গেমের জগতে যে কতো রকম গেমের ছড়াছড়ি তা বলা মুশকিল৷ অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, স্ট্র্যাটেজি, পাজল, শূটিং, ফাইটিং, সিম্যুলেশন, হরর, রোল প্লেয়িং, রেসিং, হান্টিং, স্পোর্টস আরো কতো রকমের গেম যে রয়েছে, সবগুলোর খবর রাখে এমন সাধ্যি কার? একেকজনের আবার একেক রকম পছন্দ, কেউ চায় ফাস্ট পারসন শূটিং তো কেউ থার্ড পারসন, আবার কারো পছন্দ অ্যাডভেঞ্চার তো কারো পাজল৷ আবার কেউ চায় এক গেমেই সবগুলোর স্বাদ৷ তাদের কথা মাথায় রেখেই যে গেমটি বানানো হয়েছে, আজকে সে গেমটি নিয়ে আলোচনা করা হবে৷
শূটিং ভক্ত গেমাররা কত রকমের শূটিং গেমই তো খেলেছেন৷ মোকাবিলা করেছেন কতো রকমের শত্র“র, মানুষ, বাঘ, ভালুক, সিংহ, কুমির এমনকি ভিনগ্রহবাসীরাও বাদ যায়নি৷ কিন্ত জুরাসিক যুগের সেই মাটি কাঁপানো বিশাল দানবাকৃতির ভয়ানক ডাইনোসর শিকারে গিয়েছেন কখনো? গা ছম ছম করা আলো আধারির রহস্যময় গহীন অরণ্যে শক্তিশালী অস্ত্রযোগে যদি দেয়া হয় এই রকম এক সুযোগ! তবে পারবেন কি নিজের জীবন বাজি রেখে সেই বিপদসঙ্কুল পথে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে?
টুরক নামের গেমটির কথা হয়তো শুনে থাকবেন৷ গেমটি তৈরি করেছিলো একক্লেইম তাদের কমিকস-এর কাহিনী অবলম্বনে৷ এই সিরিজের প্রথম গেমটির নাম ছিলো টুরক : ডাইনোসর হান্টার৷ এটি প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে৷ গেমটিতে নায়কের চরিত্রে ছিলো নেটিভ আমেরিকান ট্যাল সেট, যে কিনা টুরক নামেই বেশি পরিচিত৷ তার মূল লক্ষ্য ছিলো দুষ্ট সাইবোর্গদের দমন করা এবং সেই সাথে আরো কিছু ভয়ানক পশু ও ডাইনোসরদের সাথে লড়াই করা৷ গেমটির পরবর্তী সিক্যুয়ালগুলো হলো- টুরক ২ : সীডস অফ ইভিল, টুরক ৩ : শ্যাডো অফ অবলিভিয়ন এবং টুরক : ইভোল্যুশন৷ টুরকের উপরে ৭০ মিনিটের টুরক : সন অফ স্টোন না একটি এনিমেটেড মুভিও মুক্তি পেয়েছে৷ নতুন যে পর্বটি সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার নাম দেয়া হয়েছে শুধু টুরক৷ গেমটি গত এপ্রিলের শেষের দিকে পিসির জন্য মুক্তি দিয়েছে ক্যাপকম ও গেমটি ডেভেলপ কছে এস্পায়ার মিডিয়া৷
মূল টুরক গেমের নায়ক ট্যাল সেটের উত্তরাধিকারী জোসেফ টুরক এই গেমের মূল চরিত্র৷ গেমটির পটভূমি হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতের অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্যময় এক গ্রহ৷ জোসেফ টুরক ছিলো একজন যাক ওপস কমান্ডো কিন্ত পরে সে উইসকি কোম্পানির এলিট স্পেসাল ফোর্সেস স্কোয়াডে যোগদান করে৷ এই স্পেসাল ফোর্সের কাজ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা৷ উইসকি কোম্পানি কেইন নামের এক সন্ত্রাসীর খোঁ জে জেনেটিক্যালি বদলে যাওয়া এক গ্রহে এসে পৌঁছায় এবং সেখানে তাদের ওয়ারশিপ আটকে যায়৷ এই গ্রহেই জোসেফ টুরককে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হবে তার বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে৷ কিন্ত একি? জোসেফ যার বিরুদ্ধে এই গ্রহে যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছে সে যে তারই পুরনো প্রশিক্ষক জেনারেল রোনাল্ড কেইন৷ সে এই রহস্যময় গ্রহে মেন্ডেল গ্লাম্যান নারে এক দক্ষ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এক সেনাবাহিনী গড়ে তার আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টায় যখন বিভোর, ঠিক তখনই জোসেফ টুরক নিয়ে তার কার্যক্রমে গেমারকে বাদ সাধতে হবে৷ জোসেফের সাথে থাকবে উইসকি কোম্পানির দক্ষ সৈনিকেরা৷ শেষ পর্যন্ত জোসেফ সঙ্গী হিসেবে তার সাহায্যের জন্য সবসময় কাছে পাবে সুডে ও রেসে নামের দুই বন্ধুকে৷ বাকি সবাই একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে লড়াই করতে করতে৷ কেইনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি গেমারকে মোকাবেলা করতে হবে ভয়ংকর অপ্রতিরোধ্য টাইরানোসোরাস, ডেলোসিরাপ্টর, ডাইলোফোসোরাস, জাইগান্টোসোরাস, এপাটোসোরাস ইত্যাদি ডাইনোসর এবং বিরাটাকার মাকড়সা, গিরগিটি ও এরকম আরো নানান ভয়ানক শত্র“র সাথে৷ গেমের শেষ পর্যায়ে টুরক মুখোমুখি হবে কেইনের বিরুদ্ধে তার সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য৷ তারপর...?
গেমটির মজার দিক হচ্ছে ডাইনোসরদের ভয় দেখিয়ে শত্র“পক্ষের উপর লেলিয়ে দিতে পারবেন৷ যখন ডাইনোসর আপনার খুব কাছে এসে যাবে তখন গেম ফার্স্ট পারসন মোড থেকে থার্ড পারসন মোডে চলে যাবে এবং তখন শুধু ছুরির ভরসায় ডাইনোসর মারা যাবে যা গেমটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি বিষয়৷ এছাড়া নিঃশব্দে সতর্কতার সাথে শত্র“কে বধ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে ছুরি ও ধনুক৷ আর বড় বড় ডাইনোসরদের মারার জন্য ব্যবহার করতে হবে ভারি অস্ত্র, কারণ যেমন কুকুর তেমন মুগুর৷ গেমে অন্যান্য অস্ত্রের তালিকায় আছে পিস্—ল, সাব মেশিনগান, শটগান, স্টিকি বোম্বগান, পালস রাইফেল ইত্যাদি৷ মাল্টিপ্লেয়ার মোডে ৪ জনের দল নিয়ে আরো ৪টি দলের সাথে ডেথম্যাচ, ক্যাপচার দ্য ফ্ল্যাগ, ওয়ারগেমস ইত্যাদি খেলা যাবে৷
গেমটি তৈরি করা হয়েছে আনরিয়েল-৩ গেম ইঞ্জিনের ওপর ভিত্তি করে৷ তাই এর গ্রাফিক্স কোয়ালিটি বেশ উঁচুমানের এবং ভয়ানক গা ছমছম করা আলো-আধারি পরিবেশের জন্য দেয়া হয়েছে মানানসই সাউন্ড ইফেক্ট যা এককথায় চমত্কার৷ কনসোলভিত্তিক গেম হিসেবে এর জনপ্রিয়তা যত বেশি পিসি গেম হিসেবে এই সিরিজের গেমগুলো ততটা কদর লাভ করেনি৷ তাই নতুন গেমটি পিসিতে যাতে উপভোগ্য হয় সেই বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে৷
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com