• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইসিটি উন্নয়নে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ স্বপন
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
ফিচার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইসিটি উন্নয়নে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিকে অবলম্বন করে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে এমন দেশের কথা বলতে গিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ভারত, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীনের মতো দেশের উদাহরণ টেনে থাকি প্রায়ই। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকেরা ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেন না বা এড়িয়ে যান। কেননা এরা মনে করেন, উল্লিখিত দেশগুলো বর্তমানে বিশ্বে আইটি বাজারে নিজেদের অবস্থান এমন ঈর্ষণীয় বা অনুসরণীয় অবস্থানে নিয়ে গেছে, যা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ প্রেরণার উৎস হতে পারে এসব দেশের উদাহরণ। আর এ উপলব্ধিতেই এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে আমাদের খুব কাছের দেশ শ্রীলঙ্কার আইটি খাতের কিছু উদ্যোগ, যা সেদেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কা অভ্যন্তরীণভাবে এক অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের কাছে অতি পরিচিত। এ দেশটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হলেও দেশের আইসিটি খাত অর্থনীতি উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছে।

গত বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে যে ধস নামে তার ফলে বিভিন্ন খাতের মতো আইসিটিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ মন্দার কারণে ব্যাপকভাবে কমে যায় আইসিটিসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগ ও দক্ষ আইসিটিসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীর নিয়োগদান প্রক্রিয়া। সমগ্র বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে একেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বন্ধ করছিল বা কমাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা সরকার ই-শ্রীলঙ্কা ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টসহ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে হাত দেয়। এ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড আরো বেগবান হয় শ্রীলঙ্কা সরকারের ‘Year of English and IT’ ঘোষণার মাধ্যমে।

শ্রীলঙ্কা সরকার বিভিন্ন উদ্দীপক কর্মকান্ডে আগ্রহী, যাতে অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান হয়। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার আইসিটি খাতে বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, বরং উৎপাদন ও অর্থনীতির খাতে জাতীয় মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে। আইসিটি আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে উন্নয়ন খাতের মান ও সক্ষমতা বাড়ছে ব্যাপকভাবে।



ই-শ্রীলঙ্কার প্রোগ্রামের অন্তর্গত ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি অ্যাজেন্সি (আইসিটিএ) আইসিটিভিত্তিক কিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে, যার ব্যাপ্তি আইসিটিভিত্তিক সচেতনমূলক প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগসুবিধার সমর্থন যোগানো এবং গ্রামীণ অঞ্চলে বিভিন্ন আইসিটিভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু করা। এর ফলে শ্রীলঙ্কা আইসিটির সিঁড়ি বেয়ে ক্রমাগত উচ্চতর পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। এ তথ্য জানা যায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে। গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট ২০০৮-২০০৯-এর ওপর বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টটি তৈরি করেছে আইসিটিএ মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-সহযোগিতায় প্রস্ত্তত করা এই রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স (NRI)-এ শ্রীলঙ্কার সার্বিক র্যাপঙ্ক বা অবস্থান ব্যাপকভাবে উন্নত হয়ে ১২২ দেশের মধ্যে ৮৬তম হয় ২০০৬-২০০৭ সালে। ২০০৭-২০০৮ সালে হয় ১২৭ দেশের মধ্যে ৭৯তম এবং এ অবস্থান আরো উন্নত হয় ২০০৮-২০০৯ সালে। ফলে সূচকে দেশটির অবস্থান হয় ১৩৪ দেশের মধ্যে ৭২তম।

নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স তথা এনআরআই পরিমাপ করা হয় আইসিটির সুযোগসুবিধা ব্যবহারের স্বাভাবিক প্রবণতার ওপর। এনআরআই প্রায় ৬৮টি সাব কম্পোনেন্টের ওপর ভিত্তি করে এ মান নির্ধারণ করে, যা আইসিটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স-এ শ্রীলঙ্কার অবস্থান উন্নত হওয়া মানেই দেশটি ই-শ্রীলঙ্কা কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে সুপারিশ বা গ্রহণ করা হয়েছে ৬টি ইন্টিগ্রেটেড স্ট্র্যাটেজি। এতে সমন্বিত আছে আইসিটিতে সচেতনতা বাড়ানোর প্রোগ্রাম। যেমন বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যানাবলড সার্ভিসেস (আইটিইএস) সেক্টর এবং দেশের নাগরিকদের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করার জন্য শ্রীলঙ্কা আইসিটিসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, আইসিটিএর ন্যাশনাল ও ই-সোসাইটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের জন্য আইসিটির সুযোগসুবিধা আরো বাড়ানো হয়েছে। এরফলে আগামীতে তা শ্রীলঙ্কার ভেতরে যেমন একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করবে, তেমনই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও আরো বেশি করে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করবে।

শ্রীলঙ্কার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন অ্যাজেন্সি (আইসিটিএ) সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো চালু করে ন্যাশনাল আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি সার্ভে। এটি ‘ন্যাশনাল আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি সার্ভে ২০০৯’ নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কার আইসিটিএ ইউনিটের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনে-এর তত্ত্বাবধানে এই জরিপ পরিচালিত হয়, যা বাস্তবায়ন করবে গ্রিনটেক কনসালট্যান্ট প্রা. লি.। এ জরিপের মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রীলঙ্কার বর্তমান আইসিটির অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করাসহ এ শিল্পের ভবিষ্যৎ গতিধারা অনুধাবন করা। এর ফলে প্রতিটি আইসিটিসংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তার প্রাথমিক গঠন-প্রকৃতি এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের ধারণা যেমন জানা যাবে, তেমনি জানা যাবে এ শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ।

এ সার্ভের আওতায় থাকছে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি, টেলিকম, টেলিফোনি, বিপিও সেক্টর, ইন্টারনেট, রেগুলেটরি ও পলিসি এনভায়রনমেন্ট ইত্যাদিসহ ই-শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্র। এ সার্ভের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সরাসরি ই-শ্রীলঙ্কার প্রজেক্টকেন্দ্রিক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাভিত্তি।

শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি সার্ভে যেসব ক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করছে সেগুলো হলো : ০১. পণ্যের ধরন, ০২. কোন ধরনের বাজারের জন্য শিল্পপণ্য সরবরাহ করবে, ০৩. শিল্পের বর্তমান অবস্থা এবং ক্রমোগতি পণ্যের বিক্রির মাত্রার ওপর ভিত্তি করে মুনাফার মাত্রা, ০৪. গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ, ০৫. ক্রমোন্নতির স্ট্র্যাটেজি এবং ০৬. শিল্প উদ্যোক্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে নীতি ও উন্নয়ন।

আঞ্চলিক ভাষায় তথ্যপ্রযুক্তি

শ্রীলঙ্কায় কমপিউটারে ব্যবহারের জন্য কোনো আদর্শ ফন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন ছিল না। ফলে আইসিটিকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ছিল বিরাট সমস্যা। সে সমস্যা এখন দূরীভূত হয়েছে। এখন কমপিউটার ব্যবহার করে সিংহল ও তামিল উভয় ভাষায় তথ্য বিনিময় করা সম্ভব। ওয়েব ব্রাউজ করা যাবে নির্দিষ্ট কোনো ফন্ট ডাউনলোড না করেই। ওয়েবসাইটের কনটেন্ট আঞ্চলিক ভাষায় অর্থাৎ যেমন সিংহল ভাষায় ডিসপ্লে করা যাবে, তেমনি যাবে তামিল ভাষায় কনটেন্ট ডিসপ্লে করা। এর ফলে শ্রীলঙ্কার ই-মেইল বিনিময়ের সময় কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। তাই এখন মেইলকারীকে আর আগের মতো ফন্টও ই-মেইলের সাথে পাঠাতে হয় না এবং ওয়েব কনটেন্ট ভিউ করার জন্য প্রোপাইটার ফন্ট ডাউনলোড করতে হবে না।

ইয়ার অব আইসিটি অ্যান্ড ইংলিশ

যেকোনো দেশের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সরকারপ্রধানের জনসাধারণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা ঘোষণা সমগ্র দেশবাসীকে ব্যাপকভাবে উদ্বেলিত করে, আশা ও প্রেরণা যোগায় এমন দৃষ্টান্ত আমাদের চারপাশে অসংখ্য রয়েছে। যেমন- বারাক ওবামার ‘Change’ বা আমাদের দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাকশের ‘ইয়ার অব আইসিটি অ্যান্ড ইংলিশ’ ঘোষণা।

মাহিন্দা রাজাপাকশের এ ঘোষণা শুধুই মৌখিক ঘোষণাই ছিল না। এই ঘোষণাকে তুলনা করা হয়েছে ৩৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রযাত্রার সবুজ সঙ্কেত, যে জাহাজের প্রত্যেক যাত্রীই জাহাজের নাবিক, যারা সবচেয়ে অনুকূল জীবনধারা এবং সব শ্রীলঙ্কাবাসীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার দেয়ার উদ্দেশ্যে পাল তুলেছে।

আইসিটিএ নিয়োজিত রয়েছে ইনফরমেশন এবং কমিউনিকেশন টেকনোলজির (আইসিটি) জন্য দিকনির্দেশনা ও জাতীয় উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়নের কাজে। আইসিটি অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-এর স্থায়িত্ব অতীতের মতো ৫ বছরের জন্য সীমাবদ্ধ না করে আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে, যাতে এর পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যায়।

শ্রীলঙ্কার সরকার যথাথই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, আইসিটির পরিপূর্ণ সুবিধা পাওয়ার জন্য দরকার আইসিটি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ জনবল। কেননা, ইংরেজি ভাষায় দক্ষ জনবল তৈরি করতে না পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের দক্ষতাকে উপস্থাপন করা যেমন যাবে না, তেমনি সম্ভব হবে না আউটসোর্সিংয়ের বাজারে নিজেদের অবস্থানকে সুংসহত করা। আর এ কারণে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপাকশে ২০০৯ সালকে ঘোষণা করেছেন ‘ইয়ার অব আইসিটি অ্যান্ড ইংলিশ’। সরকার আইসিটি ও ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল গঠনের লক্ষ্যে গঠন করেছে দুটি বিশেষ টাস্কফোর্স, যারা কাজ করে যাচ্ছে আইসিটি অ্যান্ড ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ইয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য।

আইসিটিএ আইসিটি খাতে অগ্রগতিসাধনে সহায়তা দানেরও জন্য অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ঘোষিত আইসিটি বছরে তাদের প্রচেষ্টা আরো তীব্রতর করেছে, যাতে তাদের লক্ষ্য সফল হয়। শিক্ষাই মূল চালিকাশক্তি এবং আইসিটি হলো এর অন্যতম প্রধান টুল বা নিয়ামক। আর এ কারণে বর্তমান শ্রীলঙ্কার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার শিশুদের মধ্যে কমপিউটার ব্যবহারের অনুপাত ১ঃ ১০০। অর্থাৎ প্রতি একশত শিশুর জন্য মাত্র একটি কমপিউটার। শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে এ অনুপাত ১ঃ ১ করতে অর্থাৎ প্রত্যেক শিশুর জন্য একটি কমপিউটার। এ লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কা ইন্টেলের সহযোগিতায় ক্লাসমেন্ট পিসি ল্যাব চালু করে। যেখানে ইন্টেল দান করে ৫০০ ক্লাসমেন্ট পিসি।

‘ইয়ার অব আইসিটি অ্যান্ড ইংলিশ’ ঘোষণায় শ্রীলঙ্কার আইসিটিএ সারাদেশে আইসিটির সচেতনতা সৃষ্টির প্রোগ্রাম চালু করে। এই প্রচারাভিযান এমনভাবে অর্গানাইজ করা হয়, যাতে দেশে জনগণ আইসিটির সুফল সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। আইসিটিএ সারাবছর ধরে দৈনিক পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে এই প্রচারাভিযান চালিয়ে যায়, যাতে টার্গেট গ্রুপকে আকৃষ্ট করতে পারে। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কা সরকার আশা করছে ২০১২ সালের মধ্যে দুইশ’ কোটি ডলার আয় করতে পারবে আইসিটি খাত থেকে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কা সরকার আরো আশা করছে আইসিটি খাতে এক লাখের বেশি তরুণের কর্মসংস্থান হবে এবং এ লক্ষ্য অর্জনে কাজও করছে তারা।

শেষ কথা

শ্রীলঙ্কা সরকার আইসিটির সুফল যথার্থ উপলব্ধি করতে পেরেই এ খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে যথেষ্ট তৎপর। নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে দেখেই তা বুঝা যায়। যদি সে দেশের সরকার আইসিটির ব্যাপারে উদ্যোগী না হতো বা আইসিটিকে গুরুত্ব না দিত, তাহলে কোনো অবস্থাতেই নেটওয়ার্ক রেডিনেন্স ইনডেক্সে এ অবস্থানে উপনীত হতে পারতো না। আর শ্রীলঙ্কা সরকারও এমন প্রত্যাশা করতে পারতো না যে, তারা ২০১২ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে এক লাখ তরুণের কর্মসংস্থান করতে পারবে। আইসিটি উন্নয়নের চাবিকাঠি এটি উপলব্ধি করার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সচেষ্ট শ্রীলঙ্কা সরকার।

আমাদের দেশের বিভিন্ন সময়ের সরকারপ্রধানরা আইসিটিকে পুঁজি করে বিভিন্ন আশার কথা শুনিয়েছেন। অনেক কর্মসূচি চালুর কথা বলেছেন, যার বাস্তবায়ন আজো হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হলেও সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয়েছে একযুগের অধিক সময়। এক্ষেত্রে বাস্তব উদাহরণ অনেক থাকলেও উল্লেখযোগ্য একটি হলো, এখন পর্যন্ত ভিওআইপি উন্মুক্ত না করা। অথচ বিভিন্ন সময় ভিওআইপি উন্মুক্ততার কথা শোনা গেছে। ফাইবার অপটিকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বুঝতে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের সময় লেগেছিল একযুগেরও বেশি। ফাইবার অপটিক সংযোগ পেলেও তার সুবিধা এখনো আমরা পাচ্ছি না উচ্চ সংযোগ ফি’ ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবের কারণে। ফাইবার অপটিক সংযোগ প্রায় কাটা পড়ে। তাই দ্বিতীয় ফাইবার অপটিক সংযোগের কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করছে বর্তমান সরকার। তবে এ সংযোগ করে ঘটবে তা আমাদের জানা নেই।

দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম দেশে আইটি পার্ক হচ্ছে, এর জন্য প্রয়োজনীয় জমিও বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ করা সেই ভূমি এখনো গরু-ছাগলের চারণভূমি ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর বাস্তবায়নে কতযুগ লাগবে তা ভবিষ্যৎই জানেন। তবে মহাখালীতে প্রতিষ্ঠিতব্য হাইটেক ভিলেজের কথা প্রায় শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। সরকারি নীতিনির্ধারণী মহল প্রায়ই কলসেন্টার, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের কথা বলেছেন কিন্তু এর অবকাঠামো উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। এমনকি কলসেন্টার বা মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশনের জন্য যে দক্ষ ইংরেজীশিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যেমনটি করেছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। সরকারি উদ্যোগ ও কর্মসূচি নেয়ার কথা আমরা প্রায় শুনে থাকি, যার বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না মোটেও। অথচ বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, তা সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। জনগণের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা