গেমিং মানেই যুদ্ধ-বিগ্রহ তা কিন্তু নয়। গেমিং একটি মাধ্যম। এটি এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যার সাহায্যে বিনোদনের পাশাপাশি এমন সব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায় যা বাস্তব জীবনে সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন আপনি ইচ্ছে করলে এয়ার ট্যাকটিক্স গেম খেলার মাধ্যমে একজন পাইলটের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিতে পারেন, যা হয়ত কোনো দিনও আপনার পক্ষে পাইলট হওয়া সম্ভব হতো না। একই কথা প্রযোজ্য যে কোনো অ্যাডভেঞ্চার বা কোনো অভিযানের ক্ষেত্রেও। আসলে সব ধরনের গেমের ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। একই কথা খাটে ঐতিহাসিক গেমের ক্ষেত্রেও। যেমন ধরা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আপনি একজন চৌকস কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এটা কী সম্ভব? কারণ বাস্তবে তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। এটা সম্ভব হতে পারে এখন একমাত্র গেমের মাধ্যমেই। মনে রাখতে হবে গেম এক সময় শুধুই ছোটদের জন্য ছিল। এখন বিশ্বে ছোট-বড় সবাই গেম খেলে।
গেমিং মানেই যে যুদ্ধ কথাটা শুধুই অ্যাকশন গেমগুলোর ক্ষেত্রে খাটে। স্ট্র্যাটেজিক গেম এমন এক গেমিংয়ের মাধ্যম, যার মাধ্যমে যতটা না যুদ্ধ করতে হয় তার চেয়ে বেশি যুদ্ধের কৌশল খাটাতে হয়। এতে করে যুদ্ধের জ্ঞান অর্জন করা যায় এবং যুদ্ধের কৌশল ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটানো যায়। যদি বলা হয় আপনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন কমান্ডার। আপনি ঠিকভাবে রণকৌশল প্রয়োগ করতে পারলেই কেবল জিততে পারবেন। কৌশল কি তা আপনাকে বলে দেয়া হবে না। তাহলে কিন্তু আপনার চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঠিকই ঘটবে। এমনই একটি গেম হচ্ছে সাডেন স্ট্রাইক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা অসাধারণ এক স্ট্র্যাটেজিক গেম।
স্ট্র্যাটেজিক গেমের অনেক ধরন আছে। এই গেমটি হচ্ছে একটি রিয়েল টাইম ট্যাকটিক্স ধরনের গেম। রিয়েল টাইম ট্যাকটিক্স এক ধরনের রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজিক গেম। রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজিক গেমের আসল কাজ হচ্ছে কনস্ট্রাকশন তৈরি করার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চেয়ে শক্তিশালী একটি সৈন্যবাহিনী তৈরি করে নির্দিষ্ট মিশনে জয়লাভ করা। কিন্তু রিয়েল টাইম ট্যাকটিক্স ধরনের গেমে কোনো কনস্ট্রাকশন তৈরি করতে হয় না। আগে থেকেই তা তৈরি করা থাকে। এখানে শুধু দিয়ে দেয়া কনস্ট্রাকশন বা সৈন্যবাহিনী দিয়ে মিশন সম্পন্ন করতে হয়। শুধু যুদ্ধ-কৌশল নিজেকেই নির্ধারণ করতে হয়।
গেমের মূল ক্যাম্পেইনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানি নিয়ে খেলা যায়। ক্যাম্পেইনে মোট দশটি করে মিশন রাখা হয়েছে প্রতি দলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যাদের ভালো ধারণা আছে তারা কমান্ডার হিসেবে গেমটি খেলে খুব মজা পাবেন। তার কারণ হচ্ছে ইতিহাসে কী ঘটেছিল তা হুবহু তুলে ধরা হয়েছে এই গেমে। আর ধারণা না থাকলেও সমস্যা নেই, ধারণা করে নিতে পারবেন এই গেম থেকে। এখনকার যুগে গেম খেলেও যে ইতিহাস জানা যায় তার খুব চমৎকার নিদর্শন হচ্ছে এই গেম।
ঐতিহাসিক গেম বলেই হয়ত গেমে সবুজের প্রভাব খুব বেশিমাত্রায় রাখা হয়েছে। আমরা পুরনো ছবি বা ভিডিও সাদাকালো বা কিছুটা ফেড দেখি সেই ধারণা থেকেই গেমের গ্রাফিক্স এমন করা হয়েছে। এই গেমের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে প্যারাট্রুপার এবং স্থলমাইনসমূহ। এই ইউনিটগুলো প্রচণ্ড রকমের জীবন্ত এবং রিয়েলিস্টিক করা হয়েছে। এই গেম খেলার সময় সবচেয়ে বেশি মাথায় রাখতে হবে নিজের ট্রুপার এবং আর্টিলারি যতটুকু সম্ভব কম খোয়াতে হবে। আর ঠাণ্ডা মাথায় না খেললে এই গেমের প্রতিটি মিশনে জেতার সম্ভাবনা খুব কম থাকবে। তাই খেলার সময় খুব ধীরেসুস্থে এই গেম খেলুন। সময় যত লাগুক তা গেমে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
গেমের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে এই গেমে ভিডিওর ব্যবস্থা না রাখা। ভিডিও থাকলে এই গেম আরো জীবন্ত হয়ে উঠতো এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর গেমের অডিও এবং মিউজিক সময়ের তুলনায় বেশ ভালোই বলতে হবে। কিন্তু গ্রাফিক্স এবং গেম ইউনিটগুলো দিয়ে এই গেমের সীমাবদ্ধতাগুলো চমৎকারভাবে দূর করে দেয়া হয়েছে।
এই গেমের একটি এক্সপানশন প্যাক তৈরি করা হয়েছে ফরএভার নাম দিয়ে। ফরএভারে কিছু ঐতিহাসিক ইউনিট এবং ট্রুপারের পাশাপাশি নতুন মিশন যুক্ত করা হয়েছে। এই এক্সপানশন প্যাকে গেম ইঞ্জিনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গেমের ক্যাম্পেইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন এই ক্যাম্পেইনে দল বাড়ানো হয়েছে। তবে এই আলাদা ক্যাম্পেইনগুলো ইন্টারলিঙ্কড। প্রতিটি ক্যাম্পেইনের সঙ্গে প্রতিটির সংযোগ রাখা হয়েছে। ফলে ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে নিপুণভাবে। গেম ইঞ্জিনে পরিবর্তন আনার ফলে গেম ডিটেইলস বেড়ে গেছে অনেকগুণে। বিশেষ করে ড্যামেজ ডিটেইলস খুব চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই গেম এবং এর এক্সপানশন প্যাক ডাউনলোড করে নিতে পারবেন নিচের দুটো লিঙ্ক থেকে।
http://www.final4ever.com/showthread.php?t=18184
http://rapidmovees.blogspot.com/2008/06/sudden-strike-forever-iso.html
ডাউনলোডের ফাইলগুলো আলাদাভাবে ডাউনলোড করে নিতে হবে। সব ফাইল ডাউনলোড করা হয়ে গেলে তবেই উইনরর্যা র সফটওয়্যার দিয়ে একই ফোল্ডারে ফাইলগুলো রেখে এক্সট্র্যাক্ট করতে হবে। আর যেহেতু এগুলো রংড় ফাইল তাই এক্সট্র্যাক্ট করার পর তা যেকোনো সিডি রাইটিং সফটওয়্যার দিয়ে ওপেন করে সিডিতে রাইট করে নিতে হবে। এই গেমের জনপ্রিয়তায় আরো দুটি সিক্যুয়াল বের করা হয়েছে।
যা যা প্রয়োজন
প্রসেসর : পেন্টিয়াম ২ বা তদুর্ধ, এএমডি কে ৭ বা তদুর্ধ
গ্রাফিক্স কার্ড : ১৬ মেগাবাইট বা তদুর্ধ
র্যা ম : ৬৪ মেগাবাইট বা তদুর্ধ
ফিডব্যাক : mortuza_ahmad@yahoo.com