লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের পথে দেশ
অনলাইনে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকেই উদ্যোগ নেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা বিটিআরসি। এ ক্ষেত্রে সাবমেরিন ক্যাবল যোগাযোগের পঞ্চম কনসোর্টিয়ামের সাথে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি স্থলপথেও বিকল্প ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের মাধ্যমে স্থলপথে বৈশ্বিক ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল তথা আইটিসি লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন জানাতে ৩১ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
নীতিমালা প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নয়টি কোম্পানি লাইসেন্স নেয়ার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করে। নীতিমালা অনুযায়ী বিটিআরসি ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। এই কমিটি নীতিমালায় নির্ধারিত নির্বাচনের মানদন্ড অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের ক্রম তৈরি করে লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করে। সুপারিশের ভিত্তিতে প্রথমে তিনটি কোম্পানিকে আইটিসি লাইসেন্স দেয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করতে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল লাইসেন্স দেয়া হয় ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে। দেশে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর লক্ষ্যে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড।
লাইসেন্স নিয়ে বিতর্ক
আইটিসি লাইসেন্স চূড়ান্ত হওয়ার আগেই বিষয়টি নিয়ে নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। তিনটি কোম্পানির পরিবর্তে ছয়টি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার খসড়া সিদ্ধান্ত ফাঁস হয়ে গেলে সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যেও টানাপড়েন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানা অভিযোগ আর প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩২তম বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানিয়ে দেন, নিয়ম মেনেই ছয় প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দেয়ার কথা। তিনি জানান, আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো পাশের দেশের ওইসব টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে কাজ করবে, যাদের সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে। আর এ লাইসেন্স দেয়ার ফলে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ-সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি ব্যান্ডউইডথের দাম কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এতে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশও তৈরি হবে বলে মন্তব্য করে তিনি।
এর একদিন পর লাইসেন্স বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। তিনি জানান, টেলিযোগাযোগ খাতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা বাড়ানো ও ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর জন্যই তিনটির জায়গায় ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
‘নিয়ম মেনেই লাইসেন্সের জন্য ছয়টি প্রতষ্ঠানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে’ দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালায় নির্ধারিত নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের ক্রম তৈরি করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথম থেকে ষষ্ঠ স্থান পাওয়া আবেদনকারীর লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করা হয়। তাই নিন্দুকেরা যাই বলুক, রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়েই লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’
বস্ত্তত সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠান ছয়টিকে আইটিসি লাইসেন্স দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এরপর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডকে ১৫ বছরের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল তথা আইটিসি লাইসেন্স দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ। এ সময় লাইসেন্সপ্রাপ্তদের ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন। তবে ভারতের পক্ষ থেকে সময়মতো সাড়া না পাওয়ায় এই সময়সীমা পরে আরও তিন মাস এগিয়ে নেয়া হয়।
মূল্যায়নপত্রে লাইসেন্স পাওয়া ৬ কোম্পানির অবস্থান
আইটিসি লাইসেন্স দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগ্যতা ও সক্ষমতা যাচাইয়ে ১০০ নম্বরের একটি মূল্যায়ন তালিকা তৈরি করা হয়। মূল্যায়ন ফলের ভিত্তিতে ৯১.৩৬ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান লাভ করে নভোকম লিমিটেড। এ ছাড়া ৮৮.৬ পয়েন্ট পেয়ে ওয়ান এশিয়া-এএইচজেভি দ্বিতীয় স্থানে, ৮৭.৮৫ নম্বর মেয়ে বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড তৃতীয় স্থানে, ৮২.৮৪ পয়েন্ট পেয়ে বর্তমানে আইইজি লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড চতুর্থ স্থানে, ৮১.৮৩ নম্বর পেয়ে সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড পঞ্চম স্থানে এবং ৮০.১৯ পয়েন্ট পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে জায়গা হয় ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের।
লাইসেন্স পেতে এসব প্রতিষ্ঠানকে আবেদনপত্র বাবদ এক লাখ, লাইসেন্স বাবদ দুই কোটি টাকা (প্রথমবার লাইসেন্স নেয়ার সময় প্রযোজ্য) ফি পরিশোধ করে। এ ছাড়া বার্ষিক লাইসেন্স ফি হিসেবে ৫০ লাখ টাকা এবং জামানত হিসেবে ২০ লাখ টাকা জমা দেয়। সব মিলিয়ে লাইসেন্স পেতে চার কোটি টাকা লেগেছে বলে জানিয়েছে ওয়ান এশিয়া কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে সরকারের সাথে আয় ভাগাভাগি হিসেবে আয়ের একভাগ পাবে সরকার।
লাইসেন্সপ্রাপ্তির মূল্যায়ন পরীক্ষায় সবার পেছনে ছিল ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড। তবে আইন মেনে ভারতের নোম্যান্সল্যান্ডের ল্যান্ডিং স্টেশনের সাথে আইটিসি ক্যাবল সংযোগ স্থাপনে প্রথম হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। একই সাথে পরীক্ষামূলক অপারেশনে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও সবার আগে কাজ শেষ করেছে ওয়ান এশিয়া কমিউনিকেশন। আর প্রথমে থাকা নভোকম কিংবা দেশের মধ্যে শক্ত অবস্থানে থাকা সামিট কারও ক্ষেত্রেই বেঁধে দেয়া সময়ে কাজ শেষ করার বিষয়ে অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।
টেস্টিংয়ে এগিয়ে ওয়ান এশিয়া
ভারতীয় টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা টিআরএআই’র সম্মতিপত্র (এনওসি) হাতে না পাওয়ায় নির্ধারিত দিনের একদিন পর ২৮ আগস্ট স্থলপথে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল আইটিসি সংযোগের সফল পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ওই দিন বিকেলে বেনাপোল সীমান্ত সংযোগ ক্যাবল দিয়ে এসিটিএম-৬৪ লেবেলে ডাটা দেয়া-নেয়া করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এই স্বদেশি কোম্পানিটি। এ সময় প্রতিসেকেন্ড ১০ গি.বা. তথ্য দেয়া-নেয়ার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করার মিশনে স্থাপিত হার্ডওয়্যারের সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
পরীক্ষামূলক অপারেশন সম্পর্কে ওয়ান এশিয়া কমিউনিকেশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আববাস আলী সিরাজি জানান, নতুন এ সংযোগ ব্যবস্থায় সিমিউই-৪ সাবমেরিন ক্যাবল ছাড়াও সাতটি চ্যানেলে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা পাবেন বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। দেশে অবিচ্ছেদ্য ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে এ জন্য যে চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে, তা বেনাপোল-কলকাতা যুক্ত হয়ে মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের ল্যান্ডিং স্টেশনের সাথে যুক্ত হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আশা করছি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে আমরা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাশ্রয়ী দামে ব্যান্ডউইডথ দেয়ার চেষ্টা করব। তবে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ট্যারিফ প্ল্যান রিভিশন করার পাশাপাশি ভারতকেও ভাড়ার দাম কমানোর অনুরোধ জানানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তৃণমূল পর্যায়ে আইটিসি নিয়ে ফাইবার অ্যাট হোম
ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তথা এনটিটিএন লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে আগে থেকেই যশোর পর্যন্ত ক্যাবল স্থাপন করেছিল ফাইবার অ্যাট হোম। তাই ৪ জানুয়ারি ২০১২ আইটিসি লাইসেন্স পাওয়ার পর বেনাপোল সংযোগে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। যশোর থেকে বেনাপোল সীমান্তে বেনাপোল বাজারের বিজিবি চেকপোস্টের পাশেই গড়ে তোলা হয় সীমান্ত ল্যান্ডিং স্টেশন। ভূগর্ভস্থ পথে স্থাপন করা হয় ২১৬ কোর ক্যাবল ও ৪টি ডাক।
তারপরও বেনাপোলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নোম্যান্সল্যান্ডে সংযোগ ক্যাবল স্থাপনের অনুমতি এবং সংযোগ দিতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিলম্বের কারণে নির্দিষ্ট ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়। অবশেষে ২৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিপত্র হাতে পেয়ে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করে ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড। বেনাপোল সীমান্তের জিরো পয়েন্টে হ্যান্ডহোল স্থাপন করে সেখানে টাটার সাথে স্থল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলক ডাটা দেয়া-নেয়ার জন্য টেস্ট লিঙ্ক শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ফাইবার অ্যাট হোমের জনসংযোগ প্রধান আববাস ফারুক। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিসেকেন্ডে ১০ গি.বা. ডাটা দেয়া-নেয়ার পর বিটিআরসির অনুমতি সাপেক্ষে সেপ্টেম্বর মাসেই বাণিজ্যিকভাবে অপারেশনে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
আববাস ফারুক জানান, আইটিসির মাধ্যমে দেশে এবার নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। বিদ্যমান সাবমেরিন ক্যাবলের পাশাপাশি আরও ছয়টি ফাইবার নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে দেশ। এতে করে বিপিও তথা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করা ইন্টারনেট গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে।
বিশিষ্টজনের অভিমত
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক দফা সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়া ও কারিগরি উন্নয়নে রিপিটার প্রতিস্থাপন ইত্যাদি কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়াও ইন্টারনেটের কচ্ছপগতিতে হাঁপিয়ে উঠেছে দেশের নেটিজেনেরা। তাই স্থলপথে ইন্টারনেট সংযোগের এই বিকল্প ক্যাবল স্থাপনের খবরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থলপথে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক চালুর খবর সম্পর্কে কথা হয় দেশের বিশিষ্টজনদের সাথে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, ‘কলসেন্টারগুলোর জন্য দেশের একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যাকআপ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে ছিল। ইন্টারনেটের এই স্থলপথ সংযোগটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী। এর ফলে দেশে ব্যান্ডউইডথের দামের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়বে। বিশেষ করে দেশের কলসেন্টারের জন্য। একই সাথে দেশের ব্যান্ডইউডথের দাম কিছু কমে যাবে।’
আইটিসি সংযোগ চালুর বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ তথা আইএসপিএবি সভাপতি আক্তারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, বর্তমানে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই নতুন আইটিসি লাইসেন্সধারীদের ঢাকাসহ অন্য যেকোনো দুটি বিভাগীয় বা জেলা শহরে প্রথমদিন থেকে সংযোগ দেয়ার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রাখা উচিত।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা শহরে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিতে সরকার পদক্ষেপ নেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আইআইজি নেটওয়ার্ক শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত, তাই দেশের সব প্রান্তের জনসাধারণের জন্য সুলভে এবং সহজে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার জন্য আইএসপিএবিদের সরাসির আইটিসি হতে সংযোগ গ্রহণের সুযোগ দেয়া উচিত।
দেশের ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে আইটিসি সেবা চালুকে নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়লেও এখন থেকে বাংলাদেশকে আর বহির্বিশ্বের সাথে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে না। ইন্টারনেট ও টেলিফোননির্ভর ব্যবসায় বিনিয়োগ আন্তর্জাতিকভাবে বাড়বে। কলসেন্টারগুলো পূর্ণোদ্যমে কাজ চালাতে সক্ষম হবে।
একই বিষয়ে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ খান বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল সংযোগের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে দেশে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত হবে। এর ফলে গতি পাবে ইন্টারনেটনির্ভর ব্যবসায় ও সেবা কার্যক্রমে। পাশাপাশি ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠায় এই নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। থ্রিজি চালু হলে স্থলজ এই ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে দেশে টেলিপ্যাথি থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরিতে দারুণ অবদান রাখবে। আইপিটিভির মতো ইন্টারনেটনির্ভর নতুন নতুন ব্যবসায় ও সেবার দুয়ার উন্মুক্ত হবে। সহজতর হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজ। সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
বেসিসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযোগের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ মাত্র একটি সাবমেরিন ক্যাবলের ওপর নির্ভরশীল। এতে করে বিশ্বের কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হলে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। আর এখন আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো অপটিক ফাইবার লাইনের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সাথে সংযুক্ত হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্তির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে এই সংযোগ চালু হলে দেশে ইন্টারনেট সংযোগনির্ভর সেবা ব্যবসায় বিশেষ করে কলসেন্টার, আউটসোর্সিং, ডাটা সেন্টার ছাড়াও সফটওয়্যার শিল্প বিকাশের পথ সহজতর হবে।
ইন্টারনেট সংযোগ সব দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, আশা করছি প্রতি মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম তিন হাজার টাকার মধ্যে রাখা হবে। তাহলে এর ভোক্তা যেমন বাড়বে, তেমনি এই খাতে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।
এদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছ থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো পাশের দেশে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করার অনুমোদন পেয়েছে আইটিসি কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি গত এপ্রিলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা এবং চেন্নাইয়ের মধ্যে সংযোগ দেয়ার জন্য ‘ভার্চুয়াল ট্রানজিট’ সুবিধা দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ভারত সরকার। সব মিলিয়ে ভি-স্যাট নির্ভরতা কমিয়ে সঙ্কুচিত বিকল্প পথে সংযুক্ত বৈশ্বিক ইন্টারনেট সংযোগ চালুর আগেই এর চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে এর নজিরও দেখা গেছে। বাণিজ্যিকভাবে সংযোগ চালুর আগেই ওয়ান এশিয়া কমিউনিকেশনের সাথে যোগাযোগ করেছে বাংলেদেশস্থ ভুটান দূতাবাস। ইতোমধ্যেই সংযোগ পেতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে বৈঠক করেছেন দূতাবাসের কাউন্সিলর/ডেপুটি চিফ অব মিশন কারমা এস টিওসার।
বিকল্প পথে ভারতের কলকাতা হয়ে মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কানেক্টিভিটি এবং সাবমেরিন উভয় পথেই সংযুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরবচ্ছিন্নভাবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বিপুল তথ্য দেয়া-নেয়া নিশ্চিত করতে ৯৬ কোর থেকে ২১৬ কোর ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রত্যয় বাস্তবায়নে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অচিরেই দেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রে রেনেসাঁর দেখা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক :netdut@gmail.com