গত অক্টোবর সংখ্যায় আমরা ‘আইসিটি খাতের অনিয়ম’ নিয়ে একটি সম্পাদকীয় লিখে এ অনিয়ম দূর করার তাগিদ রেখেছিলাম সংশ্লিষ্টদের কাছে, কিন্তু সে অনিয়ম এখনও চলছেই। এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। ওই সম্পাদকীয়তে আমরা গত ২৮ সেপ্টেম্বরের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে লিখেছিলাম- ‘১২০০ কোটি টাকা আইজিডব্লিউগুলোর পকেটে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরদের কাছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা দাঁড়িয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত এ ১২০০ কোটি টাকা পাওনা দাঁড়ায়। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের পাওনা সামান্য পরিমাণ পরিশোধ করেছে। তার পরও তখন এ পাওনার পরিমাণ থেকে যায় হাজার কোটি টাকার ওপরে। এক সময় কয়েকটি কোম্পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাজনৈতিক তদবিরে আবার সংযোগ দেয়া হয়। আমরা তখন এ তথ্য তুলে ধরে সরকারের এ বিপুল পরিমাণ পাওনা আদায়ের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ রেখেছিলাম। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলেই মনে হয়।
গত ২৮ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিন এর একটি খবরে জানিয়েছে- ১০০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেই ছয়টি আইজিডব্লিউর কল ব্লক তুলে নিল বিটিআরসি। দৈনিকটির খবরে বলা হয়- প্রভাবশালী মহলের চাপে নিয়ম ভেঙ্গে শত কোটি টাকা বকেয়া রেখেই ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের (আইজিডব্লিউ) কল ব্লক তুলে নিল বিটিআরসি। এতে আন্তর্জাতিক কল আনার ক্ষেত্রে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সংস্থার চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গত ২৭ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকটি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ করেছে। বাকি ৫০ শতাংশ বকেয়ার ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়ায় তাদের কল ব্লক তুলে নেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কল আনার বেলায় প্রতিটি কোম্পানিকে দিনে এক লাখ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ মিনিট পর্যন্ত সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এরচেয়ে বেশি কল এরা আনতে পারবে না। সূত্র মতে, ব্লক তুলে নেয়া কোম্পানিগুলো হলো- এসএম কমিউনিকেশন্স, ভেনাস টেলিকম, র্যাং কসটেল, মস ফাইভ এবং সিগমা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। দেশের ২৯টি আইজিডব্লিউ কোম্পানির কাছে সরকারের এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ও লাইসেন্স ফি পাওনা আছে। শত শত কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া রাখার অভিযোগে বিটিআরসি গত কয়েক মাসে ২৯টির মধ্যে ১২টি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের কল ব্লক করে দেয়। এর মধ্যে রাতুল টেলিকম, টেলেক্স লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া টেলিকমিউনিকেশন এবং বেস্টটেক টেলিকম লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। একাধিক সূত্র মতে, সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর কন্যার নামেই রাতুল টেলিকম। গত অক্টোবর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের রাজস্ব পাওনা ৯৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ভূতপূর্ব এক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাতুলের লাইসেন্স বাতিল না করে উল্টো তাদের কিস্তি সুবিধা দিয়ে বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ দেন।
এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর দৈনিক মানবজমিন আরেক খবরে জানিয়েছে- রাজনৈতিক আশীর্বাদে চলমান থাকা আইজিডব্লিউ কোম্পানি ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। কোম্পানিটির কাছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এরপরও প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে তাদের কল ব্লক করা যাচ্ছে না। ঢাকার একটি আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সরাসরি হস্তান্তর ফলে এমনটি ঘটছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ফলে কোম্পানিটি নিজের খেয়াল-খুশি মতো নানা ধরনের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এ যেনো দেখার কেউ নেই। বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। এ কারণে এখন পর্যন্ত কমিশনের সদিচ্ছা থাকার পরও বিটিআরসি কিছুই করতে পারছে না।
আমরা মনে করি, আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া থাকা নিয়ে যে অনিয়ম চলছে, তা কখনই সম্ভব হতো না, যদি এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের সরাসরি চাপ কাজ না করত। আমরা মনে করি, অবিলম্বে রাজস্ব আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার। আশা করি, কর্তৃপক্ষ আমাদের দ্বিতীয়বারের তাগিদ আমলে নিয়ে সমস্যাটির একটি সুরাহা করে এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে ।