• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কেমন হলো এবারের আইসিটি বাজেট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বাজেট
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কেমন হলো এবারের আইসিটি বাজেট
কেমন হলো এবারের আইসিটি বাজেট

আইটি খাতে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে: অর্থমন্ত্রী
বাজেটে আইটি খাতের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন নেই: বেসিস
অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর নেই:খাতসংশ্লিষ্টরা
বিপিও শিল্পোন্নয়নে সহায়ক বাজেট চাই: বাক্কো
বাজেট ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশনের জন্য ইতিবাচক


গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আসন্ন (২০২১-২০২২) অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী তার এই বাজেট বক্তৃতায় জানানÑ ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি তথা আইটি খাতে এরই মধ্যে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।২০২১ সালের মধ্যে আরো ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আরো জানানÑ দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি তরুণ। এই হার উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি নয়। এ ছাড়া প্রতিবআমাদেও দেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ দেশের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের অভ‚তপূর্ব দুয়ার উন্মোচন করছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘ভিশন-২০৪১’ এবং ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানে পারদর্শী মানুষের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকারের নীতি ও ফলদায়ী কর্মপরিকল্পনার ফলে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই এরূপ আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের সুবিধা ভোগ করছে। সরকার দেশে বিষয়ভিত্তিক কর্মসংস্থানের নীতি গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান। এর আওতায় কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়বস্তু সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার সাথে শিল্পের যোগসূত্র স্থাপন করা হচ্ছে।

কোথায় কী পরিমাণবরাদ্দ

প্রস্তাবিত বাজেট সূত্রে জানা গেছেÑ সরাসরি তথ্য ও যোগাযেগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পের মধ্যেসারা দেশে শেখ রাসেল ডিজিটল ল্যাব প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে বরাদ্দ রাখা হয়েছ প্রায় ১৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কনট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি তথা ডিজিটল সার্টিফিকেট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অধীনে বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। এর বাইরে সচিবালয়েরঅন্তর্ভুক্ত মোট বাজেটের পরিমাণ প্রায় ১১৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আইসিটি বিভাগের মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৩৬২ কোটি টাকা, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ৬৬৭ কোটি টাকার প্রায় দ্বিগুণ।

জেলা সদরগুলোতে আইটি পার্ক প্রকল্প সবচেয়ে বেশি ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, যা এ বিভাগের বরাদ্দের প্রায় ১২.৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প এবং বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগ। এই দুই প্রকল্পের বরাদ্দ যথাক্রমে আইসিটি বিভাগের মোট বরাদ্দের ১১ শতাংশ ও ৭.২ শতাংশ।

হাইটেক সিটি/পার্ক প্রকল্প: জেলাসদরে আইটি বা হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্প এই বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে। বিগতপ্রায় অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাত্র আড়াই কোটি টকিা বরাদ্দ থাকলেও এবারের বাজেটে বারোটি জেলা শহরে আইটি হাইটেক পার্ক নির্মাণে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। একইভাবে বাজেটে হাইটেক পার্ক-সম্পর্কিত আরো কয়েকটি প্রকল্প, যেমন: বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৯৯ কোটি টাকা, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকা, সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের অবকাঠামো নির্মাণে ৪২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সাথে ডিজিটাল সিলেট সিটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

শিক্ষা/প্রশিক্ষণ প্রকল্প: সারা দেশে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে বরাদ্দ রাখো হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি১৫ লাখ টাকা।আটটি জায়গায় শেখ কামালআইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ দ্বিতীয়বার সংশোধন করে ৭০ কোটি টাকা করা হয়েছে। আরো নতুন ১১টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সাথে দেশের ৩২টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে আরা ৩ কোটি টাকা।

রেকটি বড় প্রকল্প ‘ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার’ (বিডিসিট) প্রতিষ্ঠার জন্য এ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ছয়টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক ও আইটি ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে বিশেষায়িত ল্যাবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হবে। সেই সাথে নির্বাচিত সদস্যদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানো হবে।

আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ-সম্পর্কিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। আরেকটি জনপ্রিয় প্রকল্প ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’-এর জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা ৭৭ কোটি টাকা। গত বছরের বাজেটে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকা। মোবাইল গেম ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর প্রকল্পে জন্য নতুন বাজেটে বরাাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। গত বছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২৮ কোটি টকা। জাপানি আইটি খাতের উপযোগী প্রকৌশলী গড়ে তুলতে এবারের বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা।

অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প: তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণে ইনফো-সরকারের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৯১ কোটি টাকা। ‘এটুআই’-এর জন্য বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণ, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি-দক্ষতা উন্নয়নে জন্য বরাদ্দ গত বছরের ১৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এবারের বাজেটে কমিয়েআনা হয়েছে ৬ কোটি টাকায়। এ ছাড়া ই-গভর্নমেন্টের আইআরপি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ কোটি টাকা।

বিজনেস ও ইনোভেশন সংক্রান্ত প্রকল্প:‘এসপায়ার টু ইনোভেশন’ (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে এবারের বাজেট বরাদ্দের আগের বছরের প্রায় ২৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম প্রকৌশলবিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরস অ্যাকাডেমির জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। ইনোভেশন ও ইনোভেটরস অ্যাকাডেমির জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর আগের বছরের সংশোধিত বাজেটেও এতে সমপরিমাণ বাজেট বরাদ্দ ছিল। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ১ হাজার উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এর বাইরে ডিজিটাল ইনোভেটর ও ইনোভেশন ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য বরাদ্দ প্রায় ১০ কোটি টাকা।

ডিজিটাল নিরাপত্তাবিষয়ক প্রকল্প: সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপনের জন্য এবারের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। বিগতপ্রায় অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ডিজিটাল স্বাক্ষর মনিটর ও নিরাপদ রাখার জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিসিএ)-এর মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের ই-গভর্নমেন্টের কমপিউটার ইনসিডেন্স রেসপন্স টিমের জন্য বরাদ্দ ১৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এই টিম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে অন্যদের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

গবেষণা ও উন্নয়ন খাত: তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাভাষা সমৃদ্ধকরণবিষয়ক গবেষণা প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এর আগের তুলনায় এ ক্ষেত্রে এবারের বাজেট বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ। নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রায় ৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বরাদ্দের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
অন্যান্য বরাদ্দ: আইসিটি বিভাগের বাজেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সচিবালয়ের অন্তর্ভুক্ত অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায়১০৫ কোটি টাকা, যদিও সংশোধিত বাজেটে পুরো টাকাই বিভিন্ন প্রকল্পের সমন্বয় করা হয়েছে।

বাজেট ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশনে সহায়ক
শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১-২০২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেটডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। এ বাজেট বড় ধরনের ডিজিটাল ট্র্যান্সফরমেশনের সুযোগ সৃষ্টি করবে।কারণ তাদের মতে, সরকার পরিকল্পনা করছে আইটি খাত ও একই সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও অ্যাক্সেসরিজে কর অব্যাহতি দেয়ার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় প্রস্তাব করেছেন: ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফরম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিংখাতে কর অব্যাহিত চলবে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত আইটি হার্ডওয়্যার কিছু শর্তসাপেক্ষে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুযোগ পাবে। এই পণ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রিন্টার, টোনার কার্ট্রিজ, ইঙ্কজেট কার্ট্রিজ, কমপিউটার, ল্যাপটপ, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নোটপ্যাড, ট্যাব, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড বা কিউআর স্ক্যানার, র‌্যাম, পিসিবিএ বা মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, নেটওয়ার্ক ডিভাইস/হাব, স্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, হেড ফোন, এসএসডি বা পোর্টেবল এসএসডি, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ, পেন ড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্ল্যাশ মেমরি কার্ড, সিসিটিভি, মনিটর (২২ইঞ্চির বেশি নয়), প্রজেক্টর, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, ই-রাইটিংপ্যাড, ইউএসবি ক্যাবল, ডাটা ক্যাবল, ডিজিটাল ঘড়ি ও লোডেড পিসিবি কর অব্যাহতি পাবে। অর্থমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, আগামী বছরগুলোতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধাও আরো বাড়িয়ে তোলা হবে।
বেসিস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর এই প্রস্তাবকে একটি ভালো পদক্ষেপ উল্লেখ করে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এসব কর অব্যাহতি এই খাতের আরো বিকশিত হওয়ায় সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে।

বাজেটে আইটি খাতেরঅগ্রাধিকারেরপ্রতিফলন নেই: বেসিস
‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’(বেসিস)-এর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর তার এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছেনÑ আইটি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কোনো প্রতিফলন ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ করা যায়নি। বিভিন্ন শিল্প ও বিভাগের অবকাঠামো উন্নয়ন বাজেটের তুলনায় সে রকম কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই তথ্যপ্রযুক্তি সেবাখাতে। তা ছাড়া এই খাতের উন্নয়নে খাতসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হয়েছিল তারও কোনো প্রতিফলন নেই এ বাজেটে। বেসিসের বাজেট প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তিনি এই অভিমত প্রকাশ কেেরন।

এ সময় তিনি বলেন, এই সময়ে দেশে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি এয়ারপোর্ট টার্মিনালের মতো অনেক বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু এসব মেগা-প্রকল্পে স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহারকল্পে ব্যয় বরাদ্দের কোনো হদিস মেলেনি। এসব প্রকল্পে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যদি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা না হয় এবং স্থানীয় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব প্রকল্পে সফটওয়্যার বা আইটি সার্ভিস দেয়ার সুযোগ দেয়া না হয়, তবে দেশীয় সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি সেবাশিল্পের সম্প্রসারণ ঘটবে না। এই বাজেট প্রণয়নের আগে থেকে বেসিস দাবি জানিয়ে আসছিল, আইসিটি খাতের জন্য ব্যবসায় ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেটের ব্যাপারে। এই বাজেট চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিষয়টি বিবেচনার অনুুরোধ জানান তিনি।

বেসিস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবীর আরো দাবি জানান, ই-কমার্স ও অনলাইন বিজনেসকে উৎসে কর অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাটের বাইরে রাখতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই খাতকে করবহিভর্‚ত রাখাঅব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
অপরদিকে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর তার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অন্যত্র এও বলেছেন, সংশোধিত বাজেটে বেশ কয়েকটি বিষয় খুবই দারুণ। এ জন্য সরকার নিশ্চয় প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। তার মতেÑ ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফরম, ই-বুক পাবলিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিংকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া প্রশংসনীয়।কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতেও কর মওকুফ করা হয়েছে। এটি খুবই ভালো দিক।
তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিÑ ইন্টারনেট সেবাকে আইটিইএসের আওতাভুক্ত করা হোক, যা এবারের বাজেটেও করা হয়নি। উপরন্তু, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের করের আওতায় আনা হয়েছে। আবার আমরা ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করার কথাও বলছি। কিন্তু মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ওপর করপোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের কিছু বিষয় আছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের ¯্রােতের বিপরীতে যায়। আমরা চাই সংশোধিত বাজেটে এসব বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটুক।
তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বাজেটে নেই। বিশেষ করে ২৫টি প্রশিক্ষণকে আয়কর অব্যাহতির আওতায় আনা হলেও আইটি প্রশিক্ষণকে এ তালিকায় রাখা হয়নি। সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এবং আইসিটি খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবগুলো সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার একটি ব্যবসায় ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট উপহার দেবে।

বাজেটে ই-কমার্স খাত
এবারের বাজেটে অনেকগুলো ইতিবাচক দিক রয়েছে। তবে অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। এমনটিই মনে করছেন এই খাতসংশ্লিষ্টরা। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে তাদের জন্য কোনো সুখবর খুঁজে পাননি তারা। তাদের মতে, শুধু ই-বুক ও ডিজিটাল এডুকেশনকে ভ্যাটমুক্ত করা ছাড়া ই-কমার্স ব্যবসায়ের অনুক‚লে কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে উৎসে করের আওতায় আনার প্রস্তাব রয়েছে এই বাজেটে। ই-কমার্সের মতো একটি ব্যবসায়িক খাতকে এখনো সরকারি সহায়তা দেয়া ও শক্তিশালী অবস্থা তৈরি হওয়ার আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন না অনলাইন উদ্যোক্তারা।
২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার ২০ শতাংশও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ব্যবসায় হিসেবে ই-কমার্স এখনো সরকারের স্বীকৃতি পায়নি। ট্রেড লাইসেন্স তালিকায় ই-কমার্স বলতে কিছু নেই। এরপরও বর্তমান সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ খাতের ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। করোনা মহামারীর প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে এ খাত প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করেছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ, রমজান মাসে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, লকডাউনে সারা দেশে সাপ্লাইচেইন সচল রাখাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-কমার্স। ডিজিটাল কোরবানি হাট ও মানুষের বাসায় নিত্যপণ্য পৌঁছে দিয়ে করোনা সংক্রমণের হার কমিয়ে রাখতে এ খাতের কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে আসছে। করোনা মহামারী চলার সময়ে শুধু ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৩০ কোটি ডলারেরও বেশি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে উৎসে করের আওতায় নিয়ে আসার বাজেটীয় প্রস্তাব সময়োপযোগী নয়। কারণ, এই খাত এখনো পুরোপুরি বিকশিত হয়ে উঠতে পারেনি। এ খাতকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। উল্লিখিত উৎসে কর সম্পর্কিত প্রস্তাব বাংলাদেশে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের পথে জটিলতা সৃষ্টি করবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ইতিবাচক হলেও ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের কোনো সুখবর নেই।ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ই-কমার্স কোম্পানির অফিস ও গুদাম ভাড়ার ওপর ভ্যাট মওকুফ চাওয়া হয়েছে। ন্যূনতম করসীমার ব্যাপারেও বাজেটে ই-ক্যাবের প্রস্তাবেরপ্রতিফলন ঘটেনি। তা ছাড়া এখনো ই-কমার্স খাতের কোনো কোম্পানি লাভের মুখ দেখেনি। ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে উৎসে কর কর্তনের আওতায় আনলে এ খাতের প্রবৃদ্ধি বাধার মুখে পড়বে। এ খাত এখনো বিকাশমান। নানা প্রতিক‚লতা মোকাবেলা করে এই খাত সবেমাত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে। এখনই কোনো নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা এ খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ট্রেড লাইসেন্স স্বীকৃতি ও ডিজিটাল কমার্স নির্দেশনা বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া সুখকর হবে না। এ খাতকে আরো স্বয়ংসম্পূর্ণ করায় সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার, যাতে এ খাত আরো কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরো বড় পরিসরে অবদান রাখতে পারে।
খাতসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেনÑ ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে উৎসে করের আওতায় আনা হলে এবং ই-ক্যাবের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না করা হলে এ খাতের উদ্যোক্তারা অনিয়মিত হয়ে পড়তে পারে। তারা নিয়মতান্ত্রিক ট্রেড লাইসেন্স ও ওয়েবসাইট খুলে ব্যবসায় করার পরিবর্তে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ফেসবুকভিত্তিক বা দোকানভিত্তিক ব্যবসায়ের প্রতি ঝুঁকে পড়বে। আর তা শুধু ই-কমার্স বিকাশের পথে বাধা হয়েই দাঁড়াবে না, বরং তা ডিজিটাল অর্থনীতি বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করবে। যেখানে এই খাতকে এখনো স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি, সেখানে এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় কিংবা উৎসে কর আদায়ের প্রস্তাব সহজবোধ্য কারণেই অযৌক্তিক। কারণ, যেখানে এ দেশে ই-কমার্স নামে কোনো ব্যবসায় আছে বলে আইন স্বীকার করেনা, সেখানে এ খাতের ওপর আইন প্রয়োগের যৌক্তিকতা থাকে না।

ই-ক্যাব দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছেÑ সরকারের ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্সকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সে দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্সের গায়ে ‘ই-কমার্স’ লেখা নেই।
সরকারের উচিত করোনাসময়ে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি সচল রেখে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এই খাতকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এর স্বাভাবিক সম্প্রসারণ নিশ্চিত করা। ফেসবুক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দ্বিতীয় দফায় ভ্যাট আদায়ের পথ তৈরি করার মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া সরকার তাদের জন্য এমন কোনো সুবিধা সৃষ্টি করেনি, যাতে তাদেরব্যবসায়ের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে পারে।
ভুললে চলবে না, করোনার সময়ে এ খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা একদিকে যেমন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্যপণ্য সরবরাহ-সেবা সচল রেখেছেন, অপরদিকে তেমনি দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে রেখেছেন গতিশীল। বিশ্বের তিনটি দেশে করোনা চলার সময়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ ক্ষেত্রে ই-কমার্সের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। তাই সরকারের উচিত ই-কমার্স খাতের এই অবদানের কথাটি বিবেচনায় নিয়ে এ খাতের প্রসারে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করা। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে উপেক্ষিত খাত হচ্ছে এটি। তরুণদের নিজস্ব উদ্যোগের কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই খাতটি যাতে পিছিয়ে না পড়ে বাজেটীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হবে, সে প্রত্যাশাই করছেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, করোনায় দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি সচল রাখতে কাজ করেছে ই-কমার্স খাতের অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তারা। সেই ই-কমার্স খাতই বাজেটে অবহেলিত। একদিকে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে উৎসে কর কর্তনের পর কর্তৃপক্ষ চালাকি করে উদ্যোক্তাদের ওপর করের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। অথচ ট্রেড লাইসেন্সে এ খাতকে ব্যবসায় হিসেবে এখনো স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ই-কমার্স প্ল্যাটফরমে উৎসে কর কেটে রাখলে কিছু জটিলতা দেখা দেবে। দেখা গেল, একটি পণ্য বা সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার পর সরবরাহকারীর কাছ থেকে কর কেটে চালান ইস্যু করা হলো। কিন্তু কোনো কারণে গ্রাহক সে পণ্য ফেরত দিলে তখন রিফান্ড করতে হতে পারে। তখন কিন্তু কেটে রাখা কর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংশোধিত বাজেটে এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহŸান জানান ই-ক্যাব পরিচালক আসিফ আহনাফ।

আইসিটি পেশাজীবীরা চান সংশোধিত বাজেট
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সুপারিশের প্রেক্ষাপটে আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কাক্সিক্ষত সংশোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন আইসিটি পেশাজীবীরা। তারা চান সরকার গুরুত্বের সাথে তাদের দাবি-দাওয়া ও সুপারিশ সংশোধিত এ বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে। দেশের আইটি ও আইসিটি খাতের জন্য ব্যবসায় ও বিনিয়েগবান্ধব বাজেটের দাবি জানিয়ে আসছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তাকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এবং বেসরকারি আইটি শিল্পেও সম্প্রসারণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে আছে বেসিস।

বিপিও শিল্পোন্নয়নে সহায়ক বাজেট চায় বাক্কো
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাজেট সহায়তা দাবি করেছে। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, আইসিটি খাতের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হচ্ছে বিপিও শিল্প। এ শিল্পখাতের পরিসর আরো বাড়িয়ে তুলতে এবং করোনার কারণে হওয়া ক্ষতি সামাল দিতে সরকারি প্রণোদনা অপরিহার্য।

বাক্কো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, এ খাতের উন্নয়নে আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। একই সাথে আইটিনির্ভর এ সেবার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব ছিল বাক্কোর পক্ষ থেকে। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। বিপিও খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাকে এ কর থেকে অব্যাহতি দেয়া না হলে চাহিদামতো গ্রাহকসেবার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এতে গ্রাহকেরা বিপিও সেবার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। এ ছাড়া বিপিও সেবার ‘উন্নয়ন ও গবেষণা’ এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য ৩০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার দাবিও জানিয়েছে বাক্কো।

বাক্কো সাধারণ সম্পাদক আরো জানান, বর্তমানে দেশে-বিদেশে ৬০ কোটি ডলারের বিপিও বাজার রয়েছে। এ খাতে কর্মীসংখ্য্যা ৬০ হাজার। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতে ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এর বাজারের আয়তন ১০০ কোটি ডলারের অঙ্ক ছাড়াতে পারে। সে দিকটি বিবেচনায় রেখে এ খাতকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।

মানা হয়নি অ্যামটবের কোনো সুপারিশ
দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব অভিযোগ করেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের সংগঠনের কোনো প্রস্তাব ও সুপারিশ মানা হয়নি। মোবাইল অপারেটরদের ওপর আরোপিতউচ্চহারের করেও কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। সম্প্রতি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যামটবের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল অপারেটরদেরপ্রতিনিধিরা বলেনÑ প্রতিবছর তারা বাজেট প্রণয়নের আগে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোনো বছরেই এসব প্রস্তাব একেবারেই আমলে নেয়া হয় না। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এরই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তারা জানানÑ এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ মুঠোফোন সেবার বাইরে। মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বাকিদের সেবার আওতায় আনতে পারলে অর্থনীতি আরো গতিশীল হতো।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ জানান, তাদেরপ্রস্তাব ছিল এবারের বাজেটে অলাভজনক অপারেটরদের ওপর থেকে ন্যূনতম লেনদেন কর বা টার্নওভার ট্যাক্স তুলে দেয়াসহ করপোরেট কর সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা, মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে কিছু কেনার ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ প্রত্যাহার, সিমের ওপর ২০০ টাকার সিম কর তুলে নেয়া, কথা বলা ও ইন্টারনেট কর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার। কিন্তু এর কোনো প্রতিফলন নেই এই বাজেটে।

গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, করোনাকালে টেলিযোগাযোগ জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু উচ্চহারে করারোপ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, সরকার নিজেই যেনো একটি গবেষণা পরিচালনা করে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে টেলিযোগাযোগের প্রভাব মূল্যায়ন করে। এবং সে অনুয়ায়ী নীতি নির্ধারণ করে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, অপারেটরদের যুক্তিসঙ্গত কয়েকটি দাবি ও প্রস্তাব বাজেটে বিবেচিত না হওয়ায় তারা আশাহত হয়েছেন।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা