• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০১৬ সালের মধ্যে ইন্টারনেট অর্থনীতি হবে ষষ্ঠ বৃহত্তম
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মইন উদ্দীন মাহমুদ স্বপন
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি বিপ্লব
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০১৬ সালের মধ্যে ইন্টারনেট অর্থনীতি হবে ষষ্ঠ বৃহত্তম


তথ্যপ্রযুক্তি বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসায়ের ধরন-ধারণ পাল্টে দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবসায়ের ম্যানুয়াল অপারেশন স্বয়ংক্রিয় করে এবং তথ্যের প্রসেসকে অনেক দ্রুততর করেছে। পার্সোনাল কমপিউটার, সার্ভার স্টোরেজ, পয়েন্ট-অব সেল বা ক্যাশ রেজিস্টার সিস্টেমের মাধ্যমে বিজনেস টেকনোলজি ব্যবহার হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারিগরি অগ্রগতি হলো ইন্টারনেট, যা তৈরি করেছে ব্যবসায়ের যোগাযোগের নতুন ধরন এবং অন্যান্য বিজনেস মেথড, যা কোম্পানিগুলো ব্যবহার করে ফিন্যান্সিয়াল আর বিজনেস ইনফরমেশন প্রসেসিংয়ের জন্য।

আজকাল বেশিরভাগ কোম্পানি ব্যবসায়িক পরিবেশে বাস্তবায়ন করেছে বিজনেস টেকনোলজি বা ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ের ধরন। অনেক কোম্পানি ডেভেলপ করে বিজনেস ওয়েবসাইট যার মাধ্যমে ভোক্তারা কোম্পানি ও কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে কোনো পণ্য কেনার আগে। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কনজ্যুমাররা কোম্পানির সাথে দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িক অপারেশনের খরচ ও উৎপাদন খরচ কমাতে সক্ষম হয়। কোম্পানিগুলো ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের পণ্য বা সেবা সরবরাহের কাজ জোরদার করে তুলতে পারে।

গতানুগতিক ব্যবসায়-ধারায় অনেক কোম্পানি তাদের পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারে না, কিংবা ভোক্তাকে সার্ভিস দিতে পারে না। এসব কোম্পানিকে মধ্যস্বত্বভোগী সহায়তা নিতে হয়। কিন্তু ওয়েবসাইট তৈরি করে বা অন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক অর্ডারের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো পণ্য উৎপাদন বা সরবরাহ করে অনায়াসে ব্যবসায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সম্প্রসারণ করতে পারে।

ইন্টারনেট অর্থনীতি কী

প্রতিদিনের কোটি কোটি বারের ক্লিক একত্রে সংস্থাপন করে গঠন করা হয় কোটি কোটি বাণিজ্যিক লেনদেন, শেয়ার করা হয় কোটি কোটি মেসেজ ও ই-মেইল এবং দৈনিক ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ওয়েবপেজ। আর যেখানে এমন কোটি কোটি লোকের বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়, সেখানে মাইক্রোইকোনমিকসের কথা আসতেই পারে। বস্ত্তত এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর তাই বর্তমানে ইন্টারনেট হলো অর্থনীতির ক্রমোন্নতির চালক এবং পেশা, তথা কর্মক্ষেত্র তৈরির নিয়ামক। বিশ্বের যেকোনো মহাদেশের লোকদের মাঝে যোগাযোগ ঘটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে জনগণকে মিলিত করে এবং কোটি কোটি কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক সংস্থাকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে ইন্টারনেট অর্থনীতি এখন পরিণত হয়েছে অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে।



ইন্টারনেট অর্থনীতি ব্যবসায় পরিচালনা করে বাজারের মাধ্যমে, যার অবকাঠামোর ভিত্তি হলো ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। ইন্টারনেট অর্থনীতি গতানুগতিক অর্থনীতি থেকে ভিন্ন। যেমন ই-পয়েন্ট অর্থনীতি কমিউনিকেশন, মার্কেট সেগমেন্ট, কস্ট ডিস্ট্রিবিউশন এবং মূল্য ইত্যাদি থেকে নানাভাবে ভিন্ন।

ইন্টারনেট অর্থনীতির সংজ্ঞা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন, খাষের (Ghosh) মতে, ইন্টারনেট অর্থনীতিকে এড়িয়ে ব্যবসায় চলতে পারে না। গ্রেগরি ম্যানকিউ’র (Gregory Mankiw) মতে, ইনফরমেশন টেকনোলজির অগ্রগতি ইন্টারনেট অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। আয়ান ভ্যালান্সের (Ain Vallance) মতে, ইন্টারনেট অর্থনীতির সফলতার মূলে আছে ব্যবসায়ে গ্রাহকদের সাথে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করা।

ইন্টারনেট অর্থনীতির অপরিহার্যতা

গত ১০ বছরে ইন্টারনেট গড়ে উঠেছে আমাদের সমাজের মৌলিক অংশ হিসেবে। নেইলসন ডাটার তথ্যানুযায়ী ২০ কোটি ৪২ লাখ আমেরিকান ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত ছিল ২০১১ সালে। এ সংখ্যা ২০০০ সালে আমেরিকায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার দ্বিগুণ। ২০১১ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সামাজিক নেটওয়ার্কে ও ব্লগে প্রায় ৮১ বিলিয়ন মিনিট সময় ব্যয় করে।

বর্তমানে ইন্টারনেট রয়েছে প্রায় সবার হাতে। গত বছর প্রায় ১১ কোটি ৭৬ লাখ লোক মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ভিজিট করে। নেইলসনের তথ্যমতে, আমেরিকানরা ২০১১ সালে সর্বমোট ২৫ হাজার ৬০০ কোটি বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অনলাইনে ও ভ্রমণসংশ্লিষ্ট সাইটে খুচরো কেনা-কাটার জন্য যা অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। এ সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতিতে ইন্টারনেট কত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইন্টারনেট অর্থনীতির অপরিহার্যতা যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই বাড়ছে তা নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে এ ধরনের প্রবণতা বিশেষ করে জি-২০-এর অঙ্গীভূত সদস্য রাষ্ট্রের দেশগুলোর মধ্যে। এ লেখাটি মূলত উপস্থাপন করা হয়েছে জি-২০-এর অঙ্গীভূত সদস্য রাষ্ট্রের ইন্টারনেট অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থার আলোকে, যা সম্প্রতি বোস্টন কন্সালটিং গ্রুপ প্রকাশ করে।

জি-২০ হলো গ্রুপ অব টোয়েন্টি ফিন্যান্স মিনিস্টার্স অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর্সের সংক্ষিপ্ত রূপ। জি-২০ গ্রুপের প্রধান অঙ্গীভূত রাষ্ট্রগুলো হলো : আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

জি-২০-এ ইন্টারনেট অর্থনীতি

‘কানেকটেড ওয়ার্ল্ড’ সিরিজের জানুয়ারি ২০১২-এর রিপোর্টের পরীক্ষায় দেখা গেছে কিভাবে কোম্পানি এবং দেশগুলো ডিজিটাল অর্থনীতিতে জয়ী হতে পারে। এর ফলো-আপ রিপোর্ট দেয় অধিকতর সমন্বিত বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন রিপোর্ট। এই বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন দেখানো হয়, কিভাবে ইন্টারনেটচালিত অর্থনীতির ক্রমোন্নতির গতি বদলে ফেলছে দেশগুলোর সংস্কৃতি এবং কোম্পানির চারপাশের বিশ্বকে। এটি যেমন সম্পৃক্ত করে ইন্টারনেটের প্রভাবে প্রভাবিত জাতীয় অর্থনীতির স্ন্যাপশট তেমনি জি-২০-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর ভোক্তা ও ব্যবসায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহারের ওপর গভীর দৃষ্টি রাখে।

১৯৮৫ সালে প্রথম ডোমেইন রেজিস্টার হওয়ার পর থেকে ইন্টারনেটের উন্নতি থেমে যায়নি। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল অবস্থা তথা মন্দার মধ্য দিয়েও ইন্টারনেটের ব্যবহার, আকার, প্রসার এবং প্রভাব বেড়েছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ইন্টারনেট এমনভাবে বিস্তৃত হয়েছে, যা আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি। বলা যায়, বর্তমানে ইন্টারনেট আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

এর ফলে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা হবে প্রায় ৩০০ কোটি যা বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। জি-২০ অন্তর্ভুক্ত অর্থনীতির দেশগুলোর ইন্টারনেট অর্থনীতি পৌঁছবে ৪.২ ট্রিলিয়ন ৪২ ১০১২ ডলারে। উল্লেখ্য, যদি এটি জাতীয় অর্থনীতি হতো, তাহলে ইন্টারনেট অর্থনীতির র‌্যাঙ্ক হতো বিশ্বের শীর্ষ পাঁচের মধ্যে। এর পেছনে যুক্তর্রাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং ভারত আর জার্মানির আগে। জি-২০-র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো ইতোমধ্যেই জিডিপির ৪.১ শতাংশে বা ২.৩ ট্রিলিয়নে পৌঁছে গেছে। ২০১০ সালে ইতালি ও ব্রাজিলের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যায়। কোনো কোনো দেশের অর্থনীতিতে ইন্টারনেট জিডিপির ৮ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখছে, উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে এবং সৃষ্টি করছে নতুন নতুন পেশা।

ইন্টারনেট অর্থনীতির মাপকাঠি এবং অগ্রগতির হারের পরিবর্তন এখনো ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং ইন্টারনেটের স্বভাব বা প্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। কে ব্যবহার করছে, কিভাবে করছে, কতক্ষণ ধরে করছে এবং কী কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় খুব দ্রুতই পরিবর্তন হচ্ছে। উন্নয়নশীল জি-২০ দেশে ইতোমধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮০ কোটিতে পৌঁছে গেছে, যা সব উন্নত জি-২০-এর দেশগুলোর মিলিত ফলাফলের চেয়ে বেশি। উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর ব্যবহারকারীর প্রায় ৮০ শতাংশের কাছে পৌঁছে গেছে সামাজিক নেটওয়ার্ক। ২০১৬ সালের মধ্যে মোবাইল ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পিসি ইত্যাদি পাঁচটির মধ্যে চারটি ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য বিবেচিত হবে।

এই উন্নয়নের গতিকে প্রায় সময় তত্ত্বাবধান করা হয় না, কেননা টেকনোলজির গ্রোথ বা উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য গুণিতকভাবে বাড়ে। প্রসেসিং স্পিড, ব্যান্ডউইডথ এবং ডাটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে এ ধারা আজও অব্যাহত আছে, যা আজ থেকে পাঁচ যুগ আগে গর্ডন মুর পর্যবেক্ষণ করে গেছেন।



বোস্টন কনসালটিং গ্রুপ তথা বিসিজি এক গবেষণায় উল্লেখ করে ২০১০ সালের যুক্তরাজের ইন্টারনেট অর্থনীতির আকার হলো ১২১ বিলিয়ন পাউন্ড বা ১৯২ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি জনে ২০০০ পাউন্ড বা ৩১৭৬ ডলার। ব্রিটিশ নিউজ অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে শিক্ষা, কনস্ট্রাকশন বা হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রি এবং অনলাইনে অন্যান্য খুচরা বিক্রির চেয়ে বেশি অবদান রাখছে ইন্টারনেট অর্থনীতি।

ZDNet UK-এর রিপোর্টার ডেভিড মেয়ার বলেন, যুক্তরাজ্যে যদি ইন্টারনেটকে আলাদা খাত হিসেবে ক্যাটাগরাইজ করা হতো, তাহলে অর্থনীতিতে ইন্টারনেট হতো পঞ্চম বৃহত্তম। লক্ষণীয়, এখানে ইন্টারনেটসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় যেমন ই-কমার্স, অনলাইন অ্যাড এবং ক্লাউড ডাটা স্টোরেজের ব্যয় সম্পৃক্ত রয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যুক্তরাজ্যে ইন্টারনেট অর্থনীতির গড় ক্রমান্নোতির হার ১০.৯ শতাংশ এবং আশা করা যাচ্ছে এই প্রবণতা ২০১৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ২২ হাজার ৫০০ কোটি পাউন্ড বা ৩৫৭ বিলিয়ন ডলার। এ ধারা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ইন্টারনেটের অবদান হবে মোট ১২.৪ শতাংশ।

ভারতের ইন্টারনেটের ক্রমোন্নতি

ভারত আশা করছে ২০১৬ সালের মধ্যে ইন্টারনেট অর্থনীতির আকার হবে ১০.৮ ট্রিলিয়ন রুপি বা ২১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বিশ্বের প্রধান জি-২০-র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর ইন্টারনেট অর্থনীতির ক্রমোন্নতির চেয়ে অনেক দ্রুততর। ভারতের ইন্টারনেট অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ, যা জি-২০ গ্রুপের দেশগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুতগতির। এর ফলে ভারতের ইন্টারনেট অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের তথ্যমতে, ভারতের ইন্টারনেট অর্থনীতির অবদান ৩.২ ট্রিলিয়ন রুপি বা ৬ হাজার ৪০০ ইউএস ডলার, যা ২০১০ সালের দেশের সার্বিক জিডিপির ৪.১ শতাংশ এবং আগামী চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৬ সালের মধ্যে তিনগুণের বেশি হবে।

ভারতের ইন্টারনেট অর্থনীতির ক্রমোবৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ, যা জি-২০ গ্রুপের ২০টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং অনেক উন্নয়নশীল জাতির চেয়ে গড়ে ১৭.৮ শতাংশ এগিয়ে আছে।

অ্যালকোহলের চেয়ে ইন্টারনেট ভারতে হতে পারে অধিকতর আসক্তির বিষয়। গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম বিসিজ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া লোকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থাৎ শতকরা ৭১ জন ইন্টারনেটের জন্য অ্যালকোহল ছেড়ে দিতে পারে, আর শতকরা ৬৪ জন চকলেটকে ত্যাগ করতে পারে ইন্টারনেটের জন্য।

এ ধরনের উৎসাহী ব্যবহারকারী ও অংশগ্রহণকারীরা ভারতে তথাকথিত ইন্টারনেট শিল্পের চালক, যারা মনে করেন ২০১৬ সালের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি হবে ১০.৪ ট্রিলিয়ন রুপি অথবা দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন তথা জিডিপির ৫.৬ শতাংশ। যদি ইন্টারনেট শিল্পকে ভারতে আলাদা খাত হিসেবে গণ্য করা হতো, তাহলে বোঝা যেত ভারতের অর্থনীতিতে এটি হলো বৃহত্তম, যা খনিজ শিল্পখাত ও পরিসেবা খাতের চেয়ে বড়।

ভারত ও আর্জেন্টিনার ইন্টারনেট অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রুত- যথাক্রমে ২৪ ও ২৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশের প্রতি বছরের প্রবৃদ্ধি হার যথাক্রমে ১২ ও ১১ শতাংশ।

এসএমবি এবং ভোক্তার উচ্চমান

বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের রিপোর্টে উন্মোচিত হয় চীন, জার্মানি, তুরস্ক এবং ফ্রান্সসহ অনেক দেশের স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজ বিজনেস এসএমবিএস ইন্টারনেটে কনজ্যুমারদের সাথে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত থাকে এবং তিন বছরের বিক্রয়ের ক্রমোন্নতির হার হয় ২২ শতাংশ। এই হার যেসব কোম্পানিতে কম ইন্টারনেট ব্যবহার হয় বা যেখানে কোনো ইন্টারনেট নেই, তার চেয়ে অনেক বেশি।

বিসিজির পার্টনার ও রিপোর্টের সহপ্রণেতা Panl Zwillenberg তার নোটে উল্লেখ করেন, স্মল মিডিয়াম সাইজ বিজনেসে ইন্টারনেটে ব্যবহার অনেক দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং যুক্ত করছে অনেক জব, যেমন ব্যবসায়ের উৎসাহ দিয়ে ইন্টারনেটে নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে ক্রমোন্নতি।

শেষ কথা

আমাদের অর্থনীতি এখনো সবল ও টেকসই পর্যায়ে পৌঁছেনি। গতানুতিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দিয়ে এখন অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত সবল ও টেকসই পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। আর এর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনামা দিকটি হলো ইন্টারনেট নামে অর্থনীতি। কী করে ইন্টারনেট অর্থনীতিকে অবলম্বন করে দ্রুত দেশকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছানো যায়, তা সক্রিয়ভাবে আমাদের ভাবতে হবে। সে অনুযায়ী রচনা করতে হবে ইন্টারনেট অর্থনীতির বাস্তব পরিকল্পনা। আর তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আসতে হবে একই সাথে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনীতির দৈন্য ঘুচবে। জাতি হবে সুখী-সমৃদ্ধ। বিশ্বের কাছে জাতির মাথা উঁচু হবে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস