• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিকিনি আর স্পর্শেই যন্ত্রপাতি চার্জ!
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিকিনি আর স্পর্শেই যন্ত্রপাতি চার্জ!

আধুনিক বিশ্ব হলো প্রযুক্তিময়। প্রযুক্তি ছাড়া এখানে এক মুহূর্ত টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি তথা প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা। ঘরে কিংবা বাইরে, যেখানেই হোক প্রযুক্তির ছোঁয়ার বাইরে থাকার উপায় নেই। তাই তো দেখা যায় সবার সাথেই থাকছে বহনযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য। এগুলোর প্রায় সবই পরিচালিত হয় বিদ্যুতের সাহায্যে। সেই বিদ্যুৎ থাকে বিশেষভাবে তৈরি ব্যাটারিতে। তাও আবার অফুরন্ত নয়। ব্যবহারের ভিত্তিতে সেই ব্যাটারিতে থাকা বিদ্যুৎ এক সময় শেষ হয়ে আসে। তখন প্রয়োজন হয় আবার সেটি চার্জ দেয়ার। কিন্তু ঘরে বা অফিসের বাইরে থাকলে বিশেষ প্রয়োজনের সময় কীভাবে চার্জ দেয়া সম্ভব ব্যাটারি? এই প্রশ্ন এসে যাওয়া স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করে চলেছেন কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। এমন ভাবনার পথ ধরেই সদ্য আবিষ্কৃত হয়েছে সোলার বিকিনি। এখন আর মোবাইল ফোন বা অন্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি চার্জ দেয়ার জন্য ঘরে বা অফিসে বসে থাকতে হবে না। বিচ বা সমুদ্রসৈকতে শুয়ে রোদ পোহানোর সাথে সাথেই সেগুলো চার্জ দেয়া যাবে। এজন্য বিদ্যুৎ সংযোগেরও প্রয়োজন হবে না। স্নানের পোশাক থেকেই যন্ত্রপাতি চার্জ হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ডিজাইনার অ্যাড্রু স্কিনাইদার এমনই এক পরিবেশবান্ধব সোলার বিকিনি তৈরি করেছেন। তার মতে, যিনি ওই বিকিনি পরবেন তিনি সমুদ্রসৈকতে গ্রীষ্মের সূর্যের নিচে শুয়ে স্মার্টফোন বা মিডিয়া প্লেয়ারের মতো বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি ওই বিকিনিতে রেখেই চার্জ দিতে পারবেন। ওই বিকিনি এখনই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪০টি খুবই পাতলা এবং নমনীয় ফটোভোলটাইক সেল। এর প্রত্যেকটির আকার ১ বাই ৪ ইঞ্চি। এমন অনেক সেল একত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে একটি কন্ডাকটিভ থ্রেডের মাধ্যমে। ওই সেল তৈরি করেছে পাওয়ার ফিল্ম সোলার নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাক্টিভ টেলিকমিউনিকেশন্স প্রোগ্রামে উপস্থাপনের জন্য ডিজাইনার স্কিনাইদার যখন একটি পরিবেশবান্ধব পণ্যের কথা ভাবছিলেন, তখনই তার মাথায় আসে সমসাময়িক ফটোভোলটাইক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকিনি তৈরির বিষয়টি, যেটি ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি চার্জ করা যাবে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, বিকিনিতে বিদ্যুৎ বা পাওয়ার মজুদ থাকবে না। যিনি পরবেন তিনি যখন সাঁতার কাটতে যাবেন তখনও তিনি কোনো যন্ত্র চার্জ করতে পারবেন না। পানি থেকে উঠে এসে বিকিনি শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এটি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে তখন চার্জের জন্য উপযুক্ত হবে। তার আগে নয়। ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে বিকিনির দামে ভিন্নতা রয়েছে। এটি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১৫০০ ডলারে।



টেলিকম জায়ান্ট অরেঞ্জের উদ্ভাবকরাও বসে নেই। তারা সম্প্রতি মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারে এমন টি-শার্ট উদ্ভাবন করেছেন। উচ্চমাত্রার শব্দ শোষণ করে সেই শব্দশক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে মোবাইল ফোন চার্জ করতে পারে ওই টি-শার্ট। এজন্য শব্দ যত জোরে হবে মোবাইল ফোনটি তত বেশি চার্জ হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যখন কোথাও উচ্চস্বরে ব্যান্ড পার্টি বা কনসার্ট হবে তখন চাইলে টি-শার্ট থেকেই দ্রুত মোবাইল চার্জ করিয়ে নেয়া সম্ভব। এজন্য শুধু টি-শার্টের সাথে মোবাইল ফোনের প্লাগটি জুড়ে দিলেই দ্রুত চার্জ হয়ে যাবে। শব্দ থেকে মোবাইল ফোন চার্জ করতে সক্ষম এই টি-শার্ট তৈরিতে গবেষকরা এ-৪ সাইজের পিজোইলেকট্রিক ফিল্ম ব্যবহার করেছেন, যা শব্দতরঙ্গ শোষণ করে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি শুধু মোবাইল ফোনের টাচস্ক্রিন স্পর্শ করে বা মেসেজ পাঠিয়েই মোবাইল ফোন চার্জ করার উপায় বের করেছে। আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. মাধুর ভাস্করন এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পিজোইলেকট্রিক ন্যানো-ফিল্ম ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানো এবং টাচস্ক্রিনে স্পর্শশক্তির সাহায্যে মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এ পদ্ধতিতে যেকোনো শব্দতরঙ্গ এবং নড়াচড়ার ফলে তৈরি হওয়া তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে পিজোইলেকট্রিক ন্যানো-ফিল্ম।

ড. মাধুর ভাস্করন জানান, পিজোইলেকট্রিককে জুতার সাথে জুড়ে দিলে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা দিয়ে ল্যাপটপও চালানো যাবে এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারে দীর্ঘদিন টিকে থাকে এমন ব্যাটারি তৈরি করা সম্ভব।



গবেষকরা ভোল্টেজ তৈরি করতে সিলিকন উপাদানের সাথে সীসাযুক্ত পিজোইলেকট্রিক ফিল্ম মিশিয়েছেন। তবে মেসেজ পাঠিয়েই মোবাইল ফোন চার্জ করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তারচেয়ে কম শক্তি তৈরি হয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। এ শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন গবেষকরা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে অ্যাডভান্সড ফাংশনাল মেটেরিয়ালস সাময়িকীতে।

সাইবারনেটিক মডেল

উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন পোশাক বা পণ্য প্রদর্শনে মডেল হিসেবে কাজ করেন নামি-দামি সব নারী-পুরুষ। এই প্রদর্শনী এখন একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। মডেলরা মঞ্চে এসে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেন তাদের পোশাক কিংবা নির্দিষ্ট কোনো পণ্য। ব্যবসায়ীরা সেই পণ্য কিনে বিক্রি করেন বিশ্বে। প্রযুক্তির শীর্ষে অবস্থানকারী জাপান এই পণ্য প্রদর্শনীর ব্যাপারে এবারও এক কান্ড ঘটিয়ে অবাক করে দিয়েছে। তারা বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো সাইবারনেটিক ফ্যাশন মডেল তৈরি করেছে। তাই কোনো কিছু প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এখন আর জীবন্ত নারী-পুরুষ মডেল প্রয়োজন হবে না। ওই সাইবারনেটিক মডেলই মঞ্চে এসে মানুষ মডেলের মতো শৈল্পিক ভঙ্গিতে প্রদর্শন করবে পোশাক বা পণ্য। এটা তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবনা। কালো-কেশি ওই মডেলের আপাতত নাম এইচআরপি-৪সি। তাকে হাঁটা ও নড়াচড়ার উপযোগী করতে ব্যবহার হয়েছে ৩০টি মোটর এবং মুখে রাগ ও বিস্ময়সহ অন্যান্য ভাব ফুটিয়ে তুলতে লেগেছে ৮টি মোটর।

মডেলটি যারা তৈরি করেছেন তারা সম্প্রতি তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখেছেন। এ ব্যাপারে ডেমোনেস্ট্রেশনের সময় মডেলটি পড়ো পড়ো অবস্থায় হেঁটে যায় এবং চোখ পিট পিট করে। আর নারী কণ্ঠে বলে- ‘হ্যালো এভরিওয়ান’। কথা বলার সময় তার মুখ নড়ছিল, যেমনটা হয় অন্য রোবটের বেলায়। মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানোর মতো অবস্থা যদিও তার এখনও হয়নি, তবুও আবিষ্কারকরা আশাবাদী। তারা মনে করছেন, সহসাই এমন দিন আসবে যখন সাইবারনেটিক বা রোবট মডেলরা স্থান দখল করে নেবে মানুষ মডেলদের। ডেমোনেস্ট্রেশনকালে এইচআরপি-৪সির চোখে ছিল অবাক বিস্ময়। সে শুধু তার চোখ এবং মুখ খুলছিল। প্রকৌশলীরা যখন তাকে হাসতে বা রাগ হতে বলছিলেন তখন তার মুখাবয়বে ফুটে ওঠে অবাক অভিব্যক্তি।

প্রকৌশলীরা বলছেন, যেকোনো ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়ার মতো অবস্থা এর এখনও হয়নি। এই মডেলকে আগে নিজের পায়ে পুরোপুরি ব্যালেন্স নিয়ে দাঁড়াতে শিখতে হবে। এ জন্য আরও কিছু প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির হিরোহিসা হিরুকাওয়া বলেছেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এইচআরপি-৪সিকে এখনও পুরোপুরি মডেল হিসেবে তৈরি করা যায়নি। এর অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এখন যারা মডেল হিসেবে কাজ করছেন সেই সব নারী-পুরুষের তুলনায় এই রোবট মডেল অনেক খাটো এবং তার ফিগার বা দৈহিক কাঠামো সাধারণমানের।

মডেলের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন যারা তারা বলছেন, ছোট আকারের ‘নারী অঙ্গ’ তৈরি করাই ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে জটিল কাজ। বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাড়ার পর এর রোবটিক ফ্রেমওয়ার্কের দাম হবে ২ কোটি ইয়েন বা ২ লাখ ৩ হাজার ডলার। চাহিদার প্রেক্ষিতে রোবটটির উন্নয়ন ঘটানোর অপশন বা বিকল্পও রাখা হয়েছে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস