লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
কমপিউটার জগৎ-এর ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তি
কমপিউটার জগৎ-এর ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তি
গোলাপ মুনীর
মো টামুটিভাবে বিগত বছরের মার্চ থেকে
বাংলাদেশের করোনা মহামারীর
আঘাত হানা শুরু হয়। যদিও বিশ্বের অন্যান্য
দেশে এর সূচনা ২০১৯ সালের শেষের দিকে।
ফলে এটি বিশ্বজুড়ে ‘কভিড-১৯ মহামারী’
নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বিশ্বের
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রায়
প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক পড়ে। করোনা
মোকাবেলায় বাংলাদেশে থেকে থেকে সাধারণ
ছুটি, লকডাউন, আইসোলেশন, কলকারখানা
বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ নিতে হয়। ফলে
সার্বিকভাবে কমবেশি সব ক্ষেত্রে এক ধরনের
স্থবিরতা নেমে আসে। তবে করোনার আঘাত
প্রবলভাবে পড়ে বাংলাদেশের মুদ্রণ গণমাধ্যমের
ওপর। পত্রপত্রিকার আয়ে ব্যাপক ভাটা পড়ে।
এই সময়ে অনেক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ
হয়ে যায়। কোনো কোনো পত্রিকার কলেবর
ছোট করে আনা হয়। বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক
তাদের কাজ হারান। আবার কোনো কোনো
পত্রিকা মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে অনলাইন
সংস্করণ প্রকাশ করে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে
রাখার প্রয়াস চালায়।
বিগত বছরের শেষ দিকটার করোনার
তান্ডব অনেকটা কমে আসে। ফলে আশা করা
গিয়েছিল ২০২১ সালে সব কিছু আবার আগের
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু অতি
সম্প্রতি করোনার প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের
আরো কয়েকটি দেশে অধিকতরজোরদার
হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় আবার
আমাদেরকে লকডাউনসহ নানাধর্মী পদক্ষেপ
নিতে হয়েছে। ফলে এ নিয়ে সব ক্ষেত্রে
আবার নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সবাইকে আবার তাদের জীবনযাপন ও
কর্মকা নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ
করতে হয়েছে। স্বীকার করতেই হবে,
আমাদের পত্রিকাও করোনার অপরিহার্য বিরূপ
প্রভাবের শিকার। ফলে একটানা ২৯ বছর
আমাদের নিরবচ্ছিন্ন মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশের
পর গত বছর মার্চ সংখ্যা থেকে একান্ত বাধ্য
হয়ে অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করা শুরু
করি। আমরা আজকে যেই সময়টায় নতুন
করে ভাবনাচিন্তা শুরু করি দ্রুত ‘কমপিউটার
জগৎ’-এর মুদ্রণ সংস্করণে ফিরে যাওয়ার,
ঠিক সেই সময়টায় আবার নতুন করে আঘাত
হানল করোনাভাইরাস নামের অতিমারী।
তাই বাধ্য হয়ে আমাদের এই ত্রয়োদশ
বর্ষপূর্তি সংখ্যাটিরও অনলাইন সংস্করণ
প্রকাশ করতে হলো, যদিও আমাদের প্রবল
প্রত্যাশা ছিল এই বর্ষপূর্তি সংখ্যার মাধ্যমে
মুদ্রণ সংস্করণে ফিরে যাওয়ার। জানি না,
মুদ্রণ সংস্করণে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান
অনিশ্চয়তা কবে কীভাবে কাটবে। তবে
এটি নিশ্চিত, বিষয়টি করোনার এই দ্বিতীয়
ঢেউয়ের প্রভাবমাত্রা ও প্রবণতা আমাদের
সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে
দাঁড় করায়, তার ওপর নির্ভর করবে।
কমপিউটার জগৎ-এর পাঠকমাত্রই
জানেন বিগত তিন দশক ধরে এদেশের
তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে
পত্রিকাটি অসমান্তরাল অগ্রণী ভ‚মিকা পালন
করে আসছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,
এই তিন দশক সময়ে আমাদের সম্মানিত
লেখক, পাঠক, পৃষ্ঠপোষক, শুভানুধ্যায়ী ও
বিজ্ঞাপনদাতাদের সক্রিয় সমর্থন-সহায়তা
আমাদের এই ভ‚মিকা পালনে নিয়ামক
হিসেবে কাজ করেছে। নয়তো, নিশ্চিতভাবেই
এই তিনদশক সময় ধরে কমপিউটার জগৎ এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখা সম্ভব হতো না।
আমরা আমাদের এই ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তির
সময়ে তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
করছি। পাশাপাশি আজও যারা কমপিউটার
জগৎ প্রকাশনায় নানাভাবে সাহায্য-সহায়তা
অব্যাহত রেখেছেন, তাদের প্রতি রইল
ফুলেল শুভেচ্ছা।
আমরা সবাই জানি, এ দেশের অনেক
বড় মিডিয়া হাউজসহ কয়েকটি প্রকাশনা
প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ
নিয়ে বাংলা ভাষায় বেশ কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি
সাময়িকী প্রকাশনা শুরু করেছিল। কিন্তু
তাদের প্রবল সদিচ্ছা থাকা সত্তে¡ও প্রতিক‚ল
পরিবেশে এসব সাময়িকীর পক্ষে প্রকাশনা
অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। মাত্র কয়েক
বছরের প্রকাশনা শেষেই তাদের প্রকাশনা
বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের
মতো একটি ছোট্ট দেশে বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি
বিষয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করতে গিয়ে
কতটুকু প্রতিক‚ল পরিবেশের মধ্য দিয়ে
এগিয়ে যেতে হয়, তা শুধু সংশ্লিষ্টরাই
কিছুটা আন্দাজ-অনুমান করতে পারেন। এই
তিন দশক ধরে আমরা কমপিউটার জগৎ
প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সে অভিজ্ঞতাটুকু ভালো
করেই অর্জন করেছি।
তবে বলতে দ্বিধা নেই আমাদের
এই টিকে থাকার পেছনে মুখ্যত ভ‚মিকাটি
ছিল কমপিউটার জগৎ-এর প্রেরণা-পুরুষ
অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের। তিনি এই
পত্রিকা প্রকাশকে নিয়েছিলেন তার অন্তর্নিহিত
এক উপলব্ধি থেকে। তার উপলব্ধি ছিল
সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে
এগিয়ে নেয়ায় মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে
সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বাস্তবানুগ প্রয়োগ। এ
জন্য তার তাগিদ ছিল: কমপিউটারকে বের
করে নিয়ে আসতে হবে অভিজাতদের ড্রয়িং
রুম থেকে, এবং কমপিউটারকে পৌঁছে দিতে
হবে জনগণের দোরগোড়ায়। জনগণের
হাতে কমপিউটার পৌঁছে দেয়ার মধ্য দিয়েই
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
আর সে জন্য মানুষের মধ্যে ভাঙাতে হবে
কমপিউটার-সম্পর্কিত অকারণ ভীতি। এ
জন্য প্রয়োজন একটি যথার্থ আন্দোলন।
আর এ আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবেই
তিনি কার্যত কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার
উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ, বরাবর তার
সুদৃঢ় বিশ্বাস ছিল: ‘একটি পত্রিকাও হতে
পারে আন্দোলনের মোক্ষম হাতিয়ার’।তাই
এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে
নিতে হলে চাই একটি উপযুক্ত পত্রিকা। তা
ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল তার প্রিয় বিষয়।
অনেকেই হয়তো জানেন, স্কুল জীবনেই তিনি
সম্পাদনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশ
করেছিলেন ‘টরেটক্কা’ নামে একটি বিজ্ঞান
পত্রিকা। যদিও পত্রিকাটি ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী।
সে যা-ই হোক, তথ্যপ্রযুক্তির অমিত
সম্ভাবনার উপলব্ধি বিবেচনা রেখেই অধ্যাপক
কাদের বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক
নাজিমউদ্দীন মোস্তান ও ভূইঁয়া ইনাম
লেলিনকে দিয়ে লেখান কমপিউটার জগৎ-এর
প্রথম সংখ্যাটির ‘জনগণের হাতে কমপিউটার
চাই’ শীর্ষক দাবিধর্মী প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। এই
প্রতিবেদনই কার্যত বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি
আন্দোলনের দিকনির্দেশনা তৈরি করে দেয়।
এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়: ‘এ
দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা,
সুযোগ ও অধিকারের মতোই কমপিউটারের
বিস্তারও সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয়
ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে। মেধা,
বুদ্ধি ও ক্ষিপ্রতায় অনন্য এ দেশের সাধারণ
মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে
শাণিত করে তোলা হলে তারাই সম্পদ-
জীবন ও বিবেকবিনাশী বর্তমান জীবনধারা
বদলে দিতে পারে। ইরি ধানের বিস্তার,
পোশাকশিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্পে কৃ
ষক, সাধারণ মেয়ে, কর্মজীবী বালকেরা সৃষ্টি
করেছে বিস্ময়। একই বিস্ময় কমপিউটারের
ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে পারেÑ যদি স্কুল বয়স থেকে
কমপিউটারের আশ্চর্য জগতে এ দেশের
শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীদের অবাধ প্রবেশ ও
চর্চার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়।’
এ লক্ষ্য নিয়েই কমপিউটার জগৎ কিংবা
বলা যায় মরহুম আবদুল কাদের কার্যত
এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের সূচনা
করে(ন)। বিগত ত্রিশ দশকের কমপিউটার
জগৎ-এর প্রতিটি সংখ্যা এর সাক্ষ্য বহন
করে। বিশেষ করে কমপিউটার জগৎ-এর
প্রচ্ছদ কাহিনীগুলো করে তোলা হয়েছে
দাবিধর্মী কিংবা তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনা
বর্ণনাকর। কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা
শুরু ১৯৯২ সালের এপ্রিলে। সে সময়টা ছিল
আমাদের জাতীয় জীবনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
পাশাপাশি প্রযুক্তি ও জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়ার
মধ্য দিয়ে বিশ্বজয়ের আকাক্সক্ষা মূর্ত হয়ে
ওঠার সময়। দৃশ্যমান নৈরাজ্য ও সংঘাতের
আড়ালে জাতির সচেতন ও নবীন অংশ
বিশ্বের অগ্রগতি ও অভিযাত্রায় আলোড়িতহয়ে
নিজ জাতিকে একবিংশ শতাব্দীর জন্য প্রস্তুত
করার সংগ্রাম শুরু করে। কমপিউটার জগৎ
সেই সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে ‘জনগণের
হাতে কমপিউটার চাই’ ধ্বনি তুলে। পাঠকেরা
হয়তো লক্ষ করে থাকবেন, কমপিউটার জগৎ
প্রকাশনার প্রথম বছরের মধ্যেই আমরা
এই পত্রিকার মাধ্যমে জাতিকে সম্ভাবনার
দ্বারপ্রান্তে নিয়ে পৌঁছাতে সক্ষম হই। তখনই
আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে জাতীয় অর্থনৈতিক
ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহারের দাবির
পাশাপাশি ডাটা এন্ট্রি ও কমপিউটার সার্ভিস
শিল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণতরুণীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে একটি
আন্দোলন হিসেবে এগিয়ে নেই। ঘরে ঘরে
কমপিউটার, স্বল্পশিক্ষিত মানুষের কমপিউটার
প্রযুক্তি আয়ত্তের বিস্ময়কর কাহিনী,
বিশ্বজোড়া কমপিউটার জগৎ-এর চমকপ্রদ
অগ্রগতির খবর বহন করে মাল্টিমিডিয়ার
প্রান্ত পর্যন্ত পাঠককে নিয়ে আসা, তথ্যপ্রযুক্তি
শিল্পের মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার কোটি
টাকা উপার্জনের সম্ভাবনা সম্পর্কে উদাসীন
নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে
সংগ্রাম, এশীয় কমপিউটার শার্দূলদের আসরে
বাংলাদেশের মূষিকের অবস্থান কেন, তা নিয়ে
পÐিতজনদের মতামত বিবেকের ঝড় তোলা,
এশিয়ার দিকে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির
কথা জানানো, বাংলাদেশের সব এলাকায়
কমপিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচিতি,
সর্বস্তরে কমপিউটার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলা ফন্ট
ও পদ্ধতির যথাযথকরণ, নব্বইয়ের দশকে
আর্থনীতিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য
কমপিউটারপ্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে
আমরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম
পরবর্তী ৩০ বছর আমরা তা জারি রেখেছি
সচেতনভাবে এবং সময়ের সাথে তা আরো
জোরদার করে তুলেছি, যারপ্রতিফলন রয়েছে
আমাদেরপ্রচলিত সাংবাদিকতার বাইরের
নানামাত্রিক কর্মকাÐে। এসব কর্মকাÐের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত ছিল: সাংবাদিক সম্মেলন, সেমিনারসিম্পোজিয়াম, কর্মশিবির, কমপিউটার মেলা,
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন, জাতির
কাছে আইটি ব্যক্তিত্ব ও তুখোড় শিশু
কিশোরদের উপস্থাপন, সরকারি আমলাদের
সাথে দেখা করে তাদের প্রযুক্তিভীতি দূর
করা ও নানা বিষয়ে তাগিদ উপস্থাপন
এবং তথ্যপ্রযুক্তিসাংবাদিকদের প্রচলিত
সাংবাদিকতার বৃত্ত থেকে বের করে আনা।
কমপিউটারজগৎ-এর পাঠক ও এ দেশের
তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষ এ ব্যাপারে
সম্যক অবহিত আছেন।
কমপিউটার জগৎ ও একই সাথে মরহুম
আবদুল কাদের প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের কাছে
সমভাবে স্বীকৃত এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি
আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে। তিনি ছিলেন
এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের নেপথ্য
পুরুষ, প্রচারবিমুখ এক মানুষ। তাই আজকের
প্রজন্মের অনেকের কাছেই তিনি থেকে গেছেন
অনেকটা অজানা-অচেনা। তবে এ দেশের
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিটি মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি
আন্দোলনে তার অবদানের কথা ভালো করেই
জানেন এবং আজো শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করেন।
তিনিআমাদের ছেড়ে চলে গেছেন দেড় যুগ
সময় আগে২০০৩ সালের ৩ জুলাইয়ে। তবে
তিনি রেখে গেছেন তার নীতি-আদর্শ ও এ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের যথার্থ এক
রোডম্যাপ। তার অবর্তমানে কমপিউটার
জগৎ-এর হাল ধরেছেন তারই সুযোগ্যা
স্ত্রী ও কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশক
নাজমা কাদের। তারই নেতৃত্ব কমপিউটার
জগৎ পরিবার আজও এর অস্তিত্ব বাজায়
রেখে চলেছে অধ্যাপক কাদেরের নীতিআদর্শকে সমুন্নত রেখে। আল্লাহ চাহেতো
তার নীতি-আদর্শের পথরেখা অনুসরণ
করেইআমরা আগামী দিনের পথ চলবÑ সে
নিশ্চয়তা আজকের ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তির দিনে
কমপিউটার জগৎ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের
পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দিতে চাই।
বিগত তিন দশকের ২৯টি বছর
প্রযুক্তিপ্রেমী পাঠকদের হাতে আমরা
কমপিউটার জগৎ-এর মুদ্রণ সংস্করণ ও একটি
বছর অনলাইন সংস্করণ পৌঁছাতে সক্ষম
হয়েছি। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে
বাংলা ভাষার একটি আইসিটি পত্রিকার অস্তিত্ব
টিকিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়, নিশ্চিতভাবেই
কঠিন এক কাজ। এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন
করতে পারায় আমরা সক্ষম হয়েছি। এর
ফলে কমপিউটার জগৎ নিয়ে এই মুহূর্তে
আমাদেরঅন্যরকম এক সুখবোধ করার
স্বাভাবিক একটা সুযোগ ছিল। কিন্তুত্রয়োদশ
বর্ষপূর্তিরএই সংখ্যাটি আজ আমরা প্রকাশ
করছি অনেকটা শোকাভিভ‚ত হয়ে। কারণ, মাত্র
এই কয়দিন আগে গত ১৮ মার্চে আমাদেরকে
হারাতে হয়েছেকমপিউটার জগৎ পরিবারের
অনন্য-সাধারণ এক প্রিয় সাথী মঈন উদ্দীন
মাহ্মুদকে। যিনি আমাদের কাছে সমধিক
পরিচিত ছিলেন ‘স্বপনভাই’ নামে। তিনি
ছিলেন কমপিউটার জগৎ-এর উপ-সম্পাদক।
সৌম্য-শান্ত ও নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্ব হিসেবেই
তিনি কমপিউটার জগৎ পরিবারেএবং
নানাভাবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ছিলেন
শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার পাত্র। তিনি
ছোট-বড় সবাইকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখতেন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছ থেকে যে
পরিশীলিত আচরণ পেয়েছি তা কিছুতেই
ভোলার নয়। তিনি ছিলেন পত্রিকাটির প্রকাশক
নাজমা কাদেরের আপন ছোট ভাই। বলার
অপেক্ষা রাখেনা, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের
অন্যতম এক শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। তার
অটলভাইবোনদের মধ্যে রয়েছেন স্বনামধন্য
বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক,
এদেশে প্রথমসারির চিকিৎসক ও প্রকৌশলী
ব্যক্তিত্ব। কিন্তুএ নিয়ে তার মাঝে কখনো
দেখিনি কোনো উটকো গৌরববোধ। বরং
তার কাছ থেকে শুনেছি তার বাবা একজন
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অনেক কষ্টে-শিষ্টে
তার ভাইবোনদের লেখাপড়া করিয়েছেন।
সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেছেন সৎ জীবনযাপনে
অভ্যস্ত হওয়ার। তারই প্রতিফলন আমি
ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ করেছি তার জীবন-কর্মে।
তিনি কমপিউটার জগৎ-এ পুরো তিন দশক
কাজ করেছেন একজন সার্বক্ষণিক সাংবাদিক
হিসেবে। কমপিউটার জগৎ-ই ছিল তার পেশা
ও নেশার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি জীবনে দ্বিতীয়
কোনো পেশা ও কর্মের সাথে জড়িত ছিলেন
না। কমপিউটার জগৎ দিয়েই তার কর্মজীবন
শুরু ও শেষ। মাত্র৫৮ বছর বয়সে অনেকটা
অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি এত তাড়াতাড়ি
আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যাবেন,
তা ছিলভাবনার অতীত। তাই তার চলে
যাওয়ার আঘাতটা আমাদের কাছে অনেকটা
ভিন্নমাত্রার। কিন্তু আমরা না চাইলেও এটাই
আজ বাস্তব, মহান আল্লাহপাকের অমোঘ
বিধান। কারণ: আমরা আল্লাহর, তার কাছেই
আমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। আর
এই ফিরে যাওয়ার দিনক্ষণ আল্লাহর নির্ধারিত।
সেটা মেনে নিয়েই আমাদের চাওয়া: আল্লাহ
তাকে বেহেশতে দাখিল করুন। সেই সাথে
তার স্ত্রী ও রেখে যাওয়া দুই কন্যার জন্য মহান
আল্লাহর কাছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক
কল্যাণ কামনা করছিÑ এই সময়ে মহান
আল্লাহর কাছে আমাদেরপ্রার্থনা শুধু এটুকুই।
সবশেষে এই বর্ষপূর্তির সময়ে সবাইকে
জানাতে চাই, এদেশের প্রথম ও সর্বাধিক
প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকীর প্রকাশনা
অব্যাহত রাখতে আমরা সর্বাত্মক প্রয়াস
চালিয়ে যাব। কিন্তু, এর প্রকাশনা অব্যাহত
রাখতে আমাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।আগামী
দিনে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আমাদের পক্ষে
কতটুকু সম্ভব হবে, তা এই মুহূর্তে আমাদের
জানা নেই। তবে আমাদের বিশ্বাসÑ আমাদের
উপদেষ্টা, লেখক, পাঠক, গ্রাহক,পৃষ্ঠপোষক,
শুভানুধ্যায়ী, এজেন্ট ও বিজ্ঞাপনদাতাদের
সাথে নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী
দিনেও সফল হব। তাই কমপিউটার জগৎ
এর ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তির এই দিনে সবার
সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি।
আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন