পুরু গালিচা বিছানো দরবার, সোনার কারুকাজ করা মোটা পিলার, শরবত পানের জন্য রূপার পাত্র, পিতলের মোমদানি, ছাদে ঝোলানো বিশাল কাচের ঝালর- এ সবকিছুই মনে করিয়ে দেয় পারস্যের কোনো রাজমহলের কথা। পারস্য নিয়ে যে কত কাহিনী রয়েছে তার হিসেব নেই। আরব্য রজনীর কাহিনীর পর পারস্য বা এখনকার ইরানের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীর মধ্যে রয়েছে পারস্যের রাজপুত্রের বিচিত্র সব অভিযানের কাহিনী। তার বীরত্বগাথার কথা বর্ণিত হয়েছে নানা গল্প-উপন্যাসে। বইয়ের পাতা থেকে রাজকুমার উঠে এসেছেন গেমিং দুনিয়ার রঙিন পর্দায়। পারস্যের রাজকুমারের কাহিনীর ওপর নির্মিত গেমগুলো বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। এই সিরিজের প্রথম গেমটি বের হয়েছিল এপল ২ পিসির জন্য, কিন্তু দারুণ সাফল্য ও জনপ্রিয়তার কারণে অন্যান্য প্লাটফর্মের জন্য এ গেমটিকে অবমুক্ত করা হয়। গেমটি ছিল টু-ডি এবং ডস মোডের। পরে গেমটির ২য় পর্ব বের করা হয় ১৯৯৪ সালে Prince of Persia 2 : The Shadow and the Flame নামে। গেম দুটোর ডেভেলপার ও পাবলিশার ছিল ব্রোডারবান্ড নামের প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৯ সালে রেড ওর্ব ও দ্য লার্নিং কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে প্রিন্স অব পারসিয়ার থ্রিডি ভার্সন বাজারে ছাড়ে।
২০০৬ সালে বিখ্যাত গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউবিসফট বের করে তিন পর্বের বা ট্রিলজির প্রথম পর্ব Prince of Pesia- Sands of Time। এই গেমে খুবই রোমাঞ্চকর কাহিনীর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় নতুন প্রিন্স। এই গেমের কাহিনীতে পারস্যের সুলতান শাহরামান ও তার ছেলে (প্রিন্স) মিলে ইন্ডিয়ার মহারাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে পুরো সাম্রাজ্য নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। কিন্তু মহারাজার শয়তান উজিরের ধোঁকায় পড়ে প্রিন্স ড্যাগার অব টাইম বা সময়ছুরি দিয়ে স্যান্ড অব টাইম বা সময়ের বালু মুক্ত করে ফেলে জাদুর বালুঘড়ি থেকে। এতে বালুর সংস্পর্শে এসে রাজ্যের সবাই কুৎসিত দানবে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু গলার জাদুকরী লকেটের কারণে বেঁচে যায় মহারাজার কন্যা রাজকুমারী ফারাহ, হাতে জাদুছড়ি থাকার কারণে শয়তান উজির আর ড্যাগার অব টাইমের কারণে প্রিন্সের কোনো পরিবর্তন হয় না। নানারকম দানব মেরে তার থেকে সময়ছুরি দিয়ে স্যান্ড সংগ্রহ করে তা দিয়ে সময়কে পিছিয়ে সব আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়াটাই ছিল গেমের মূল লক্ষ্য। ট্রিলজির ২য় পর্বের নাম ছিলো Warrior Within। এতে সময়ের প্রহরী ডাহাকা প্রিন্সকে মেরে ফেলতে চাইবে কারণ তার ভাগ্যে মৃত্যু লেখা ছিল কিন্তু সে ড্যাগার অব টাইমের কারণে বেঁচে গিয়েছিল। ডাহাকার মোকাবেলা করার জন্য প্রিন্স আইল্যান্ড অব টাইমে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে আবার সময়ের সাথে তার ভাগ্যের যুদ্ধ হয়। তার সাথে থাকে কাইলিনা নামের চরিত্র। ডাহাকাকে তার লক্ষ্য সাধনে ব্যর্থ করে সে আবার ফিরে আসে। এই সিরিজের শেষ পর্ব Two Throns-এ প্রিন্স কাইলিনাকে সাথে করে নিজ বাসভূমি ব্যাবিলনে ফিরে এসে দেখে তা তছনছ হয়ে গেছে। এই পর্বের মূল আকর্ষণ ছিল প্রিন্সের দুটি ভিন্ন সত্তা একটি প্রিন্স ও অপরটি ডার্ক প্রিন্স। প্রিন্স অব পারসিয়ার গ্রাফিক উপন্যাস বা কমিস বের হয়েছে ২০০৭ সালে এবং ২০১০ সালে বের হতে যাচ্ছে স্যান্ড অব টাইম নামের মুভি (এই সিরিজের কোনো গেমেই প্রিন্সের নাম বলা হয়নি কিন্তু মুভিতে তার নাম দেয়া হয়েছে দাস্তান)।
মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের নতুন গেমের নামটি হচ্ছে Prince of Pesia, যার কাহিনী সম্পূর্ণ আলাদা। এই গেমে ইলিকা নামের নতুন নারী চরিত্র দেয়া হয়েছে, যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গেমের পটভূমি। গেমের প্রথমেই দেখানো হবে মরুভূমিতে প্রিন্স তার ফারাহ নামের গাধাকে খুঁজতে খুঁজতে সুন্দর এক শহরে হাজির হবে যেখানে দেখা পাবে পলায়মান ইলিকার। সে দেখবে তার পেছনে কিছু সৈন্য তাড়া করে আসছে। প্রিন্স তাদের শিক্ষা দিয়ে, ইলিকার পিছু নেবে। হঠাৎ ইলিকার বাবার আবির্ভাব হলে সে জানতে পারবে ইলিকা এই সাম্রাজ্যের রাজকুমারী। প্রিন্স রাজার সাথে যুদ্ধ করে তাকে পিছু হটে যেতে বাধ্য করবে। তারপর সে ইলিকার ঘটনা শুনতে থাকবে, কেন সে পালালো? কেন সৈন্যরা তার পিছু নিচ্ছে? ইলিকার কাছে সে জানতে পারবে যে ইলিকা হচ্ছে আহুরাসের বংশধর। তারা বহুযুগ ধরে আরিমান নামের এক বন্দী শয়তানের পাহারা দিয়ে আসছে। আরিমানকে দেবতা ওরমাজ একটি গাছের মধ্যে আটকে রেখেছে যার নাম ট্রি অব লাইফ বা জীবনবৃক্ষ। ইলিকা ও তার মা মারা গিয়েছিল কিন্তু ইলিকার বাবা শুধু তাকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছে আরিমানের সাহায্য নিয়ে। ইলিকাকে জীবনদানের জন্য আরিমানের সাথে তার বাবার চুক্তি ছিল আরিমানকে মুক্ত করে দেয়া। কিন্তু শোকে কাতর ইলিকার বাবা এটা ভেবে দেখেননি, আরিমান মুক্তি পেলে পুরো রাজ্য ধ্বংস করে দেবে আর সবাইকে তার গোলামে পরিণত করবে। তাই ইলিকা চেষ্টা করছিল তার বাবার আগে মন্দিরে পৌঁছাতে যেন সেখানে সংরক্ষিত জীবনবৃক্ষ থেকে আরিমান মুক্তি না পায়। মন্দিরে পৌঁছে প্রিন্স আবার মুখোমুখি হবে রাজার, লড়াইয়ের এক পর্যায়ে রাজা জীবনবৃক্ষ কেটে তা থেকে আরিমানকে মুক্ত করে দেবে। পুরো রাজ্য তার কালো থাবার নিচে বিনষ্ট হতে থাকবে আর ধীরে ধীরে সে মুক্ত হতে থাকবে। আরিমানকে আবার বন্দী করতে হলে পুরো রাজ্যের প্রায় ২০টির মতো স্থানকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে ইলিকার জাদুশক্তির মাধ্যমে। তাই প্রতিটি স্থানে বিচরণ করতে হবে তাদের দু’জনকে। আস্তে আস্তে ইলিকা তার নিজ জাদুক্ষমতার সাথে পরিচিত হবে, তা সময়ের সাথে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
গেমের পুরো অংশে প্রিন্সের সাথে সর্বক্ষণিক সহযোগী হিসেবে উপস্থিত থাকবে ইলিকা। সে প্রিন্সের উপরে বোঝা হিসেবে থাকবে না বরং সবরকম কাজে দারুণ সহযোগিতা করবে। সে প্রিন্সের মতোই স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে তার জাদুর সাহায্যে। গেমে পুরো রাজ্যের সব স্থানকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে- সিটাডেল, ভেল, রয়াল প্যালেস ও সিটি অব লাইট। চারটি স্থানে রয়েছে চারজন পাহারাদার, তাদের সাথে প্রিন্সকে মোকাবেলা করতে হবে। তাদের নাম হচ্ছে- হান্টার, আলকেমিস্ট, কনকিউবাইন ও ওয়ারিওর। নির্দিষ্টসংখ্যক লাইট সীড নামের আলোকিত বীজ সংগ্রহের ফলে ইলিকার জাদুশক্তি বাড়বে ও নতুন স্থান বিচরণের পথ খুলে যাবে। চারটি স্থানে ঘুরে বেড়ানোর জন্য চারটি ভিন্ন জাদুক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- স্টেপ অব ওরমাজ, ব্রেথ অব ওরমাজ, হ্যান্ড অব ওরমাজ ও উইংস অব ওরমাজ। এই জাদুক্ষমতার বদৌলতে প্রিন্স ও ইলিকা দেয়ালে সাঁটানো জাদুর প্লেট থেকে অন্য প্লেটে উড়ে, দেয়াল বেয়ে দৌড়াতে, লম্বা লাফ দিয়ে ও স্পাইডারম্যানের মতো ঝুলে যেতে সক্ষম হবে। প্রিন্স বিপদে পড়লে ইলিকা তার জাদুশক্তি দিয়ে তাকে বাঁচাবে, পাজলের সমাধানের সময় সাহায্য করবে, পথ চলার সময় দীর্ঘলাফ দিতে সাহায্য করবে ও মারামারির সময় প্রতিপক্ষকে ঘায়েলও করবে।