠিকই আছে, না বদলাতে হবে? এভাবে তাকে শিক্ষা দেয়া, তাদের মতামত বিবেচনার বিষয়।
এর একটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে, American Victims of Terror Demand Justice শীর্ষক একটি স্টোরি। এটি প্রকাশ করা হয় সিজিএস মনিটর নামের একটি ওয়েবসাইটে। লেখাটিতে ইউএস-সৌদি জোটকে আক্রমণ করা হয়। অভিযোগ, এটি লিখেছেন সুপরিচিত ব্রুকিং ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল। কিন্তু এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে রিডেল নিশ্চিত করেন তিনি এই লেখা লেখেননি। আটলান্টিক কাউন্সিল লিখেছে, এমন অনেক আভাস-ইঙ্গিত আছে যে, এই লেখাটি কোনো নেটিভ ইংলিশ স্পিকার লেখেননি। ভুল জায়গায় নাউন বসানো, প্রয়োজনীয় a এবং the-এর অনুপস্থিতি প্রমাণ করে এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন কোনো নেটিভ রুশ ভাষাভাষী লোক। কৌশলগতভাবে সিজিএস মনিটর বেশ কিছু লেখা রিপোস্ট করেছে, যেগুলো আসলে লিখেছেন ব্রুস রিডেল। অতএব, আলোচ্য লেখায় রিডেলের প্রচুর প্রকৃত বিষয়বস্তু রয়েছে।

০৪. ম্যানিপুলেটভাবে এক্সপার্টের শব্দ অনুবাদ করা এই পদ্ধতিটি প্রায়ই অনুসরণ করা হয়, যখন ইংরেজি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটি এড়াতে মূল ইংরেজি লেখাটি খুঁজে বের করে তা পাঠ করে এবং আবার তা অনুবাদ করতে হবে। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত করার পর ২০১৪ সালে জার্মানিসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্ক ওয়াটার স্টিনমেয়ারের ক্রিমিয়া-সংক্রান্ত ভাষণে ক্রেমলিনের একটি সম্পাদিত ট্রান্সক্রিপ্টে ধহহবীধঃরড়হ শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হয়। রুশ অনুবাদে annexation n‡q hvq re-unification।

ইন্টারপ্রিটারের একই ধরনের ভুল করা হয় ২০১৫ সালের ২ জুনে, যখন রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি ফিন্যান্সিয়াল টাইম ব্লগের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। সংবাদ সংস্থাটি রাশিয়া সম্পর্কিত নেতিবাচক রেফারেন্সগুলো বাদ দিয়ে দেয়।

ভুয়া খবর ও ছবি সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছয়টি কৌশলের ওপর এখানে আমরা আলোকপাত করব। ভুয়া খবর ও ছবি গণমাধ্যমে ছড়ানো হয় ৬টি উপায়ে

এক : ফটো ম্যানিপুলেশন এসব ম্যানিপুলেটেড ছবি সহজেই পরীক্ষা করা যায় বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে। এমনই একটি টুল হচ্ছে ‘গুগল রিভার্স সার্চ’।

দুই : ভিডিও ট্রিকস ভিডিওকে নিবিড় পরীক্ষার মাধ্যমে এবং মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়ার মধ্যে এর সমাধান নিহিত রয়েছে।

তিন : টুইস্টিং ফ্যাক্টস এর অর্থ হচ্ছে তথ্য বিকৃত করা। এক্ষেত্রে খবরের বিকৃত শিরোনাম, সত্য হিসেবে উপস্থাপিত অভিমত এবং এড়িয়ে যাওয়া বিস্তারিত বিষয় নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।

চার : জিওডো এক্সপার্টস, ইমাজিনড এক্সপার্টস এবং মিসপ্রেজেন্টেড এক্সপার্টস এ ক্ষেত্রে জানা দরকার কী করে তাদের সঠিক পরিচয় ও বক্তব্য সম্পর্কে জানা যায়।

পাঁচ : গণমাধ্যম ব্যবহার করেÑ মূলধারার গণমাধ্যম ব্যবহার করে ভুল দাবির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়।

ছয় : ডাটা ম্যানিপুলেট করা নজর দিতে হবে অবলম্বিত মেথোডোলজি, প্রশ্নমালা, ক্লায়েন্ট ও আরো অনেক বিষয়ের ওপর।
এক : ফটো ম্যানিপুলেশন
ফেইক নিউজর ক্ষেত্রে ফটো ম্যানিপুলেশন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। আর এটি উদঘাটন করাও সবচেয়ে সহজ।
ফটো ম্যানিপুলেশন করার সবচেয়ে সহজ দুটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে ফটো এডিট করা। যেমন অ্যাডোবি ফটোশপের সাহায্যে ফটো এডিট করা। আর দ্বিতীয় উপায়টি হচ্ছে প্রকৃত ছবি ব্যবহার করা, যেন ছবিটি নেয়া হয়েছে অন্য সময়ে, অন্য কোনো স্থানে। উভয় ক্ষেত্রে নকল ছবিটি বের করার জন্য টুল রয়েছে। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কখন ও কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছিল এবং জানতে হবে এটি কোনো এডিটিং প্রোগ্রামের সাহায্য নিয়ে প্রসেস করা হয়েছে কি না।

০১. ফটো এডিটিং করে ম্যানিপুলেশন একটি সাধারণ উদাহরণ দিই, যেখানে একটি মূল ছবি অ্যাডেবি ফটোশপের সাহায্যে এডিট করে একটি ফেইক ছবি তৈরি করা হয়েছে।

পাশের এই স্ক্রিনশুটটি নেয়া হয়েছে একটি রুশ-সমর্থক গোষ্ঠীর ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক Vkontakte-এর পেজ থেকে। ২০১৫ সালে এটি ব্যাপকভাবে ওই নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ছবিটিতে দেখা যায় একটি নবজাতক শিশুর বাহুতে ষষ্ঠিকা ( ) চিহ্নটি রয়েছে। ছবিটির নিচে ক্যাপশনে লেখা ছিল “Shock! Personnel of one of the maternity hospitals in Dnipropetrovsk learned that a birthing mother was a refugee from Donbas and the wife of a dead militia man. They decided to make a cut in the form of swastika on the babyÕs arm. Three months later but a scar can still be seen.”

মোটামুটিভাবে এই ক্যাপশনটিতে লেখা ছিল ‘মর্মান্তিক! নাইপ্রোপেট্রোভস্কের একটি মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের লোকেরা জানতে পারেন জন্মদাত্রী এই মা ডোনবাসের একজন শরণার্থী এবং তিনি একজন মৃত মিলিশিয়ার স্ত্রী। এরা সিদ্ধান্ত নেয় শিশুটির বাহুতে ষষ্ঠিকা আকারের দাগ কেটে দেবেন। তিন মাস পরও শিশুটির বাহুতে কাটার দাগ দেখা গেছে।’

কিন্তু ওই ছবিটি ছিল ফেইক। এর মূল ছবিটি পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে এবং দেখা যাবে, শিশুটির বাহুতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
তা জানতে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ‘গুগল ইমেজ রিভার্স সার্চ’ ব্যবহার করে ছবিটি পরীক্ষা করে নেয়া। এই সার্ভিসটির অনেক উপকারী ফাংশন রয়েছে। যেমনÑ একই ধরনের ছবি সার্চ করা, বিভিন্ন আকারের ছবি সার্চ করা। মাউস ব্যবহার করে ছবিটিকে গ্র্যাব করে এটিকে গুগল ইমেজ পেজে ড্র্যাগ করে সার্চবারে ড্রপ করতে হবে। অথবা শুধু কপি করে পেস্ট করতে হবে ইমেজ অ্যাড্রেসটি। টুল মেন্যু থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন অপশন : ÔVisually similarÕ A_ev ÔMore si“es’।
‘More si“es’ অপশন ব্যবহার করলে এতে মূল ছবি নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু এটি প্রমাণ করে এই ছবিটি ২০১৫ সালে তোলা হয়নি এবং মূল ছবিতে শিশুর বাহুতে ষষ্ঠিকা চিহ্ন ছিল না।

চলুন আমরা দেখি আরো জটিল একটি ফটো ফেইক। একটি ভুয়া ছবিতে দেখানো হয় একজন ইউক্রেনিয়ান সৈন্য আমেরিকান একটি পতাকাকে চুম্বন করছে। ছবিটি ছড়িয়ে দেয়া হয় ২০১৫ সালের ইউক্রেনীয় জাতীয় পতাকা দিবসে। এটি প্রথম প্রদর্শিত হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওয়েবসাইটে, ‘দ্য ডে অব দ্য ফেইভ’ শিরোনামের একটি লেখার মধ্যে।

এই ছবিটি যে ফেইক তা আপনি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রমাণ করতে পারবেন। প্রথমত, ফটো থেকে কেটে বের করুন নানা তথ্য লেজেন্ডস, টাইটেল, ফ্রেম ইত্যাদি। কারণ, এগুলো সার্চ রেজাল্টের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফ্রি টুল ঔবঃংপৎববহংযড়ঃ (গধপ াবৎংরড়হ) ব্যবহার করে আপনি কাটতে পারেন ছবিটির একদম ডান পাশে নিচের দিকে থাকা উবসড়ঃরাধঃড়ৎং শব্দটি। দ্বিতীয়ত, মিরর ইফেক্ট টুল, যেমন LunaPic ব্যবহার করে চেষ্টা করুন ছবিটি উল্টে দিতে এবং রেজাল্টটি সেভ করুন।
এরপর গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ অথবা অন্য কোনো রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল ব্যবহার করে এই ছবিটি পরীক্ষা করুন। এভাবে জানা যাবে ছবিটি মূল ছবি না এডিটেড ছবি এবং জানা যাবে ছবিটির প্রকৃত তারিখ, স্থান এবং এটি প্রকাশের প্রেক্ষাপটও।
অতএব ফটোটি আসলে তোলা হয়েছিল তাজিকিস্তানে ২০১০ সালে। আর যে সৈন্য পতাকাকে চুম্বন করছিলেন, তিনি একজন তাজিক শুল্ক কর্মকর্তা। তার আস্তিনের উপরের ইউক্রেনীয় পতাকা পরে সংযোজন করা হয়েছে একটি ফটো এডিটিং প্রোগ্রামের সাহায্যে। আর ফটোটি আনুভূমিকভাবে উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে মিরর ইফেক্ট ব্যবহার করে।
কোনো কোনো সময় গুগল সার্চ ছবির সোর্স বের করার জন্য যথেষ্ট নয়। তখন চেষ্টা করতে হবে ঞরহঊুব নামের আরেকটি রিভার্স সার্চ টুল দিয়ে। ঞরহঊুব এবং এড়ড়মষব রিভার্স সার্চ টুলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে টিনআই রিকগনাইজ করে একই ধরনের অথবা এডিটেড ছবি। এই উপায়ে আপনি একই ছবির ক্রপড অথবা মাউন্টেড ভার্সন পেতে পারেন। অধিকন্তু, কোন কোন সাইটে এই ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেসব সাইটে ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাড়তি তথ্য দিতে পারে।

এই ফেইক ছবিটি রিটুইট করা হয়েছে এবং টুইটারে এটি লাইক দেয়া হয়েছে হাজার হাজার বার। ছবিতে দেখানো হয়েছে পুতিনকে ঘিরে রেখেছে বেশ কয়জন বিশ্বনেতা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে, তিনি যেন সবাইকে কী বলছেন। ছবিটি নকল। আপনি আসল ছবিটি পেতে পারেন টিনআই ব্যবহার করে। ইমেজ অ্যাড্রেসটি সার্চবারে এন্টার করুন অথবা আপনার হার্ডড্রাইভ থেকে ছবিটি ড্র্যাগ ও ড্রপ করুন। আপনি সম্ভাব্য প্রাথমিক ছবিটি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন একটি ‘বিগেস্ট ইমেজ’ অপশন। কারণ, প্রতিটি এডিটেড ছবির সাইজ রিডিউস করা হয় এবং ছবিটির গুণগত মান কমানো হয়। আমরা দেখতে পারি, এই ছবিটি নেয়া হয়েছে একটি টার্কিশ ওয়েবসাইট থেকে।
Best Match, Newest, Oldest Ges GgbwK Most Changed-এর মতো অন্য কোনো টুলবার অপশন ব্যবহার করেও জানা যাবে ছবিটিতে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আপনি ডোমেইন দিয়ে রেজাল্ট ফিল্টারও করতে পারেন। যেমনÑ টুইটার না অন্য কোনো সাইটে এই ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল।

০২ : প্রকৃত ছবি দেখিয়ে ম্যানিপুলেশন, যা অন্য সময়ে অন্য স্থানে নেয়া হয়েছিল ম্যানিপুলেশন চলতে পারে বিকৃত উপায়ে কোনো ঘটনা উপস্থাপন করে। ২০১৪ সালে ইসরাইলে নেয়া হয়েছিল একটি ছবি। সেই ছবিটিই ২০১৫ সালে পোস্ট করা হয়েছে ইউক্রেনে।
ছবিটি যে ফেইক তা আবিষ্কার করা হয়। তা প্রথম আবিষ্কার করেন ইসরাইলি সাংবাদিক ও ইউক্রেনের বিশেষজ্ঞ শিমন ব্রিমান। আমরা এই ছবির অথেনটিসিটি পরীক্ষা করতে পারি যেকোনো রিভার্স সার্চ ব্যবহার করে, সংযুক্ত উপাদান (যেমন টাইটেল) কেটে আলাদা করে। টিনআইয়ের অপশন ‘ওল্ডেস্ট’ এখানে খুবই উপকারী। এখানে কমপক্ষে দুটি ইসরাইল সম্পর্কিত রেজাল্ট পাওয়া যাবে, যার প্রকৃত তারিখ এক বছর আগের। আমরা সব সময় এভাবে ছবির সোর্স জেনে নিতে পারি। এক্ষেত্রে এই রেজাল্ট আরো পরীক্ষার ক্লু হিসেবে কাজ করে।

এই সার্চের পঞ্চম রেজাল্টটি হচ্ছে, এই ছবিটি নেয়া হয়ছে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি ইসরাইলি পত্রিকা থেকে। এতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে কখন কীভাবে ছবিটি তোলা হয়েছিল। একজন বালিকা শিরা ডি পোর্টো এই ছবিটি নিয়েছিল তার মোবাইল ফোন থেকে বীরসেবায় রকেট হামলার সময়ে। বাবা ও অন্য আরেকজন শিশুটিকে আগলে রেখেছেন তাদের শরীর দিয়ে।

যদি একটি সন্দেহজনক ছবি সামাজিক মিডিয়ায় দেখা যায়, তবে আমরা ব্যবহার করতে পারি এমবেডেড টিনআই সার্চ টুল। উদাহরণত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরকালে একটি ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ও রুশ-সমর্থিত ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয়। ছবিতে দেখা যায় ইউক্রেনের ক্যাবিনেট মিনিস্টার বিল্ডিংয়ের বাইরে জনতা হাঁটু গেড়ে বসে আছে। ছবিটি ক্যাপশনে দাবি করা হয়Ñ এরা ছিল কিয়েভের অধিবাসী। এরা বাইডেনের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তাদেরকে ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদ আর্সেনি ইয়াতসেনউকের হাত থেকে বাঁচাতে। ছবিটি প্রথম দেখা যায় ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরে।
TinEye, StopFake ব্যবহার করে দেখা যায়, মূল ছবিটি ইউডোমেইডেন হ্যাশটেগ দিয়ে পোস্ট করা হয়েছিল টুইটারে, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। এর কনটেক্সট জানতে আমরা ব্যবহার করতে পারি টুইটার সার্চ টুল। ‘সার্চ ফিল্টার’ বেছে নেয়ার পর দিতে পারি ‘অ্যাডভান্সড টুল’।
এরপর এন্টার করতে পারি যেকোনো ইনফরমেশনে এ ক্ষেত্রে হ্যাশটেগ এবং তারিখটি জানুয়ারি ১৮, ২০১৫।

প্রথম সার্চ রেজাল্টে দেখা যায়, মূল টুইটটিতে ছিল প্রাথমিক ছবিটি। এটি তোলা হয়েছিল কিয়েভের রুশকেভস্কি স্ট্রিটে, ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। তখন হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিল ২০১৩ সালের ঊঁৎড়সধরফধহ প্রতিবাদের সময় সংঘর্ষের প্রথম শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
টিনআই এবং গুগল ইমেজেস ছাড়াও Baidu এবং Yandex-সহ আরো অনেক ধরনের টুল রয়েছে। আছে Foto Forensics-এর মতো অনেক মেটাডাটা সার্চিং টুলও। প্রসঙ্গত, বাইদু ভালো কাজ করে চীনা কনটেকস্টের ক্ষেত্রে। আমরা যদি এসব টুল ব্যবহার করে ছবি পরীক্ষা করতে যাই, তবে ব্যবহার করতে পারি ওসমঙঢ়ং, এতে রয়েছে উপরে উল্লিখিত টুলগুলো। আমরা চাইলে আমাদের নিজস্ব কোনো টুলও ব্যবহার করতে পারি। আরেকটি হচ্ছে ওসধমবৎধরফবৎ.পড়স, এটি টিনআইয়ের মতোই। তবে সামান্য কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন বেশ কিছু ছবি বিশ্লেষণের ক্ষমতার পার্থক্য এবং এটি কিছু ওয়েবসাইটকে সার্চ রেজাল্টের বাইরে রাখে।
সার-সংক্ষেপ

* মনোযোগী হবেন সবচেয়ে বড় আকার ও রেজ্যুলেশনের ছবির ব্যাপারে। ছবির রেজ্যুলেশন কমে যায় প্রতিটি নতুন এডিটিংয়ের ফলে। অতএব সবচেয়ে বড় আকারের ও সবচেয়ে বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি হবে সমসংখ্যক বার এডিটেড ছবি। এটি একটি অপ্রত্যক্ষ চিহ্ন যে, একটি ছবি হতে পারে প্রকৃত ছবি।

* মনোযোগ দিন প্রকাশের তারিখের ওপর। সবচেয়ে আগের তারিখের ছবিটিই হবে মূল ছবির সবচেয়ে কাছাকাছি ছবি।
* ছবির ক্যাপশন বার বার পড়–ন। একই ধরনের দুটি ছবির বর্ণনা আলাদা থাকতে পারে।

* ফেইক ছবি শুধু ক্রপড বা এডিটেড নয়, তা মিররডও হতে পারে।

* আপনি বিশেষ কোনো ওয়েবসাইট, সামাজিক নেটওয়ার্ক কিংবা ডোমেইন সার্চ করতে পারেন।

দুই : ভিডিও ম্যানিপুলেটিং
ছবির যেমন ম্যানিপুলেশন চলে, তেমনি ভিডিওরও ম্যানিপুলেশন চলতে পারে। তবে ফেইক ভিডিও ধরা অনেকটা জটিল ও সময়ক্ষেপী। প্রথমত, ভিডিওটি দেখুন এবং বের করুন এর অসামঞ্জস্যতাগুলো অযথাযথ জোড়া লাগানো, বিকৃত অনুপাত এবং অদ্ভুত মুহূর্তগুলো।

বিস্তারিতভাবে দেখুন শ্যাডো, রিফ্লেকশন এবং বিভিন্ন উপাদানের শার্পনেস। যে দেশ বা সিটিতে ভিডিওটি করা হয়েছে তা জানা যেতে পারে গাড়ির নম্বর, দোকানের চিহ্ন ও সড়কের নাম লক্ষ করে। যদি ভিডিওটিতে অস্বাভাবিক ভবন দেখা যায়, সেগুলো খুঁজে দেখুন গুগল ম্যাপসের স্ট্রিট ভিউয়ে। আপনি আরো পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সুনির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের আবহাওয়া। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোর আর্কাইভ। যদি সেদিনে দিনভর বৃষ্টি থাকে, আর ভিডিওতে দেখা যায় সূর্য উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে, তবে ছবিটি প্রকৃত বলে মেনে নেয়া যাবে না। এ ধরনের একটি সাইট হচ্ছে ডবধঃযবৎ টহফবৎমৎড়ঁহফ। ভিডিওসহ যেসব ফেইক নিউজ প্রকাশ করা হয়, সেগুলো ধরার জন্য নিচে উল্লিখিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

০১. নতুন ঘটনা বিশ্লেষণের জন্য পুরনো ভিডিও ব্যবহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিলে সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ হামলাসংক্রান্ত প্রচুর ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেমন একটি ভিডিওতে দেখানো হয় ভোরবেলায় দামেস্কের জামরায়া রিসার্চ সেন্টারে হামলার চিত্র। যদি একটি খবরের ভেতরে একটি ভিডিও এমবেডেড করে দেয়া হয়, তবে আপনি অরিজিনাল টুইট, ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক পোস্টে গিয়ে এ সম্পর্কিত কমেন্টগুলো পাঠ করুন। অনলাইন শ্রোতারা, বিশেষত টুইটার ও ইউটিউবের শ্রোতারা খুবই সক্রিয় ও সাড়াদায়ক। কোনো কোনো সময় এখানে এদের সোর্সের লিঙ্ক থাকে। এছাড়া আরো প্রচুর তথ্য থাকে, যা থেকে ভিডিওটি ফেইক প্রমাণ করার সূত্র পাওয়া যায়। এটি করার পর আমরা দেখতে পারি ইউটিউব ভিডিওর অরিজিনাল লিঙ্কটি। এখানে দেখা যাবে সঠিক লোকেশন। এটি তোলা হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। ইসরাইলে পরিচালিত একই ধরনের একটি হামলার সময়।

তা ছাড়া আপনি দ্রুত জানতে পারবেন সেই অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে, যেখান থেকে এটি পোস্ট করা হয়েছিল। ইউজার সম্পর্কে এটি কী তথ্য শেয়ার করে? অন্য কোনো সামাজিক গণমাধ্যমের লিঙ্ক রয়েছে কি এর সাথে? কী ধরনের তথ্য এটি শেয়ার করে?

অরিজিনাল ভিডিওটি পেতে আমরা ব্যবহার করতে পারি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ণড়ঁঞঁনব উধঃধঠরববিৎ। এটি আমাদের সুযোগ দেবে একদম সঠিক আপলোড তারিখটি ও সময় এবং পরীক্ষা করে দেখবে, এটি কী এর আগে এই প্ল্যাটফরমে পোস্ট করা হয়েছিল কি না। চলুন উপরে উল্লিখিত ভিডিওটির আপলোড টাইম চেক করে দেখা যাক। ডাটা ভিউয়ার নিশ্চিত করেছে, এটি আপলোড করা হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে।
এর পরের ধাপটি হচ্ছে ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখা ঠিক একই প্রক্রিয়ায়, যেভাবে ফটো ভেরিফাই করা হয়েছে ডাইভার্স ইমেজ সার্চের বেলায়। আপনি ম্যানুয়ালি ভিডিওর মুখ্য মুহূর্তগুলোর স্ক্রিনশুট নিতে পারেন এবং এগুলো গুগল ইমেজ কিংবা টিনআইয়ের মতো সার্চ মেশিনে পরীক্ষা করতে পারেন। এ প্রক্রিয়া সরল করার জন্য আপনি বিশেষ ধরনের টুলও ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউব ডাটা ভিউয়ার জেনারেট করে ইউটিউব ভিডিওর থাম্বনেইল। এগুলোতে একটি মাত্র ক্লিক করে আপনি রিভার্স ইমেজ সার্চ সম্পন্ন করতে পারেন।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ফ্রান্স ২৪’-এর অবজারভারেরা উদঘাটন করেন একটি ফেইক ভিডিও। এই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছিল টার্কিশ ফাইটার জেটের কয়েকটি স্কোয়াড সিরিয়ার আফরিনে বম্বিং মিশনে ছিল। এই ভিডিও চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছিল এফ-১৬-এর ককপিট থেকে এবং বেশ কয়েকটি ইউটিউব অ্যাকাউন্টে তা পোস্ট করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি। এরা ভিডিওটি পরীক্ষা করেন ইউটিউব ডাটা ভিউয়ারে।

অরিজিনাল পোস্টে ক্যামেরায় টার্কিশ ভয়েস ছিল না, যা পরে সংযুক্ত করা হয়। বাস্তবে এই ভিডিওটি করা হয় আমস্টারডামের একটি বিমান মহড়ার সময়ে।

০২. একটি ভিডিও অথবা এর অংশবিশষ অন্য কনটেক্সটে রেখেÑ কোনো কোনো সময় একটি ভিডিওকে ফেইক প্রমাণ করতে প্রয়োজন হয় ভিডিও সম্পর্কিত কিছু অতিরিক্ত তথ্য জানার। যেমনÑ একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট। এটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ৮টি দেশে। এটিতে দেখানোর চেষ্টা চলেছিল গ্রিস ও মেসিডোনিয়া সীমান্তে মুসলিম অভিবাসীরা রেডক্রসের খাবার দিতে অস্বীকার করছে, কারণ ওই খাবার হালাল ছিল না অথবা মোড়কের ওপর ‘ক্রস চিহ্ন’ দেয়া ছিল।
ভিডিওটি সম্পর্কে অধিকতর জানার জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারি শক্তিশালী ওহঠরফ রিভার্স সার্চ টুল। এটি আমাদের সাহায্য করতে পারে Twitter, Facebook, YouTube, Instagram, Vimeo, Dailymotion, LiveLeak and Dropbox, Download the InVid plugin ইত্যাদির মতো সামাজিক গণমাধ্যমের ভিডিও পরীক্ষা করে দেখার বেলায়। ভিডিও লিঙ্কটি কপি করুন। এটি পেস্ট করুন InVid-এর Key frames উইন্ডোতে এবং ঝঁনসরঃ-এ ক্লিক করুন।

রিভার্স ইমেজ সার্চ করার জন্য থাম্বনেইলগুলো বরাবর এক এক করে ক্লিক করুন এবং রেজাল্টগুলো উদঘাটন করুন।

বাস্তবতা হচ্ছে, অভিবাসীরা খাবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়েছিল এক বাজে পরিস্থিতিতে। ইতালীয় সাংবাদিকেরা এ নিয়ে লিখেছেন ১১টি পোস্টে সরেজমিন মানবাধিকার কর্মীদের সাথে কথা বলে। যে সাংবাদিকেরাই এই ভিডিওটি তোলেন, তারাই তা নিশ্চিত করেন। এটি প্রাথমিকভাবে পোস্ট করা হয়েছিল এর ওয়েবসাইটে এবং ক্যাপশনে লেখা ছিলÑ “The refugees refuse food after spending the night in the rain without being able to cross the border.”

এ ধরনের ফেইক ভিডিওর আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, গেলআরিয়া টিভি থেকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল সম্পর্কিত একটি পোস্ট। এটি ছিল ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ। ভিডিওটিতে চ্যান্সেলর একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। ভিডিওটির টাইটেল ছিল “Angela Merkel: Germans have to accept foreigners violence.”
আসলে বাক্যটি নেয়া হয়েছে বিষয়বস্তুর বাইরে। আর শিরোনামে তার বক্তব্যের অর্থ একদম পাল্টে দেয়া হয়েছে। Byyu Feed News Analysis-G Zv Rvbv hvq| GLv‡b Zvi cy‡iv e³e¨wU wQj GiƒcÑ The thing here is to ensure security on the ground and to eradicate the causes of violence in the society at the same time. This applies to all parts of the society, but we have to accept that the number of crimes is particularly high among young immigrants. Therefore, the theme of integration is connected with the issue of violence prevention in all parts of our society.

জার্মান ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট গরসরশধসধ লিখেছে ২০১১ সালের একটি প্লট থেকে আংশিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ধরনের ভিডিওর সোর্স উদঘাটন করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, গুগলের মতো সার্চ মেশিন ব্যবহার করা।

০৩. পুরোপুরি একটি ফেইক ভিডিও তৈরি পুরোপুরি ফেইক ভিডিও তৈরির জন্য প্রচুর টাকা ও সময় প্রয়োজন। এটি সাধারণত ব্যবহার হয় রুশ অপপ্রচার চালানোর জন্য। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ইউক্রেনীয় স্পেশাল অপারেশন রেজিমেন্ট ‘আজভ’-এর ইসলামিক স্টেটস মিলিটেন্টদের সার্ভিসের নকল প্রমাণ দেখানো। এটি উপস্থাপন করা হয় রুশপন্থী হ্যাকার গ্রুপ সাইবারবারকাটের একটি ফাইন্ডিং হিসেবে। সাইবারবারকাট হ্যাকারেরা দাবি করে, এরা এক আজভ ফাইটারের স্মার্টফোনে ঢুকতে সক্ষম হয় এবং সেখানে ম্যাটেরিয়াল পায়। এরা ফুটেজের লোকেশনও উল্লেখ করেনি, সেই সাথে উল্লেখ করেনি হ্যাকিংয়ের টেকনিক্যাল ফিচারও। বিবিসি উইকিম্যাপিয়ার জিওগ্রাফিক সার্ভিস ব্যবহার করে এর লোকেশন জানতে পারেন।

ভিডিওটির আপাত লোকেশন তুলনা করে দেখার ও আসল ভিডিও দেখার জন্য আমরা গুগল ম্যাপের মতো অন্যান্য ম্যাপিং সার্ভিসও ব্যবহার কতে পারি। কিংবা যেখানে প্রযোজ্য, সেখানে ব্যবহার করতে পারি এড়ড়মষব ঝঃৎববঃ ঠরবি সার্ভিস। আসলে এই লোকেশনটি ছিল দখল করা ভূখÐ ইস্টার্ন ইউক্রেনের আইসোলিয়াতশিয়া আর্ট সেন্টার। কোনো কোনো সময় এসব ফেইক ভিডিও ক্লামজি, ফলে এগুলো সহজেই উদঘাটন করা যায়। শুধু মনোযোগ দিলেই যথেষ্ট। উদাহরণত, রুশ গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়Ñ ‘রাইট সেক্টর’ ফাইটারেরা রুশোফোবিয়া পাঠদান করছে ইস্টার্ন ইউক্রেনের দোনেতস্কের ক্রামাটোরস্ক সিটির স্কুলগুলোতে।
ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ইউটিউবে। এরপর তা ছাড়া হয় মূলধারার রুশ গণমাধ্যমে। ধরে নেয়া হয়, স্কুলের বালকদের মধ্যে একজন এই পাঠদানের ভিডিওটি করে একটি ক্যামেরা ফোন দিয়ে। হাতে বন্দুকধারী ব্রিটিশ সামরিক পোশাক পরা এক লাখ শিশুর ‘হোয়াট ইজ রুশোফোবিয়া?’ শিরোনামের লেখাটি জোরে জোরে পড়তে বাধ্য করে। তিনি বলেন, এ ধরনের পাঠ সেইসব ভূখন্ডে পড়ানো হবে, যেগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে।

সামাজিক নেটওয়ার্কের ব্যবহারকারীরা লক্ষ করেন, স্কুলছাত্ররা তাদের শ্রেণীর তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর হিরোর পোশাক হচ্ছে কনডর স্টাইলের ডোরাকাটা সামরিক জ্যাকেট। এ ধরনের কাপড়ের টুকরা বা কাপড় যেকোনো অনলাইন দোকান থেকে কেনা যায়। আসলে এই ভিডিওটি তৈরি করে ক্রামাটোরস্ক সক্রিয়বাদীরা একটি প্ররোচনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। এ ভিডিওটির প্রণেতা অ্যান্টন কিস্টল ‘স্টপফেইক’কে দেন একটি খসড়া সংস্করণ, সেই সাথে ভিডিওটির কিছু ছবি।

ছয় : ডাটা ম্যানিপুলেশন
সমাজতাত্তি¡ক জরিপের ডাটা ও অর্থনৈতিক সূচক ম্যানিপুলেশন করা সম্ভব।

০১. ম্যাথোডোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশনÑ জরিপে থাকতে পারে দুর্বল মেথোডোলজি। যেমনÑ ২০১৮ সালের মার্চের শেষ দিকে রুশ মিডিয়া খবর দিল, ইউক্রেনে অ্যান্টি-সেমিটিজম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, কিন্তু ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সাথে তা গোপন করছে। রুশ ওয়েবসাইট উপস্থাপন করে ৭২ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট। এতে দেখানো হয়, ইউক্রেনের ইহুদিরা অধিক হারে হামলার শিকার হচ্ছে। এরা মৌখিক ও শারীরিকভাবে হামলার শিকার হচ্ছে সাবেক ইউএসএসআরের চেয়ে বেশি হারে।

কিন্তু রিপোর্টটি সুষ্ঠু সমীক্ষাভিত্তিক ছিল না। এর প্রণেতারাও সেই সংস্থার সংগৃহীত ডাটা বিশ্লেষণ করেননি, যে সংস্থাটি ইউক্রেনে জেনোফোবিয়া মনিটর করে থাকে। উল্লিখিত সাইট পরীক্ষা করে প্রণেতারা ঘটনার একটি মেকানিক্যাল ক্যালকুলেশন করেছেন। এর সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতার।

০২. ফলের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া অপপ্রচারের একটি প্রবণতা হচ্ছে অপপ্রচারকে সত্য ও সঠিক বলে প্রতীয়মান করা। অপপ্রচারকারীরা অনেক সময় জরিপের ফলাফলকে বিকৃত করে। রাশিয়ার ক্রেমলিনপন্থী সাইট Ukraina.ru একটি স্টোরি প্রকাশ করে Fitch Ratings-এর সর্বশেষ ইউক্রেন সম্পর্কিত আউটলুকে। এতে শুধু নেতিবাচক বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়। এতে সার্বিক স্থিতিশীল বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। ফিটচ রিপোর্টের প্রথম লাইনটি উল্লেখ করে Ukraina.ru দাবি করে ইউক্রেনের রয়েছে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম শ্যাডো ইকোনমি। এ ক্ষেত্রে আজারবাইজান ও নাইজেরিয়ার পরেই রয়েছে ইউক্রেনের স্থান। রিপোর্টটির প্রথম বাক্যটি ছিল এমন “UkraineÕs ratings reflect weak external liquidity, a high public debt burden and structural weaknesses, in terms of a weak banking sector, institutional constraints and geopolitical and political risks.Ó
ïay GB Z_¨wUB Ukraina.ru wb‡qwQj GB wdUP AvDUjyK ‡_‡K| GLv‡b m¤ú~Y© Gwo‡q Pjv nq cieZ©x evK¨wUÑ These factors are balanced against improved policy credibility and coherence, the sovereignÕs near-term manageable debt repayment profile and a track record of bilateral and multilateral support

এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা জানার জন্য সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পুরো রিপোর্টটি উদঘাটন করা।
Ukraina.ru-এর আরেকটি ম্যানিপুলেটিভ দাবি হচ্ছে, বেশিরভাগ ইউক্রেনিয়ান মোটেও আগ্রহী নন ভিসামুক্তভাবে ইইউ সফর করতে। এই ভুয়া দাবির সোর্স হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটিক ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের একটি জরিপ। এই জরিপ পরিচালিত হয় ২০১৮ সালের জুনের শুরুতে। এতে একটি প্রশ্ন ছিল ঐড়ি important is the introduction of the visa-free regime with the EU-countries for you? ফলাফলে দেখানো হয় ১০ শতাংশ বলেছে ‘ভেরি ইমপোর্টেন্ট’। ২৯ শতাংশ বলেছে ‘ইমপোর্টেন্ট’। ২৪ শতাংশ বলেছে স্লাইটলি ইমপোর্টেন্ট’। আর ৩৪ শতাংশ বলেছে ‘নট ইমপোর্টেন্ট’। ৪ শতাংশ বলেছে ‘বলা মুশকিল’।

কিন্তু রুশ মিডিয়া সিদ্ধান্ত নেয় স্লাইটলি ইমপোর্টেন্ট’ এবং ‘নট ইমপোর্টেন্ট’কে এক সাথে করে এই অঙ্কটাকে ৫৮-তে নিয়ে তোলার। এরপর দাবি করা হয় বেশিরভাগ ইউক্রেনিয়ান এই সুযোগ নিতে আগ্রহী নন। তা সত্তে¡ও যখন ‘ভেরি ইমপোর্টেন্ট’, ‘ইমপোর্টেন্ট’ ও ‘¯স্লাইটলি ইমপোর্টেন্ট’-এর সংখ্যাগুলো যোগ করা হয়, তখন তা হয় ৬৩ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, ৬৩ শতাংশ ইউক্রেনীয়র কাছে ভিসামুক্ত ট্রাভেল কোনো না কোনোভাবে
‘ইমপোর্টেন্ট

পাঁচ : মিডিয়া মেসেজ ম্যানিপুলেট করা
সুপরিচিত মিডিয়ার প্রতি আমাদের আস্থার একটি প্রবণতা আছে। অপপ্রচারকারীরা ও ম্যানিপুলেটরেরা এই সুযোগটা কাজে লাগায়।

০১. প্রান্তিক মিডিয়া ও ব্লগে মেসেজ ব্যবহার করা মার্জিনাল মিডিয়াগুলো প্রায়ই সলিড-সাউন্ডিং নাম ব্যবহার করে বার্তা ছড়িয়ে দেয়। বলা হয় এগুলো এসেছে সুখ্যাত মিডিয়া থেকে। বিজনেস নিউজ পেপার Vyglyad-সহ বেশ কিছু রুশ গণমাধ্যম পশ্চিমা মিডিয়ার বরাত দেয় ইউক্রেনের যুদ্ধে ১৩ জন আমেরিকানের লাশ হস্তান্তর সম্পর্কিত খবরের সময়। কিন্তু স্টপফেইক জানতে পারে, পশ্চিমা গণমাধ্যম Vyglyad-কে উদ্ধৃত করে The European Union Times নামের একটি অনির্ভরযোগ্য অনলাইন নিউজপেপারকে। এই নিউজপেপার লিঙ্ক যায় WhatDoesItMean.পড়স নামের ওয়েবসাইটে। এই খবরের লেখক সরকা ফাল ছিলেন একজন উদঘাটিত ব্যক্তি, যিনি এই গুজব ছড়িয়েছিলেন। এ ধরনের ম্যানিপুলেশন রোধ করতে রেফারেন্স সোর্সে গিয়ে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়ন করতে হবে।

অন্য আরেকটি ঘটনায় স্টপফেইক জানতে পারে, রুশ গণমাধ্যম উদ্ধৃত করে একটি বেনামি ব্লগে পোস্টকে। ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট রাশিয়ার RIA Novosti পোস্ট করে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন দুর্ঘটনা সম্পর্কিত একটি লেখা। সোর্স ছিল জার্মান পোর্টাল Propagandaschau। পোর্টালটি উড়শ ছদ্মনামে প্রকাশ করে একটি মতামতধর্মী লেখা। লেখাটি লেখেন রাশিয়ায় কানাডিয়ান অ্যাম্বেসির সাবেক রাজনৈতিক কাউন্সেলর প্যাট্রিক আর্মস্ট্রং, যা পোস্ট করা হয়েছে জঁংংরধ ওহংরফবৎ নামের রুশপন্থী সাইটে।
০২. নামিদামি মিডিয়ার প্রকৃত বার্তা বের করা সুখ্যাত মিডিয়ার রিপোর্টও ফেইক নিউজ মিডিয়া বিকৃত করতে পারে। যেমন ঝহড়ঢ়বং এবং Politifact লিখেছে ক্যালিফোর্নিয়া কংগ্রেস ওম্যান ম্যাক্সিন ওয়াটারসের ট্রাম্পকে ইমপিচ করা সংক্রান্ত একটি উদ্ধৃতি ডিজিটাল উপায়ে যোগ করা হয়েছে একটি ছবিতে। ছবিটি নেয়া হয়েছে সিএনএন সম্প্রচার থেকে। আসলে এই উদ্ধৃতিটি এখানে মোটেও ছিল না এবং এই মহিলার ছবিটি নেয়া হয়েছে তার অন্য বিষয়ে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারের সময়।

০৩. সুখ্যাত মিডিয়ায় নেই এমন বিষয়ের উল্লেখ করা রুশ ও মলদোভিয়ান মিডিয়ায় একটি ফেইক স্টোরি প্রচার করা হয়, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের। এতে দাবি করা হয়, ক্রিমিয়াতে সোনার খনি আবিষ্কার হয়েছে। মলদোভিয়ান নিউজ সাইট GagayuYeri.সফ ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট করে বলে, রুশ ভূতাত্তি¡কেরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার খনি আবিষ্কার করেছেন। অভিযোগ আছে, এই খবরের উৎস হচ্ছে ব্লুমবার্গের একটি স্টোরি। কিন্তু হাইপারলিঙ্ক এর ওয়েবসাইটে যায়নি। স্টপফেইক আবিষ্কার করেছে, গুগলেও এ ধরনের স্টোরি পাওয়া যায়নি।

অন্য আরেক ঘটনায় হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ভারতে একটি ভুয়া নির্বাচনী জরিপ প্রকাশ করে। এটিকে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য বিবিসি হোম পেজে লিঙ্ক অন্তর্ভুক্ত করে, যদিও বোম বিশ্লেষকদের মতেÑ বিবিসি এই জরিপ সম্পর্কে কোনো খবর প্রকাশ করেনি।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা