• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: আবদুল ওয়াজেদ
মোট লেখা:২৮
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টেলিসেন্টারমোবাইল, 
তথ্যসূত্র:
টেলিযোগাযোগ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ সেবার উন্নয়ন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন-২০০১-এর আলোকে ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি বিটিআরসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে সরকার এ কমিশন পুনগর্ঠন করেন। পুনর্গঠিত এ কমিশন টেলিযোগাযোগ খাতে নানামুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইসিটি এবং টেলিযোগাযোগকে বেকারত্ব দূর করা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে কমিশন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক পদক্ষেপ নেয় এবং তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। কমিশন বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে একদিকে টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং অন্যদিকে রাজস্ব আদায় ও বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এ সংক্রান্ত কয়েকটি উল্লে¬খযোগ্য অগ্রগতির তুলনামূলক বিবরণ নিচে দেয়া হলো :

টেলিযোগাযোগ খাতের তুলনামূলক ছক

২০০৭ ও ২০০৮ সালে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অর্জন

উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান :

ILDTS Policy–2007-এর আলোকে বিটিআরসি দেশে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে ৩টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে , ২টি আমত্ম: সংযোগ এক্সচেঞ্জ ১টি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে এবং ৩টি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দিয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইড্থ চার্জ কমানো :

বিগত ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বিটিআরসি ২০০৬ সালের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইড্থ মূল্য ক্ষেত্রভেদে ৬০% থেকে ৮০% পর্যন্ত কমিয়েছে। এতে গ্রাহকরা আগের তুলনায় কম খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে।

পিএসটিএন অপারেটরগণকে উৎসাহদান ও সহায়তা :

পিএসটিএন অপারেটরেরা বাংলাদেশী কোম্পানি এবং এখাতে এরা যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে বলে এদের দুরবস্থা প্রশমিত করার লক্ষ্যে বিটিআরসি আংশিক মোবাইলিটি অনুমোদন, দেশব্যাপী সেবা সম্প্রসারণের অনুমতি দান, লাইসেন্স নবায়ন ফি কমানো, রোল-আউট বাধ্যবাধকতা শিথিল করা, মোবাইল অপারেটরদের সাথে পিএসটিএন অপারেটরদের অনুকূলে ইন্টারকানেকশন চুক্তি প্রণয়ন ইত্যাদি ব্যবস্থা নিয়েছে।

ওয়াই-ফাই উন্মুক্তকরণ :

সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য করা ও ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বাড়ানোর লক্ষ্যে বিটিআরসি বাণিজ্যিক/অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে Wireless Fidelity (Wi-Fi) প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

ভিডিও কনফারেন্সিং :

তথ্যপ্রযুক্তির সুফল জনস্বার্থে ব্যবহারের নিমিত্তে বিটিআরসি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের অনুমোদন দিয়েছে।

অবকাঠামোতে ভাগ বসানো :

টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপনের ফলে শহরে বিভিন্ন ভবনের ছাদগুলো জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। দেশের বড় শহরগুলোর পাশাপাশি দেশব্যাপী টাওয়ার এবং এন্টেনা ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সেবা দেয়া হচ্ছে। নেটওয়ার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক বিষয়ই প্রায় অভিন্ন। সেসব বিষয় এরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে খরচ কমিয়ে দক্ষতা বাড়াতে পারে। বিটিআরসির মতে টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাকবোন, অ্যান্টেনা এবং টাওয়ার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবহার করলে টেলিযোগাযোগ সেবা যোগান যেমন সহজসাধ্য হবে, তেমনি মূল্যবান ভূমিরও সাশ্রয় হবে। সর্বোপরি টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং অবকাঠামোগত ব্যয় কমবে। সম্প্রতি বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো অংশীদারিত্বের বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে এবং নতুন অবকাঠামো স্থাপনের সময়ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে নির্দেশনা দিয়েছে।



আইএসপি :

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা লাইসেন্সিং ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অসামঞ্জস্য ও বিশৃঙ্খলা দূর করার লক্ষ্যে বিটিআরসি নতুন লাইসেন্স নেয়ার সাপেক্ষে সব স্থানীয় আইএসপি এবং সাইবার ক্যাফেগুলোকে বৈধতা দেয়। গ্রাহকরা যেন কম খরচে ইন্টারনেট সেবা পেতে পারে সে লক্ষ্যে লাইসেন্স ফি কমানো হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় অপেক্ষাকৃত ছোট আইএসপিগুলোর সেবা বিস্তৃতিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিটিআরসি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে এসএমই ঋণ পেতে তাদের সহায়তা করে আসছে।

উল্লেখযোগ্য চলমান উদ্যোগসমূহ

আইপি টেলিফোনি :

ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনিই আইপি টেলিফোনি নামে পরিচিত। এটি টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসটেন্স টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসেস পলিসি-২০০৭ অনুযায়ী শিগগিরই বিটিআরসি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইপি টেলিফোনি লাইসেন্স দেয়ার পরিকল্পনা করছে।

থ্রিজি সার্ভিস :

থার্ড জেনারেশন টেলিকমিউনিকেশন বা থ্রিজি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মূল্য সংযোজিত সেবা, যাতে রয়েছে দ্রুতগতির ডাটা এবং মাল্টিমিডিয়া বিনিময়ের সুবিধা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ সেবা যোগানোর লক্ষ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে বিটিআরসি বাংলাদেশে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংক্রান্ত গাইডলাইন চূড়ান্ত করার পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় ২০০৯ সালের প্রথমার্ধের মধ্যেই এ সেবা উন্মুক্ত হবে।

ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (NIX) :

আইএলডিটিএস পলিসি ২০০৭-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিটিআরসি একাধিক ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (NIX) অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছে। NIX অপারেটররা মাল্টি ল্যাটারাল পিয়ারিং এগ্রিমেন্ট (MLPA) বা বাই ল্যাটারাল পিয়ারিং এগ্রিমেন্ট (BLPA)-এর ভিত্তিতে দেশীয় অপারেটরদের মধ্যে আন্তঃঅপারেটর ডাটা সার্ভিসের সুবিধা দিবে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন :

বর্তমানে বাংলাদেশ মাত্র একটি সাবমেরিন ক্যাবল (SEA-ME-WE-4)-এর সাথে সংযুক্ত। কোনো কারণে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়। এই সমস্যা সমাধানে বিটিআরসি বেসরকারি খাতকে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে প্রচুর সাড়াও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সাবমেরিন ক্যাবল সংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে গণশুনানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম লাইসেন্স :

এই মূল্য-সংযোজিত সেবার সাহায্যে সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া যানবাহন খুঁজে বের করা বা ভ্রাম্যমাণ পেশাজীবীদের অবস্থান জানার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বিটিআরসি ‘ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আইএমইআই বারিং (IMEI Barring) :

আইএমইআই (International Mobile Equipment Identity) এমন একটি ১৫ ডিজিটবিশিষ্ট নম্বর, যা একটিমাত্র জিএসএম (Global System for Mobile Communication) বা ইউটিএমসি (Universal Mobile Telecommunication Service) ইকুইপমেন্টের পরিচিতি নির্দেশ করে। হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনসেটকে আইএমইআই নম্বরের সাহায্যে চিহ্নিত করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব। মোবাইল ছিনতাই ও অবৈধভাবে মোবাইল ফোন হস্তগত করার প্রবণতা কমানোর লক্ষ্যে বিটিআরসি আইএমইআই বারিং সংক্রান্ত একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করছে। আশা করা যায়, শিগগিরই জনগণ এ গাইডলাইনের সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৯ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা