লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে বাংলাদেশের দুই ধাপ পিছিয়ে পড়া
বাংলাদেশে এই সময়ে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় আসীন, যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশবাসীর কাছে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে দেশকে প্রথমে একটি মধ্যম আয়ের দেশে, তারও পরে একটি উন্নত দেশে রূপ দেয়াই ছিল এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি নিয়ে হইচইও কম হয়নি বর্তমান সরকারের এই প্রায় তিন বছর মেয়াদে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যাবতীয় কর্মকান্ড চলছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে। অতএব, দেশের মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে আগের যেকোনো সরকারের আমলের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে অনেক বেশি গতি আসবে। কিন্তু মানুষ যখন এই ২০১১ সালে এসে জানতে পারে, বিশ্বের তুলনামূলক তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি হারে বাংলাদেশ এ সরকারের আমলে দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে, তখন আমাদের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই হোঁচট খায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রশ্নে স্বপ্নভঙ্গের কারণ ঘটে। সংশয় জাগে, আমরা কি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মহাসড়ক ছেড়ে কোনো ভুল সড়ক ধরে হাঁটছি? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন কি আমাদের পূরণ হবে না?
আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স তথা আইডিআই অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৭তম। ২০০৮ সালে তা ছিল ১৩৫তম। তুলনামূলক তথ্যানুযায়ী, গত তিন বছরে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও কাজ হলেও বিশ্ব উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন তথা আইটিইউ এ তথ্য গত মাসে প্রকাশ করেছে। ‘মেজারিং দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি ২০১১’ শিরোনামে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে আইটিইউ বিশ্বের ১৫২টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তিসংশি¬ষ্ট অর্থনীতিতে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন। সূচক নম্বর অনুযায়ী আইসল্যান্ড তৃতীয়। ডেনমার্ক চতুর্থ। আর পঞ্চম ফিনল্যান্ড। সেরা দশে থাকা পরের পাঁচটি দেশ যথাক্রমে : হংকং, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ব্রিটেন। আর ১৩৭তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের নিচে আছে তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা ও আফ্রিকার দেশগুলো। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১০৫, ভারত ১১৬, ভুটান ১১৯, পাকিস্তান ১২৩ ও নেপাল ১৩৪তম স্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট সূচকে বিগত বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করতে পেরেছে সৌদি আরব, মরক্কো, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের আইডিআই তথা আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উন্নতি ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী টেলিফোন ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমে যাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তিতে সবাই কমবেশি অগ্রসর হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধির সাথে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা গেলে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি উন্নয়ন করা যেতে পারে। পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারে সস্তা ও সহজলভ্য করে দিয়ে বেশ এগিয়ে গেছে। বলা হয়েছে, যাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট যত বেশি শক্তিশালী, তারা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে যাবে। আমাদের মনে হয়, আমরা সে কাজটিই করতে পারিনি বলে অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। আইটিইউর উল্লি¬খিত প্রতিবেদনটি মনোযোগের সাথে আমাদের নীতি-নির্ধাকরদের পড়ে দেখতে হবে। এর আলোকে আমাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সেই সাথে এসব দুর্বলতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই যদি তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের পিছিয়ে পড়ার প্রবণতা ঠেকানো যায়।
আরেকটি বিষয় এখানে সবিশেষ উল্লে¬খ্য, কিছুদিন আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দাবি করা হয়, সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তবে তা হবে দুঃখজনক। কারণ আমরা মনে করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মন্ত্রণালয়ের যেকোনো ধরনের গাফিলতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত করবে। এখন প্রয়োজন অতীতের সব ব্যর্থতার অবসান ঘটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন সাফল্য রচনার।
কজ ওয়েব