গোল্ডবাক কনজেকচার
সর্বকালের সেরা পদার্থবিদ ধরা হয় আইনস্টাইনকে৷ কারণ বিজ্ঞানীদের মতে, ১৯০৫ সালে পদার্থবিদ আইনস্টাইন পাঁচটি জগদ্বিখ্যাত গবেষণা-প্রবন্ধ লিখে পদার্থবিদ্যায় এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন৷ এর মাধ্যমে তিনি পুরনো সব ধারণা পাল্টে দেন৷ তাই তাদের মতে, ১৯০৫ সালটা আইনস্টাইনের জন্য একটা বিস্ময়বর্ষ৷ এর ১০০ বছর পর তাই ২০০৫ সালে বিশ্বজুড়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যাবর্ষ৷ স্মরণ করা হায় আইনস্টাইনের অবদানকে নানাভাবে৷
যদি প্রশ্ন আসে, সর্বকালের সেরা গণিতবিদ কে? এর জবাবে আসে দুটি নাম: কার্ল ফ্রেডারিখ গস এবং লিওনার্দ পল অয়লার৷ তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সর্বকালের সেরা গণিতবিদ হওয়ার ক্ষেত্রে অয়লারের যোগ্যতাই বেশি৷ কারণ, এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য, তার মতো আর কোনো গণিতবিদই এত বেশি গবেষণা-প্রবন্ধ লিখে যেতে পারেননি৷ গবেষণার পাশাপাশি পাঁচশয়েরও বেশি বই লিখে গেছেন তিনি৷ মারা যাবার পর তার চারশর বেশি গষেণাপত্র বেরিয়েছে৷ বছরে গড়ে তিনি লিখতেন ৮০০-র মতো পৃষ্ঠা৷ এই গণিতবিদ জন্মেছিলেন আজ থেকে ঠিক ৩০০ বছর আগে৷ ১৭০৭ সালের ১৫ এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে৷ গত ১৫ এপ্রিল গণিতপ্রেমী মানুষ পালন করলো তার জন্ম ত্রিশতবার্ষিকী৷
অসাধারণ মেধাবী এই গণিতবিদের লেখা ৮৬৬টি গবেষণা পুস্তক ও প্রবন্ধ জুড়ে রয়েছে গণিত, তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা ও প্রকৌশল বিষয়ক গবেষণার নানা বিবরণ৷ গণিতের ক্ষেত্রে তার অবদান অসাধারণ৷ গণিতের নানা ক্ষেত্রে ছিল তার বিচরণ৷ অন্য অনেক ক্ষেত্র ছাড়াও সংখ্যার রাজ্যে মজে থাকতেন পল অয়লার৷ সে যুগে বিশেষজ্ঞরা নিজেদের গবেষণা আর আবিষ্কারের খবর একে অন্যকে প্রায়ই চিঠি লিখে জানাতেন৷ ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রখ্যাত গণিতবিদ ক্রিশ্চিয়ান গোল্ডবাক এক চিঠিতে অয়লারকে লিখেন, জোড় সংখ্যার এক মজার ধর্মের কথা৷
কী সেই মজার ধর্ম? দেখা যাচ্ছে, যেকোনো জোড় সংখ্যাই দুটি মৌলিক সংখ্যার সমষ্টি৷ মৌলিক সংখ্যা কোনগুলো? ২, ৩, ৫, ৭, ১১,... ২৯, ... ৩৭,... ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যা৷ এসব সংখ্যা অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য নয়৷ অর্থাত্ এসব সংখ্যাকে অন্য কোনো দুই বা ততোধিক সংখ্যার গুণফল আকারে প্রকাশ করা যায় না৷ যেসব সংখ্যাকে এভাবে প্রকাশ করা যায়, তাদের বলে যৌগিক সংখ্যা৷ যেমন ৬ বা ৩৫ যৌগিক সংখ্যা৷ কারণ, ৬ = ৩ স ২, ৩৫ = ৫ স ৭৷ অর্থাত্ ৬ সংখ্যাটি ৩ কিংবা ২ দিয়ে বিভাজ্য৷ ৩৫ বিভাজ্য ৭ কিংবা ৫ দিয়ে৷
গোল্ডবাক অয়লারকে চিঠিতে যা লিখেছিলেন, তাহলো যেকোনো জোড় সংখ্যাই দুইটি মৌলিক সংখ্যার সমষ্টি৷ যেমন-
৪ = ২ + ২
৮ = ৩ + ৫
১৬ = ৫ + ১১
৩০ = ১৩ + ১৭ = ৭ + ২৩ = ১১ + ১৯
গোল্ডবাক বলতে চাইলেন, তিনি এমন একটি জোড় সংখ্যাও খুঁজে পাচ্ছেন না, যা এ ধরনের দুইটি মৌলিকের সমষ্টি হিসেবে লেখা যায় না৷ অয়লারকে লেখা গোল্ডবাকের ওই চিঠি আজো বিখ্যাত হয়ে আছে৷ হাঁ আজ পর্যন্ত আর কেউ এমন একটা জোড় সংখ্যা বা ইভেন নাম্বার খুঁ জে পাননি, যা দুটো মৌলিক সংখ্যার সমষ্টি নয়৷ দেখা গেছে, বড় এবং তার চেয়েও বড় জোড় সংখ্যাও একজোড়া মৌলিক সংখ্যার সমষ্টি৷ যেমন-
৩৮৯৯৬৫০২৬ ৮১৯ ৯৩৮ = ৫৫৬৯ + ৩৮৯৯৫৫, ০২৬৮১৪৩৬৯
তবে অবাক ব্যাপার হলো, একদিকে কেউ এমন জোড় সংখ্যার সন্ধান দিতে কেউ পারছেন না, যা দুইটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল নয়৷ অপরদিকে কেউ প্রমাণও করতে পারছেন না যে, প্রতিটি জোড় সংখ্যা অবশ্যই অবশ্যই দুটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল হতে হবে৷ জোড় সংখ্যার এই অদ্ভুত ধর্মটা তাই আজো বিখ্যাত হয়ে আছে গোল্ডবাকস কনকেচার বা গোলবারে অনুমান নামে৷ ওই অনুমান সঠিক বা ভুল কিনা, অর্থাত্ যেকোনো জোড় সংখ্যাই দুটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল হতেই হবে কি হবে না, তার মান একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে৷ তা প্রমাণের জন্য ২০০০ সালে দশ লাখ ডলারের পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছিল৷ সেই পুরস্কারের সময়সীমা পার হয়ে গেছে৷ কেউ তা পায়নি, গোল্ডবাকস কনকেচার এমন একটি বিষয়, যার প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেননি৷
গোল্ডবাক অবশ্য অয়লারকে জানিয়েছিলেন মৌলিক সংখ্যা তৈরির জন্য ফরাসী গণিতজ্ঞ পিয়ের দ্য ফার্মার উদ্ভাবিত একটি ফর্মুলার কথা৷ ফার্মা দেখিয়েছিলেন ২২ক + ১, এই চেহারায় সংখ্যায় ক-এর মান ০, ১, ২, ৩ বসা মৌলিক সংখ্যা পাওয়া যায়৷ যেমন- যখন ক = ০ তখন
২২ক + ১ = ২২০ + ১ = ২১ + ১ = ২+১ = ৩
আর এই ৩ একটি মৌলিক সংখ্যা৷
আবার যখন ক = ২, তখন
২২ক + ১ = ২২২ + ১ = ২৪ + ১ = ১৬ + ১ = ১৭
এই ১৭ একটি মৌলিক সংখ্যা৷
অয়লার জবাবী চিঠিতে গোল্ডবাককে জানান, ক-এর মান ৩ বা ৪ পর্যন্ত হলে ফার্মার ফর্মুলা সঠিক৷
ক = ৩ হলে, ২২ক + ১ = ২৫৭, যা একটি মৌলিক সংখ্যা৷
ক = ৪ হলে, ২২ক + ১ = ৬৫৫৩৭, যা একটি মৌলিক সংখ্যা৷
কিন্তু ক = ৫ হলে গোলমাল বাধে৷ তখন ২২ক + ১- এর মান বের করে যে সংখ্যা পাই, তা মৌলিক নয়৷ যেমন- ক = ৫ হলে,
২২ক + ১ = ২২৫ + ১ = ২৩২ + ১ = ৪২৯৪৯৬৭২৯৬ + ১ = ৪২৯৪৯৬৭২৯৭, যা মোটেও মৌলিক সংখ্যা নয়৷ কারণ আমরা দেখেছি ৪২৯৪৯৬৭২৯৭ = ৬৭০০৪১৭ স ৬৪১৷
গণিতদাদু
.................................................................................।
বলুন তো কার ছবি : ১৯
ছবির এই গণিতবিদ সুবিখ্যাত তার প্রভাবিলিটি সম্পর্কিত গবেষণা কর্ম ও মারকভ চেইনের ওপর পণ্ডিতসুলভ অবদানের জন্য৷ তিনি ১৮৭৮ সালে স্নাতক হন সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ সেখানে তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন ১৮৮৬ সালে৷ তার প্রাথমিক কাজ ছিল সংখ্যাতত্ত্ব বিশ্লেষণ, অবিরত ভগ্নাংশ, ইন্টিগরেলের লিমিট, এপ্রক্সিমেশন থিওরি এবং সিরিজ কনভারজেন্সের ওপর৷ ১৯০০ সালের পর তিনি অবিরত ভগ্নাংশ পদ্ধতির প্রয়োগ করেন প্রভাবিলিটি তত্ত্বে৷ তিনি পরস্পরনির্ভর চলকের সিকুয়েন্স চর্চা করেন৷ উদ্দেশ্য ছিল প্রভাবিলিটির নিয়মগুলোকে এর সবচেয়ে সাধারণ আকারে সীমিত করে দেয়া৷ তিনি সাধারণ অনুমানের ভিত্তিতে সেন্ট্রাল লিমিট থিওরেম প্রমাণ করেন৷ মারকভ চেইন চর্চার জন্য তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়৷ তার নামে নাম রেখেছিলেন তার পুত্রের৷ তার এ পুত্রের জন্ম হয়েছিল ১৯০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর৷ তিনিও বাবার মতোই সুপরিচিত গণিতবিদ ছিলেন৷ বলুন তো ছবির এ গণিতবিদ কে?