চেনা সংখ্যার অচেনা জগৎ
গণিত৷ এক অনন্য জগত্৷ রহস্যময়৷ আনন্দময়৷ সুন্দরের প্রতীক৷ শৃঙ্খলার অনন্য উদাহরণ৷ এ উদাহরণ নিয়ম মেনে চলার৷ নিয়ম ভাঙ্গার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই গণিতের এই জগতে৷ নিয়মটা মন দিয়ে জেনে নেয়াই এখানে বড় কাজ৷ যারা সে নিয়ম জানে, তাদের জন্য গণিতের সড়কে পথ চলা আনন্দময়৷ যারা সত্যিকার অর্থে গণিতকে জানতে চায়, গণিত জগতের মজা পেতে চায়, গণিতের প্রতি থাকে আগ্রহ, তাদের জন্য গণিতের নিয়মকানুন শেখা মোটেও কষ্টের কিছু নয়৷ যারা গণিতকে ভালোবাসতে চায়, গণিতের প্রতি আছে যাদের নিজস্ব আগ্রহ, শুধু তারাই গণিতের মজার জগতে ঢুকতে পারে৷ উপভোগ করতে পারে গণিতের অনন্য-সাধারণ সব মজা৷ গণিত তাদের কাছে হয়ে ওঠে বিনোদনের উপাদান৷ এখানে সংখ্যার জগতের দুয়েকটি মজা তুলে ধরছি৷ যাদের গণিত নিয়ে এখনো আছে সীমাহীন ভয়, তাদের বলছি এখানে এ লেখাটি পড়া বন্ধ করে দেবেন না৷ একটু মন দিয়ে পড়লে যেকোনো সাধারণ পাঠকও এখানে তুলে ধরা গণিতের মজাগুলো সহজেই উপভোগ করতে পারবেন৷ এখানে তুলে ধরা মজাটা আমাদের চিরচেনা সংখ্যা ১, ২, ৩, ৪, ৫,... ইত্যাদি নিয়ে৷ এই চিরচেনা সংখ্যার কত অজানা দিক যে থেকে গেছে আমাদের চিন্তার বাইরে, তা কল্পনাও করা যায় না৷
যদি প্রশ্ন করি, গণিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মৌলিক আবিষ্কার কোনটি? জবাবে বলবো, গণনা করার সংখ্যা ০, ১, ২, ৩, ৪,... ইত্যাদি হচ্ছে গণিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মৌলিক আবিষ্কার৷ গণিতে এ এক মহাআবিষ্কার৷ এ সংখ্যাগুলোর চেয়ে গণিতে আর কিছু মৌলিক আবিষ্কার আছে বলে মনে হয় না৷ এই চিরচেনা সংখ্যাগুলোর মাঝে লুকিয়ে আছে অবাক করা মজার মজার নানা রহস্য৷ এ রহস্য জগতের পরিধি অকল্পনীয়ভাবে বিশাল৷ একটি মাত্র লেখায় সে রহস্যের ছিটেফোটাও তুলে ধরা স√ব নয়৷ শুধু দুয়েকটা উদাহরণ তুলে ধরে জানিয়ে দিতে চাই, গণিতের জগত্টা কত মজার, কত বিশাল!
এক.
আমাদের কাছে ১০০ হচ্ছে অতি চেনা একটি সংখ্যা৷ প্রতিদিন এর ব্যাপক ব্যবহার আমরা সবাই কমবেশি করি৷ কিন্তু আমরা এই সাধারণজনেরা কখনো কি ভেবে দেখেছিX ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, এই দশটি অঙ্ক একবার করে ব্যবহার করে এই ১০০ সংখ্যাটিকে আমরা নানাভাবে লিখতে পারি৷ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক :
১০০ = √(৯+৮-৭-৬) স ৫ স (৪+৩+২+১-০)
১০০ = (৭-৫)২ + ৯৬ + ৮ - ৪ - ৩ - ১ + ০
>>>>১০০ = (৯ + ৮ - ৭ - ৬ + ৩ - ২ + ১ স ০) স ৪ স ৫
১০০ = ৩২ + ৯১ + ৭ + ৮ - ৬ - ৫ - ৪ + ০
১০০ = ১২৩ - ৪৫ - ৬৭ + ৮৯ + ০
১০০ = (৭ - ৫) স ৫ স (৪ + ৩ + ২ + ১ - ০)
১০০ = √৯ - ৬ + ৭২ - ১ স ৩! - ৮ + ৪৫ + ০
লক্ষণীয়, এখানে ৩! = ফ্যাক্টরিয়েল ৩ = ১ স ২ স ৩ = ৬
একইভাবে ৪! = ফ্যাক্টরিয়েল ৪ = ১ স ২ স ৩ স ৪ = ২৪
৫! = ফ্যাক্টরিয়েল ৫ = ১ স ২ স ৩ স ৪ স ৫ = ১২০ ইত্যাদি৷
৩!, ৪!, ৫! ইত্যাদিকে যথাক্রমে ৩, ৪ ও ৫ও লেখা হয়৷
১০০ = (৪! - ৩!) স ৫২ + (৬ + ৯) স ০
(৭ + ৪) স ১
১০০ =৩ স ৯ + ৫-৭ + ৬৮ + ৪ + ২১ + ০!
মনে রাখতে হবে ০! = ১৷
১০০ =(√৯ + ২) (১ + ৩) + √(৭ + ৮ + ৬০) + ৪ স ৫
মনে রাখতে হবে ১০ = ২০ = ৩০ =... = ১
১০০ ={৮৯ + (৪ - ৩) + ৫ স ২} স ৭১৬০
১০০ =(১ + ৯) (২ + ৮) (৩ + ৭) (৪ +৬) স ৫০
১০০ =√৮১ স ২০ - (৯৭ - ৬৭ + ৫৪)
১০০ =১ স ২৫ স (৬ X ৩) স (৮ X ৪) + ০৭৯
মনে রাখতে হবে ০১ = ০২ = ... = ০৭৯ = ০
এভাবে আরো কয়েকভাবে ০- সহ ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্ক একবার ব্যবহার করে ১০০ সংখ্যাটি লেখা যাবে৷ চেষ্টা করে দেখুন না, পারেন কি না৷
দুই.
আমরা স্কুলে দুই ধরনের সংখ্যার কথা শুনেছি৷ একটি মৌলিক সংখ্যা৷ অপরটি কৃত্রিম সংখ্যা৷ একটু মনে করিয়ে দিই ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ২৯, ৩৭,... ইত্যাদি হচ্ছে এক-একটি মৌলিক সংখ্যা৷ কারণ, এসব সংখ্যার কোনটিকেই ১ অথবা ওই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না৷ অপরদিকে যেসব সংখ্যা মৌলিক নয়, সেগুলো কৃত্রিম সংখ্যা৷ যেমন ৪, ৬, ৮, ৯, ১০,... ইত্যাদি কৃত্রিম সংখ্যা৷ মনে রাখবে ১ কে মৌলিক সংখ্যা না ধরে কৃত্রিম সংখ্যা ধরা হয়৷
এখন মৌলিক সংখ্যার একটা মজার গুণের কথা জানাবো৷ যেসব মৌলিক সংখ্যাকে ৪ দিয়ে যোগ করলে সবসময় ভাগশেষে থাকে ১, সেগুলোকে দুই বর্গের যোগফল আকারে প্রকাশ করা যায়৷
যেমন :
৫ = ১২ + ২২
১৩ = ২২ + ৩২
১৭ = ১২ + ৪২
২৯ = ২২ + ৫২
৩৭ = ১২ + ৬২
৪১ = ৪২ + ৫২
সংখ্যার এ নিয়ম মেনে চলার বিষয়টি মজার না কি!
তিন.
নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো একটি সংখ্যা নিই৷ ধরা যাক সংখ্যাটি ৪৷ এর দ্বিগুণ করি৷ দ্বিগুণ সংখ্যাটি হচ্ছে ৮৷ এখন প্রথমে নেয়া সংখ্যা ৪ ও এর দ্বিগুণ ৮-এর মাঝখানে আছে তিনটি পূর্ণ সংখ্যা : ৫, ৬, ৭৷ এর মধ্যে শুধু ৫ ও ৭ মৌলিক সংখ্যা৷
এভাবে সংখ্যা ৩ ও এর দ্বিগুণ ৬-এর মাঝে দুটি সংখ্যা হচ্ছে ৪ ও ৫৷ এই ৪ ও ৫-এর মধ্যে ৫ সংখ্যাটি মৌলিক৷
আবার ৫ ও এর দ্বিগুণ সংখ্যা ১০-এর মাঝে আছে ৪টি সংখ্যা : ৬, ৭, ৮, ৯৷ এগুলোর মধ্যে শুধু ৭ হচ্ছে মৌলিক৷
এভাবে আমরা ছোট কিংবা বড় যেকোনো সংখ্যা এর দ্বিগুণ সংখ্যার মাঝে যতগুলো সংখ্যা পাবো, তার মধ্যে অন্তত একটি সংখ্যা অবশ্যই পাবো মৌলিক সংখ্যা৷
যেকোনো সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষা করেই দেখুন না নিয়মটা সঠিক কি না৷
গণিতদাদু ....................................................................................................
বলুন তো কার ছবি : ২১
ছবির এই গণিতবিদ একজন ব্রিটিশ৷ তিনি একজন জ্যোতিবির্দও ছিলেন৷ ১৮৪২ সালে স্নাতক হওয়ার পর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে আইন পেশায় নিয়োজিত হন৷ ১৪ বছর আইন পেশায় থাকার সময় তিনি গণিতবিষয়ে ৩০০ গবেষণা প্রবন্ধ লিখেন৷ এগুলোর অনেকগুলো ছিলো সেরা ও মৌলিক৷ এ সময়ে তিনি দেখা করেন অনেক গণিতবিদের সাথে৷ তেমনি একজন গণিতবিদ ছিলেন জেমস জুসেফ সিলভেস্টার৷ তিনিও গণিত ও আইনে সাধনা করে চলছিলেন আলোচ্য গণিতবিদের সাথে৷ এরা দুজনে একযোগে কাজ করেন৷ বীজগণিতের ইনভরিয়েন্ট থিওরির ওপর৷ এ তত্ত্ব অপেক্ষিক তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে৷ ১৮৬৩ সালে ছবির এই গণিতবিদ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যাডলেরিয়াল চেয়ার পদে নির্বাচিত হন৷ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন৷ তার জন্ম ১৮২১ সালে৷ মৃত্যু ১৮৯৫ সালে৷ বলুন তো, কে এই গণিতবিদ?