রেয়ার নাম্বার : প্রথম কিস্তি
ধরা যাক আমরা কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা না করেই একটা সংখ্যা নিলাম। সংখ্যাটি হচ্ছে ১৫। এবার এর অঙ্কগুলো উল্টো করে লিখে পেলাম ৫১। এই সংখ্যা দুটো একসাথে যোগ করে এবং একটা থেকে আরেকটা বিয়োগ করে আমরা দুটি সংখ্যা পেতে পারি। ১৫ ও ৫১-এর যোগফল ৬৬। এই ৬৬ একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা নয়। কারণ এর বর্গমূল পূর্ণ বর্গ সংখ্যা নয়। কিন্তু ৫১ ও ১৫-এর বিয়োগফল (৫১-১৫) বা ৩৬ একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা। কারণ ৩৬-এর বর্গমূল ৬। সুতরাং আমরা দেখলাম ১৫ সংখ্যাটি নিয়ে এর অঙ্ক দুটি উল্টো করে লিখে পাওয়া গেল সংখ্যা ৫১। এই ১৫ ও ৫১-এর যোগফল ও বিয়োগফল উভয়ই পূর্ণবর্গ সংখ্যা নয়। বিয়োগফল ৩৬ পূর্ণবর্গ সংখ্যা, কিন্তু যোগফল ৬৬ পূর্ণবর্গ সংখ্যা নয়।
এবার অন্য একটি সংখ্যা নেয়া যাক। ধরি এ সংখ্যাটি ক = ৬৫। অতএব অঙ্কগুলো উল্টো করে লিখে পাওয়া সংখ্যাটি যদি খ হয়, তবে খ = ৫৬।
অতএব ক + খ = ৬৫ + ৫৬ = ১২১ = ১১২
এবং ক - খ = ৬৫ - ৫৬ = ৯ = ৩২
তাহলে এক্ষেত্রে আমরা দেখছি ৬৫ সংখ্যা নিয়ে তা উল্টো করে পাওয়া যায় ৫৬। এই ৬৫ ও ৫৬- এর যোগফল কিংবা বিয়োগফল উভয়ই পূর্ণবর্গ সংখ্যা হয়। দেখা গেছে, এই ৬৫-র মতো এমন সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যায়, যেটি উল্টো করে লিখে পাওয়া সংখ্যার সাথে যোগ কিংবা বিয়োগ করে পাওয়া যোগফল কিংবা বিয়োগফল উভয়ই পূর্ণবর্গ সংখ্যা। এ ধরনের সংখ্যাকে গণিত জগতে বলা হয় Rare Number, বাংলায় যার নাম আমরা দিতে পারি বিরল সংখ্যা বা দুর্লভ সংখ্যা। তাহলে উপরে নেয়া ১৫ সংখ্যাটি রেয়ার নাম্বার নয় এবং ৬৫ সংখ্যাটি রেয়ার নাম্বার।
তাহলে এই রেয়ার নাম্বার বা বিরল সংখ্যা আমরা সংজ্ঞায়িত করতে পারি এভাবে। কোনো সংখ্যা যদি ক হয় এবং এর অঙ্কগুলো উল্টো করে লিখে পাওয়া সংখ্যা যদি হয় খ, তখন যদি ক ও খ-এর যোগফল বা বিয়োগফল উভয়ই পূর্ণবর্গ সংখ্যা হয়, তবে ক সংখ্যাটিকে আমরা বলবো রেয়ার নাম্বার বা বিরল সংখ্যা।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ৬৫-র মতো আরো কয়েকটি রেয়ার নাম্বার হচ্ছে :
৬২১৭৭০, ২৮১০৮৯০৮২, ২০২২৬৫২২০২, ২০৪২৮৩২০০২, ৮৬৮৫৯১০৮৪৭৫৭, ৮৭২৫৪৬৯৭৪১৭৮, ৮৭২৫৬৮৭৫৪১৭৮, ৬৯৭৯৩০২৯৫১৮৮৫, ২০৩১৩৬৯৩৯০৪২০২, ২০৩১৩৮৩৯৭০৪২০২, ২০৩৩১৬৫৭৯২২২০২, ২০৩৩১৮৭৫৭২২০২, ২০৩৩৩৩৮৭৫৭০২২০২, ৪০৩১৩৮৯৩৭০৪২০০, ৪০৩৫১৮৯৩৭২০২০০, ২০০১৪২৩৮৫৭৩ ১০০২, ২০৪২৩৮৪৯৪০৬৬০০২,....।
রেয়ার নাম্বারের ধর্ম :
০১.
একটি রেয়ার নাম্বারের প্রথম অঙ্ক কখনোই বিজোড় সংখ্যা হতে পারে না। অর্থাৎ একটি রেয়ার নাম্বারের শুরুর অঙ্কটি হতে হবে ২, ৪, ৬ কিংবা ৮।
০২.
ধরা যাক যেকোনো সংখ্যক অঙ্কের একটি রেয়ার নাম্বার হচ্ছে : ABCD... MNPQ, যেখানে A, B, C, D, ... M, N, P, Q এক একটি অঙ্কের নির্দেশক। অতএব উপরে উল্লিখিত ০১ নম্বর ধর্ম অনুযায়ী A-এর মান হবে শুধু ২, ৪, ৬ কিংবা ৮।
যদি A = ২ হয়, তখন Q = A = ২ এবং B = P, C = N,...।
যদি A = ৪ হয়, তখন Q = ০ এবং B-P = ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক জোড় অঙ্ক অর্থা -৮, -৬, -২, ০, ২, ৪, ৬, ৮।
যদি A = ৬ হয়, তখন Q = ০ অথবা ৫ এবং B-P = ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক বিজোড় অঙ্ক অর্থাৎ -৯, -৭, -৫, -৩, -১, ১, ৩, ৫, ৭, ৯।
যদি A = ৮ হয়, তখন = Q = ২, ৩, ৭ অথবা ৮।
যদি Q = ২ হয়, তখন B+P = ৯।
যদি Q = ৩ হয়, তখন B-P = ৭, কারণ B>P and B-P = -৩ যখন B
যদি Q = ৭, তখন B+P = ১১, যখন B>১
B+P= ১, যখন B<১
যদি Q = ৮, তখন B = P
নম্বর এবং ০২ নম্বর নিয়ম থেকে এটুকু স্পষ্ট যদি প্রথম ও শেষ অঙ্কটি একই হয়, তখন তা হতে হবে ২ অথবা ৮। এবং প্রথম দিক থেকে দ্বিতীয় অঙ্ক B এবং শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় অঙ্ক Q-এর মান হতে হবে একই। কোনো রেয়ার নাম্বারের প্রথম ও শেষ অঙ্কের পার্থক্য অর্থাৎ (A-Q)-এর মান হতে পারবে শুধু ০, ১, ৪, ৫ অথবা ৬। Q-এর মান কখনোই হবে না ১, ৪, ৬, ৯।
০৩.
একটি রেয়ার নাম্বারের ডিজিটাল রুটের মান হতে পারে শুধু ২, ৫, ৮ অথবা ৯।
উপরে বর্ণিত রেয়ার নাম্বারের গুণাগুণ সংক্ষেপে বর্ণনা করা যায় এভাবে-
যখন A = ২ ও Q = ২ তখন B = P
যখন A = ৪ ও Q = ০ তখন B ও P-এর পার্থক্য শূন্য অথবা জোড় সংখ্যা।
যখন A = ৬ ও Q = ০/৫ তখন B ও P-এর পার্থক্য বিজোড় সংখ্যা।
যখন A = ৮ ও Q = ২ তখন B + P = ৯
যখন A = ৮ ও Q = ৩ তখন B - P = ৭ অথবা P - B = ৩
যখন A = ৮ ও Q = ৭ তখন B + P = ১১ অথবা B + P = ১
যখন A = ৮ ও Q = ৮ তখন B = P
উপরে বর্ণিত গুণাবলী সহজেই প্রমাণ করা যাবে পূর্ণবর্গ সংখ্যার গুণাবলী বিশ্লেষণ করে।
০১.
আমরা জানি একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যায় শেষ অঙ্ক কখনোই ২, ৩, ৭ অথবা ৮ হয় না।
০২.
একইভাবে abc... xyz সংখ্যাটি পূর্ণবর্গ হবে :
যদি Z = ০ হয় তখন Y = ০ হয়।
যদি Z = ৫ হয় তখন Y = ২ হয়।
যদি Z = ১, ৪ কিংবা ৯ হয় তখন Y = জোড় হয়।
যদি Z = ৬ হয় তখন Y হয় বিজোড় হয়।
যদি একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যার ডিজিটাল রুট হতে পারে ১, ৪, ৭ অথবা ৯। উল্লেখ্য, একটি সংখ্যায় ডিজিটাল রুট পাওয়া যাবে সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর সমষ্টি বার বার বের করে, যতক্ষণ না এটি একটি একক অঙ্কে রূপ নেয়। যেমন ৬২৫ সংখ্যাটির ডিজিটাল রুট হচ্ছে ৪। কারণ ৬ + ২ + ৫ = ১৩, ১ + ৩ = ৪।
প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বার :
আমরা জানি একটা সংখ্যার অঙ্কগুলো শেষ দিক থেকে উল্টো করে লেখা সংখ্যাটি যদি কার্যত আসল সংখ্যাটি থেকে যায়, তবে সে সংখ্যাটিকে প্যালিনড্রমিক নাম্বার বলা হয়। যেমন ২০২ একটি প্যালিনড্রমিক সংখ্যা। কারণ ২০২-এ অঙ্কগুলো শেষ দিক থেকে শুরু করে উল্টো করে লিখলেও ২০২-ই হয়। কিন্তু ৩০৭ সংখ্যাটি প্যালিনড্রমিক সংখ্যা নয়, কারণ ৩০৭-কে উল্টো করে লিখলে হয় ৭০৩, যা মূল সংখ্যা ৩০৭ থেকে ভিন্ন। ভাষার ক্ষেত্রে একটি শব্দের অক্ষরগুলো এভাবে উল্টো করে লিখলে যদি মূল শব্দটিই পাওয়া যায় তবে এ শব্দকে বলা হয় প্যালিনড্রমিক শব্দ। যেমন বাংলা ‘কনক’ এবং ইংরেজি ‘madam’ শব্দ প্যালিনড্রমিক শব্দ। কারণ এগুলোর অক্ষরগুলো উল্টো করে লিখলে মূল শব্দটিই পাবো। বাংলায় আরো কিছু প্যালিনড্রমিক শব্দের উদাহরণ হলো- দাদা, মামা, কাকা, চাচা, নানা, সবস, বুবু ইত্যাদি।
যাই হোক, যেসব প্যালিনড্রমিক সংখ্যা প্যালিনড্রমিক হওয়ার পাশাপাশি একটি রেয়ার নাম্বার বা বিরল সংখ্যা, সেগুলোকে বলা হয় প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বার। যেমন ২৪২ একটি প্যালিনড্রমিক সংখ্যা। কারণ, যদি ক = ২৪২ হয়, তবে এখানে খ = ২৪২
ক + খ = ২৪২ + ২৪২ = ৪৮৪ = ২২২
ক - খ = ২৪২ - ২৪২ = ০ = ০২
যেহেতু সংখ্যামালা ২৪২, ২০৪০২, ২০০৪০০২, ২০০০৪০০২, ২০০০৪০০০০২, .... এর মধ্যে সব সংখ্যাই প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বার। অতএব সহজেই ধরা যায়, এ ধরনের অসংখ্য প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বার বাস্তবে রয়েছে।
অসংখ্য প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বারের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে : ২৪৬৪২, ২০৪০৬০৪০২, ২০০৪০০৬০০৪০০২, ২০০০৪০০০৬০০০৪০০২,... এবং ২৪৬৮৬৪২, ২০৪০৬০৮০৬০৪০২, ২০০৪০০৬০০৮০০৬ ০০৪০০২, ...।
প্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বারের সংখ্যা অসীম। তবে এখনো জানা যায়নি ননপ্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বারের সংখ্যা সসীম না অসীম।