• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইসিটি খাতের অনন্য এক পুরস্কার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্রীডি ম্যাক্স
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইসিটি খাতের অনন্য এক পুরস্কার

পুরস্কার পেলেন ৩২ বিজয়ী
উৎসর্গীত হলো ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে

এ এক নবযাত্রা। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো অনেকটা নীরবে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ই-কনটেন্ট ও উন্নয়নের জন্য আইসিটি’-বিষয়ক সমন্বিত একটি প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য ছিল আইসিটি’র ক্ষেত্রে উদ্ভাবনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে দাঁড় করানো, যাতে করে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে, ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনায় ও সরকারি কর্মকান্ডে আইসিটিকে সমন্বিত করা সম্ভব হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের প্রতিযোগিতা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশায় খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য এক ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের জন্য অপরিহার্য।

স্বভাবতই প্রত্যাশা করা যায়, এ ধরনের প্রতিযোগিতা বিভিন্ন উন্নয়ন তৎপরতার জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির ব্যাপারে ও উদ্ভাবনীমূলক আইসিটি উদ্যোগ নেয়ায় আমাদের তরুণ সমাজ ও পেশাজীবীদের আগ্রহী করে তুলবে। ডিজিটাল কনটেন্ট ও অ্যাপ্লিকেশন ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে প্রাইভেট অ্যাক্সেসের জন্য অপরিহার্য। অপরিহার্য সরকার, এনজিওগুলো ও সেইসব মানুষের জন্য যাদের প্রাইভেট অ্যাক্সেস নেই। এই জাতীয় প্রতিযোগিতা ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ উদ্ভাবনা ও উদ্দীপনার দেশ। তারপরও আমাদের আবিষ্কার-উদ্ভাবনের খবর বাকি দুনিয়ার মানুষের কাছে অজানা। আলোচ্য প্রতিযোগিতা ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড’, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা ‘মন্থন সাউথ এশিয়া অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘এম বিলিয়নথ সাউথ এশিয়া অ্যাওয়ার্ড’-এর মতো বিশ্ব প্রতিযোগিতার গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে।

এবার আলোচ্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৪টি ক্যাটাগরিতে। ডি.নেট তথা ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যেই অণুসমর্থন লাভ করেছে ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড’-এর।

এ প্রতিযোগিতার অর্গানাইজিং পার্টনার ছিল ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো। স্পন্সর ছিল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, মাইক্রোসফট, বিডিজবসডটকম ও ইন্টেল। নলেজ পার্টনার ছিল ডিজিটাল এম্পাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন। গ্লোবাল পার্টনার ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড। মিডিয়া পার্টনার চ্যানেল আই ও এবিসি রেডিও। অনলাইন পার্টনার হিসেবে এ প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা যুগিয়েছে ‘কমজগৎডটকম’। কমজগৎডটকম পুরো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি সরাসরি ওয়েবকাস্ট করে। ফলে দেশের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান করেও অনেকেই অনলাইনে অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগের সুযোগ পায়।

বিচারকদের যাচাই-বাছাই

এই প্রতিযোগিতার জন্য ৯৩টি উদ্যোগ তথা মনোনয়ন হাতে পাওয়ার পর পূর্বশর্ত বিবেচনায় রেখে বিচারকদের বিবেচনার জন্য এগুলো থেকে পাঠানো হয় ৪৮টি নমিনেশন। অনলাইনে নমিনেশন ফরম দাখিল ছাড়াও প্রতিযোগীরা দাখিল করেছেন প্রেজেন্টেশন, অডিও ভিজ্যুয়াল ম্যাটেরিয়েল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ডকুমেন্ট। আগ্রহের দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্য আয়োজকবর্গ ও আয়োজনের অংশীদারেরা কোনো মনোনয়ন দাখিল করেনি।

দ্বিতীয় পর্যায়ে বিচারক পর্ষদের সব বিচারক ২০১০ সালের ২৩-২৪ এপ্রিলে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলে মিলিত হন সর্বোত্তম পণ্য ও প্রকল্প বাছাইয়ের জন্য। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফর ইকবালের সভাপতিত্বে ১৭ জন বিচারক চূড়ান্ত বিজয়ী নির্বাচন করেন। এই বিচার প্রক্রিয়ার মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন ওসামা মনজুর। তিনি ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ড’-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সেই সাথে ভারতের ‘ডিজিটাল এম্পাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।

বিচারকবর্গ বিজয়ী প্রতিযোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু মাপকাঠি মেনে চলেন। এগুলোর মধ্যে আছে : কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ও প্রযুক্তি উন্নয়ন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান; পুরো বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ২-৩ বছর ধরে আয়োজকদের সাথে থাকার যোগ্যতা ও সদিচ্ছা; কোনো দ্বান্দ্বিকে স্বার্থ না থাকা, অর্থাৎ কোনো পণ্য উদ্ভাবনে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না থাকা; পুরস্কারের জন্য দাখিল করা কোনো পণ্য উদ্ভাবনে যদি অপ্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে ওই পণ্য বিশেষের ক্ষেত্রে স্কোরিং ও ভোটিংয়ের সময় ওয়াক আউট করার সদিচ্ছা থাকা।

বিচারকমন্ডলী

আগেই বলা হয়েছে বিচারকাজে অ্যাঙ্কর ও মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওসামা মনজুর। তিনি ওয়ার্ল্ড সামিট অ্যাওয়ার্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ‘ডিজিটাল এম্পাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়া’-র প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।

সতেরো সদস্যবিশিষ্ট বিচারকমন্ডলীর মধ্যে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ জাফর ইকবাল। বিচারকমন্ডলীর অন্যান্য সদস্য হলেন: ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণ ও আইটি পাতার ইনচার্জ ও আইটি স্ট্র্যাটেজিস্ট নাফিদ ইমরান আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এর অধ্যাপক এবং মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান ড. জুডি উইলিয়াম আর গেনিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সাইয়েদ ফারহাত আনোয়ার, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহিদুল হক, বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক মুনির হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো: মোফাখখারুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স স্ট্যাডিজের প্রকল্প কর্মকর্তা ইকরাম হোসেন, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের সচিব এনামুল কবীর, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজার ফিরোজ মাহমুদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক (গভর্নেন্স) ফারজানা নাঈম, ইন্টেল ইএম লিমিটেডের ঢাকা লিয়াজোঁ অফিসের কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার জিয়া মনজুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি ড. সুরাইয়া পারভিন, সেভ দ্য চিলড্রেন ইউএসএ-র শিক্ষা খাতের পরিচালক এম. হাবিবুর রহমান, ডি.নেটের রিসার্চ ফেলো ও জুরি সিস্টেমের কো-অর্ডিনেটর মো: মাসুম বিল্লাহ, ডি.নেটের নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান এবং ডি.নেটের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদ হাসান।

যাদের নামে উৎসর্গ

আগেই উল্লিখিত হয়েছে এবারের ‘ই-কনটেন্ট ও উন্নয়নের জন্য আইসিটি পুরস্কার ২০১০’ দেয়া হলো ১৪ ক্যাটাগরিতে। ১৪ ক্যাটাগরির এই পুরস্কার উৎসর্গ করা হয়েছে ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। এই ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে (ন) : অধ্যাপক রেহমান সোবহান, জাতীয় অধ্যাপক এম.আর.খান, মরহুম আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, মোস্তাফা মনোয়ার, আব্দুল আলীম, কবি শামসুর রাহমান, মোহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদা, অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই), এঞ্জেলা গোমেজ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ইবিকা বিশ্বাস, অধ্যাপক মরহুম মো. আবদুল কাদের ও ইকবাল জেড কাদির।

‘ই-গভর্নমেন্ট ও ইনস্টিটিউশন’ ক্যাটাগরির পুরস্কারটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের নামে। স্বনামখ্যাত এ অর্থনীতিবিদ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের মুক্তিসংগ্রামে ‘টু ইকোনমিজ’ তত্ত্ব দাঁড় করান, যা শেষ পর্যন্ত ‘৬ দফা’ আন্দোলনে পরিণতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর পর গড়ে তোলা বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ‘ড্রিম টিমে’র সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। ছিলেন বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কুইন এলিজাবেথ হাউস’-এর ভিজিটিং ফেলো। তিনি কলম্বিয়া ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভিজিটিং স্কলার ছিলেন। জন্ম কলকাতায়, ১৯৩৫ সালে। ১৯৫৬ সালে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন।

‘ই-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড লিভলিহুড’ ক্যাটাগরির পুরস্কারটি উৎসর্গ করা হয় এঞ্জেলা গোমেজের নামে। তিনি সারাজীবন কাজ করেছেন বাংলাদেশের অসহায় অশিক্ষিত নারীদের উন্নয়নে। তিনি গড়ে তুলেছেন ‘বাঁচতে শেখা’ নামের এনজিও। এটি গ্রামের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তার জন্ম গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জের মাল্লা গ্রামে ১৯৫২ সালের ১৬ জুলাই। ১৯৭৪ সালে বিএ পাস করেন যশোর মহিলা কলেজ থেকে। অষ্টম শ্রেণী পাসের পর তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হন যশোর সেক্রেড হার্ট মিশন স্কুলে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেখানে পড়ান। বর্তমানে তিনি ‘বাঁচতে শেখা’র নির্বাহী পরিচালক। দুস্থ নারীদের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৯১ সালে লাভ করেন এশীয় নোবেল পুরস্কার হিসেবে খ্যাত ‘ম্যাগসাসে’ পুরস্কার।

‘ই-লার্নিং অ্যান্ড এডুকেশন’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিনের নামে। জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন অন্যতম। তিনি লিখে গেছেন বিজ্ঞান ও পরিবেশ-বিষয়ক ২৮টি বই। আল-মুতীর জন্ম সিরাজগঞ্জের ফুলবাড়ি গ্রামে, ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারিতে। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে বি-এসসি অনার্স পাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা অধিদফতরে। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে যোগ দেন, সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয় ১৯৫৬ সালে ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে। দুই বছর পর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে যোগ দেন অধ্যাপক ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। বিদেশ থেকে ফিরে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রে। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি রাশিয়ায় যান বাংলাদেশ দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক কাউন্সিলর হয়ে। দু-বছর পর সেখান থেকে ফিরে যোগ দেন শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। ১৯৮৬ সালে অবসরে যান। এরপর আমৃত্যু কাজ করে গেছেন বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার পেছনে।

‘ই-লোকেলাইজেশন’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় ইবিকা বিশ্বাসের নামে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ‘মোবাইল লেডি’। ২০০৪ সালে ‘মোবাইল লেডি’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সাইকেলে চড়ে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন গ্রামের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। ইবিকা বিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রামের মহিলারা সুযোগ পেয়েছেন আইনজীবীদের আইনী পরামর্শ নেয়ার। যেসব মহিলা দূরের কোথাও ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে অপারগ, তারাও এ সুযোগ লাভ করেন। সুন্দরবনের কাছাকাছি মংলার সংলগ্ন গ্রামগুলোতে তিনি নারীদের মোবাইল ফোন সুবিধা যুগিয়েছেন। ইবিকা বিশ্বাস বর্তমানে বাগেরহাটের মংলার চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।

‘ই-হেলথ’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গীত হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক এম.আর. খানের নামে। দেশে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে তিনি পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা। তাকে বাংলাদেশে অভিহিত করা হয় ‘ফাদার অব দ্য চাইল্ড হেলথকেয়ার’। ১৯৭৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতাল স্থাপনে পালন করেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তিনি বিশ্বব্যাপী অনেক মেডিক্যাল কলেজের সাথে জড়িত। তার জন্ম সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে, ১৯২৮ সালের ১ আগস্টে। ১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পান এমবিবিএস ডিগ্রি। ১৯৫৬ সালে এডিনবার্গের ‘রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস’ থেকে লাভ করেন এমআরসিপি ও এফআরসিপি। তিনি ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ও এডিনবার্গ গ্রুপস হসপিটালে কাজ করেছেন যথাক্রমে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার ও রেজিস্টার হিসেবে। দেশে ফিরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। ১৯৭১-এ চলে যান তৎকালীন আইপিজিএমআর-এ। ১৯৭৮ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে যোগ দেন অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে। একই বছর আবার ফিরে যান আইপিজিএমআর-এ।

‘ই-কালচার ও হেরিটেজ’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় কবি শামসুর রাহমানের নামে। তিনি বরাবর উচ্চকণ্ঠ ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তিনি স্বাধীনতার সপক্ষে অনেক কবিতা লিখে গেছেন। ১৯৮৭ সালে তিনি এরশাদবিরোধী অবস্থান নিয়ে দৈনিক বাংলার সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৫৭ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন মর্নিং নিউজ-এর কো-এডিটর হিসেবে। ১৯৫৮ সালে একজন প্রোগ্রাম প্রডিউসার হিসেবে পত্রিকা ছেড়ে যোগ দেন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে। আবার ফিরে আসেন মর্নিং নিউজে সিনিয়র কো-এডিটর হিসেবে। সেখানে কাজ করেন ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সময়ে। এরপর যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে, পরবর্তী সময়ে যার নাম হয় দৈনিক বাংলা। তখন তিনি ছিলেন এর সহকারী সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে দৈনিক বাংলা ও এর সহযোগী সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হন। সুদীর্ঘ ১৩ বছর এখানে কাজ করার পর ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেন। ১৯৯৬ সালে হন বাংলা একাডেমির সভাপতি। তার জন্ম ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে। মৃত্যু ২০০৬ সালের ১৭ আগস্টে।

‘ই-নিউজ’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদেরের নামে। তিনি মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের প্রেরণাপুরুষ। তিনি খ্যাত বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়। তবে স্বীকার করতে হবে, এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ অবদান সুস্বীকৃত হয়নি। এদেশে বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতার প্রসারে তার অবদান অসমান্তরাল। যখন সবাই ভাবতেন, বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক পত্রিকা অব্যাহতভাবে প্রকাশ এদেশে সম্ভব নয়, তখন তিনি দুঃসাহস নিয়ে মাসিক ‘কমপিউটার জগৎ’ প্রকাশের সূচনা করেন। তার অনন্য সৃষ্টি ‘কমপিউটার জগৎ’ আজ এদেশের সবচেয়ে বহুল প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক সাময়িকী। তারই হাতে গড়া একদল সাংবাদিক আজ তার অবর্তমানে তারই স্বপ্নের তথ্যপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় নিরলস কাজ করে চলেছেন মাসিক কমপিউটার জগৎ-কে হাতিয়ার করে। অধ্যাপক আবদুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এম-এসসি করেন। কর্মজীবন শুরু শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক হিসেবে। এর পর প্রেষণে চলে যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে। সেখানে তিনি বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কলেজ শিক্ষকদের কমপিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। সরকারি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে তিনি বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে সহায়তা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত মাসিক কমপিউটার জগৎ এর দুই দশকের প্রকাশনায় বরাবরই ছিল নিয়মিত। অধ্যাপক আবদুল কাদের ইন্তেকাল করেন ২০০৩ সালের ৩ জুলাই।

‘এম-কনটেন্ট/অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় ইকবাল কাদির ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল জেড. কাদিরের নামে। তিনি মোবাইল ফোন জনপ্রিয় করে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করার উদ্যোগের সূচনা করেন। তিনি গ্রামীণফোন শুরু করেন গ্রামীণ ব্যাংক ও মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিনরের অর্থ বিনিয়োগ করে। এ কোম্পানির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের মানুষ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। ইকবাল কাদিরের জন্ম যশোরে, ১৯৫৮ সালের ১৩ আগস্টে। ১৯৭৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮১ সালে সেখানে বিএস সম্মান ডিগ্রি, ১৯৮৩ সালে এম.এ ও ১৯৮৭ সালে এম.বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এক সময়ে ওয়াশিংটনে কাজ করেন বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে। ছিলেন ‘কুপার অ্যান্ড লিব্রেন্ড অ্যান্ড সিকিউরিটি প্যাসিফিক মার্চেন্ট ব্যাংক’-এর অ্যাসোসিয়েট এবং অ্যার্ট্রিয়াম ক্যাপিটাল কর্পোরেশনের কো-হেড হিসেবে। তিনি একজন বাংলাদেশী আমেরিকান শিল্পপতি। তিনি গণফোন ও গ্রামীণফোনের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (এমআইটি)-৪, ‘লেগাটাম সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রিনারশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। তা ছাড়া তিনি এমআইটি প্রেসের প্রকাশিত সাময়িকী ‘ইনোভেশনস : টেকনোলজি, গভর্নেন্স, গ্লোবালাইজেশন’-এর সহসম্পাদক।

‘ই-ইনক্লুশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র নামে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইসিটি ব্যবহার করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ৮ কোটি লোকের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনকে করে দিয়ে একটি অসামান্য কাজ সম্পাদন করেছে। বিশ্ব পরিমাপেও এটি একটি অনন্য সাফল্য। ভোটার ডাটাবেজ ও ছবিসহ ভোটার তালিকা অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সাবেক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈনিকদের ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এ সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। এ সেনাবাহিনী ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য সেনাবাহিনীর মতো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আদলে সাজানো। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও নন-কমিশনড অফিসার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে।

‘ই-বিজনেস অ্যান্ড কমার্স’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয়েছে ‘মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ তথা এমসিসিআই-এর নামে। এমসিসিআই প্রথম দিকে ছিল ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’। এমসিসিআই বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো চেম্বার অব কমার্স। এর সূচনা ১৯০৪ সালে। এমসিসিআই প্রত্যক্ষ করেছে ১৯১৪ ও ১৯৩৯ সালে সংঘটিত দু’টি বিশ্বযুদ্ধ। পেরিয়ে এসেছে ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রাম। দীর্ঘস্থায়িত্ব ও কার্যকারিতার দিক বিবেচনায় এ উপমহাদেশে খুব কম ট্রেড অর্গানাইজেশন পাওয়া যাবে, যা এমসিসিআই-এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এমসিসিআই বরাবর এর কাজ ও সম্পদ উৎসর্গ করে আসছে দেশের ব্যবসায় ও শিল্প খাতের উন্নয়নে। এর আর্থ-সামাজিক উদ্যোগ বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রশংসিত হয়েছে।

‘ই-এন্টারটেইনমেন্ট’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গীত হয়েছে পল্লীগীতি সম্রাট আবদুল আলীমের নামে। আবদুল আলীম আমাদের লোকগীতিকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। যেখানে আদর্শবাদ ও জীবন গিয়ে মিশেছে একসাথে। তার গানগুলো গেঁথে আছে এদেশের মানুষের মন-মানসে। তার গান তরুণ সমাজকে টেনে এনেছে লোকসঙ্গীতের দিকে। এই মেধাবী সঙ্গীতশিল্পীর জন্ম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাইয়ে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে। ১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট তার গান প্রথম রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশী লোকগীতির স্বীকৃতি আদায়ে তার অবদান ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। টেলিভিশন ও রেডিও ছাড়াও তিনি অনেক চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়ে গেছেন। প্রথম নেপথ্য কণ্ঠ দেন ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিতে। এছাড়া তিনি গেয়েছেন আরো অনেক বাংলা ও উর্দু ছায়াছবির জন্য। আবদুল আলীমের সঙ্গীতসম্ভার অনেক বড় আয়তনের। কমপক্ষে ৫০০ গান তার জীবদ্দশায় বাণীবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ গ্রামোফান কোম্পানি (ঢাকা রেকর্ড) তার গানের একটি লংপ্লে প্রকাশ করেছে। এই অমর সঙ্গীতশিল্পী মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।

‘ই-সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয় দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রনায়ক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদার নামে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য ও শিক্ষানীতি প্রণয়নে বড় ভূমিকা পালন করে গেছেন। তার জন্ম ১৯০০ সালের ৮ মে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মারগ্রামে। ১৯২৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক নিয়ে রসায়নে এম.এসসি পাস করেন। লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ডি.এসসি ডিগ্রি নেন। ১৯৩১ সালে যোগ দেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগে। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিপিআই হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি প্রথম শিক্ষা কমিশনের সভাপতি হন। প্রণয়ন করেন ‘কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’। ১৯৭৫ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে। বিজ্ঞানী হিসেবে কুদরাত-ই-খুদা ও তার সহকর্মীরা ১৮টি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্যাটেন্ট লাভ করেন। তার জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ৯২টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।

‘ই-গেমস’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গীত হয় শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের নামে। তিনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ পুতুল শিল্পে তিনি নতুনমাত্রা যোগ করেন। তিনি এখন পুতুলকে অনুষঙ্গ করে সব মানুষের উপভোগ্য বিনোদনমূলক টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণে ব্যস্ত। তার জন্ম এক শিল্পীপরিবারে, ১৯৩৫ সালে। ১৯৫৯ সালে তিনি কলকাতা আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস ইনস্টিটিউট থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। ইস্ট পাকিস্তান আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস ইনস্টিটিউটে তার কর্মজীবন শুরু। বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। এখন তিনি শিশু একাডেমি ও (জনবিভাগ) ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান। তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দেশের বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে।

‘ই-পরিবেশ’ ক্যাটাগরির পুরস্কার উৎসর্গ করা হয়েছে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী, প্রকৃতিবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাকে। তিনি নিজেকে বরাবর নিয়োজিত রেখেছেন টেকসই উন্নয়নের মাঝে প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্দোলনে। তার জন্ম ১৯২৯ সালের ২৯ মে, সিলেটের বড়লেখা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক হন। একই বছরে তিনি বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষক হন। সেখানে ছিলেন ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। এর পর চলে আসেন ঢাকার নটর ডেম কলেজে। ১৯৭৪ সালে চলে যান মস্কো। অনুবাদকের চাকরি নেন সোভিয়েত প্রকাশনী সংস্থা প্রগতি প্রকাশনীতে। তিনি ৪০টিরও বেশি বই অনুবাদ করেন। তিনি অনেক রুশ শিশুসাহিত্য অনুবাদ করেন। তিন দশক সময় ধরে বাম রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে কিছুদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান, পরবর্তী সময়ে এমনকি জেলে যান। সারাদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন দেশের পুকুর, হ্রদ ও হাওরের খোঁজে। তিনি লিখেছেন বেশকিছু বই। লেখার বিষয় উদ্ভিদের জীবন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হচ্ছে ‘শ্যামল নিগর্স’।

পুরস্কার বিজয়ী যারা -

ই-গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন

এ বিভাগে সেরা পুরস্কারটি পেয়েছে ডাটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেডের ‘কাস্টমস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামের সফটওয়্যার। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য-ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহার হয় এ সফটওয়্যার। এটি বন্দরের আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুল্ক কার্যক্রমকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ডাটাসফট পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের আওতায় এই সফটওয়্যার ডেভেলপ করে এবং বিল্ড-ওউন-অপারেট-ট্রান্সফার মডেলে তা বাস্তবায়িত হয়। প্রয়োজনীয় ফরম, নিয়মনীতি, পরিপত্র, নাগরিক গেজেট, পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারের চালু করা বাংলাদেশের জাতীয় ওয়েব পোর্টালটি এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয়। আর দ্বিতীয় রানারআপ হয় বাংলাদেশ হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালটি। এটি হজ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল। এটি ডেভেলপ করে বিজনেস অটোমেশন লিমিটেড। এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) হেলথ-এর প্রকল্প ‘মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যসেবা’। এটি গ্রামের মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা যোগানোর একটি প্রকল্প।

ই-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড লিভলিহুড

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার ডিজিটাল পূর্জি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। আখচাষীদের আঁখ সরবরাহের জন্য দেয়া পারমিটের নাম পুর্জি। এ ব্যবস্থায় আখচাষীদের আখ কলগুলো এসএমএসের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য দেয়। এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয় বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের Baybsharkhobor. com, এটি বাংলাভাষায় ওয়েবপোর্টাল। দ্বিতীয় রানারআপ হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্টের ই-কৃষক। এটি কৃষকদের উপকারে উৎসর্গিত। ই-অ্যাডভোকেসি ফর পাবলিক পলিসি মিশন নিয়ে ২০০৬ সালে এ ওয়েবসাইটের সূচনা।

ই-লার্নিং অ্যান্ড এডুকেশন

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার পেয়েছে ‘আনন্দ মাল্টিমিডিয়া রাঙ্গামাটি’র প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রদের জন্য বহুভাষী ইন্টারেকটিভ মাল্টিমিডিয়া এডুকেশন সফটওয়্যার। বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ছাড়া তিনটি উপজাতীয় ভাষায় পাঠ্যবই এতে পাওয়া যায়। প্রথম রানারআপ হয়েছে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের ‘কমপিউটার টিচেস এভরিডে ইংলিশ’ নামের সফটওয়্যার। এই মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যারটি শিশুদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

ই-লোকেলাইজেশন

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার পায় অঙ্কুর আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘কমপিউটার ইন বাংলা ফর অল’ নামের সফটওয়্যার। এর লক্ষ্য কমপিউটার অ্যাপ্লিকেশন লোকেলাইজ করা। এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয় সামহোয়ার ইন নেট লিমিটেডের ‘সামহোয়ার ইন বাংলাদেশ’। এটি দেশের প্রথম লোকেশনভিত্তিক সোস্যাল মিডিয়া সার্ভিস।

ই-হেলথ

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার লাভ করেছে ‘আমাদের গ্রাম’-এর ‘এজি ব্রেস্ট কেয়ার-এ চয়েজ’। মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার স্তন ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা যোগানোর একটি উদ্যোগ। এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পায় ত্রিমাত্রিক মাল্টিমিডিয়ার ‘ই-এডোলেসেন্ট হেলথ লার্নিং’ সফটওয়্যার। এটি অ্যানিমেশনভিত্তিক। এই সফটওয়্যার কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যের যোগান দেয়।

ই-কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার বিজয়ী হয়েছে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড আর্কাইভ’। এটি বাংলাদেশে পরিচালিত গণহত্যাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট। এখানে কালক্রমে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ঘটনা, দলিলপত্র, অডিও/ভিডিও ফাইল, ছবি, মিডিয়া রিপোর্ট ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বিবরণ। প্রথম রানারআপ হয়েছে বিআরটি গ্রুপের ‘অমর একুশে’ নামের ইন্টারেকটিভ মাল্টিমিডিয়া সিডি-রম। বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ‘বিপ্লবীদেরকথা ডট কম’। এতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলার প্রথম দিককার বিপ্লবীদের জীবন ও কর্ম। এ ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছে বিপ্লবীদের সম্পর্কে একটি অনলাইন বিশ্বকোষ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে।

ই-নিউজ

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার লাভ করে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর ‘www.comjagat.com’ নামের লাইভ ওয়েবকাস্টিং ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এটি বাংলাভাষায় সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ নিউজওয়েব পোর্টাল। এতে ১৯৯১ সাল থেকে শুরু এর পুরো দুই দশকের মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর সব সংখ্যাই সার্চেবল ফর্মেটে রয়েছে। এ পোর্টালে এসএমএসের মাধ্যমে যেকেউ তাদের সংবাদ প্রকাশের সুযোগ পান। এটি একমাত্র পোর্টাল, যেখানে ফ্রি বাংলা কনটেন্ট ম্যানেজ সিস্টেম রয়েছে। এ পোর্টালে যেকেউ সংবাদ পাঠাতে পারে। এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয়েছে Techzoom24.com নামের অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এর সূচনা ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। এটি দেশের প্রথম ও একমাত্র অনলাইন টেকনোলজি নিউজ পেপার।

এম-কনটেন্ট/ অ্যাপ্লিকেশন/সার্ভিস

এ বিভাগে সেরা স্থান দখল করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পেপারলেস অ্যাডমিশন সিস্টেম’। এটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা। এটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও ফি জমা দেয়ার ঝামেলাহীন একটি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে যেকোনো স্থানে এসএমএস পাঠিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলও জানা যায়। এ বিভাগে প্রথম রানারআপ হয়েছে আই-ইনফোমিডিয়ার ‘এসএমএস আইডি- এম্পাওয়ারিং আইডেনটিটি থ্রো মোবাইল এসএমএস’। এর মাধ্যমে ইউজারেরা একটি মোবাইলভিত্তিক আইডি সৃষ্টি করতে পারে। এই আইডিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়।

ই-ইনক্লুশন অ্যান্ড পার্টিসিপেশন

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার বিজয়ী ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল অ্যাকশন (ওয়াইপিএসএ)-র ‘Daisy for All’। এটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ডিজিটাল টকিং বুক লাইব্রেরি। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে Daisy স্ট্যান্ডার্ড। বেশকিছু উপায়ে প্রতিটা বইয়ে এর মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়। সারাদেশে এ টকিং লাইব্রেরির ৫০০-এর মতো সদস্য রয়েছে।

ই-বিজনেস অ্যান্ড কমার্স

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার বিজয়ী খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম রানারআপ হয়েছে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের ‘MSME.COM.BD’ অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এটি তৃণমূলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এটি MSMEগুলোর উৎপাদিত পণ্যের একটি ওয়ানস্টপ ভার্চুয়াল হাট। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে ‘গোল্ডেন বাংলাদেশ’-এর Goldenbusinessbd.com নামের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একটি হালনাগাদ ও সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট।

ই-এন্টারটেইনমেন্ট

এ বিভাগে সেরা পুরস্কার বিজয়ী মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের ‘Lemcon24.com’। এটি একটি ইন্টারেকটিভ অনলাইন এন্টারটেইনমেন্ট রেডিও স্টেশন। প্রথমত বিশ্বব্যাপী সব বাংলাদেশীর জন্য এটি নেট ও পডকাস্টিং করছে এর অনুষ্ঠান। এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ত্রিমাত্রিকের ‘CG Animated Film Pikku’।

ই-গেমস

এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ‘Bdplay.com’। এটি একটি অনলাইন গেম আর্কেড, যেখানে গেমারেরা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেম খেলতে পারে। এর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ফোরাম রয়েছে, যেখানে প্রধানত গেমিং-সংশ্লিষ্ট আলোচনা চলে।

ই-সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি

এ বিভাগে বিশেষ পুরস্কার লাভ করেছে Biggani.org, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট তৈরির একটি প্রয়াস। এতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিভিন্ন লেখালেখি, টিউটরিয়াল, বই ইত্যাদি। ভবিষ্যতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক তৈরির প্রয়াসও এটি।

ই-এনভায়রনমেন্ট

এ বিভাগে কোনো বিজয়ীর সন্ধান পাননি বিচারকরা।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস