গ্রাফিক্স এবং গেমপ্লের দিক থেকে কমপিউটার গেম একসময় কনসোল গেমকে ছাড়িয়ে গেলেও এখন কনসোল গেমিং এবং কমপিউটার গেমিং তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সমান সমান পর্যায়ে অবস্থান করছে। যেকোনো গেম নির্মাতা এখন গেম তৈরির করার সময়েই ঠিক করে নেয় যে কোন মাধ্যমে গেমটি রিলিজ করা হবে, পিসি নাকি কনসোল। অবশ্য এখনকার মোটামুটি সব গেমই একসাথে পিসি এবং কনসোল মাধ্যমে অবমুক্ত করা হয়।
গেম শুধু এখন পিসি বা কনসোলভিত্তিক বলা যাবে না। গেম আজকাল মোবাইল ফোনেও সম্পৃক্ত হয়েছে। যে গেম বা গেমের যে ভার্সন পিসিতে খেলা যায়, মোবাইল ফোনেও সেই একই গেম খেলা যায়। তবে মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানিভেদে গেমের প্লাটফর্ম এখনও কিছুটা আলাদা। যেমন, নোকিয়া ফোনের জন্য এনগেজ। তবে অনেক গেম নির্মাতা জাভাভিত্তিক গেম তৈরি করে বাজারে ছাড়ে যাতে সব ধরনের ফোন ব্যবহারকারী তা চালাতে পারে।
তাই আজ গেম ইন্ডাস্ট্রিতেও এসেছে পরিবর্তন। পুরনো গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজকাল আগের জনপ্রিয়তা পাওয়া গেমগুলো পুঁজি করে একই গেমের নতুন নতুন সিক্যুয়েল ছাড়ছে। এতে তারা যে কম ব্যবসায় করছে তা নয়। আগের গেমের নতুন সিক্যুয়েল ছাড়ার কারণে নতুন গেমারের পাশাপাশি পুরনো গেমাররাও এ গেমগুলো কিনছে এবং খেলছে। তার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে ম্যাজেস্টি ২।
আমাদের দেশে তুলনামূলক রেসিং, স্ট্র্যাটেজিক গেম বেশি খেলা হয়। স্পোর্টস গেম বা অ্যাকশন গেম তুলনামূলক কম খেলা হয়ে থাকে। তবে সব ধরনের গেমারদেরই খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। স্পোর্টস গেম কম খেলা হলেও ফুটবল বা ক্রিকেট কিন্তু খুব জনপ্রিয় খেলা এদেশে। সেই তুলনায় অন্যান্য স্পোর্টস গেম পাওয়া যায় না বললেই চলে। ইদানীং অ্যাকশন গেম ভালোই চলছে আমাদের দেশে। রেসিং এবং স্ট্র্যাটেজিক গেমের জনপ্রিয়তা খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের দেশে এনএফএস (নীড ফর স্পিড), কমান্ডোজ, এজ অব এম্পায়ার, সি অ্যান্ড সি (কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার) প্রভৃতি গেমের জনপ্রিয়তা দিয়ে। কিন্তু গেমিংয়ের আরো কিছু শাখা যেমন অ্যাডভেঞ্চার, এয়ার ট্যাক্টিক্স, টার্ন বেইজড প্রভৃতি গেমের গেমার পাওয়া যায় না বললেই চলে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে অ্যাডভেঞ্চার এবং টার্ন বেইজড গেম প্রচন্ড জনপ্রিয়।
ম্যাজেস্টি গেমটি আজকালকার আধুনিক গেমের তুলনায় বেশ পুরনো গেম। আর ম্যাজেস্টি ২ এ গেমেরই সরাসরি সিক্যুয়েল। ম্যাজেস্টি গেমটি মুক্তি পায় আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে। এ গেমটি হচ্ছে একটি রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজিক গেম। রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজিক গেমের আসল কাজ হচ্ছে কনস্ট্রাকশন তৈরি করার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চেয়ে শক্তিশালী একটি সৈন্যবাহিনী তৈরি করে নির্দিষ্ট মিশনে জয়লাভ করা। অনেকটা সিম সিটি গেমের মতো। তবে এখানে পার্থক্য হচ্ছে এতে কনস্ট্রাকশন তৈরির পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে পরাজিতও করতে হবে।
এ গেমটি তৈরি করেছে প্যারাডক্স। প্যারাডক্স নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তারা তাদের তৈরি করা গেমগুলো দিয়েই নিজেদের ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে। এ গেমটি পিসিতে শুধুই উইন্ডোজ প্লাটফর্মে চলার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। পাবলিশারের দাবি ম্যাজেস্টির প্রথম গেমে যেমন উত্তেজনা রাখা হয়েছিল এ গেমে তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা রাখা হয়েছে। প্রথম ম্যাজেস্টি গেমে যা যা ছিল তার সবই এ গেমে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ গেম মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল গত বছর ১৮ এপ্রিল। কিন্তু মুক্তির আগেই প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি গেমারদের মনে আগ্রহ তৈরি করেছে।
গেমের গেমপ্লে আগের মতোই রাখা হয়েছে। শুধু গ্রাফিক্সে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। কারণ আগের ম্যাজেস্টি গেমটি ছিল দিবমাত্রিক একটি স্ট্র্যাটেজিক গেম। কিন্তু ম্যাজেস্টি ২ : ফ্যান্টাসি কিংডম সিম একটি নিখাদ ত্রিমাত্রিক গেম। যারা সিমুলেশন খুব পছন্দ করেন তাদের জন্য আদর্শ গেম হচ্ছে এটি। এ গেমটি যতটা না ত্রিমাত্রিক স্ট্র্যাটেজিক তার চেয়ে বেশি সিমুলেশন ধরনের গেম। যারা সিরিয়াস রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজিক গেম খেলেন তারা কিছুটা হতাশ হবেন এই গেম খেলে, কারণ হচ্ছে এ গেমের সিমুলেশন।
গেমের মূল ক্যাম্পেইনে আপনাকে শুরুতেই একটি শহর দেয়া হবে। শহরে আপনার পছন্দমতো সিমুলেশনের মাধ্যমে কনস্ট্র্যাকশন তৈরি করে নিতে হবে। শহর তৈরি করা হয়ে গেলে আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে শক্তি বাড়ানোর দিকে। এ গেমটি খেলতে হলে প্রয়োজন পড়বে উপস্থিত বুদ্ধির পাশাপাশি অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। কারণ পুরো ম্যাপে আপনাকে ফ্ল্যাগ বা পতাকা ধরে ধরে এগুতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, কোথায় কোথায় বা কোন কোন এলাকা আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে বা কোন এলাকা আপনি দখলে নিতে চান।
গেমের গ্রাফিক্সের মান এককথায় অতুলনীয়। তুলনামূলক কম মেমরিতেও এটি খেলতে কোনো সমস্যা হয় না। এর ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স কোয়ালিটি অত্যন্ত চমৎকার। তবে গেমের ইউনিটগুলোর আউটলুক অতটা বাস্তবের মতো নয়। তবে এর গ্রাফিক্স কোয়ালিটি এতো ভালো যে আউটলুক খুব একটা চোখে লাগে না। তাছাড়া এর গ্রাফিক্সের বৈচিত্রটাও দেখার মতো। আর গেম ডিটেইলসের কথা নাইবা বললাম। এ গেমের গেম ডিটেইলস এতটাই চমৎকার যে নবীন গেমারদেরকেও মুগ্ধ করবে। যারা গেমিংয়ের কিছুই জানেন না তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, এর গেম ডিটেইলস অত্যন্ত চমৎকার।
শুধু যে গ্রাফিক্সই ভালো তাই নয়, গেমের সাউন্ড এবং মিউজিক কোয়ালিটিও এক কথায় অসাধারণ। এর মিউজিক এবং সাউন্ড সিস্টেম ত্রিমাত্রিক। এ ত্রিমাত্রিক শব্দশৈলী সত্যিকার অর্থেই মনোরম। মনে হবে যেনো আপনি নিজেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন।
যা যা প্রয়োজন : প্রসেসর : পেন্টিয়াম ৪ বা তদুর্ধ, এএমডি অ্যাথলন বা তদুর্ধ, গ্রাফিক্স কার্ড : ২৫৬ মেগাবাইট বা তদুর্ধ, র্যাম : ১ গিগাবাইট বা তার বেশি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuza_ahmad@yahoo.com