• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নাজমুল হাসান মজুমদার
মোট লেখা:৩১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
থ্রীডি সফটওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি


নাজমুল হাসান মজুমদার

উদ্যোক্তাদের জীবনে প্রোডাক্ট বা বস্তু উৎপাদন বেশ গুরত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা রাখে, আর প্রযুক্তি সেই ব্যবস্থাপনা তৈরি করে তাদের ব্যবসায়িক জীবন আরও সহজ করে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে ততই নতুন সব উদ্ভাবনের মাধ্যমে বস্তু উৎপাদন পদ্ধতি আমূল পরিবর্তন ঘটছে। আর থ্রিডি প্রিন্টিং বা ত্রিমাত্রিক বস্তু উৎপাদন সেইক্ষেত্রে নতুন দিক তৈরি করেছে। 
থ্রিডি প্রিন্টিং কি থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নির্ভর ডিজাইন অর্থাৎ, ঈড়সঢ়ঁঃবৎ-ধরফবফ ফবংরমহ(ঈঅউ) সফটওয়্যার ব্যবহার করে থ্রিডি প্রিন্টার যন্ত্র দিয়ে ত্রিমাত্রিক অবজেক্ট বা বস্তু লেয়ারিং প্রক্রিয়াতে তৈরি করা হয়। মাঝে মাঝে যুক্ত উৎপাদন, ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্লাস্টিক, কম্পোজিট অথবা জৈববস্তু বিভিন্ন মাপের এবং ধরণের ত্রিমাত্রিক বস্তু তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে বাসার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি থেকে শুরুকরে অনেক দরকারি উপাদান মানুষ তৈরি করে।       
থ্রিডি প্রিন্টার কম্পিউটারে ডিজিটাল এসটিএস ফাইল পড়ে এবং এরপরে ফিলামেন্ট বা আঁশ অথবা রেসিন ব্যবহার করে ডিজিটাল সাদৃশ্য বস্তুর ছবি কম্পিউটারে তৈরি করে থ্রিডি প্রিন্টার মেশিনের সহায়তায় সিরামিক, প্ল্যাস্টিক বা পলিমার ব্যবহার করে বাস্তবিক জগতের ত্রিমাত্রিক অর্থাৎ, যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা আছে সেরকম বস্তু  তৈরি করা।   

থ্রিডি প্রিন্টিং শুরুর গল্প 

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ৮০ এর দশকের শেষের দিকে প্রথম সবার নিকটে পরিচিত হয়। সেসময়ে র‌্যাপিড প্রোটোটাইপিং (আরপি) প্রযুক্তি নামে এটি সবাই চিনতো। কারণ পুরো প্রক্রিয়াটি তখন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে খুব দ্রæতগতিতে সম্পন্ন করতে এবং সাশ্রয়ীমূল্যে ছিল। ১৯৮০ সালের মে’তে প্রথমে ড. কোডামা আরপি প্রযুক্তির জন্যে প্যাটেন্ট অ্যাপ্লিকেশন উপস্থাপন করেছিল।  শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এমআইটি’ এবং ‘থ্রিডি সিস্টেমস’ কোম্পানি’তে ডেভেলপ বা উন্নয়ন সাধিত করা হয়। ৯০ দশকের শুরুর দিকে ‘এমআইটি’ ‘থ্রিডি প্রিন্টিং’ নামে পুরো প্রক্রিয়াটিকে ট্রেডমার্ক করে, যেটা অফিশিয়ালি ৩উচ নামে সক্ষেপে পরিচিত। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর ‘এমআইটি’ ছয়টি কোম্পানিকে ৩উচ পদ্ধতি  ব্যবহার করতে লাইসেন্স অনুমোদন করে। ‘থ্রিডি সিস্টেমস’ সাউথ ক্যারোলিনা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, এটি ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের শুরুর দিকে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঝঃবৎবড়ষরঃযড়মৎধঢ়যু ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁং(ঝখঅ) এবং ঝবষবপঃরাব ষধংবৎ ংরহঃবৎরহম(ঝখঝ) এর মতন বেশকিছু প্রযুক্তি তাদের ট্রেডমার্ক করা আছে। এজন্যে থ্রিডি প্রিন্টিং জগতে নেতৃস্থানীয় অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে গণ্য করা হয়। ১৯৮৩ সালে প্রথম ঝঃবৎবড়ষরঃযড়মৎধঢ়যু ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁং(ঝখঅ) মেশিন চার্লস হল প্রথম আবিষ্কার করেন, পরবর্তীতে থ্রিডি সিস্টেম কর্পোরেশন সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ‘থ্রিডি সিস্টেমস’ প্রথম বানিজ্যিক আরপি সিস্টেম (ঝখঅ-১) প্রথম ১৯৮৭ সালে প্রকাশ করে এবং ১৯৮৮ সালে প্রথম এই সিস্টেম বিক্রি করে।  অপরদিকে, কার্ল ডেকার্ড যিনি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন তিনি ১৯৮৭ সালে ঝবষবপঃরাব খধংবৎ ঝরহঃবৎরহম(ঝখঝ) আরপি প্রসেস প্যাটেন্ট’র জন্যে ইউএস’তে আপিল করেন। থ্রিডি প্রিন্টিং জগতে এওস(ঊঙঝ) গুণগত ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোটোটাইপ এবং প্রোডাক্টের তৈরির জন্যে বিখ্যাত। ‘এওস’ ১৯৯০ সালে তার প্রথম ‘স্টোরিওস’ সিস্টেম বিক্রি করে, আর তাদের প্রারম্ভিক প্রোজেক্টেই ডিরেক্ট মেটাল লেজার সিনটারিং(ডিএমএলএস) প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি প্রথম থ্রিডি প্রিন্টার স্ট্রেটাসি কোম্পানি আইবিএম’র সহায়তায় বাজারে নিয়ে আসে ফিউজড ডিপোজিশন মডেলিং(এফডিএম) ব্যবহার করে। এটি এক্রোলোনিট্রিলে বুটাডিনে স্ট্রাইরেনে, পলিলাকটিক এসিড অথবা থার্মোপ্যাস্টিক দিয়ে ফিলামেন্টের তৈরি। ২০০৭ সালে ‘থ্রিডি সিস্টেমস’ প্রথম ১০ হাজার ডলারের নিচে প্রিন্টার মেশিন নিয়ে আসে, কিন্তু সেটা খুব একটা মার্কেটে প্রভাব ফেলতে পারেনি। রিপরেপ পদ্ধতিতে ২০০৯ সালে বাণিজ্যিক প্রিন্টার বিক্রি শুরুহয়, যেটা ছিল বিএফবি রেপম্যান থ্রিডি প্রিন্টার। ডিএলপি প্রযুক্তির থ্রিডি প্রিন্টার ২০১২ সালে উন্মোচন করা হয় বিশ্বে বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে তৈরি প্রোডাক্ট র‌্যাপিড প্রোটোটাইপিং প্রস্তুত করা হয়। আধুনিকায়নের ফলে পুরো প্রক্রিয়া দ্রæততর যেমন হচ্ছে তেমনি প্রোডাক্ট তৈরির যাবতীয় উপকরণ পাওয়া অনেক বেশি সহজলভ্য এই মুহূর্তে। একটি ছোট গাড়ি কিংবা মাইক্রোওয়েভ ওভেন’র মতন মাপের প্রিন্টিং মেশিন।   

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির ধরণ 

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এবং প্রিন্টার বিভিন্ন ধরণের আছে, সেই প্রযুক্তিগুলো অবজেক্ট বা বস্তু তৈরিতে সমস্ত  প্রক্রিয়ার কাজ করে। স্টেরিওলিথোগ্রাফি 
প্রথম বাণিজ্যিক থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রসেস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এসএল হচ্ছে লেজার ভিত্তিক পদ্ধতি, যেটা ফটোপলিমার রেজিন’র সাথে কাজ করে যেটা পূর্বনির্ধারিতভাবে লেজার ঠিক করে সুস্পষ্ট এবং সঠিক বস্তু তৈরি করে। যদিও এটা জটিল প্রক্রিয়া, একটি লেজার বিম এক্স-ওয়াই অক্ষে সরাসরি উপরিপৃষ্ঠে রশ্মি ফেলে ত্রিমাত্রিক ডাটা মেশিনে সরবরাহ করে, যেটা(.ংঃষ) ফাইল ফরম্যাটে থাকে। যখন একটি স্তর তৈরি হয়, তখন পরবর্তী আরেকটি স্তর লেজার ফেলে তৈরি করে। আর এই প্রক্রিয়া পুরো বস্তু  বা অবজেক্টটি তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। স্টেরিওলিথোগ্রাফি তুলনামূলকভাবে অনেক নিখুঁত ত্রিমাত্রিক বস্তু তৈরি করতে পারে।      

ডিএলপি 

ডিজিটাল লাইট প্রোসেসিং বা ডিএলপি স্টেরিওলিথোগ্রাফি মতন থ্রিডি প্রিন্টিং প্রসেস, যা ফটোপলিমারের সাথে কাজ করে। এর মূল পার্থক্য আলোক উৎস। ডিএলপি গতানুগতিক আলোক উৎস ব্যবহার করে, যেমনঃ আর্ক ল্যাম্প এবং লিকুইয়েড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে প্যানেল অথবা ডিফর্মেবল মিরর ডিভাইস(ডিএমডি)। এটি সমগ্র ফটোপলিমার রেসন’র ভেট এর উপরিপৃষ্ঠের ওপর প্রয়োগ করা হয়, যা একে এসএল বা স্টেরিওলিথোগ্রাফির চেয়ে দ্রæত করে। এসএল এর মতন ডিএলপি বেশ নিখুঁত বস্তু  উৎপাদন করে। ডিএলপি অগভীর রেসিন ভেট প্রয়োজন সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে, যা স্বল্প খরচ এবং অল্প বর্জ্য তৈরি করে।   

এফডিএম 

থ্রিডি প্রিন্টিং জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রক্রিয়া ফিউজ ডিপজিশন মডেলিং বা এফডিএম, যা ব্যবসায়িক নাম এবং ‘স্ট্রাটেসি’ কোম্পানি কর্তৃক রেজিস্টার্ড ও ডেভেলপ করা। এফডিএম প্রযুক্তি ৯০ দশকের শুরুর দিকের এবং এখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড থ্রিডি প্রিন্টিং প্রসেস। ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার ২০০৯ সালে আবির্ভূত হয় এবং বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার শুরু হয়। তাপ দিয়ে থ্রিডি ডাটা সরবরাহ করে প্রিন্টারে প্রোডাক্ট বা অবজেক্ট প্রিন্ট করা হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় কাঠামো সরবরাহ দরকার। পানি কাঠামো ধুঁয়ে একটি সঠিক গঠন প্রদান করে। 

সিলেক্টিভ ডিপজিশিন লেমিনেশন(এসডিএল)

এসডিএল একটি প্রোপাইটরি থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়া, যা এমকোর টেকনোলোজি ডেভেলপ এবং উৎপাদন করে। ৯০ এর দশকে লেমিনেটেড অবজেক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া হেলিস দ্বারা ডেভেলপ করা হয়, চূড়ান্তভাবে পেপার দিয়ে স্তর এবং ধরণের রুপ প্রদান করা। এসডিএল থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রক্রিয়া স্ট্যান্ডার্ড কপিয়ার পেপার ব্যবহার করে স্তর স্তরে অবজেক্টগুলো নির্মাণ করা। আঠার মাধ্যমে পূর্বের স্তরের সাথে পরবর্তী স্তর যুক্ত থাকে। একটি নতুন শিট পেপার ফিড ম্যাকানিজমের মাধ্যমে পূর্বের স্তরের সাথে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে আঠা দিয়ে যুক্ত হয়। তৈরি প্লেট হিট প্লেটে মাধ্যমে রুপান্তরিত হয় এবং প্রেসার প্রয়োগ করা হয়। একাধিক পেপারের মধ্যে পেপারের শিট বন্ধন তৈরি করে। এসডিএল সেই থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি যা ঈণগক রংয়ের সন্নিবেশ ব্যবহার করে রঙিন ত্রিমাত্রিক বস্তু  উৎপাদন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার কারণে উৎপাদন পরবর্তী কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়না কিন্তু সহজ নয় বিষয়টা, এটি নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব।

সিলেক্টিভ লেজার সিনটারিং (এসএলএস) থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়া যা পাওয়ার বেড ফিউশন নামে পরিচিত, থার্মোপ্ল্যাস্টিক পাউডারের বিন যা নাইলন৬, নাইলন১১ এবং নাইলন১২ নিয়ে গঠিত। .১ মিমি পুরত্বে প্যাটফর্মটি নির্মিত। একটি লেজার বিম উপরিপৃষ্ঠে স্ক্যানিং শুরুকরে, যেটা সিনটার পাউডার বাছাই করে এবং অবজেক্টকে ঘনীভূত করে। একটি করে স্তরে স্তরে অবজেক্টটি পূর্ণাজ্ঞভাবে উৎপাদন হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। 

ইভিএম 

ইলেকট্রন বিম মেল্টিং বা ‘ইভিএম’ থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি সুইডিশ কোম্পানি ‘আরক্যাম’র ডেভেলপ করা প্রক্রিয়া। এটি মেটাল বা লোহার প্রিন্টিং পদ্ধতি যা মেটাল পাউডার থেকে তৈরি বস্তুু এবং ডিরেক্ট মেটাল লেজার সিনটারিং(ডিএমএলএস) প্রক্রিয়ার মতন। মূল পার্থক্য হিট সোর্স, লেজার থেকেও ইলেকট্রন বিমের মাধ্যমে ভ্যাকুয়াম অবস্থায় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বিভিন্ন ঘনত্বের মেটাল বস্তুু ইভিএম পদ্ধতিতে করা যায়। অটোমোবাইল এবং এরোস্পেসের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি উৎপাদনের জন্যে ব্যবহৃত হয়।      
ম্যাটারিয়াল জেটিং 

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি, যা ফটোপলিমার রেসিন ব্যবহার করে কাজ করে। একটি একক স্তরের ওপর একাধিক স্তর মিলে একটি কঠিন অবজেক্ট বা বস্তুু তৈরি করে। এতে একবার স্তর আবদ্ধ হলে আরও স্তর তৈরি করে পুরুত্ব হয়ে ত্রিমাত্রিক অবজেক্ট তৈরি করে।    
ড্রপ অন ডিমান্ড 

ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তিটিতেও ম্যাটেরিয়াল জেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে ওয়াক্স ধরণের উপকরণ থাকে এবং আরেকটিতে ডিজলভ সাপোর্ট ম্যাটেরিয়াল বা উপকরণ থাকে। অন্য ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তির মতন পূর্বনির্ধারিত পথ জেটিং ম্যাটারিয়াল বা উপকরণ পয়েন্টভিত্তিক ডিপজিশন এবং স্তরের পর স্তর পরে অবজেক্ট তৈরি করে।   
সেন্ড বাইন্ডার জেটিং 

প্রক্রিয়াটি এসএলএস বা সিলেক্টিভ লেজার সিনটারিং প্রক্রিয়ার অনুরুপ, যেটার প্রারম্ভিক স্তরে পাউডার হিসেবে বালু কিংবা সিলিকা বস্তুুর প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্যে প্রয়োজন। এর মূল পার্থক্য, এতে লেজারের পরিবর্তে সিনটার পাউডার ব্যবহার করা হয়। পাউডার একসাথে মিলে একটি অবজেক্ট তৈরি করে। এই প্রযুক্তিতে অবজেক্ট বা বস্তুু তৈরি স্বল্পমূল্যের, বস্তুু উৎপাদনের পর বালু এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ বস্তুু থেকে মুছে ফেলতে হবে।   

থ্রিডি প্রিন্টিং কিভাবে কাজ করে 

বিভিন্ন ধরণের থ্রিডি প্রিন্টার বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে, যা বিভিন্ন উপাদানকে বিভিন্ন পন্থায় কাজে লাগাতে পারেন। থ্রিডি প্রিন্টারের জন্যে নাইলন, প্ল্যাস্টিক, সিরামিক এর মতন বিভিন্ন উপাদানকে ছাঁচ দিয়ে বিভিন্ন লেয়ার বা স্তরে ব্যবহার করে। জেটেং অব ফাইন ড্রপলেটস আরেকটি থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রক্রিয়া। থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের প্রক্রিয়ার প্রথমে থ্রিডি মডেলিং। আর থ্রিডি মডেলিং সফটওয়্যার এই প্রক্রিয়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে ঈঅউ সফটওয়্যার এই শিল্প উপাদান তৈরিতে বেশ প্রাধান্য পায়। 
প্রথম ধাপে থ্রিডি মডেল তৈরিতে ঈড়সঢ়ঁঃবৎ-ধরফবফ ফবংরমহ(ঈঅউ) সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এই সফটওয়ারের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক মডেল কাঠামো ডিজাইন তৈরি করা হয়। এরপরে ঈঅউ ড্রয়িং এসটিএল ফরম্যাটে পরিবর্তন করতে হবে, যেটা স্ট্যান্ডার্ড টেসেলেশন ল্যাংগুয়েজ বা ভাষাতে বর্ণিত থাকে। এই ফাইল ফরম্যাট থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক পদ্ধতির জন্যে ১৯৮৭ সালে এসএলএ মেশিন ব্যবহার করে উন্নয়ন বা ডেভেলপ করা হয়। বেশিরভাগ থ্রিডি প্রিন্টার এসটিএল ফাইল টাইপ প্রোপার্টিস ফাইল টাইপ ব্যবহার করে হয়, যেমনঃ যেপিআর এবং অবজেক্টডিএফ যেটা অবজেক্ট জিওম্যাট্রিক্স দিয়ে করা। 

এম মেশিন এবং এসটিএল ম্যানিপুলেশন একজন ব্যবহারকারী এসটিএল ফাইল কম্পিউটারে কপি করে, যা থ্রিডি প্রিন্টার নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবহারকারী দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা পরিমাপ করে বস্তুু প্রিন্ট করার জন্যে নির্ধারণ করে। এটা অনেকটা টুডি প্রিন্টের মতন যা ল্যান্ডস্ক্যাপ ওরিয়েন্টেশন পোর্টেয়টের মতন কাজ করে। 
মেশিন সেটআপে প্রত্যকে মেশিনের জন্যে কিছু নির্দিষ্ট দরকারি বিষয় থাকে নতুন করে কিভাবে প্রিন্ট করতে হবে। পলিমার, আরও অন্যান্য উপাদান প্রিন্টারে ব্যবহারের জন্যে দরকার। মেশিন সেটআপের পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। প্রতিটি লেয়ার বা স্তরের জন্যে ০.১ এমএম পুরুত্ব¡ হয়। অবজেক্ট সাইজের ওপর, মেশিন এবং উপাদানের ওপর নির্ভর করে। খেয়াল রাখতে হবে মেশিনটি ঠিক মতন কাজ করছে কিনা। 

থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের আরেকটি প্রযুক্তি হলো স্টেরিওলিথোগ্রাফি, যেখানে টঠ লেজার আল্ট্রাভায়োলেট সেনসিটিভ ফটোপলিমারে আলো ফেলে অবজেক্ট বা বস্তুুটি তৈরি করতে ব্যবহার হয়। পরবর্তীতে স্তরে স্তরে প্রোডাক্টটি তৈরি করতে ঈঅউ অথবা ঈঅগ ফাইল নির্দেশনাতে প্রোডাক্টটি প্রিন্ট করে।    
অনেক থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে বস্তুু প্রিন্টিং পরবর্তীতে অনেক বিষয় খেয়াল করতে হবে। পাউডারে এবং পানি দিয়ে প্রিন্টিং বস্তুু পরিচর্যা করতে হবে এবং ব্যবহারের জন্যে প্রস্তুত করতে হবে।  জার্মান রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যাটিস্টা’র রিপোর্ট অনুযায়ী থ্রিডি প্রিন্টিং প্রোডাক্ট এবং পরিষেবার মার্কেট ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৪০ বিলিয়ন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাৎসরিক ২৬.৪ ভাগ বৃদ্ধি পাবে থ্রিডি প্রিন্টিং বাজার।     

থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে কি সফটওয়্যার লাগবে প্রায় সকল থ্রিডি প্রিন্টার এসটিএল ফরম্যাট অর্থাৎ, স্টেরিওলিথোগ্রাফি ফাইল গ্রহণ করে। এ ধরণের ফাইলগুলোর বেশিরভাগ অটোক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি হয়। গুগল স্ক্যাচ এবং ব্লেন্ডার এর মতন ফ্রি সফত্যার ব্যবহার করেও থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক মডেল প্রিন্টিংয়ের জন্যে তৈরি করা যায়। থ্রিডি প্রিন্টার সফটওয়্যার দিয়ে যুক্ত থাকে সিস্টেমে, এতে সিস্টেমটি সাধারণভাবে প্রিন্টার মেশিনটি নিয়ন্ত্রণ এবং প্রিন্ট করার পূর্বে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।   

থ্রিডি প্রিন্টিং খরচ কেমন 

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রোডাক্ট তৈরিতে ৩ ডলার থেকে সর্বোচ্চ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি মডেলের ডিজাইন ব্যতিত সুনির্দিষ্ট করে মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব না। মডেল তৈরিতে কাঁচামাল, শ্রমিক খরচ এবং বিদ্যুতের মতন আনুষঙ্গিক অনেক খরচ হয়, এজন্যে প্রোডাক্ট তৈরি মূল্য ভিন্ন থাকে। 

থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের সুবিধা 

গতানুগতিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ভালো ডিজাইনের প্রোডাক্ট বা বস্তুু পাওয়া সম্ভব না। এতে ভালো করে কাঁচামাল একসাথে মিক্স হয়না। কিন্তু থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে ভালো উপাদান তৈরি হয়, এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ বা উপাদান থাকেনা। গতানুগতিক ধারার প্রোডাক্ট উৎপাদনের সেটআপ খরচ অনেক বেশি, সেই তুলনায় থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং বেশ সহজলভ্য এবং স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। তাছাড়া মেশিন নিয়ন্ত্রণ, এই ব্যবস্থাপনাতে প্রোডাক্ট তৈরি দ্রæত ও লাভজনক। থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবস্থাতে স্বল্প বর্জ্য তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সেটার উপাদান আবার পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন। ঈড়সঢ়ঁঃবৎ-ধরফবফ ফবংরমহ(ঈঅউ) ফাইল নতুন ভার্সন করে প্রিন্ট করা যায়। কাস্টমারদের কাছে নতুন প্রোডাক্ট তৈরি এবং ইনভেস্টরদের কাছে তাদের নতুন প্রোডাক্ট উপস্থাপনে এই প্রযুক্তি বেশ দরকার। 

থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের অসুবিধা

থ্রিডি প্রিন্টিং কিছু নির্দিষ্ট প্ল্যাস্টিক এবং উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, তাই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ব্যবহার নিশ্চিত করে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রিসাইকেল বা পুনরায় ব্যবহার করা যায়না উপকরণগুলো এবং খাদ্য নেয়ায় তা নিরাপদ নয়। ক্ষুদ্র প্রিন্ট চেম্বার থাকায় নির্দিষ্ট পরিমাপে প্রিন্ট করা যায়। অন্যকিছু বড় পরিমাপের প্রিন্ট করতে হলে আরেকটি চেম্বারে প্রিন্ট করে একসাথে যুক্ত করতে হবে। যা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং অধিক খরচ পরে, এছাড়া শ্রমিকদের বেশি শ্রম দিতে হয়। বৃহৎ জিনিসের জন্যে পোস্ট প্রোসেসিংয়ের প্রয়োজন। থ্রিডি প্রিন্টেড জিনিসের গায়ে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ লেগে থাকলে সাপোর্ট উপাদান ব্যবহার করে উপরিপৃষ্ঠ মসৃণ এবং সুন্দর করতে হয়। পরিমাণ এবং বস্তুুর পরিধির ওপর নির্ভর করে বস্তুু তৈরি করা। কপিরাইট ইস্যুর তোয়াক্কা না করে অনেক নকল বস্তুু থ্রিডি প্রিন্টেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা যায়, এতে প্রকৃত কোম্পানির প্রোডাক্ট অনেকে কিনতে পারবেনা। এছাড়া প্রোডাক্ট উৎপাদন প্রক্রিয়াতে থ্রিডি প্রযুক্তির কারণে অনেক মানুষের কাজ চলে যাবে। অনেক প্রিন্ট মেশিন সঠিকভাবে কাজ করেনা, এজন্যে ত্রিমাত্রিক ডিজাইনে নিখুঁত প্রোডাক্ট তৈরি করা যায়না।           

ভবিষ্যতের থ্রিডি প্রিন্টিং কেমন হবে 

প্রত্যেকদিন কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট তৈরি করছে। অটোমোবাইল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট সকল ক্ষেত্রে নতুন ত্রিমাত্রিক বস্তুু নিয়ে বর্তমান এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক বস্তুু আসছে। ৫১ ভাগ প্রতিষ্ঠান থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রোডাক্ট উৎপাদন করবে। ২০১৮ সালে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিএমডাব্লিউ’ তাদের ‘আইএইট রোডস্টার’ এক মিলিয়নের বেশি ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি প্রিন্টেড বস্তুু বা অবজেক্ট তৈরি করে। পিটিসি সিআরইও ৬.০ সফটওয়ারের মাধ্যমে ডিজাইন এবং প্রিন্ট প্রস্তুত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এমআইটি’র রিপোর্ট অনুযায়ী, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির কল্যাণে ৯০ ভাগ যন্ত্রাংশ খরচ হ্রাস পায়। কোভিড১৯ জনিত কারণে চিকিৎসাক্ষেত্রে পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুয়েপমেন্ট(পিপিই) এবং মেডিকেল যন্ত্র তৈরি কঠিন হয়ে পরে, তখন থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যা দ্রুত এবং সাশ্রয়ীমূল্যে সমাধান করা হয়। সাম্প্রতিককালে আমেরিকার ‘নাসা’ তাদের মহাকাশ অভিযাত্রীদের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টেড পিজা পরিবেশন করেছে।  
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস