লন্ডন দাঙ্গার খবর আমরা সবাই জানি। দাঙ্গার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ অবাধে লুটপাট চালিয়েছে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। অফিস-আদালতে। দোকান-পাটে। যারা এ হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যেই একজন গ্রেগ মার্টিন। ওয়েস্ট কেনসিংটনে তার অ্যাপার্টমেন্টে কাজ থেকে ফিরে এসে তিনি দেখলেন তার জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে চুরি হয়েছে তার ল্যাপটপ ও ম্যাকবুক প্রো। দাঙ্গায় এভাবে অনেকের জিনিসপত্রই হয়তো খোয়া গেছে, কিন্তু ক’জন তাদের চুরি যাওয়া জিনিস ফিরে পেয়েছেন? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, কিভাবেই বা চুরি যাওয়া জিনিস ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
সুখবর হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্যে আপনার ল্যাপটপ কমপিউটারটি রয়েছে, ততক্ষণ তা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলেও কে চুরি করেছেন, তা জানার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করেছেন গ্রেগ মার্টিন, যিনি নিরাপত্তাবিষয়ক একটি ব্লগ পরিচালনা করেন এবং আগে তিনি এফবিআই ও নাসায় কাজ করেছেন।
চুরি যাওয়ার দু’দিন পর তিনি তার ল্যাপটপে ইনস্টল থাকা ট্র্যাকিং সফটওয়্যার থেকে রিপোর্ট পেতে শুরু করেন। সেই রিপোর্টে ল্যাপটপটি ওই মুহূর্তে কোথায় রয়েছে, কী কাজ করা হচ্ছে এবং ওয়েবক্যামের সাহায্যে কে ল্যাপটপের সামনে রয়েছেন তার ছবি মার্টিনের কাছে আসতে থাকে। এক সময় তার ল্যাপটপ ব্যবহার করে ফেসবুকে ঢোকা হয় এবং তিনি ওই ফেসবুক আইডি নোট করে ব্রিটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশের দ্বারস্থ হন। অবশেষে ১৮ বছর বয়সী সোহেইল খালিফা নামের ওই ব্যক্তিকে পুলিশ খুঁজে বের করে এবং মার্টিনের ল্যাপটপটিও উদ্ধার করে মার্টিনের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
শুনতে অনেকটা হলিউডি মুভির মতো মনে হলেও কাজটি কিন্তু মোটেই কঠিন কিছু নয়। শুধু একটি মাত্র ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকলেই আপনার ল্যাপটপ, মোবাইল এমনকি ডেস্কটপ কমপিউটারও চুরি গেলে তা উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে। এবারে আসুন জেনে নেয়া যাক বিনামূল্যের এ সফটওয়্যারের কথা।
প্রে প্রজেক্ট
প্রে প্রজেক্ট নামের এ সফটওয়্যার মূলত ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। এটি কাজ করে উইন্ডোজ, ম্যাকিনটশ, লিনআক্স (উবুন্টু এবং ডেবিয়ান) এবং অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেমে। এটি খুবই ছোট একটি সফটওয়্যার, অথচ এর কাজ বেশ বড়। সফটওয়্যারটি ইনস্টল করার পর শুধু একবার আপনাকে এর সেটিংস ঠিক করে দিতে হবে। এরপর আপনি নিজেও আর সফটওয়্যারটির কোনো পাত্তা খুঁজে পাবেন না। কেননা, এটি সিস্টেমে একরকম লুকিয়ে থাকে যাতে করে সহজে ধরা না যায় যে সফটওয়্যারটি চলছে। এটি তেমন কোনো রিসোর্সও খরচ করে না, তাই এটি সারাক্ষণ চললেও আপনার কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটাবে না। এটি সবসময় আপনার ল্যাপটপের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করবে না। শুধু আপনার নির্দেশ পাওয়ার পরই এটি জেগে উঠবে এবং নির্ধারিত সময় পরপর আপনার ই-মেইলে রিপোর্ট পাঠাতে থাকবে।
প্রে ইনস্টল করার পর প্রথমেই কনফিগার করতে হবে আপনি কিভাবে রিপোর্ট পেতে চান। সাধারণত প্রে ইনস্টল করার পর ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। এই ই-মেইল অ্যাকাউন্টেই সব ধরনের রিপোর্ট পাঠানো হয়। এছাড়াও প্রে প্রজেক্টের সাইটে গিয়ে লগইন করলে বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়া যায়। এমনকি বিভিন্ন সেটিংসও প্রে-এর ওয়েবসাইট থেকেই সেট করে দেয়া যায়। যেমন- কতক্ষণ পরপর রিপোর্ট পাঠানো হবে ইত্যাদি।
প্রে যেভাবে কাজ করে
প্রে ইনস্টল করার পর এটি চুপচাপ আপনার কমপিউটারে স্লিপিং মোডে থাকবে। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রে প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে ল্যাপটপকে ‘মিসিং’ হিসেবে চিহ্নিত না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রে তার ম্যাজিক দেখাতে জেগে উঠবে না। যখনই আপনি মিসিং হিসেবে চিহ্নিত করবেন, প্রে আপনার কমপিউটারে থাকা সফটওয়্যারটিকে তা জানিয়ে দেবে এবং আপনার সেটিংস অনুযায়ী ১০ বা ২০ মিনিট পর প্রে ‘ওয়েক আপ’ বা জেগে উঠবে এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাঠাতে থাকবে আপনার ই-মেইল এবং প্রে অ্যাকাউন্টের ড্যাশবোর্ডে।
প্রে’র বিশেষ সুবিধাগুলো
আপনার ডিভাইসে যদি জিপিএস সুবিধা থাকে তাহলে প্রে আপনাকে ডিভাইসটি চুরি বা হারিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান অবস্থান কোথায় তা সঠিকভাবে বলে দিতে পারে। বেশিরভাগ ল্যাপটপের ক্ষেত্রেই জিপিএস থাকে না, সেক্ষেত্রে ওয়াই-ফাই হটস্পটের ওপর নির্ভর করবে প্রে। অর্থাৎ কাছাকাছি কোনো ওয়াই-ফাই হটস্পটে যখনই ল্যাপটপটি কানেক্টেড হবে, তখনই প্রে সেই ওয়াই-ফাইয়ের অ্যাক্সেস পয়েন্ট, আইপি ঠিকানাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট আকারে পাঠাবে। প্রে’র বিশেষ সুবিধা হচ্ছে ওয়াই-ফাই হটস্পট পাওয়া গেলে প্রে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ল্যাপটপটিকে উক্ত নেটওয়ার্কে কানেক্ট করে নেবে। এই সুবিধাটি প্রে কনফিগার করার সময়ই চালু করে নিতে হবে।
ল্যাপটপে ক্যামেরা থাকলে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে প্রে। কিছুক্ষণ পরপরই চুপিসারে ছবি তুলতে থাকবে প্রে। এজন্য ল্যাপটপ ব্যবহারকারী কিছুই টের পাবেন না। খানিক পরপর তার ছবি তুলে গোপনে আপনার ই-মেইলে এবং প্রে অ্যাকাউন্টে পাঠাতে থাকবে প্রে। তবে বিনামূল্যের অ্যাকাউন্টে আপনি সর্বোচ্চ ১০টি রিপোর্ট জমা রাখতে পারবেন। ১০০টি রিপোর্ট জমা রাখতে হলে প্রে প্রো অ্যাকাউন্ট কিনতে হবে। তবে সাধারণ ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যের অ্যাকাউন্টটিই যথেষ্ট।
ক্যামেরা ছাড়াও আপনার কমপিউটারে কী করা হচ্ছে, সে তথ্যও প্রে আপনাকে জানাবে। কিছুক্ষণ পরপর ল্যাপটপের স্ক্রিনশট তুলে তা আপনার কাছে পাঠাতে থাকবে প্রে। এতে করে দেখতে পারবেন আপনার কমপিউটারে কী করা হচ্ছে। এই সুযোগে হয়তো গ্রেগ মার্টিনের মতো আপনিও তার ফেসবুক প্রোফাইলে পেয়ে যেতে পারেন।
এসব ছাড়াও চাইলে দূর থেকে কমপিউটারের সব কিছু লক করে দিতে পারবেন। এই সুবিধা সক্রিয় থাকলে ল্যাপটপ যার কাছে আছে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তবে এক্ষেত্রে তাকে খুঁজে বের করাও সম্ভব হবে না। যদি কমপিউটারে খুবই গোপনীয় কোনো তথ্য থাকে, তাহলে এই উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এছাড়াও প্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়। যখনই নতুন কোনো সংস্করণ মুক্তি পায়, প্রে নিজে নিজেই তা ডাউনলোড করে নেয়। ফলে আপনি একবার প্রে ইনস্টল করে তারপর তার সম্পর্কে ভুলে গেলেও কোনো অসুবিধা নেই। প্রে সব সময়ই থাকবে তার সর্বশেষ সংস্করণে।
উল্লেখ্য, ল্যাপটপে অনেকেই পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট লক করে রাখেন। প্রে’র সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই একটি গেস্ট অ্যাকাউন্ট চালু রাখবেন যাতে করে ল্যাপটপ চুরি করার পর চোর তাতে লগইন করতে পারে। এতে করে তার সম্পর্কে তথ্য এমনকি তার ছবি পাওয়াও সম্ভব হবে। প্রে ইনস্টল করার পর প্রথমবার কনফিগার করার সময়ই গেস্ট অ্যাকাউন্ট অ্যাকটিভ করার অপশন পাবেন।
প্রে প্রজেক্ট থেকে এখনই প্রে ডাউনলোড করে নিন আপনার কমপিউটার, ল্যাপটপ বা অ্যান্ড্রয়িড মোবাইলের জন্য। উল্লেখ্য, বিনামূল্যের অ্যাকাউন্টে আপনি সর্বোচ্চ তিনটি ডিভাইস ট্র্যাক করতে পারবেন। অসাধারণ এই ট্র্যাকিং সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন : http://preyproject.com/download
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com