• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইসিটিতে ভিয়েতনামের অগ্রযাত্রা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ স্বপন
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
দেশ ও ‍আইসিটি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইসিটিতে ভিয়েতনামের অগ্রযাত্রা
ভিয়েতনামের যুবসমাজকে আইসিটিসমৃদ্ধ করতে সে দেশের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের আলোকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় আমার এক লেখা কমপিউটার জগৎ-এ ছাপা হয়েছিল। সে লেখার মূল বিষয়বস্ত্ত ছিল ভিয়েতনামের পর্বতময় দু’টি এলাকার ৩৫টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আইসিটিসমৃদ্ধ করার কার্যক্রমের আলোকে। আর এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে ভিয়েতনাম কত দ্রুত আইসিটি খাতে বিশেষ করে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ পূরণের উদ্দেশ্যে।

১৯৮০ সালের শেষের দিকে ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করার পর থেকে এদেশের সার্বিক অবস্থা পাল্টাতে থাকে। ফলে কৃষিপ্রধান দেশটি অল্প মজুরির ম্যানুফ্যাকচারিং রাষ্ট্র থেকে ক্রমশই হয়ে উঠছে শিল্পপ্রধান রাষ্ট্রে। অবশ্যই কোনো আলাদিনের চেরাগের ঘষায় নয়, বরং সে দেশের সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় ও দেশের জনগণের দেশাত্মবোধের কারণে।

প্রায় নয় কোটি জনসংখ্যার দেশটির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের কম তরুণ মেধাবী ও পরিশ্রমী। মজার ব্যাপার হলো, ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সমাজতন্ত্রবিদ্বেষী অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্র ভিয়েতনামে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না শুধু অল্প মজুরির শ্রমিকের কারণে। ভিয়েতনামে রয়েছে এক চমৎকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, যা বিশ্বের অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছে ব্যাপকভাবে।



প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন এবং সার্ভিস সেক্টর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে দেশটির অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলছে। সম্প্রতি ভিয়েতনামের মিনিস্ট্রি অব পোস্ট অ্যান্ড টেলিমেটিক্স (MPT)-এর নতুন রূপদান করার পর ভিয়েতনামের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রি (আইসিটি)-এর উন্নয়নের জন্য ২০১১-২০২০ সালের জন্য এক স্ট্র্যাটেজিক অরিয়েন্টেশন নির্দেশাবলী দেয় যা ‘Taking-off-strategy’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এর ফলে ২০ বছর পর দেশটির পোস্ট এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে দ্রুতগতিতে ব্যাপক উন্নতি লাভ করবে যা দেশের ডিজিটাল বৈষম্য কমার সাথে সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক বৈষম্যও অনেক কমিয়ে দেবে।

টেলিকম ও ইন্টারনেট সেক্টর

২০০৮ সালের শেষের দিকের ভিয়েতনামের টেলিফোন পেনিট্রেশন হারে দেখা যায় এ সেক্টর ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়ে ৪ বছর আগের ১২.৩% থেকে উন্নীত হয়ে ৯৪.৬% হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৩ সালের মধ্যে ভিয়েতনামের টেলিফোনের ব্যবহার দাঁড়াবে ১৩৯ শতাংশ। আর এ কারণে দেশটির টেলিকম সেক্টর আশা করছে, ২০০৯ সালের প্রথমদিকে তাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন তথা আইসিটি খাতের ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হার বর্তমানে বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

এদেশে বর্তমানে টেলিকমিউনিকেশন খাতে সেবা দিয়ে আসছে সাতটি ফিক্স অপারেটর, সাতটি লাইসেন্সড মোবাইল অপারেটর এবং ৬৫টি আইএসপি। ভিয়েতনামের ফিক্স লাইন মার্কেটের গত পাঁচ বছরের সম্প্রসারণ হার ২৪.৫ শতাংশ। ২০০৮ সালের তথ্যমতে এদেশে ফিক্স লাইনের ব্যবহারকারী ১৩.১ মিলিয়ন যা আগামী ৫ বছর ৫.২ শতাংশ হারে বেড়ে হবে প্রায় ১৬.৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারণহার হবে ১৮.২ শতাংশ।



দেশটির মোবাইল মার্কেট সবচেয়ে ডায়নামিক টেলিকম সেক্টর যার গড় সম্প্রসারণ হার গত পাঁচ বছরে ৯১.৩ শতাংশ। এ হারে ব্যবহার হবার ফলে ২০০৮ সালের শেষের দিকে গ্রাহকসংখ্যা পৌঁছে ৬৯.১ মিলিয়ন, যার পেনিট্রেশন হার ৭৯.৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের মধ্যে এদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১১২.১ মিলিয়ন। অর্থাৎ এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে মোবাইল পেনিট্রেশন হার হবে ১২০.৮ শতাংশ।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো ভিয়েতনামের ইন্টারনেট মার্কেট খুবই অনুন্নত। দেশে পিসি পেনিট্রেশন কম, আনুমানিক ১৪ শতাংশ, দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা, হ্যানয় ও হো চি মিন ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ফি খুব বেশি ছিল। সরকারের কঠোর প্রচেষ্টায় গত পাঁচ বছরে ব্রডব্যান্ডের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটায় ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে। ফলে ২০০৪ সালে যেখানে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন ছিল মাত্র ২.০ শতাংশ, সেখানে ২০০৮ সালে এ হার বেড়ে উন্নীত হয় ৭.৭ শতাংশ এবং ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ১.৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬.৭ মিলিয়নে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে গত পাঁচ বছরে। ফলে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা ২০০৮ সালে উন্নীত হয় ২ মিলিয়নে। এ হারে বাড়লে আগামী পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০১৩ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৮.৪ মিলিয়ন। এর ফলে ডায়ালআপ ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০৮ সাল থেকে কমতে থাকবে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনামে পুরো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৮১.৯ শতাংশই প্রতিস্থাপিত হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে।

সফটওয়্যার আউটসোর্সিং

২০০৩ সালের তথ্যমতে ভিয়েতনামের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল, যা অর্থনীতিতে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও এ খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সফটওয়্যার খাতটি যেভাবে সাপোর্ট পাচ্ছে তাতে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ খাতটি। ভিয়েতনামের অফিসিয়াল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, তথ্যপ্রযুক্তির এ খাতটি হবে অর্থনীতির সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

২০০৮-২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে ক্রমোন্নতির হার ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে এ মন্দার মধ্যেও দেশটির অর্থনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে আইসিটি তথা সফটওয়্যার খাতে। গত দশ বছরে ভিয়েতনামের সফটওয়্যার টেকনোলজি খাতে রাজস্ব বেড়েছে প্রায় ১৯ গুণ, যার গড় বৃদ্ধি প্রায় ৩৫ শতাংশ। অথচ ২০০০ সালের দিকে ভিয়েতনামের সফটওয়্যার খাতটি ছিল সবচেয়ে দুর্বল এক খাত। সরকারের দূরদর্শিতা ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতায় এ খাতটি সম্প্রতি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে শুরু করেছে।

ভিয়েতনামের বেশ কিছু সফটওয়্যার কোম্পানি ইতোমধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয় আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন। যেমন ISO-9000 এবং ক্যাপাবিলিটি ম্যাচ্যুরিটি মডেল (CMM) ৫ লেভেলের সব কটি। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনামী অথরিটি অ্যান্ড এজেন্সি তৈরি করেছে সফটওয়্যার পার্ক। এসব সফটওয়্যার কোম্পানির সবই যে ভিয়েতনামের তা নয়। কিছু জয়েনভেঞ্চার কোম্পানি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে শতভাগ বিদেশী সফটওয়্যার কোম্পানি।

এসব সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে ২০০টির বেশি কোম্পানিতে কর্মীর সংখ্যা ১৫০-২০০ জন, যারা সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ে কাজ করে। কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে যেগুলোতে কর্মরত কর্মীসংখ্যা হাজারের বেশি। যেমন FPT সফটওয়্যার, FPT ইনফরমেশন সিস্টেমস, TMA, PSV ইত্যাদি।

ভিয়েতনামের সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মূল ফোকাস হলো ইলেকট্রনিক এন্টারটেইনমেন্ট, ইন্টারনেটে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর।

ইউএস কনসালট্যান্সি গ্রুপ এ.টি. কিয়ারনি (A.T. Kearney)-এর ২০০৯ সালে তৈরি করা রিপোর্ট মতে জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গে­vবাল সার্ভিস লোকেশনের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভিয়েতনাম। ৫০টি দেশের ওপর জরিপের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট প্রণীত হয়। এক্ষেত্রে জরিপের ভিত্তিটি ছিল উল্লিখিত ৫০টি দেশের প্রত্যেক দেশের ইভ্যালুয়েটেড কস্ট, কর্মীদের দক্ষতা এবং ব্যবসায়ের পরিবেশের আলোকে। এ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ভিয়েতনামের সফটওয়্যার প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

মূলত ভিয়েতনামের সফটওয়্যার সেক্টর অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে যখন আইবিএম তার সফটওয়্যার সার্ভিস অফিস চালু করে দেশটির কোয়াং ট্রং সফটওয়্যার সেন্টারে। জাপানি বিনিয়োগকারীরা চীনের পরিবর্তে ভিয়েতনামকে সবচেয়ে কার্যকর সফটওয়্যার আউটসোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। জাপান ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত ২০০৯ সালের এক জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী এ তথ্য জানা যায়। এ রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সফটওয়্যার বিজনেস সবই পারফর্ম করছে সফটওয়্যার আউটসোর্সিং সার্ভিসেস। তবে তারা যেসব অর্ডার পায় তার বেশিরভাগই সফটওয়্যার টেস্টিং ও ডাটা এন্ট্রিসংশ্লিষ্ট।

২০০৬ সালে দেশটির সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির জেনারেটেড রাজস্ব আয় ছিল ৩৫০ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আউটসোর্সিং খাত থেকে আসে ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বর্তমানে দেশটিতে এক হাজারের বেশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে কর্মরত রয়েছে ৬৪ হাজারের বেশি কর্মী। ইতোমধ্যে এসব সফটওয়্যার কোম্পানির মধ্যে অনেক কোম্পানিই অর্জন করেছে CMMসহ ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশন।

সরকারি সফটওয়্যার আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্টের মূল লক্ষ্য ইন্ডাস্ট্রি খাতে প্রবৃত্তি ৩৫-৪০ শতাংশ অর্জন করা, যাতে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ৮০০ মিলিয়ন ডলার করে আয় করতে পারে। ভিয়েতনামের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বের মধ্যে সেরা ১৫টি উন্নত সফটওয়্যার আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটিতে পরিণত হওয়া। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশটির সরকার কাজও করে যাচ্ছে আন্তরিকতার সাথে। দেশটির সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য অন্যান্য শিল্পখাতের চেয়ে অনেক বেশি অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে। ট্যাক্স সুবিধাসহ বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স থেকেও অব্যাহতি দেয়। আমদানি করা পণ্য থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় যেগুলো সফটওয়্যার তৈরি ও সার্ভিসের ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যবহার হয়। ভিয়েতনাম সরকার এ ধরনের এমন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করায় সেখানে আজ বেয়ার, বিএমজি, পি, সিসকো, ক্রিটিক্যালপ্যাথ, ফুজি, আইবিএম, সনি, নর্টন নেটওয়ার্ক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের আউটসোর্সিং প্রোজেক্ট সফলভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটির অর্থনীতিকে করছে চাঙ্গা।



বর্তমানে ভিয়েতনামে রয়েছে ডেডিকেটেড আটটি অপারেশনাল সফটওয়্যার পার্ক। এগুলোর মধ্যে তিনটি হো চি মিনে এবং বাকিগুলো হ্যানয়, সায়গনসহ দেশের অন্যান্য অংশে। সায়গন সফটওয়্যার পার্কটি হলো এ দেশের প্রথম সফটওয়্যার পার্ক যা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে, যেখানে সহায়তা দেয় সিসকো। এটিই ভিয়েতনামের সবচেয় বড় এবং অ্যাডভান্স ধরনের সফটওয়্যার পার্ক।

হার্ডওয়্যার খাত

২০০৭ সালে ইন্টেল ভিয়েতনামে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বিনিয়োগ করে সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসেম্বলি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। পরবর্তী সময়ে এ বিনিয়োগ উন্নীত হয় এক বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটাগ্রুপ (IDG) বিশ্বে শীর্ষ টেকনোলজি মিডিয়া রিসার্চ এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ওপর এছাড়াও আরো কিছু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত ভিয়েনামের প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে।

শেষ কথা

তথ্যপ্রযুক্তি যে অর্থনীতির উন্নতির চাবিকাঠি হতে তা উন্নয়নশীল অনেক দেশের মতো ভিয়েতনাম যথার্থই উপলব্ধি করতে পেরে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভিয়েতনামী সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণ আন্তরিকভাবে কাজ করে আইসিটি ক্ষেত্রে এশিয়ার শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।

অথচ আমাদের দেশের অবস্থাটি ৯০-৯৫-এর দিকে ছিল ঠিক উল্টো। তখন জনগণ ও সরকারি পর্যায়ে মনে করা হতো কমপিউটারের ব্যাপক প্রসার হলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। সেসময় কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্যসমূহকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে গণ্য করে আরোপ করে অধিক হারে শুল্ক ও কর। মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবে এ প্রেক্ষাপট বদলাতে থাকে ’৯৬-এরপর থেকে।

তখন তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করে দেশের সরকারপ্রধান প্রতি বছর দশ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরির ঘোষণা দেন যার বাস্তব প্রতিফল ঘটতে দেখা যায়নি আজ অবধি। ইন্টারনেট অনুমতি দেয়া হলেও তা ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তবে আশানুরূপ গতিতে নয়। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি, দেশে সফটওয়্যার পার্ক হচ্ছে যার বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সম্প্রতি কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারকে আইটি পার্ক বা ভিলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা দিয়েছে। তার সুফল কবে পাবো আমরা জানি না, কেননা আমাদের দেশে সবকিছুই ঘটে অনেক দেরিতে।

এ ধরনের অনেক ঘোষণাই সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় আসে যা শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে। সরকারের ঘোষণা বাস্তবায়নের যেসব সরকারি মেকানিজম বা অঙ্গ সংগঠন রয়েছে সেগুলো যদি সক্রিয় না থাকে তাহলে কোনো সরকারের পক্ষেই সফলভাবে কোনো কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়। দেশের সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি আমাদের সবার মধ্যে দেশাত্মবোধ যদি জাগ্রত না হয়, তাহলে কোনো অবস্থাতে আমাদের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবো না। দেশের আইসিটি খাতের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে ভিয়েতনামের মতো এক বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি উচিত আইসিটি পণ্যসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সততা। শুধু তাই নয়, দূর করতে হবে অহেতুক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ঝামেলা। নির্মূল করতে কমিশনভোগীদের, যাদের কারনেই অনেক বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে, কোনো বিনিয়োগ না করেই।

শোনা যাচ্ছে স্যামসাংসহ কিছু প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এদেশে আইসিটিতে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিতে হবে যাতে অন্যান্য কোম্পানিও এ দেশে আইসিটিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। সেই সাথে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও আন্তরিকতা ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের সবার মনে থাকা দরকার, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেতে চাইলে সততার কোনো বিকল্প নেই। এই বিষয়টি আমাদের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাকে সবসময় মনে রাখতে হবে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস