• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সুগারসিঙ্ক : মোবাইলভিত্তিক পার্সোনাল ক্লাউড সার্ভিস অ্যাপস
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মোবাইল
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সুগারসিঙ্ক : মোবাইলভিত্তিক পার্সোনাল ক্লাউড সার্ভিস অ্যাপস

প্রযুক্তি আমাদের প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়াকে কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে মোবাইল টেকনোলজির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মোবাইল ফোনগুলোকে এখন একটি কমপিউটারের মতো ব্যবহার করা সম্ভব। ব্রাউজিং, ই-মেইল, তথ্য-উপাত্ত দেয়া-নেয়া ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোয় সাধারণের অংশগ্রহণে মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখা যায়। উন্নত দেশগুলো এই ক্ষেত্রের উন্নয়নে প্রচুর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে মোবাইল ফোনকে আরও বেশি কাজে লাগানো যায়।

অফিস অথবা অন্য কোথাও থাকা অবস্থায় এমন একটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন যা আপনার বাড়ির ডেস্কটপ পিসিতে রয়েছে। ওই মুহূর্তে কোনোভাবেই কী ডকুমেন্টটি নিয়ে আসা সম্ভব? অবশ্যই নয়। যদি ডকুমেন্টটি এমন একটি জায়গায় রাখা হতো, যেখান থেকে যেকোনো ডিভাইসের সাহায্যে সহজেই ব্যবহার করা যেত। ব্যক্তি পর্যায়ে এই ধরনের সেবাকে বলা হয় পার্সোনাল ক্লাউড সার্ভিস। একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কমিউনিকেশন ডিভাইসের সাহায্যে সংযুক্ত হয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ডেস্কটপ, নোটবুক, নেটবুক থেকে তথ্য-উপাত্ত দেয়া-নেয়া করার বিষয়টি নতুন নয়। নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে থেকে তথ্য-উপাত্ত দেয়া-নেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও পার্সোনাল ক্লাউড সার্ভিস হতে পারে অন্যতম মাধ্যম।

সুগারসিঙ্ক (SugarSync) নেতৃস্থানীয় একটি মোবাইল অ্যাপস প্রস্ত্ততকারী সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। মূলত এটি ব্যক্তি পর্যায়ে মোবাইলভিত্তিক ক্লাউড কমপিউটিং সেবাদানকারী সফটওয়্যার, যা অ্যাপস প্রস্ত্তত করে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠান এধরনের সেবা দিয়ে থাকে সুগারসিঙ্ক তাদের মধ্যে অন্যতম। এই অ্যাপসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অটোসিঙ্ক প্রযুক্তি। এর সাহায্যে মোবাইল ব্যবহারকারীরা খুব সহজে যেকোনো সময়ে ক্লাউড নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে তথ্য-উপাত্ত সুবিধামত কাজে লাগাতে পারেন। ম্যাক, পিসি ছাড়াও আইওএস, অ্যান্ড্রোয়িড, ব্ল্যাকবেরি, সিম্বিয়ান ও উইন্ডোজভিত্তিক মোবাইল ডিভাইসগুলো দিয়ে সহজে নিরাপদে ফাইল অ্যাকসেস ও দেয়া-নেয়া সম্ভব। এছাড়া এর ফাইল শেয়ারিং টুলের সাহায্যে বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্ক, ই-মেইল ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সহজে ফোল্ডার দেয়া-নেয়া করাও সম্ভব।



সুগারসিঙ্ক প্রথম মোবাইলভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত দেয়া-নেয়ার সফটওয়্যার আবিষ্কার করে ২০০৮ সালে। সে সময় সফটওয়্যারটি শুধু উইন্ডোজ মোবাইল ও ব্ল্যাকবেরি ব্যবহারকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এর উন্নত প্রযুক্তি খুব কম সময়ের মধ্যে সাধারণ ব্যবহারকারীদের সাড়া ফেলে এবং খুব শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি মোবাইলের সাহায্যে ক্লাউড থেকে ফাইল আদান-প্রদান প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে মোবাইলের মাধ্যমে ডেস্কটপ কমপিউটার, নোটবুক, নেটবুক এমনকি ম্যাকের সাথে সংযুক্ত হয়ে ফাইল দেয়া-নেয়া ছাড়াও এডিট করা সম্ভব হতো। উল্লেখ্য, মাত্র দেড় বছর আগে আমাজন অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ক্লাউড কমপিউটিং পদ্ধতি প্রবর্তন করে। এসময়ে কোনো একটি ফাইল পাঠাতে হলে প্রথমে তা আপলোড করতে হতো। এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে লিঙ্ক শেয়ারিং পদ্ধতিতে ফাইল দেয়া-নেয়া শুরু হয়। এভাবেই একের পর এক সুগারসিঙ্ক তাদের প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে সেবাকে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উইন্ডোজ ওএসভিত্তিক মোবাইলের পর অন্যতম জনপ্রিয় সিম্বিয়ান ওএসের জন্য সুগারসিঙ্কের সফটওয়্যার বাজারে আসে ২০০৯-এর অক্টোবরে। All-In-One Sync নামের এই সফটওয়্যারের সাহায্যে যেকোনো ডকুমেন্ট ও ছবি অ্যাক্সেস, দেয়া-নেয়া ছাড়াও এডিট করার উপযোগী টুল সংযোজন করা হয়। একই সাথে সুগারসিঙ্ক ওয়েব স্টোরে ২ গি.বা. ফ্রি জায়গা দেয়া হয় তথ্য-উপাত্ত ও ছবি সংরক্ষণের জন্য। এর পরবর্তী সংস্করণে ফাইল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যেকোনো তথ্য দেয়া-নেয়ার সুবিধা রাখা হয়। এ সময়ে প্রথম সুগারসিঙ্ক সফটওয়্যার বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহারের সুযোগ হয়।

অধিক নিরাপদ পদ্ধতিতে ক্লাউড সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালের অক্টোবরে সুগারসিঙ্ক ও ওয়েবরুট যৌথভাবে কাজ শুরু করে। উল্লেখ্য, ওয়েবরুট কলোরাডোভিত্তিক একটি অন্যতম ইন্টারনেট নিরাপত্তাদানকারী প্রতিষ্ঠান।

সুগারসিঙ্কের আইওএস অ্যাপস ইংরেজি, জাপানি ও কোরীয় ভাষায় বাজারে আসে মার্চ ২০১১-এর শেষের দিকে। আইফোন ও আইপ্যাড২ ও আইপডের উপযোগী অ্যাপসের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা সহজে ও দ্রুতগতিতে ফাইল দেয়া-নেয়া করতে পারবেন, যা এতদিন শুধু কমপিউটারের সাহায্যে করা সম্ভব হতো। একই সাথে ৫ গি.বা. ফ্রি জায়গা থাকছে তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য। তবে মাসে ৪.৯৯ ডলার পরিশোধ করে ৩০ গি.বা. জায়গা ব্যবহার করা যাবে।

ফাইল, ফোল্ডারসহ ফটো ও ভিডিও দেয়া-নেয়ার সুবিধা নিয়ে সম্প্রতি অ্যান্ড্রোয়িডভিত্তিক একটি অ্যাপস বাজারে এসেছে। উল্লেখ্য, ফটো ও ভিডিও দেয়া-নেয়ার বিষয়টি এবারই প্রথম।

সুগারসিঙ্ক এসএএমসিইডিএ ২০১১ তথা কান্ট্রি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক্সিলেন্স ফর টেকনোলজি ইনোভেশন পুরস্কার পায়। উল্লেখ্য, এসএএমসিইডিএ হচ্ছে আমেরিকার পেনিসুলিয়াভিত্তিক একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৩ সাল থেকে পেনিসুলিয়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবসায় সহায়ক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

সুগারসিঙ্কের সেবা পেতে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে (www.sugarsync.com) গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে এর সফটওয়্যার আপনার পিসিতে ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে। এরপর লগইন করে কমপিউটার নামের জায়গায় আপনার পছন্দমতো নাম দিতে হবে যে নামে ক্লাউডে আপনার নিজস্ব ফোল্ডার তৈরি হবে তথ্যাদি সংরক্ষনের জন্য। এখন যেসব ফোল্ডার সুগারসিঙ্ক ক্লাউডে রাখতে চান সেগুলোকে নির্বাচন করে দিতে হবে।

অন্যান্য ফাইল শেয়ারিং ওয়েবসাইট থেকে সুগারসিঙ্ক ক্লাউডের বিশেষ কিছু পার্থক্য রয়েছে। এসব পার্থক্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ প্রযুক্তি। এর ফলে কমপিউটার বা ক্লাউড থাকা ফোল্ডারগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হলেই এই প্রযুক্তির ফলে সব জায়গাতেই তথ্যাদি পরিবর্তিত হবে।

মোবাইলে সুগারসিঙ্ক অ্যাপস ডাউনলোড করে নিলে একটি আইকন তৈরি হবে। এখানে লগইন করে ক্লাউডে থাকা তথ্য কাজে লাগাতে পারবেন সরাসরি ওয়েবসাইটে গিয়ে, ব্রাউজ করার দরকার নেই। একইভাবে ক্লাউড, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা মোবাইলের মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন আনলে সব ডিভাইসেই পরিবর্তন হবে। যদি আপনি ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে থাকেন সে অবস্থায় কোনো ডকুমেন্টে কোনো পরিবর্তন হলে অনলাইনে সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে অটোসিঙ্কের সাহায্যে এটি পরিবর্তন হবে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : animesh@letbd.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস