• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিটিআরসির প্রকাশ্য নিলামে অপারেটর নিয়োগ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সেলিনা আক্তার
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিটিআরসির প্রকাশ্য নিলামে অপারেটর নিয়োগ

আইজিডব্লিউ লাইসেন্স পাচ্ছে নভোটেল, বাংলাট্র্যাক ও মীর টেলিকম৷ আইসিএক্স লাইসেন্স পাচ্ছে গেটকো ও এমঅ্যান্ডএইচ৷ ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে লাইসেন্স পাচ্ছে ম্যাঙ্গো টেলিকম সার্ভিসেস

ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস পলিসির তিন স্তরবিশিষ্ট টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকাশ্য নিলামে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্স পাচ্ছে নভোটেল, বাংলাট্র্যাক ও মীর টেলিকম৷ আন্তঃসংযোগ বা ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) লাইসেন্স পাচ্ছে গেটকো ও এমঅ্যান্ডএইচ টেলিকম৷ আর ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে স্থাপনের লাইসেন্স পাচ্ছে ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস৷

পলিসি অনুযায়ী বেশি দূরত্বের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সেবার জন্য যে তিন স্তরের অবকাঠামো তৈরির কথা বলা হচ্ছে তার প্রথম স্তরে রয়েছে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে স্থাপন৷ এই গেটওয়ে সাবমেরিন ক্যাবল ও ইন্টারকানেকশন বা আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জের সাথে যুক্ত থাকবে৷ দ্বিতীয় স্তরে থাকবে আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ, যা আন্তর্জাতিক গেটওয়ে ও এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিসের সাথে যুক্ত থাকবে৷ তৃতীয় স্তরে রয়েছে এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস, যার মাধ্যমে আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ ও গ্রাহকের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে৷

ভিওআইপিসহ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের জন্য বেসরকারি ৩টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে স্থাপন করতে হবে ঢাকায়৷ আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ স্থাপনের জন্য দুটি লাইসেন্সের আওতায় ঢাকায় ২টিসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া এবং খুলনায় ১টি করে মোট ৬টি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করতে হবে৷ আর আন্তর্জাতিক এবং দেশের ভেতরে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য ১টি ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সের আওতায় প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১টি করে ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ স্থাপন করতে হবে৷ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জগুলো এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস অপারেটরদের কাছে ডাটা সার্ভিস দেয়ার সব ব্যবস্থা করবে৷

রাজধানীর রেডিসন হোটেলে ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের ৩টি গেটওয়ে লাইসেন্স দেয়ার জন্য প্রকাশ্য নিলাম ডাকে৷ নিলাম চলে পরদিন সকাল পর্যন্ত টানা ২৬ ঘণ্টা৷ টেলিযোগাযোগ খাতের কোনো লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে দেশে এ ধরনের প্রকাশ্য নিলামের ঘটনা এটাই প্রথম৷

এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিটিআরসির কাছে গত ডিসেম্বরে ৪২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে৷ এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে ১১টি আবেদন৷ বাকি ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিলাম হয়৷ নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নভোটেল লিমিটেড, বাংলাট্র্যাক কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং মীর টেলিকমকে৷

মীর টেলিকমের পরিচালক হচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন৷ নভোটেলের মালিক টুসুকা ফ্যাশনস৷ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী হলেন আরশাদ জামাল৷ বাংলাট্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক তারিক-ই হক৷

বিটিআরসি জানায়, আন্তর্জাতিক গেটওয়ের প্রতিটি লাইসেন্স ফি ১৫ কোটি টাকা৷ লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক ৭ কোটি টাকা৷ নিলামে অংশ নেয়ার জন্য জামানত দিতে হয়েছে ৩ কোটি টাকা৷ লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে ওই গেটওয়ের মাধ্যমে আয়কৃত রাজস্বের ২০ শতাংশ এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিসের জন্য এবং ১৫ শতাংশ ইন্টারকানেকশন সার্ভিসের জন্য সরকারকে দিতে হবে৷ বাকি ৬৫ শতাংশ রাজস্বের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ কত শতাংশ রাজস্ব সরকারকে দিতে পারবে তার ওপরই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়৷ এর জন্য ফ্লোর প্রাইস ধরা হয় ২৫ শতাংশ৷ সর্বোচ্চ দর ওঠে ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ৷

লাইসেন্সপ্রাপ্তদের ৬ মাসের মধ্যে তাদের গেটওয়ে চালু করতে হবে৷ সেই হিসেবে আগামী আগস্টেই শুরু হতে যাচ্ছে ৩টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে৷ একই সাথে বিটিটিবির গেটওয়েও চালু থাকবে৷ বেসরকারি পর্যায়ে গেটওয়েগুলো চালু হলে তার মাধ্যমে ভিওআইপি কল বৈধভাবে আদান-প্রদান করা যাবে৷ তখন ভিওআইপির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো দেশের ল্যান্ড বা ফিক্সড ফোনে ৬ টাকা মিনিট ও মোবাইল ফোনে সাড়ে ১৬ টাকা মিনিটে কথা বলা যাবে৷ বর্তমানে বিটিটিবির ইকোনমিক আইএসডির মাধ্যমে এ ধরনের কল ফিক্সড ফোনে সাড়ে ৭ টাকা ও মোবাইল ফোনে ১৮ টাকা মিনিট৷

দুইটি আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) লাইসেন্সের জন্য প্রকাশ্য নিলাম হয়েছে রেডিসন হোটেলে ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত ২২ ঘণ্টা৷ বিটিআরসি পরিচালিত এই নিলামে বিজয়ী হয় এম অ্যান্ড এইচ টেলিকম লিমিটেড এবং গেটকো টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড৷ আইসিএক্স-এর লাইসেন্স ফি প্রতিটি ৫ কোটি টাকা৷ বার্ষিক নবায়ন ফি আড়াই কোটি টাকা এবং নিলামের জন্য জামানত ১ কোটি টাকা৷ এ লাইসেন্সের জন্য গত ডিসেম্বরে জমা পড়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন৷ ৪টি বাদ পড়ে৷

আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ পরিচালনাকারীরা বাইরে থেকে আসা কলের জন্য ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে তাদের রাজস্ব আয়ের ১৫ শতাংশ এবং এক্সেস নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারীদের আউটগোয়িং কলের রাজস্ব থেকে ১৫ শতাংশ পাবে৷ তাছাড়া স্থানীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল করতেও আইসিএক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক৷ সেক্ষেত্রে মিনিটপ্রতি ৪ পয়সা পাবে আইসিএক্স কোম্পানি৷ প্রাপ্ত এই রাজস্ব থেকে বিটিআরসি বা সরকারকে যারা সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে পারবে তাদেরই লাইসেন্স দেয়া হয়৷ এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দর ওঠে ৬৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ৷ নিলাম বিজয়ী এমঅ্যান্ডএইচ-এর মালিক এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান এবং গেটকো টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের এমডি কে এম খালেদ৷ সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে স্থাপনের লাইসেন্স পাচ্ছে ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিস৷ ২৫ ফেব্রুয়ারি এ ব্যাপারে প্রকাশ্য নিলাম হয় বিটিআরসি কার্যালয়ে৷ প্রতিষ্ঠানটি গেটওয়ে থেকে অর্জিত রাজস্বের ১০ ভাগ সরকারকে দেবে৷ ৮টি প্রতিষ্ঠান এ নিলামে অংশ নেয়৷

নিলামগুলোতে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঞ্জুরুল আলমসহ অন্য কমিশনার ও উর্ধতন কর্মকর্তারা৷ ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস পলিসি-২০০৭ অনুযায়ী বিটিআরসি এ লাইসেন্স দিচ্ছে কেবল দেশী প্রতিষ্ঠানকে৷

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেছেন, এই লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন যুগের সূচনা হলো৷ আইসিএক্স কাঠামো তৈরি করায় এখন আর বড় অপারেটররা ছোট অপারেটরদের বঞ্চিত করতে পারবে না৷ এতে গ্রাহকরা উপকৃত হবে এবং এই খাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে৷ একই সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে৷

এদিকে বিটিআরসির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট মহল৷ তারা বলছে, যে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিটিআরসি নিলাম করেছে তা সত্যি অভিনন্দনযোগ্য৷ এখন প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, যার ধারাবাহিকতা পরেও অব্যাহত থাকবে৷ অর্থাত্ ভবিষ্যতেও যাতে এমন স্বচ্ছভাবে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের লাইসেন্স দেয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস