আমাদেরকে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য অনেক সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। এটা শুধু কষ্টসাধ্য নয়, বরং সময়সাধ্য ব্যাপারও বটে। এখন ঘরে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কাটা যায়। এদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কাটার ব্যবস্থা সর্বপ্রথম চালু করে গ্রামীণফোন, যা মোবিটাকা টিকেটিং হিসেবে পরিচিত।
কাস্টমার রেজিস্ট্রেশন
যেকোনো গ্রামীণফোনের গ্রাহক তার মোবাইল ফোনে ট্রেনের টিকেট কাটতে চাইলে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য গ্রাহককে তার মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে টাইপ করতে হবে ‘TKET’ এবং সেন্ড করতে হবে ১২০০ নম্বরে। ফিরতি মেসেজে একটি পিন নম্বরসহ অন্যান্য নির্দেশনাও থাকবে। যদি কেউ পিন নম্বর পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমতো পিন নম্বর সেট করতে চান, তাহলে ডায়াল করতে হবে *৭৭৭*৪ আগের পিন নম্বর * চার সংখ্যার নতুন পিন নম্বর * চার সংখ্যার নতুন পিন নম্বর #। তবে যেসব গ্রামীণফোনের গ্রাহক তাদের ফোন থেকে ইতোমধ্যে বিল পে সার্ভিসের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল দিয়েছেন তাদেরকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে না এবং এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না।
বুকিং
বুকিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের গ্রাহক নির্ধারিত রুটে টিকেট কাটতে পারবেন। তবে ৩০ মিনিটের মধ্যে বুকিং করা টিকেট কাটতে হবে। অন্যথায় বুকিং করা টিকেট বাতিল হয়ে যাবে এবং অন্য কেউ সেই টিকেট কিনে নিতে পারবে।
বুকিংয়ের জন্য করণীয় ধাপগুলো
গ্রামীণফোনের কোনো গ্রাহক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট বুকিং দিতে চাইলে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে : প্রথমে *১৩১*১# নম্বরে ডায়াল করতে হবে। Answer বাটন প্রেস করে Journey date type করতে হবে। তারপর সেন্ড বাটনে প্রেস করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যাত্রা করার দিন যদি মার্চ মাসের ১৫ তারিখ হয়, তাহলে টাইপ করতে হবে ‘১৫’, আর যদি মার্চ মাসের ০৫ তারিখ হয়, তাহলে টাইপ করতে হবে ‘০৫’। এরপর টাইপ করতে হবে গন্তব্য স্টেশনের নামের প্রথম তিনটি অক্ষর। এ সময়ে মোবাইল স্ক্রিনে রেলস্টেশনের একটি লিস্ট দেখা যাবে।
এখানে আপনার পছন্দমতো রেলস্টেশন অর্থাৎ যে স্টেশনে আপনি যেতে চান, সেই স্টেশনের নম্বরের ওপর Answer বাটন প্রেস করার পর সেন্ড বাটনে প্রেস করতে হবে। এরপর ট্রেন নির্বাচন করতে হবে। তাই, Answer বাটনে প্রেস করার মাধ্যমে পছন্দমতো ইন্টারসিটি ট্রেন নির্বাচন করে সেন্ড বাটন প্রেস করতে হবে। এরপর টিকেট ক্লাস নির্বাচন করতে হবে। এজন্য গ্রাহককে Answer বাটন প্রেস করার মাধ্যমে পছন্দমতো ট্রেনের টিকেট ক্লাসের নম্বর টাইপ করতে হবে, তারপর সেন্ড বাটন প্রেস করতে হবে। এরপর গ্রাহককে টিকেট অপশন প্রয়োজনমতো নির্বাচন করতে হবে। এজন্য গ্রাহককে তার পছন্দমতো টিকেট অপশন কম্বিনেশন নম্বর নির্বাচন করে টাইপ করতে হবে। এরপর বুকিং নিশ্চিত করার জন্য ‘১’ প্রেস করতে হবে। ‘২’ প্রেস করলে বাতিল হয়ে যাবে। এরপর একটি নিশ্চিতকরণ এসএমএস আসবে, যেখানে থাকবে বুকিং কোড এবং বাংলাদেশীয় টাকার পরিমাপ। এবার গ্রাহককে ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রয়োজনীয় টাকা রিফিল করে ডায়াল করতে হবে *১৩১*২# নম্বরে। এরপর বুকিং কোড (যেটা আগের এসএমএসে দেয়া হয়েছে) টাইপ করতে হবে। এরপর গ্রাহককে পিন নম্বর দিতে হবে। নিশ্চিতকরণের জন্য ‘০’ প্রেস করতে হবে। ফলে গ্রাহক টিকেট নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে পাবেন। এরপর গ্রাহককে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নির্ধারিত মোবিটাকা চিহ্নিত রেলস্টেশনে এসে টিকেট নম্বর দেখাতে হবে এবং টিকেট গ্রহণ করতে হবে।
সরাসরি ই-টিকেট কেনা
গ্রামীণফোনের গ্রাহক চাইলে সরাসরি ই-টিকেট বুকিং ছাড়াই কিনতে পারেন, যদি গ্রাহকের মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যালেন্স থাকে। তবে গ্রাহককে খরচ হিসেবে করতে হলে অবশ্যই অতিরিক্ত ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে যোগ করতে হবে। সুতরাং বুকিং ছাড়া যদি কেউ টিকেট কিনতে চান, তাহলে প্রথমে ডায়াল করতে হবে *১৩১*৩# নম্বরে। এরপর পিন নম্বর দিতে হবে। এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ঠিক আগের মতো অনুসরণ করতে হবে। তবে মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিস ব্যবহার করতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় শর্তাবলী আছে, যা অবশ্যই অনুসরণীয়। যেমন- মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিসে প্রতি সিট কেনার জন্য ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। যেকেউ প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিসের মাধ্যমে কেনা টিকেট হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং এই সার্ভিস বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট প্রাপ্যতার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ই-টিকেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। গ্রাহককে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেলওয়ে স্টেশনের নির্ধারিত বুথ থেকে ই-টিকেটের বিপরীতে কাগজের টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য গ্রাহককে অতিরিক্ত আর কোনো চার্জ দিতে হবে না। এই সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহক যাত্রা তারিখের ৯ দিন আগে থেকে টিকেট কিনতে পারবেন।
যাত্রার ১২ ঘণ্টা আগে থেকে কোনো বুকিং করা যাবে না, কিন্তু সরাসরি ই-টিকেট কেনা যাবে যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। যাত্রা শুরুর ৬ ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইলের মাধ্যমে কোনো ধরনের টিকেট বিক্রি হবে না। আসন স্বল্পতার কারণে যদি টিকেট না কেনা যায়, তবে সংগৃহীত ‘মোবিটাকা ব্যালেন্স’ শুধু বিল পে, ফ্লেক্সিলোড এবং পরবর্তী ট্রেনের টিকেট কেনার কাজে ব্যবহার করা যাবে। টিকেট ফেরত দেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে কোনো গ্রাহক যদি বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে যেকোনো গ্রামীণফোন থেকে ১২০০ নম্বরে কল করে জানা যাবে।
বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখের মতো এবং প্রথম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এর বর্তমান মার্কেট শেয়ার ৪৫.৫ শতাংশ। গ্রামীণফোনের অসংখ্য কাস্টমার ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের অন্যতম একটি হলো ঘরে বসে ট্রেনের টিকেট কাটার সার্ভিস ‘মোবিটাকা টিকেটিং’। আশা করা যায় গ্রামীণফোনের অন্যান্য সার্ভিসের মতো এ সার্ভিস সফল হবে। সূত্র : www.Grameen phone.com
এ তো গেল গ্রামীণফোনের মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা। তবে উপরোল্লিখিত আলোচনার মধ্যে মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিসের সবটুকুই আলোচিত হয়েছে। কিছুদিন আগেই মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিস গ্রামীণফোন চালু করেছে। যার অন্যতম এবং প্রধান ভালো দিক হলো, ঘরে বসে মোবাইল ফোনে ট্রেনের টিকেট কাটা। যেহেতু, মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিস প্রক্রিয়ার পুরোটিই অটোমেটেড সার্ভিস, সুতরাং মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যালেন্স থাকলেই টিকিট সহজেই কাটা যাবে। ফলে, কষ্ট করে এবং নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে লাইনের দাঁড়াতে হবে না। এ দিক থেকে বলা যায়, গ্রামীণফোন সত্যিই একটি উপকারী সার্ভিস আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। তবে মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিসের ভালো দিকের পাশাপাশি এর খারাপ দিক আছে। কারণ, মোবিটাকা টিকেটিং সার্ভিস পুরোটিই অটোমেটিড সিস্টেম সার্ভিস। সুতরাং ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেখা গেল, মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত টাকা আছে, টিকেট কাটা হলো অথচ রেলওয়ে টিকেট কাউন্টার থেকে সময়মতো উপস্থিত হয়ে জানা গেল, টিকেট কাটা হয়নি। তাছাড়া, গ্রামীণফোনের সার্ভার এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সার্ভার একই সাথে কাজ করে থাকে। সুতরাং এ ধরনের ভুল মাঝেমধ্যে হতেই পারে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minlaz777@gmail.com