লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
ভাস্কর ভট্টচার্য
মোট লেখা:১৯
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
সাইবার সন্ত্রাস
সাইবারক্রাইম ও হ্যাকিং
সাইবারক্রাইম ও হ্যাকিং ২০১১-এর সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ২০১১ সালে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে সাইবারক্রাইম এবং হ্যাকিং। তথ্য চুরি, গোপন তথ্য ফাঁস, ই-মেইলের পাসওয়ার্ড হ্যাক করা, সার্ভার কিংবা ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি গায়েব করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বছরের শুরু থেকে ব্যাপকভাবে। ই-পর্নোগ্রাফি, যৌন হয়রানির ব্যাপকতা বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরোল্লিখিত ঘটনাগুলো বাদ যায়নি জাতিসংঘ, কর্পোরেট, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অনেক ক্ষেত্রেই।
সাইবার আর্ক সার্ভে
সম্প্রতি সাইবার আর্ক পরিচালিত সার্ভের মাধ্যমে জানা যায়, কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড সাইবার অপরাধ নিয়ে শঙ্কিত। প্রায় ১৪শ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপরে চালানো এই জরিপে দেখা যায়, কর্পোরেটের জন্য একটি বড় হুমকি হচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ মনে করে আগামী ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যে সাইবার অপরাধ যেকোনো কোম্পানির জন্য একটি বাহ্যিক হুমকি। যেকোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যার চেয়ে সাইবার অপরাধ একটি বড় বাহ্যিক সমস্যা। জরিপে দেখা যায়, অনেক বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে বিভিন্ন কোম্পানি। নিরাপদ আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়া, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তথ্য চুরি হওয়া কিংবা পুরো সার্ভার অচল করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি তো সবসময়ই রয়েছে। ২০ শতাংশ এক্সিকিউটিভ মনে করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে সাইবার অপরাধ ঘটেছে অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে। ১৮ শতাংশ মনে করে, তাদের প্রতিষ্ঠানের তথ্য অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে অন্যরা চুরি করেছে। স্নুপিং বা অতি আগ্রহের কারণে কর্পোরেট সেক্টরে অনেক ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ ঘটছে। উত্তর আমেরিকাতে ২৮ শতাংশ এবং ইউরোপে ৪৪ শতাংশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এমন কিছু তথ্য তারা ব্যবহার করেন যা তাদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়, অথচ এ কোম্পানির জন্য যা অত্যন্ত গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। এসব গোপন তথ্য প্রকাশিত হলে কোম্পানির ক্ষতি হতে পারে। উত্তর আমেরিকাতে ২০ শতাংশ ও অন্যান্য অঞ্চলে ৩১ শতাংশ কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ জানান, তারা গোপন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কোম্পানির গোপন তথ্য ব্যবহার করেন। এ জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ স্টাফ স্নুপিংয়ের সাথে জড়িত, ৭ শতাংশ এইচআর সংক্রান্ত স্টাফ ১০ শতাংশ ম্যানেজারের মাধ্যমে স্নুপিং হয়ে থাকেন। এ জরিপের মধ্য দিয়ে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের সামনে সাইবার অপরাধ যে একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা উঠে এসেছে। সাইবার আর্ক এ জরিপটি পরিচালনা করে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৪শ’র বেশি স্টাফ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে। এ পুরো জরিপটি দেখার জন্য ভিজিট করুন : http://news.cnet.com/8301-1009_3-20054283-83.html
ফেসবুক আর থাকবে না
৫ নভেম্বর ২০১১-এর পর ফেসবুক থাকবে না। এই ঘোষণা দিয়েছে একটি হ্যাকার দল। তারা বলছে, নভেম্বরের ৫ তারিখে ফেসবুকের মৃত্যু ঘটবে। ফেসবুকের প্রতি এই দলটির ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ, ফেসবুক নাকি ব্যবহারকারীদের তথ্য বিভিন্ন সরকারি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে দেয়। মিসর কিংবা সিরিয়ার আন্দোলনে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। তবে এ বিষয় নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এখনো মুখ খোলেনি। ইতোপূর্বে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে খুবই সচেতন। ফেসবুক থাকবে কি থাকবে না- এ বিষয়ে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
ই-মেইল হ্যাকিং
ই-মেইল হ্যাকিং অনেকের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১১ সালে এর মাত্রা বেড়েছে অনেকগুণ। জি-মেইলের মতো ফ্রি ই-মেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আক্রমণ হয়েছে হ্যাকারদের দিয়ে। হাজার হাজার জি-মেইল ব্যবহারকারীর ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড প্রকাশ করে দিয়েছে হ্যাকারদের একটি দল। মাঝেমধ্যে দেখা যায় আমাদের পরিচিত কারো ই-মেইল থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে এই বলে যে, বিদেশে কোথাও তার সবকিছু চুরি হয়ে গেছে ডলার কিংবা পাউন্ড পাঠিয়ে দিন এই হোটেলের ঠিকানায়। দেশে ফিরে তা ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি বহাল তবিয়তে আছেন। অর্থাৎ তার মেইল পাসওয়ার্ড হ্যাক করে কে বা কারা এ ধরনের স্ক্যাম ছড়াচ্ছে। এছাড়াও শত শত জাঙ্ক মেইল, নগ্ন ছবি, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি ই-মেইলের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। ই-মেইলের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো হয়ে উঠেছে একটি উদ্বেগজনক বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
উইকিলিকস
সম্প্রতি উইকিলিকস ওয়েবসাইটটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছে মার্কিন সরকারের গোপন দলিল ফাঁস করে দেয়ার জন্য। উইকিলিকসের এ কর্মকান্ড মার্কিন সরকারের কাছে যেমন বড় সাইবার অপরাধ, অপরদিকে অনেকেই মনে করে উইকিলিকস মার্কিন তথ্য প্রকাশ করা একটি বড় কোনো অপরাধ নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি বড় প্রতিবাদ। তা যাই হোক, কেউ যে নিরাপদ নয় বা গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত করা যাবে কি না এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উইকিলিকসের কর্মকান্ডে বাংলাদেশসহ বিশ্বের তাবত নেতাদের বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বটেই। তথ্য গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
পেপাল
পেপাল অর্থ বিনিময়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। অনেকের আস্থাভাজন এই প্রতিষ্ঠানটিও হ্যাকারদের আক্রমণের মুখে পড়ে। আমেরিকাকে সহায়তার অভিযোগে হ্যাকারেরা কিছু সময়ের জন্য এর সেবা বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়।
সনি প্লে স্টেশন
২০১১ সালের আরেকটি খুবই আলোচনার বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি সনি প্লে স্টেশন সার্ভার হ্যাক হওয়া। এতে করে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির প্রতি মানুষের আস্থা কমতে থাকে।
লন্ডন দাঙ্গা
সম্প্রতি লন্ডনে ঘটে যাওয়া দাঙ্গায় সাইবার অপরাধীদের একটি বড় ভূমিকা ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আদালত ইতোমধ্যে কয়েকজনকে শাস্তি দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে। লন্ডন দাঙ্গা সংঘটনের জন্য ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যাপক ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। ব্ল্যাকবেরির মতো তথাকথিত নিরাপদ সার্ভারেও হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হওয়ার কথা জানা যায়। মিসর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের গণআন্দোলন থামানোর জন্য স্বৈরশাসকেরা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন বন্ধ করে দিচ্ছিল। তখন পশ্চিমারা এর ব্যাপক সমালোচনা করে। অথচ লন্ডনে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত
সাইবার অপরাধীদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রস্ত্তত কি? এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার পাশাপাশি ডিজিটাল ক্রাইমও বাড়ছে। কিছু ডিজিটাল অপরাধের অভিযোগে ফেসবুককে বাংলাদেশ সরকার একবার বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে জনগণের চাপে এটি আবার চালু হলেও প্রশ্ন উঠেছে সরকার কিভাবে সাইবার অপরাধীদের দমন করবে। সাইবার অপরাধ দমনের জন্য আইনের কাঠামো কতটুকু মজবুত? কোনটিকে সাইবার অপরাধ বলা যাবে, কোনটিকে বলা যাবে না- এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। আইসিটি ইনস্পেক্টর কতটুকু নিরাপদ, আইসিটি ইনস্পেক্টর গড়ে ওঠার নিরাপত্তার দিক কতটুকু বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই, তবে বাংলাদেশে সাইবারক্রাইম আগের চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে এ তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : vashkar79.@hotmail.com