ভয় কে না পায়? সবাই কমবেশি ভয় পায়। অনেকে বলে সে খুব সাহসী, সে কোনো কিছুকেই ভয় পায় না। হতে পারে সে সাহসী, কিন্তু আচমকা তাকে ভয় দেখালে সেও ভয় পেয়ে বসবে। কেউ কেউ নির্দিষ্ট কিছু বস্তু বা বিষয়কে ভয় পায়। যেমন কেউ আগুন দেখে ভয় পায় তো কেউ রক্ত, আবার কেউ উচ্চতাকে ভয় পায় তো কেউ ব্যথার কথা চিন্তা করে ভয় পায়। তেলাপোকা, মাকড়সা, প্রজাপতি, টিকটিকি দেখে ভয় পাওয়ার বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও ব্যাপারটি নিয়ে হাসার কিছু নেই। এই ভয় পাওয়ার বিষয়টিকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ফোবিয়া। নানারকম ফোবিয়া রয়েছে মানুষের মধ্যে, তাদের আবার বিভিন্ন রকম নাম। আজকে যে গেমটির কথা বলা হচ্ছে তার সাথে জড়িত হচ্ছে অন্ধকার। যারা অন্ধকারকে ভয় পান, রাতে আলো জ্বেলে ঘুমান তারা কিন্তু সাবধান। অন্ধকারকে ভয় বা লাইগোফোবিয়ায় আক্রান্ত যারা তারা এই গেম না খেললেই ভালো। আর যদি সাহসের পরীক্ষা করতে চান, তবে পিসির সামনে বসে এই গেমটি উপভোগ করতে পারেন।
অ্যালোন ইন দ্য ডার্ক বা আঁধারে একলা বা অন্ধকারে একা যাই বলুন না কেন, নামটির সাথে সবার পরিচিত থাকার কথা। সেই ১৯৯২ সাল থেকে এই গেমের উৎপত্তি, তাই এই গেমের নাম শোনেননি এমন গেমারের তালিকা খুবই কম। আর্কেড গেমস, ঘরোয়া কন্সোল গেম ও কমপিউটার গেমের অগ্রযাত্রার মূলে রয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম হচ্ছে আটারি। আটারির গেমিং কন্সোলের কথা শোনেননি বা আটারির বানানো গেমগুলো খেলেননি এমন কোনো গেমার চিরুনি অভিযান চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
সারভাইবাল হরর গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অ্যালোন ইন দ্য ডার্ক সিরিজের গেমগুলো। গেমটির এই পর্যন্ত ৫টি পর্ব বের হয়েছে। প্রথম ৪টি গেমের পাবলিশার ও ডেভেলপার দুই-ই ছিল ইনফোগ্রামেস। কিন্তু ৫ম পর্বটি পাবলিশ করেছে আটারি ও ডেভেলপ করেছে ইডেন গেমস। এখন পর্যন্ত বানানো হরর গেমগুলোর মাঝে ভালো স্থান দখল করে আছে এই সিরিজের গেমগুলো। আটারির বানানো আরো কিছু ভালো মানের গেমের মাঝে রয়েছে Act of War, ArmA, Arthur, Dawn of Magic, Deer Hunter, desperados, Fantasy Wars, Kings Bounty, Neverwinter Nights, Roller Coaster Tycoon, Test Drive, The Witcher ইত্যাদি৷ গেমিং দুনিয়ার আরো কিছু ভয়ানক গেমের তালিকায় রয়েছে Fatal Frame, Clock Tower, Silent Hill, Resident Evil ইত্যাদি৷
অ্যালোন ইন দ্য ডার্ক-এর ৫ম পর্বটির নাম হচ্ছে নেয়ার ডেথ ইনভেস্টিগেশন, কিন্তু নামটি গেম কভারে দেয়া হয়নি। গেম কভারে শুধুু অ্যালোন ইন দ্য ডার্ক লিখে নতুন পর্বটি বের করা হয়েছে। এটি যে এই সিরিজের ৫ম পর্ব তাও উল্লেখ করা হয়নি। একই নামে ২০০৫ সালে হরর মুভিও তৈরি করা হয়েছিল, যার ২য় পর্ব দ্য নিউ নাইটমেয়ার বের হবে ২০০৯ সালে।
পূর্বের ধারাবাহিকতার সাথে গেমটির শুরু হবে। ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে আগের কাহিনী সম্পর্কে আভাস দিয়ে গেমের নতুন কাহিনী এগিয়ে চলবে। গেমের প্রধান চরিত্রের কোনো রদবদল হয়নি। সেই এডওয়ার্ড কার্নবিই রয়েছেন গেমের নায়কের চরিত্রে। গেমের প্রথমেই নিজেকে আবিষ্কার করবেন একজন বন্দি হিসেবে। ঝাপসা চোখে সব কিছু ঘোলা দেখাবে। বাটন টিপে চোখ পিটপিট করে দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার রাখতে হবে। এডওয়ার্ডকে মেরে ফেলার জন্য ছাদে নেয়ার চেষ্টা করা হবে কিন্তু তার আগেই অদ্ভুত এক প্রাণী অপহরণকারীকে মেরে ফেলবে। এরপর এডওয়ার্ডকে নিয়ে আপনার যাত্রা শুরু হবে। পুরো বিল্ডিংয়ের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে হবে সেখান থেকে বের হবার রাস্তা খোঁজার জন্য। এসময় আসবে নানারকম বাধা-বিপত্তি কিন্তু সব কিছু ডিঙ্গিয়ে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে গেমটি ফার্স্ট পারসন ও থার্ড পারসন উভয় মোডেই খেলা যায়। হাতের কাছে যা-ই পাবেন যেমন- পাইপ, চেয়ার, কাঠের টুকরা, টেবল ল্যাম্প, ফ্রাইপ্যান, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ইত্যাদি সব কিছুই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়ে পথ করে নিতে হবে। ভারি কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে বা তালার ওপর গুলি করে খুলতে হবে দরজা, অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে এগুতে হবে, ইলেকট্রিসিটির তার বেয়ে উঠতে হবে ওপরের তলায়, সানশেডের কিনারা ধরেও পথ পাড়ি দিতে হবে আপনাকে।
গেমের কাহিনী গড়ে উঠেছে ২০০৮ সালের পটভূমিতে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে। সেন্ট্রাল পার্কের অদ্ভুত কিছু পরিবর্তনের ব্যাপারে অনুসন্ধান করার কাজে নিয়োজিত হবে এডওয়ার্ড। সাথে সাহায্যকারী হিসেবে থাকবে সারাহ ফ্লোরেস ও থিওফাইল পেডিংটন নামের বয়স্ক এক পুরনো বন্ধু। পার্কের গাছগুলোর পরিবর্তন, কিছু অতিপ্রাকৃত পশুপাখির উপস্থিতি, অদ্ভুত সব পোকামাকড়ের ছড়াছড়ি এসব বিষয় নগরবাসীকে ভাবিয়ে তোলে। এই ব্যাপারগুলোর সমাধান নিয়েই গেমের কাহিনী এগিয়ে চলবে। গেমটি ভাগ করা হয়েছে ৮টি পর্বে। প্রতি পর্বের শুরুতে রয়েছে মুভি, যা গেমের কাহিনীর বর্ণনা দেবে। গেমের মেনুগুলো খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। মেনুতে এনিমেটেড টেক্সটের ব্যবহার ও ব্যাকগ্রাউন্ড মুভি প্লেব্যাক খুবই মনোরম হয়েছে। গেমের ক্রেডিট দেখার দৃশ্যটিও খুব সুন্দর।
ভালোভাবে চালাতে আর গেমের পুরো স্বাদ উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন হবে ভালো মানের প্রসেসর ও মেমরি, সেই সাথে যদি থাকে ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড তো আর কি চাই? গ্রাফিক্স কার্ডের মেমরির ওপরে গুরুত্ব কম দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ডের চিপসেট ও ভালো সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড কিনলে ভালো পারফরমেন্স পাবেন। যদি উইন্ডোজ ভিসতা ব্যবহারকারী হন তবে গ্রাফিক্স কার্ডের ও মেমরির ওপরে ভিত্তি করে পিসির পারফরমেন্সের স্কোর যাচাই করতে ভুলবেন না। এটি দেখার জন্য ভিসতায় মাই কমপিউটারের ওপরে রাইট ক্লিক করে প্রপার্টিজে যেতে হবে। সেখানে নীল রঙে লেখা থাকবে পিসির পারফরমেন্স স্কোর। গেমটি খেলার জন্য ইন্টেলের কোর টু ডুয়ো বা এএমডির এক্স২ প্রসেসর হলে ভালো হয়। ভিসতায় খেলতে হলে র্যাকম লাগবে ২ গিগাবাইট। গেমের ন্যূনতম চাহিদা বক্সে দেয়া আছে। কিন্তু গেমের সুন্দর গ্রাফিক্স উপভোগ করতে, চমৎকার ভিজ্যুয়াল ইফেক্টগুলো অবলোকন করতে ও সাবলীলভাবে গেমটি চালাতে এনভিডিয়া জিফোর্স ৭৮০০ জিটিএক্স বা আরো ভালো মানের ভিডিও কার্ডের প্রয়োজন পড়বে। আর পিলে চমকানো সাউন্ড ইফেক্ট শোনার জন্য ডিরেক্ট এক্স ৯ সাপোর্টেড সাউন্ড কার্ড অপরিহার্য।
যা যা প্রয়োজন
প্রসেসর : পেন্টিয়াম ৪, ২.৮ গিগাহার্টজ বা এএমডি এথলন ৩৮০০+, র্যা ম : ১ গিগাবাইট, ভিডিও কার্ড : ২৫৬ মেগাবাইট (জিফোর্স ৭৬০০ বা এটিআই এক্স১৯৫০), হার্ডডিস্ক স্পেস : ৮.৫ গিগাবাইট।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com