আরো সমৃদ্ধ ‘কমপিউটার জগৎ’ চাই
স্বীকার করি এদেশে প্রযুক্তিবিষয়ক যে কয়টি সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে কমপিউটার জগৎ অন্যতম। অন্যান্য সাময়িকীর প্রতি কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন না করেই একথা বলা অযৌক্তিক হবে বলে আমি মনে করি। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কমপিউটার জগৎ-এর অনন্য অবদান স্বীকার করে নিয়ে একথা স্বীকার করতে হবে অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকীর অবদানও কম নয়। তাই আরো সমৃদ্ধ পর্যায়ের কমপিউটার জগৎ কামনা করার পাশাপাশি অন্যান্য সাময়িকী অবাধ অগ্রগতিও কামনা করি।
কমপিউটার জগৎ আমি নিয়মিত পড়ি। আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রযুক্তিজ্ঞান নেই। তবে পেশাগত কারণে আমাকে প্রতিদিন কমপিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে হয়। কোনো কোর্স করে নয়, বরং দেখে দেখে যা শিখেছি, তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। এতে আমার পেশাগত কাজের কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়নি। তবে এক্ষেত্রে কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত লেখাগুলো পাঠ করে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। বলতে পারি একটি পত্রিকাও এক্ষেত্রে পালন করতে পারে শিক্ষকের ভূমিকা। কমপিউটার জগৎ সে ভূমিকা আমার জীবনে পালন করছে। সময়ের সাথে উপলব্ধি করছি, প্রযুক্তিজ্ঞান ছাড়া সমৃদ্ধ জীবন কামনা করা অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে আমার জানার পরিধি আরো সমৃদ্ধতর করতে চাই। সেই চাওয়ার তাগিদ থেকেই আমার আজকের প্রত্যাশা : আরো সমৃদ্ধ ‘কমপিউটার জগৎ চাই।’ সে সমৃদ্ধ কমপিউটার জগৎ গড়ায় আপনাদের সফলতা কামনাও রইল একই সাথে।
নাজমুল হুদা মুনীর
শ্যামারচর, সুনামগঞ্জ
......................................................................................................
নামে কি আসে যায় চাই কাজের কাজ
আমি কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত পাঠক হিসেবে এ পত্রিকার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও রিপোর্টধর্মী লেখাগুলো মোটামুটিভাবে সবই পড়ার চেষ্টা করি। কমপিউটার জগৎ-এর সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত রিপোর্টধর্মী একটি লেখা ‘বিসিসি’র নাম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদফতর রাখার প্রস্তাব’ সম্পর্কে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অভিমত পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নাম ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে রূপান্তর করা হচ্ছে ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদফতর’। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রস্তাবিত এই অধিদফতর কাজ করবে। এতে প্রস্তাবনার কৌশলগত ১০টি বিষয়ের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এর ফলে এর কার্যপরিধি আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত হবে, বাড়বে কাজের ক্ষেত্র, সরকারি খবরদারি ও হস্তক্ষেপ যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে কাজের জবাবদিহিতা- এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে কমপিউটার কাউন্সিলের বর্তমান কাঠামোতে সরকারি নজরদারি তেমন না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানে কাজের সম্প্রসারণ বা বিস্তৃতি তেমন খুব একটা যে হয়েছে, তা জোর দিয়ে বলা যাবে না মোটেও। বলা যায়, অনেকটা স্থবির অবস্থায় পড়ে আছে। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে তথ্য ও যোগাযোগ অধিদতফর করা হলে অবশ্য বেতন কাঠামোর অনেক পরিবর্তন হবে, যা বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারো কারো মনঃপূত হবে না ধরে নেয়া যায় স্বাভাবিকভাবেই। তবু এক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত আমাদের সবারই। প্রয়োজনে সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। অনেকেই বলেন, একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের আইসিটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিসিসি’র ভূমিকা আরো সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু এ প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসিত, তাই সরকার এর প্রতি ছিল অনেকটা উদাসীন। প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রেও ছিল উদাসীন।
প্রস্তাবনায় ৫টি লক্ষ্য বা মিশনের কথা বলা হয়েছে। যদি এগুলো বাস্তবায়িত হয় তাহলে এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে বলা যায়। কিন্তু এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সফলতা নির্ভর করবে তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নীতিমালা এবং কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, উপযুক্ত তথ্য ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদির ওপর। আরেকটি কথা, বিসিসি-কে যদি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদফতর করা হয়, তাহলে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেনো স্বচ্ছতা থাকে সে ব্যাপারে সরকারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কিন্তু, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেমন প্রকট তেমনি রয়েছে স্বজনপ্রীতি, টেন্ডারবাজি ও পারস্পরিক সমন্বয়হীনতা। আর লালফিতার দৌরাত্ম্য তো রয়েছে, যার কারণে বেশিরভাগ কাজই বছরের পর বছর আটকে থাকে। ফলে উন্নয়নের গতি হয় মন্থর। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের লোপাট ছাড়া কিছুই হয় না এমন দৃষ্টান্তও আমাদের সামনে অনেক রয়েছে।
কথা হচ্ছে বিসিসি’র নাম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদফতর হবে কি হবে না সেটা বড় কথা নয়। আমরা চাই আইসিটিসংশ্লিষ্ট উন্নয়নমূলক যথাযথ কাজ, যার ওপর ভর করে আমাদের দেশের অর্থনীতির ভিত আরো দৃঢ় হবে। আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হতে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা আরো পিছিয়ে পড়ব। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যাবে, বাস্তবায়িত হবে না কোনোদিন।
মাজহারুল ইসলাম
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
......................................................................................................
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হোক যথাযথভাবে
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং এ লক্ষ্যে পাঁচ বছরে খরচ করা হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর আওতায় বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে গাজীপুরে স্থাপন করা হচ্ছে বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাইটেক পার্ক, প্রতিটি বিভাগে আইটি ভিলেজ এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কমপিউটার সেন্টার। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অতীতেও আমরা এ ধরনের অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা শুনেছি, কিন্তু বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখিনি, এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম দেখতে চাই। আগামী পাঁচ বছরে এজন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। এই বরাদ্দ আপাতদৃষ্টিতে বলা যায় কম। তারপরও আমি বলব, অনেক; যদি তা ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। কেননা ইতোপূর্বে তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারে মুখের বুলি অনেক শুনেছি যেগুলোর বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ বা লক্ষণ চোখে পড়েনি। এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে। অর্থাৎ আইসিটি’র ব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবার এখনই সময়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হতে হবে দায়িত্বশীল। বরাদ্দ করা অর্থ যাতে যথাযথভাবে ব্যবহার হয় অর্থাৎ লোপাট যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে সচেতন এবং সরকারকে রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি।
কজ ওয়েব