কমপিউটার জগৎ রিপোর্ট
কোনো দেশে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বা ঘনত্ব যখন ১ শতাংশ বেড়ে যায় তখন সে দেশের রফতানির পরিমাণ বাড়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর প্রতি ১০০ জনের মধ্যে যদি ১০ জনের মোবাইল ফোন থাকে, তাহলে সেদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়বে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের অভিযাত্রা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য দিয়েছেন নোকিয়া ইমার্জিং এশিয়ার জেনারেল ম্যানেজার প্রেমচাঁদ। নোকিয়া ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট তথা বিইআই দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কাজের ক্ষেত্র ও প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
গোলটেবিলে পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্তনির্ভর বিভিন্ন গঠনমূলক পরামর্শ ও প্রস্তাবনা উঠে আসে। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিশেষজ্ঞ এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পখাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচক ও অতিথি হিসেবে অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বিইআই-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নোকিয়া ইএ-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রেমচাঁদ। পরে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশ নেন।
গোলটেবিলে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করিম, ইউএনডিপির পলিসি অ্যাডভাইজার (আইসিটি) আনির চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও বাংলালিংকের গভর্নমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক জাকিউল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের সাবেক পরামর্শক মুনির হাসান এবং বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এবং এ পথে অগ্রগতি অর্জন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রেমচাঁদ বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ। এর সঙ্গে তারুণ্যের সংযুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আইসিটি ও ইন্টারনেট খাতে অগ্রগতি ও সম্প্রসারণে সরকারের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাবে নোকিয়া।
কোনো দেশ ঠিক কতটা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনে সক্ষম হয়েছে, তা নির্ণয়ের জন্য রয়েছে ডিজিটাল অপরচুনিটি ইনডেক্স। বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১৩৪তম। তাই সহজেই অনুমান করা যায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে আছে। সুযোগ, অবকাঠামো এবং ব্যবহার এই তিনটি ক্ষেত্রের ১১টি আইসিটি ইন্ডিকেটরের ভিত্তিতে ওই ইনডেক্স তৈরি করা হয়। প্রেমচাঁদ তার উপস্থাপনায় বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন সবচেয়ে কম দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। শতাংশ হিসেবে এদেশে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন জনসংখ্যার অনুপাতে শূন্য দশমিক ৩। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ লাখে শূন্য দশমিক ৫। বাংলাদেশের নিচে রয়েছে তিমুর এবং মিয়ানমার। ওপরে রয়েছে কম্বোডিয়া, নেপাল, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান, লাওস, শ্রীলঙ্কা, আর্মেনিয়া, ভুটান, তাজিকিস্তান, ভারত, জর্জিয়া, মালদ্বীপ, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ। শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরে রয়েছে জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ।
আলোচকরা মনে করেন মোবাইল ইন্টারনেট এই ডিজিটাল ডিভাইডের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ মোবাইল ফোন সর্বত্র পৌঁছানো সম্ভব, সাধারণ মানুষের ধারণক্ষমতার মধ্যে এবং ব্যবহার সহজসাধ্য। যেখানে ফিক্সড লাইন দিয়ে ফোন বা ইন্টারনেট দেয়া সম্ভব নয়, সেখানেও পৌঁছে যেতে পারে মোবাইল ফোন সেবা। প্রেমচাঁদ অবশ্য বলেছেন, তাদের ৫০ শতাংশ মোবাইলে ইন্টারনেট একসেস রয়েছে এবং এই মোবাইল ব্যবহার করেই সাধারণ মানুষ প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। তিনি বলেন, ৮০ শতাংশেরও বেশি অভিমেইল ব্যবহারকারী এসেছেন ইমার্জিং মার্কেট থেকে।
মোবাইল কনটেন্ট মার্কেটও ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বাজার বর্তমানের ৪৬৬ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০১৩ সাল নাগাদ ১ হাজার ৬৬০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। প্রেমচাঁদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে তারা শুরু করেছেন ‘অভিযান’ নামে এক কর্মসূচী। এর আওতায় দুইটি বাস যাবে ৪১টি জেলায়। সেখানে ১২০টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের খুলে দেয়া হবে ই-মেইল ঠিকানা। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ওই অভিযান।
গোলটেবিল আলোচকরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তথ্যভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতায় ও রূপায়ণ বিষয়ে সম্প্রতি প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। এখন এসব আলোচনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচিত নানা জরুরি বিষয় ও প্রসঙ্গ সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটের শক্তি ও মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে বলে আয়োজকরা আশা করেন। এ ছাড়া এই আলোচনা থেকে দেশের নেতা, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষও নিজেদের করণীয় সম্পর্কে নতুন করে ভাববেন বলে আশা করা হয়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com